২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

স্বর্ণ নীতিমালা অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা 

স্বর্ণ নীতিমালা অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা  - সংগৃহীত

স্বর্ণ নীতিমালা ও আরো নয়টি খাত যুক্ত করে নতুন ‘জাতীয় পরিবেশ নীতি অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বুধবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, স্বর্ণ নীতিমালা অর্থনৈতিক বিষয় সম্পর্কিত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদিত এবং সুপারিশকৃত। সারা বিশ্বে শুধু ২০১৬ সালেই অলংকার রফতানি হয়েছে ৬৩৮ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। হস্ত নির্মিত অলংকারের প্রায় ৮০ শতাংশ বাংলাদেশ ও ভারতে উৎপাদিত হয়।

জাতীয় পরিবেশ নীতিমালা প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ১৯৯২ সালে প্রথম জাতীয় পরিবেশ নীতি প্রণয়ন করা হয়। ২৬ বছরে পরিবেশের ক্ষেত্রে বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আমাদের অনেক অগ্রগতি আছে। আমরা নিজস্ব ট্রাস্ট ফান্ড করেছি, সেখানে অনেক ইনভেস্টমেন্ট করেছি। পৃথিবীর অনেক দেশই এটা করেনি। এই নীতিতে বড় একটা পরিবর্তন হল আগে এতে ১৫টি খাত অন্তর্ভুক্ত ছিল, আরও ৯টি খাত যুক্ত করে ২৪টি খাত করা হয়েছে। ২৪টি খাতের বিস্তারিত এখানে দেয়া আছে।

শফিউল আলম বলেন, আগে ছিল পরিবেশ সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশের প্রাকৃতিক ভারসম্য বিধান ও সার্বিক উন্নয়ন, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে কমাতে অভিযোজন কার্যক্রম, দেশে স্বল্প কার্বন নিঃসরণ প্রযুক্তির আহরণ ও প্রচলনকে উৎসাহিত করা, পরিবেশের সব ধরনের দূষণ ও অবক্ষয়মূলক কার্যক্রম শনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণ, সব ক্ষেত্রে পরিবেশ সম্মত উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ। সব প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই, দীর্ঘমেয়াদি ও পরিবেশসম্মত ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, বিশ্ব পরিবেশ উন্নয়নে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে সহযোগিতা করা, পরিবেশ সংরক্ষণে পরিবেশ শিক্ষা, সক্ষমতা, জনসচেতনতা ও জনমত গড়ে তোলা, পরিবেশ উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ, টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে পরিবেশ নীতি ও কৌশলকে মূল ধারায় নিয়ে আসা, জলবায়ু পরিবর্তনসহ সব ধরণের পরিবেশ ও পরিবেশগত সমস্যা মোকাবেলায় সক্ষম জনগোষ্ঠী গড়ে তোলা, এবং প্রয়োজনীয় সব ক্ষেত্রে এনভাইয়রমেন্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট এবং স্ট্র্যাটেজিক এনভাইয়রমেন্ট অ্যাসেসমেন্ট সম্পাদন নিশ্চিতকরণ।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নীতিমালা আরও রয়েছে- বিদেশি ও আগ্রাসী জাতের প্রাণি ও উদ্ভিদের কৃত্রিম অনুপ্রবেশ নিরুৎসাহিত করা, প্রয়োজনে যথেষ্ট গবেষণার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, পরিবেশ সংক্রান্ত সব আন্তর্জাতিক উদ্যোগের সাথে যথাসম্ভব সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকা, পরিবেশ সংরক্ষণের মাধ্যমে দারিদ্র দূরীকরণ, পরিবেশ সংক্রান্ত আইন ও বিধিমালা যথাযথ প্রতিপালন। এগুলোকে আরও বিস্তৃত করে ২৪টি করা হয়েছে জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, ভূমি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ, নিরাপদ খাদ্য ও সুপেয় পানি, কৃষি জনস্বাস্থ্য, স্বাস্থ্য সেবা, আবাসন, গৃহায়ণ ও নগরায়ন, শিক্ষা ও জনসচেতনতা, বন্য ও বন্যপ্রাণী, জীববৈচিত্র্য, পাহাড় ও প্রতিবেশ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, উপকূলীয় সামুদ্রিক প্রতিবেশ, পরিবেশ বান্ধব পর্যটন, শিল্প উন্নয়ন, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, যোগাযোগ ও পরিবহন, জনসম্পদ ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরির্তনের প্রভাব মোকাবেলায় প্রস্তুতি, অভিযোজন।

এছাড়া পরিবেশ নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে- দুযোগ ব্যবস্থাপনা, বিজ্ঞান, গবেষণা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশ বান্ধব অর্থনৈতিক উন্নয়ন, টেকসই উন্নয়ন ও ভোগ। অর্থাৎ এমন কোন সেক্টর বাকি নেই যেটা পরিবেশের সঙ্গে সম্পর্কিত। সবগুলোকেই নিয়ে আসা হয়েছে।

