২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে প্যারাডক্স তৈরি করা হচ্ছে : রিজভী

রুহুল কবির রিজভী - ফাইল ছবি

অবিলম্বে দলের চেয়ারপারসন কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে যেন এক প্যারাডক্স তৈরি করা হচ্ছে।

আজ মঙ্গলবার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

‘খুনী, অর্থপাচারকারী এবং সুদখোর’রা আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে, জোট বেঁধে সরকার উৎখাতের চেষ্টা করছে’ নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা হারানোর ভয়ে কান্ডজ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছেন। তিনি তার সামনে, পেছনে, ডানে-বায়ে যারা তাকে ঘিরে আছে তাদের দিকে তাকান না, শুধু তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের কুৎসা রটাতেই ব্যস্ত থাকছেন। ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে কিম্ভুতকিমাকার একনায়কতন্ত্র কায়েম করার জন্যই তিনি বেহুঁশ হয়ে গণতন্ত্র ও নির্বাচন প্রক্রিয়া সন্ত্রাসের বেড়াজাল দিয়ে ঘিরে রাখছেন। তার মুখে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বিষোদগার হাস্যকর।

সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, কেন্দ্রীয় নেতা শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আসাদুল করীম শাহিন, মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

রিজভী লিখিত বক্তব্যে বলেন, অসুস্থ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। তাকে যখন অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয় তখন পূর্বের চিকিৎসাধীন নিয়ন্ত্রণে থাকা রোগগুলো ছাড়া অসুস্থ ছিলেন না। তাহলে এই পরিস্থিতি হলো কেনো? কর্তৃপক্ষের অবহেলা, হয়রানি, অস্বাস্থ্যকর স্যাঁতস্যাঁতে বদ্ধ পরিবেশের মধ্যে তাকে দিনযাপন করতে হচ্ছে, যা একটি চরম নির্যাতন। এই নির্যাতন সহ্য করতে যেয়ে তার পূর্বের অসুস্থতা এখন আরো গুরুতর রূপ ধারণ করেছে।

রিজভীর অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ তাকে সুচিকিৎসা হতে বঞ্চিত করেছে। তাকে বিশেষায়িত হাসপাতালের সুবিধা ও ব্যক্তিগত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের দ্বারা নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা থেকেও বঞ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। দল ও পরিবার থেকে বারবার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠনের দাবিকেও অগ্রাহ্য করা হয়েছে। সরকারীদলের সমর্থক এবং আওয়ামী রাজনীতিতে সক্রিয় বিএসএমএমইউর চিকিৎসকদের দিয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডও দেশনেত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পরে স্ববিরোধী বক্তব্য রেখেছেন। একদিকে তারা বলেছেন- ‘বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা গুরুতর নয়, আবার বলেছেন, তার আর্থারাইটিসের ব্যথা, ফ্রোজেন শোল্ডার, হাত নড়াচড়া করতে পারেন না। রিস্ট জয়েন্ট ফুলে গেছে, সার্ভাইক্যাল স্পন্ডিলোসিসের জন্য কাঁধে প্রচন্ড ব্যথা, এই ব্যথা হাত পর্যন্ত রেডিয়েট করে। হিপ-জয়েন্টেও ব্যথার মাত্রা প্রচন্ড। ফলে শরীর অনেক অসুস্থ, তিনি পা তুলে ঠিক মতো হাঁটতেও পারেন না। বিএসএমএমইউ অথবা বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।’

তিনি বলেন, সরকারি মেডিকেল বোর্ডের বক্তব্য অনুযায়ী বেগম জিয়া গুরুতর রোগে অসুস্থ নন, তাহলে তারা কেন হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিলেন? বোর্ড বিএসএমএমইউ অথবা বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছেন। বেগম জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে যেন এক প্যারাডক্স তৈরি করা হচ্ছে। এদিকে মেডিকেল বোর্ড তাকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছে, অথচ আদালতে তার অনুপস্থিতিতে বিচারিক কার্যক্রম চলছে। দেশনেত্রীর আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া মামলার কার্যক্রম মূলতবি চেয়ে আবেদন করেন। খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কথা বিবেচনায় নিয়ে মামলার কার্যক্রম মূলতবি করার জন্য আবেদন নামঞ্জুর করা হয়। উল্লিখিত অসুস্থতায় জর্জরিত দেশনেত্রীকে টানা হেঁচড়া করে একরকম জবরদস্তিমূলকভাবে আদালতে নেয়া হলে অসুস্থতার যন্ত্রণায় কাতর বেগম জিয়া বলেছিলেন- আমি অসুস্থ, এভাবে কেন আমাকে কষ্ট দিচ্ছেন, আপনাদের যা শাস্তি দেয়ার দেন। বেদনার্ত আক্ষেপে এই কথাগুলো বেগম জিয়া বলেছিলেন। কিন্তু বেগম জিয়া তো অনুপস্থিত নন, তিনি তো আদালতের অধীনে কাস্টডিতেই আছেন। যেদিন তিনি একথাগুলো বলেন সেদিন তার আইনজীবীরাও আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। কারণ ওইদিন কোর্ট বসানোর কথা ছিল আলিয়া মাদ্রাসায়, কিন্তু আগের দিন রাতে তড়িঘডি করে কারাগারের ভেতরে আদালত বসানো হয়। এটা ছিল সংবিধান ও আইন বিরোধী। অসুস্থ বন্দী সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তার অনুপস্থিতে বিচারিক কার্যক্রম বেআইনী। আমি দলের পক্ষ থেকে আবারো দৃঢ়কন্ঠে বলতে চাই-দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসাসহ এই মুহুর্তে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।

রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে জাতি জানতে চায়-বিগত দশ বছরে ব্যাংক, বীমা লুটের টাকা গেল কোথায়? শেয়ার বাজার লুটের টাকা গেল কোথায়? ব্যাংকে আমানতকৃত টাকা চেক দিয়ে মানুষ না পেয়ে ফেরত আসে কেনো? বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি করেছে কে? এখনো কেনো রিজার্ভ চুরির তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি? আর্থিক খাত ধ্বংস করলো কে? কানাডাতে বেগম পল্লী ও মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম তৈরী করেছে কারা? গত দশ বছরে বিদেশে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে কারা? প্রায় প্রতিদিন গড়ে ৪/৫ জন নিরীহ মানুষ বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হচ্ছে কার নির্দেশে? বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, হুমায়ুন কবির পারভেজ, সাইফুল ইসলাম হিরু, সুমন ও জাকিরসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুম করেছে কে? কালো কাঁচঢাকা মাইক্রোবাসগুলো কাদের? উপজেলা চেয়ারম্যান নুর হোসেন বাবুকে প্রকাশ্য দিবালোকে যারা হত্যা করেছে তাদেরকে তো আপনি নিশ্চয়ই চেনেন, কার নির্দেশে তাদের বিচার হলো না? মাফ পেয়ে গেলো? যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি নাজমুলকে ক্রসফায়ারে হত্যাসহ বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে কে? সর্বোপরি দেশের সাবেক প্রধান বিচারপতিকে বন্দুকের নলের মুখে দেশ থেকে বিতাড়নের নির্দেশ দিয়েছে কে? বর্তমানে দেশজুড়ে গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যা ও লুটপাটের যে মহৌৎসব চলছে, প্রধানমন্ত্রী তার অসত্য ভাষণে তা ধামাচাপা দিতে পারবেন না-জনগণ এটিকে নিরেট চাপাবাজী বলেই গণ্য করে।

আসল জারিজুরি ফাঁস হওয়ার ভয়েই শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ছেন না। সেজন্য দম্ভবলে সকলের মুখ বন্ধ রাখতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন জাতীয় সংসদে পাশ করেছেন- যেটিকে জনগণ সন্ত্রাসী-আইনী বলেই মনে করে।

বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা ফ্যাসিষ্ট সরকারেরই ভাষা। কারণ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন শুধু স্বাধীন সাংবাদিকতার পথই রুদ্ধ করেনি, জীবন-জীবিকার নিরাপত্তহীনতায় পড়েছে সাংবাদিক সমাজ। দেশব্যাপী নিরাপত্তাহীনতা ও মানুষের মনে ভীতি ক্রমবর্ধমান।

দেশের বিভিন্ন স্থানে নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের অভিযোগ করে তিনি বলেন, নোয়াখালীতে আব্দুল বাতেন সাঈদ, জাফর ইকবাল, আবুল কালাম, কুষ্টিয়ায় সাহাজুল, জসীম উদ্দিন, জিহাদ, মজিবর, তালেব, মো: মোকাদ্দেশ, বেলাল হোসেন, মো: মামুন, মো: তোয়াজ ফকির, হামিদুল, ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ঝিনাইদহ পৌরসভার সাবেক মেয়র আ: মালেকসহ ৮২ জন নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছে। মেহেরপুরে মো: রাজন, টাঙ্গাইলে যুবনেতা মাহমুদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এছাড়াও গতকাল ঢাকাসহ দেশব্যাপী গ্রেফতার করা হয়েছে ৯৪ জন নেতাকর্মীকে, ১৩টি মামলায় ১৪০০ এর অধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। আমি দলের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং তাদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।


আরো সংবাদ



premium cement