২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঐক্যে আশাবাদী বিএনপি নচেৎ ...

ঐক্য প্রক্রিয়া
মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমাবেশে নেতারা - ছবি : নয়া দিগন্ত

জাতীয় ঐক্যের ব্যানারে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের রূপরেখা প্রদান এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে যেতে আগ্রহী বিএনপি। কিন্তু এই ঐক্য গঠনে ২০ দলীয় জোটের কোনো কোনো শরিকের অনীহা-আপত্তি এবং ঐক্য প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত একটি দলের পক্ষ থেকে নানা শর্ত বেঁধে দেয়ার কারণে শেষ পর্যন্ত জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া বাস্তবে রূপ নেবে কি না, তা নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা আছে। বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলছেন, বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য তারা চাচ্ছেন। তার মানে এই নয়; এর অপেক্ষায় তারা হাতগুটিয়ে কর্মসূচিহীন বসে থাকবেন। বরং জোটের ঐক্য অক্ষুণ্ন রেখে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে।

সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষ্য নিয়ে বিকল্পধারা, নাগরিক ঐক্য আর জেএসডি মিলে বেশ কিছু দিন আগে গঠিত হয়েছে যুক্তফ্রন্ট। এর প্রধান নেতা সাবেক প্রেসিডেন্ট এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। সাথে যুক্ত হয়েছে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্য প্রক্রিয়া। বিএনপিও চাইছে এসব দলে সাথে বৃহত্তর একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম গঠন করতে। এ জন্য নানামুখী আলোচনা অব্যাহত আছে।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর মহানগর নাট্যমঞ্চে ড. কামালের ঐক্য প্রক্রিয়া আয়োজিত সমাবেশে বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় একটি প্রতিনিধি দল অংশও নিয়েছে। কিন্তু বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গঠনের প্রক্রিয়া এগুচ্ছে খুবই ধীর গতিতে। এর কোনো সাংগঠনিক কাঠামো এখনো দাঁড়ায়নি।

ঐক্য প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত এক নেতা বলেন, অন্য দলগুলো উদার হলেও বিএনপি কিভাবে ঐক্য প্রক্রিয়ায় আসতে পারবে, বিকল্পধারার পক্ষ থেকে তার কিছু আগাম শর্ত তুলে ধরায় পুরো বিষয়টি ঝুলে গেছে। কতটি আসন বিএনপি ছেড়ে দেবে, কাকে রাখতে পারবে-কাকে পারবে না, এসব শর্তে কিছুটা ঝামেলা তৈরি হয়েছে। ইতোমধ্যে মধ্যে ড. কামাল দেশের বাইরে গেছেন। ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সময় লাগছে।

সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্বশর্ত হিসেবে গত রোববার ৭ দাবি এবং ১২ লক্ষ্য ঘোষণা করেছে বিএনপি। এ ব্যাপারে জনমত কী, ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা এ নিয়ে কী ভাবছেন এবং কী করবেন, সেই বিষয়টি সামনে রেখেই বিএনপি এগিয়ে যেতে চায়। ঐক্য প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্টদের বিভিন্ন শর্তের পরেও জাতীয় ঐক্য গঠন হবে বলে আশাবাদী বিএনপি।

এ সম্পর্কিত সর্বশেষ অবস্থা প্রসঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, আলোচনা চলছে এবং আরো আলোচনা হবে। ড. কামাল হোসেন দেশে ফেরার পরেও আলোচনা হবে। সবার মতামত ও আলোচনার ভিত্তিতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।

শেষ পর্যন্ত ঐক্য না হলে কী করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি এতদিন একা পথ চলেছে। দল চালিয়েছে, রাষ্ট্র চালিয়েছে। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে বিএনপির অভিজ্ঞতাও অনেক। এ ছাড়া, ২০ দলও এতদিন মাঠে ছিল এবং আগামীতেও থাকবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃহত্তর ঐক্য গঠনে শেষ পর্যন্ত বিএনপি আন্তরিকতা দেখাবে। যারা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে তাদের বাইরে রেখে ঐক্য প্রক্রিয়া এগিয়ে যাওয়ার পক্ষেও বিএনপির কারো কারো মত রয়েছে। এর পরেও ঐক্য না হলে মধ্য অক্টোবরের পর থেকে এককভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাবে বিএনপি।

জানা গেছে, আন্দোলন করে দাবি আদায়ের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। রোববারের জনসভা সফল হওয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। মাত্র ২৪ ঘণ্টার নোটিশে এত বড় জনসভা করতে পারায় নেতাকর্মীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। জাতীয় ঐক্যের পেছনে বেশি সময় ব্যয় না করে নিজস্ব কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পক্ষে রয়েছে দলটির তৃণমূল।

মাঠের নেতারা মনে করছেন, যে ৭ দফা ঘোষণা করা হয়েছে তা আদায়ে আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করতে হলে রাজপথে নামতে হবে। সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এবার আর কোনো ভুল করা চলবে না।

আরো পড়ুন :

আরো পড়ুন :
যেসব শর্তে জাতীয় ঐক্য করছে বিএনপি
বিবিসি
বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেন এবং বি. চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন এই নতুন রাজনৈতিক জোটটি এখন বিএনপির সাথে নির্বাচনী ঐক্য নিয়ে কথা বলছে ।

‘খালেদা জিয়ার মুক্তি’ বা ‘তারেক রহমানের মামলা প্রত্যাহার’ - এগুলো বিএনপি এবং ড. কামাল হোসেনের ‘যুক্তফ্রন্টের’ মধ্যেকার কোনো ‘নির্বাচনী ঐক্যের শর্ত’ হিসেবে গণ্য হবে না - বলছেন ওই জোটের নেতারা।

তবে বিএনপি রোববার ঢাকায় একটি জনসমাবেশ থেকে যে সাতটি দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরেছে - তার শুরুর দিকেই এই দুটি দাবি রয়েছে।

কিন্তু ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জোটের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বিবিসিকে বলেছেন, "যে দাবিগুলো বেশি করে তারা বলেছেন, সেগুলো তাদের দলের শ্লোগান।"

‘তারপরও বেগম জিয়ার মুক্তি আমরা চাই এই অর্থে যে, আমরা মনে করি মামলা যাই হোক... আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দিলে তিনি মুক্তি পাওয়ার যোগ্য বলেই মনে হয়।’

‘সব আইনজীবীই এ কথা বলেছেন। এই অর্থে আমরা বলি, তার মুক্তি ঠেকিয়ে মতো কাজ করা সরকারের উচিত নয়’, বলেন মান্না।

‘আর তারেক রহমানের মামলার ব্যাপারটা, সেটাও আলোচনা করে আইনগত লড়াই বা গণতান্ত্রিক বিধানের মধ্যে থেকে আমরা আমাদের বক্তব্য রাখবো’ - বিবিসি বাংলাকে বলেন ঐক্য প্রক্রিয়ায় যুক্তফ্রন্টের অন্যতম নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না।

নির্বাচনের সাথে সম্পর্কিত যে দাবিগুলো বিএনপি দিয়েছে, তাতে সংসদ ভেঙে দেয়া, সরকারের পদত্যাগ এবং নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের কথা বলা হয়েছে। এরসাথে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন এবং ইভিএম পদ্ধতি চালু না করার দাবিও রয়েছে।

এই পাঁচটি দাবির সাথে একমত বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ার অন্য দলগুলো। তারাও ইতিমধ্যে একই ধরণের দাবি তুলে ধরেছে।

জোট নেতারা মনে করছেন, নিরপেক্ষ সরকার গঠনসহ নির্বাচন সম্পর্কিত দাবিগুলোর সাথে তারা একমত এবং সেগুলো যৌথ দাবি হতে পারে।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলছিলেন, ‘সাত দফা দাবি যেটা দিয়েছেন, এর মধ্যে প্রধান যে দাবিগুলো গণতন্ত্র এবং অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সাথে সম্পর্কিত - সেগুলোর সাথে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। ওগুলো আমরা একইভাবেই বলেছি।’

তবে বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২১ অগাষ্টের গ্রেনেড হামলার মামলা প্রত্যাহারের দাবিগুলোকে 'বিএনপির দলীয়' বলে অন্য দলগুলো বলছে।

মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্প ধারা, ড: কামাল হোসেনের গণফোরাম এবং আ স ম আব্দুর রবের জেএসডি মিলে যে 'যুক্ত ফ্রন্ট' গঠন করা হয়েছে, ঢাকায় সপ্তাহখানেক আগে তাদের সমাবেশে বিএনপির সিনিয়র নেতারা যোগ দিয়েছিলেন।

বিএনপির নেতারা মনে করছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির তাদের দাবিকে ঐক্য প্রক্রিয়ার অন্য দলগুলো দাবি বা শর্ত হিসেবে না দিলেও তারা ঐ দাবিকে সমর্থন করে।

জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের শিক্ষক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক মির্জা তাসলিমা সুলতানা বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, প্রতিটি দলই স্ব স্ব অবস্থান থেকে আলাদা আলাদা দাবি দিতে পারে। ঐক্যের লক্ষ্য ঠিক থাকলে সেটা বাধা হয় না বলে তিনি মনে করেন।

‘নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনের যে পরিবেশ পরিস্থিতি, নির্বাচনে যাওয়া প্রসঙ্গে তাদের কথাবার্তা এখনও হচ্ছে। একেকটা দল তাদের জায়গা থেকে কথা বলবে, সেটাতো থাকারই কথা।এবং তাদের হয়তো অন্য বিষয়গুলো নিয়ে একটা ঐকমত্যে পৌঁছানোর সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না’ - বলেন অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা।

যুক্তফ্রন্টের মাঝেই এখনো কিছু ইস্যুতে অন্য তিনটি দলের সাথে বিকল্প ধারার দ্বিমত আছে। বিকল্প ধারার অন্যতম নেতা মাহী বি চৌধুরী বলেছেন , নির্বাচন সম্পর্কিত তাদের দাবির সাথে বিএনপির পাঁচটি দাবি মিলে গেছে। কিন্তু এখনও যৌথভাবে একক দাবি নির্ধারণের পর্যায়ে তারা আসতে পারেননি।

তিনি বলছিলেন, ‘ঐক্যের ভিত্তি হতে হবে, এক নম্বর - মুক্তিযুদ্ধের শক্তির মধ্যে ঐক্য হতে হবে। ভিত্তিটাই যদি আমরা রচনা করতে না পারি, তাহলে দাবিগুলো নিয়ে বা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন নিয়ে এখন পর্যন্ত সময় এসেছে বলে মনে করি না। এখনও অপরিপক্ক। এর আগে নিশ্চিত হতে হবে যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির বাইরে তাদের মধ্যে একটা ঐক্য হতে হবে। এটা না হওয়া পর্যন্ত যৌথ ঘোষণায় আমরা দাবিগুলোকে আনতে পারছি না।’

তবে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, দাবিগুলো নিয়ে তারা আরো আলোচনা করবেন।


আরো সংবাদ



premium cement