কাস্টমস আইন চূড়ান্ত অনুমোদন
কাস্টমস আইন, ২০১৮’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ১৯৭০ সালের আইন। কাস্টমস আঙ্গিনায় অনেক পরিবর্তন হওয়ায় এটাকে হালনাগাদ করা হচ্ছে। ২০১৪ সাল থেকে সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আগের আইনকে বাংলায় রূপান্তর করা হয়েছে। তেমন কোনো পরিবর্তন নেই। প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে পরামর্শ করে সরকার বিধি প্রণয়ন করতে পারবে।

স্বর্ণ নীতিমালা অনুমোদন
মন্ত্রিসভা স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮’ অনুমোদন দিয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম নীতিমালার উদ্দেশ্য তুলে ধরে বলেন, দেশের অভ্যন্তরে বাণিজ্যিক ব্যবহার এবং রফতানির উদ্দেশ্য পূরণ করার লক্ষ্যে স্বর্ণ আমদানি প্রক্রিয়া সহজীকরণ, আমদানি ও পরবর্তী বাণিজ্যিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট আমদানিকারক কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ। স্বর্ণালংকার রফতানিতে উৎসাহ এবং নীতি সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে রফতানি বৃদ্ধিকরণ। স্বর্ণালংকার রফতানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান শুল্ক ও বন্ড সুবিধা যৌক্তিকীকরণ ও সহজীকরণ।

স্বর্ণখাতে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে কার্যকর নিয়ন্ত্রণ, সমন্বয়, পরিবীক্ষণ ও তদারকি ব্যবস্থা। ভোক্তা-ক্রেতা-স্বর্ণ ব্যবসায়ীসহ এ খাত সংশ্লিষ্ট অংশীজনের স্বার্থ সংরক্ষণ। সকল অংশীজনের অংশীদারিত্ব, কার্যকর সমন্বয় নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে স্বর্ণ খাতের টেকসই বিকাশের জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি।

তিনি বলেন, নীতিমালায় অনুমোদিত ডিলার সম্পর্কে বলা হয়েছে, দ্য ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট-১৯৪৭’এর অধীন বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত মনোনীত অথরাইজড ডিলার, ব্যাংক অথবা বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত একক মালিকানাধীন কোনো অংশীদারি প্রতিষ্ঠান বা লিমিটেড কোম্পানি অনুমোদিত ডিলার হিসেবে গণ্য হবে। অলংকারের সংগায় বলা আছে, স্বর্ণ দ্বারা প্রস্তুতকৃত অলংকার এবং স্বর্ণের পরিমাণ নির্বিশেষে স্বর্ণের সাথে হীরক, রৌপ্য ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু ও পাথর মিশ্রণে প্রস্তুতকৃত অথবা সাধারণ পাথর দ্বারা খচিত অংলকার।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমদানি নীতিতে বলা হয়েছে, বর্তমান নীতির অতিরিক্ত হিসেবে দেশের অভ্যন্তরীণ স্বর্ণ অলংকারের চাহিদা পূরণকল্পে অনুমোদিত ডিলারের মাধ্যমে স্বর্ণবার আমদানি নতুন পদ্ধতি প্রবর্তন করা হবে। অনুমোদিত ডিলার নির্বাচন বাংলাদেশ কর্তৃক সম্পন্ন করা হবে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক গাইডলাইন প্রস্তুত করবে। অনুমোদিত ডিলার সরাসরি বা প্রস্তুতকারী বা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হতে স্বর্ণবার আমদানি করবে। অনুমোদিত ডিলার স্বর্ণ অলংকার প্রস্তুতকারকের কাছে বিক্রি করতে পারবে। আর অলংকার প্রস্তুত হলে রফতানি আকারে বিদেশে যাবে। যাতে আমাদের রফতানি সেক্টর যাতে চাঙ্গা হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, স্বর্ণ চোরাচালান বন্ধে এই নীতিমালা করা হয়েছে। আমদানিকারকরা মাসের শুরুতে স্বর্ণের হিসাব মূসক কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করবে। স্বর্ণমান যাচাইয়ের জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে হলমার্ক ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে হবে। স্বর্ণ, স্বর্ণালংকার ক্রয়-বিক্রয়ে হলমার্ক বাধ্যতামূলক করতে হবে।

খাদের পরিমাণ সুনির্দিষ্ট করতে হবে। ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য বিক্রয় ক্যাশ মেমোর সাথে স্বর্ণ অলংকারের হলমার্ক স্টিকার বাধ্যতামূলকভাবে প্রদান করতে হবে। ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণে ভোক্তা সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনগুলো কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে। আগের মতোই লাগেজে ১০০ গ্রাম পর্যন্ত স্বর্ণ বিনা শূল্কে আনা যাবে। ২৩৪ গ্রাম পর্যন্ত শুল্ক দিয়ে আনা যাবে। নীতিমালা চূড়ান্ত হলে এটা বাড়তে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement