১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে রিট : আদেশ হলে ঘটতে পারে বিরাট পরিবর্তন

৪২ দিন আগে সংসদ ভাঙা ও নতুন আঙ্গিকে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের আদেশ কামনা - ছবি : সংগৃহীত

জাতীয় নির্বাচনের ৪২ দিন আগে সংসদ ভেঙে দেয়া এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের নির্দেশনা চেয়ে একটি রিট আবেদন হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে। সুপ্রিম কোর্টের বিভক্ত রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তির পর নতুন আঙ্গিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে এই রিট আবেদনটি দাখিল করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ড. ইউনুছ আলী আকন্দ গতকাল সোমবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট আবেদনটি দায়ের করেন। রিটে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব, আইন সচিব, সংসদবিষয়ক সচিবকে বিবাদি করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার রিট গ্রহণের ওপর বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর দ্বৈত বেঞ্চে শুনানি হতে পারে। 

এই রিট আবেদন এমন একসময় করা হয়েছে, যখন প্রধান বিরোধী দলগুলো নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে নতুন করে আন্দোলন শুরু করেছে। অন্য দিকে সরকারি দলের পক্ষ থেকে বিরোধী দলের দাবি নাকচ করে দিয়ে বলা হয়েছে, বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সাংঘর্ষিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দু’পক্ষই নিজ নিজ দাবির পক্ষে অনড় অবস্থান নিয়েছে। 
রিটে সংসদ নির্বাচনের ৪২ দিন আগে জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুনভাবে ও নতুন আঙ্গিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চেয়ে রুল জারিরও আবেদন করা হয়েছে। এ ছাড়াও মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আগের নিয়মে অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের আদেশ দেয়ার বিষয়ে আবেদন জানানো হয়েছে।

ইউনুছ আলী আকন্দ এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা এবং অনুচ্ছেদ ১১ ও ৬৫(২) অনুযায়ী প্রত্য নির্বাচনের মাধ্যমে আইন অনুযায়ী নির্বাচিত ৩০০ সদস্য নিয়ে জাতীয় সংসদ গঠিত হবে। কিন্তু বর্তমান জাতীয় সংসদের ১৫৩ জন সদস্য প্রত্য নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত নয়। তাই বর্তমান সংসদ ভেঙে দেয়ার নির্দেশনার আরজি জানিয়েছি। তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, বর্তমান সংসদ বহাল রেখেই নির্বাচন দিলে দেশে দুটি সংসদ হয়ে যাবে।

এটা সংবিধানের ৬৫ ও ১২৩(৩) অনুচ্ছেদ পরিপন্থী। এ ছাড়া সংসদ সদস্য পদে থেকে নির্বাচন করা সংবিধান পরিপন্থী। তাই সংসদ নির্বাচনের ৪২ দিন আগে জাতীয় সংসদ ভেঙে নির্বাচন করতে হবে। পাশের দেশ ভারতের সংবিধানেও সংসদ নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেয়ার বিধান রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচন প্রধান বিরোধীদল বিএনপি ও জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামী বর্জন করেছিল। ওই সময় দেশব্যাপী কঠোর আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে বিনা ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। অবশিষ্ট ১৪৭ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর গঠিত দশম সংসদের পাঁচ বছর মেয়াদ চলতি বছর পূর্ণ হবে। নব্বইয়ের দশকজুড়ে বাংলাদেশে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দুই দফা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হয়। ২০০৬ সালে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অবসরের বয়স বৃদ্ধি করা হলে আওয়ামী লীগ আন্দোলনে নামে।

২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসে। এরপর বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এক রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করা হয়। আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির মধ্যে চার-তিন বিভক্তিতে রায়টি দেয়া হয়। 

সুপ্রিম কোর্টের মৌখিক রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা আরো দু’বার বহাল রাখার কথা উল্লেখ করা হলেও পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিষয়টি বাতিল করা হয়। এ রায়ের আগে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বহাল করা হয়েছিল। সংবিধানের ৫৮(খ) অনুচ্ছেদে সংসদ ভেঙে দেয়ার পর একজন প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে পরবর্তী সংসদ গঠিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব পালনের কথা বলা ছিল। পরে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীতে এ ব্যবস্থা বিলুপ্ত করা হয়। 

কোনো কোনো পর্যবেক্ষকের মতে, এ রিট আবেদনের দু’টি ল্য থাকতে পারে। প্রথমত, নির্বাচন বিলম্ব করতে আওয়ামী লীগকে সহযোগিতা করা। রিট আবেদনটি গ্রহণ করে বলা হতে পারে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন স্থগিত থাকবে। আরেকটি লক্ষ্য হতে পারে দ্রুত শুনানি করে সরাসরি খারিজ করে দেয়া। এতে বলা হতে পারে, বিষয়টি আপিল বিভাগ থেকে এরই মধ্যে নিষ্পত্তি হয়ে আছে। সুতরাং তত্ত্বাবধায়ক সরকার অসাংবিধানিক। বাংলাদেশের মূল সংবিধানের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সাথে এর সামঞ্জস্য নেই। এটি এরই মধ্যে বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ে বলা হয়ে গেছে। আপিল বিভাগে নিষ্পত্তি হওয়া বিষয় নিয়ে আর শুনানির সুযোগ নেই। এ রায়ে তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুর বিষয়টি শেষ হয়ে গেছে। 

বলা হচ্ছে, এতে দুই দিকেই সরকার লাভবান হবে। রিট নিষ্পত্তি হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন স্থগিত রাখলে নির্বিঘ্নে তারা ক্ষমতায় থাকতে পারবে। রিট নিষ্পত্তি হতে দুই বছরও সময় নিতে পারে। এই দুই বছর সরকারের মতায় থাকার সুযোগ সৃষ্টি হবে। দুই বছর পর চূড়ান্ত রায়ে আবার এটি খারিজ করেও দেয়া হতে পারে। এতে সরকার অতিরিক্ত দুই বছর মতায় থাকতে পারল আর শেষ রায়ে তত্ত্বাবধায়কও চূড়ান্তভাবে বাতিল হয়ে গেল। এভাবে নির্দলীয় বা তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা চূড়ান্তভাবে বাতিল করার একটি কৌশল হতে পারে এ রিট। 

আবার কেউ কেউ এটি সরকারের বিরুদ্ধেও কাজে লাগতে পারে বলে মনে করছেন। কোনো প্রভাবশালী মহল থেকে সমর্থন দেয়া হলে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের একটি আইনি সুযোগও এর মাধ্যমে সৃষ্টি হতে পারে। সে সরকার ২০০৭ সালের মতো দুই বছর ক্ষমতায়ও থাকতে পারে।

এ দিকে কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম অবশ্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরে আসার সাংবিধানিক আর কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বেগম জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি চাইবেন আবার আইনিপ্রক্রিয়ায় অংশ নেবেন এটি ডাবল স্ট্যান্ডার্ড।


আরো সংবাদ



premium cement
ফরিদপুরের গণপিটুনিতে নিহত ২ নির্মাণশ্রমিক জাতিসঙ্ঘে ফিলিস্তিনি সদস্যপদ লাভের প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া হিটস্ট্রোক মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস : প্রধানমন্ত্রী মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে হুলস্থূল মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বুঝতে পারেনি ইসরাইল রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত বিএনপির কৌশল বুঝতে চায় ব্রিটেন ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট আজ নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ততায় ঝুঁকি রয়েছে : সেনাপ্রধান

সকল