২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নাগরিক সমাবেশ

মঞ্চে ড. কামাল-মির্জা ফখরুলসহ সিনিয়র রাজনীতিবিদরা

রাজনীতি
ড. কামাল হোসেন ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর - ফাইল ছবি

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নাগরিক সমাবেশ শুরু হয়েছে। বিকাল তিনটার কিছু পরে রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে এ সমাবেশ শুরু হয়।

মঞ্চে উপস্থিত হয়েছেন ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক ও সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন। উপস্থিত হয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মঈন খান। এছাড়া উপস্থিত আছেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন, ঢাকসুর সাবেক সহ-সভাপতি সুলতান মনসুর আহমেদ, জাসদ (রব) সভাপতি আ স ম রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, তেল-গ্যাস রক্ষা জাতীয় কমিটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

সমাবেশস্থলে জড়ো হয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিপুল নেতাকর্মী।

কার্যকর গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া এ নাগরিক সমাবেশ করছে।

সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার কথা রয়েছে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর।

এদিকে, সমাবেশে আগত বিএনপি নেতাকর্মীদের দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে শ্লোগান দিতে দেখা যায়।

মাসখানেক আগে যুক্তফ্রন্ট (বিকল্পধারা, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য) এবং গণফোরাম জাতীয় ঐক্য ইস্যুতে একমত হওয়ার পর থেকেই বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। পর্দার আড়ালে বিএনপির সাথেও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া নিয়ে এক ধরনের সমঝোতায় পৌঁছান ড. কামাল হোসেন। বাম ঘরানার আরো বেশ কিছু দল জাতীয় ঐক্যে যুক্ত হওয়ার বিষয়টিও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বৃহত্তর ঐক্য গঠনে জড়িত অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলোর সব দাবি মেনে নিতে সম্মত হয়েছে বিএনপি। জাতীয় ঐক্যমঞ্চের ব্যানারে অভিন্ন দাবি নিয়ে এখন রাজপথে নামতে চায় দলটি।

যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া যৌথভাবে তাদের যে দাবি ঘোষণা করেছে, সেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি তারা চাননি। বিএনপি নেতারা বলছেন, এটা কোনো সমস্যা নয়। ঘোষণার আগে এ নিয়ে তাদের সাথে বিএনপির কথা হয়েছে। এখন সবার বক্তব্য হচ্ছে, বর্তমান ব্যবস্থায় সুষ্ঠু ও নিরপে নির্বাচন যেমন সম্ভব নয়, তেমনি শেখ হাসিনার সরকার মতায় থাকলে নিরাপদ বাংলাদেশ গড়াও সম্ভব নয়। যেহেতু সবার সুর একই, তাই বিএনপির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট নেতাদের জানানো হয়েছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি তারা না চাইলেও জাতীয় ঐক্য গড়তে কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু বিএনপি খালেদা জিয়ার মুক্তি চাইলে যুক্তফ্রন্ট বা জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের কোনো বাধাও থাকবে না।

বিএনপির শীর্ষ নেতারা কয়েকদিনে একাধিকবার বৈঠক করেছেন বৃহত্তর ঐক্য গঠন নিয়ে। জানা গেছে, এই ঐক্যের নেতা কে হবেন তা নিয়েও দলটি আলোচনা করেছে। যুক্তফ্রন্টে থাকা তিনটি দল এবং গণফোরামসহ অন্যান্য দল সিদ্ধান্ত নিয়ে গ্রহণযোগ্য কাউকে মনোনীত করলে বিএনপির তাতে আপত্তি থাকবে না।

ড. কামাল হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেছেন, নেতৃত্ব নির্ধারণ হবে যৌথ নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে। আর যেখানে অনেক রাজনৈতিক দল থাকবে, সেখানে দলীয় নেতৃত্ব থাকবে। কোন দল থেকে কে নেতৃত্ব দেবেন, সেটা সংশ্লিষ্ট দল ঠিক করবে। এটি একজন বা দু’জন করে হতে পারে।

বিএনপির ৭ দফা :
নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির স্থায়ী কমিটি সাত দফা দাবি চূড়ান্ত করেছে।
১. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই- ক) জাতীয় সংসদ বাতিল, খ) দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও তার বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার।

২. ক) দেশের সব বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীর মুক্তি, সাজা বাতিল ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, খ). নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচনের ফল চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত চলমান সব রাজনৈতিক মামলা স্থগিত রাখা ও নতুন কোনো মামলা না দেয়ার নিশ্চয়তা, গ) পুরনো মামলায় কাউকে গ্রেফতার না করা, ঘ) কোটা সংস্কার আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিার্থীদের আন্দোলন, সাংবাদিকদের আন্দোলন এবং সামাজিক গণমাধ্যমে স্বাধীন মতপ্রকাশের অভিযোগে ছাত্রছাত্রী, সাংবাদিকসহ সবার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির নিশ্চয়তা।

৩. সরকারের পদত্যাগ ও সব রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনাসাপেক্ষে নির্বাচনকালীন নিরপে সরকার প্রতিষ্ঠা করা।

৪. সব রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনাক্রমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা।

৫. নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত এবং সম্পূর্ণ নির্বাচনপ্রক্রিয়া পর্যবেণে তাদের ওপর কোনো ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ না করা।

৬. সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেসি মতাসহ সশস্ত্র বাহিনী নিয়োগ নিশ্চিত করা।

৭. নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার বিধান নিশ্চিত করা।

আরো পড়ুন :
জাতীয় ঐক্য নিয়ে অস্বস্তিতে আ’লীগ
মনিরুল ইসলাম রোহান, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮
নতুন জোট বা দল গঠনের বিষয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বরাবরই ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে। তবে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় ঐক্য গঠন নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে রয়েছে দলটি। নীতিনির্ধারণী পর্যায় সূত্রে জানা গেছে, নতুন জোট জাতীয় ঐক্য গঠনের জন্য আওয়ামী লীগ চিন্তিত নয়। তবে উদ্বেগের জায়গা হলো জাতীয় ঐক্য আগামী নির্বাচনে কোন দল বা জোটের পক্ষে হয়ে কাজ করবে, তা নিয়ে। যেহেতু ডিসেম্বরের শেষের দিকে একাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচনের স্বল্প সময় বাকি থাকলেও তাদের অবস্থান এখনো পরিষ্কার নয়। তারা কি নিজস্ব জোটে আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে, নাকি বিএনপির সাথে জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচনে অংশ নেবে- এটি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। যদি জাতীয় ঐক্য বিএনপির সাথে জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে আগামী নির্বাচনে ভোটের মাঠে একটি বড় ধরনের প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। যেটা আওয়ামী লীগ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে।

দলটির একাধিক নেতার সাথে আলাপকালে বলেন, জাতীয় ঐক্য গঠনের সাথে মূল ভূমিকায় আছেন গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, বিকল্প ধারার সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি বি. চৌধুরী, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ বেশ কিছু বড় বড় নেতা ও তাদের দল। এ প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত ব্যক্তিরা তাদের ব্যক্তিগত ক্যারিয়ারে সফলতা থাকতে পারে। তবে দলীয়ভাবে প্রত্যেকের জায়গা থেকে তাদের কোনো সফলতা নেই। এদের রাজনৈতিক সততা নিয়েও নানা প্রশ্ন আছে; যে কারণে মাঠের রাজনীতিতে এদের কারো কোনো শক্ত অবস্থান এখনো তৈরি হয়নি। সাধারণ জনগণ তাদের ভালোভাবে গ্রহণ করছে না। ফলে ভোটের মাঠে এদের অবস্থান একেবারে শূন্য। কিন্তু ওই সব ব্যক্তি নতুন জোট গঠনের মাধ্যমে এক প্লাটফর্মে যুক্ত হলে আগামী নির্বাচনে বড় ধরনের একটা প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর মতে, জাতীয় ঐক্যের অবস্থান পরিষ্কার না হওয়ায় আওয়ামী লীগকে নির্বাচনী কার্যক্রমগুলো সঠিকভাবে চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। যেমন- আসনগুলো এখনো পুরোপুরি চূড়ান্ত করতে পারছে না। ক্ষমতাসীন জোটের সাথে আসন বণ্টনের যে হিসাব-নিকাশ আছে তারও চূড়ান্ত সমাধানে পৌঁছাতে পারছে না দলটি। এ ছাড়াও জাতীয় ঐক্য নির্বাচনের আগ মুহূর্তে বিএনপির সাথে যুক্ত হয়ে নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের ডাক দিলে সেটি সরকারের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে। এটি নিয়েও ক্ষমতাসীন দলকে ভাবতে হচ্ছে। তবে যেসব দল নিয়ে জাতীয় ঐক্য গঠন হচ্ছে বিএনপির সাথে জামায়াত যুক্ত থাকায় বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও বাধাগ্রস্ত হবে। কারণ যারা জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলছেন তারা সবাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেন। ফলে রাজনীতিতে এখানেও বিভিন্ন সমীকরণ কাজ করছে।

জাতীয় ঐক্য গঠন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি বলেছেন, নতুন নতুন জোট হলে স্বাগত, শত ফুল ফুটুক। গণতন্ত্র তো, অসুবিধা নেই। নতুন নতুন জোট হোক নির্বাচন করুক। তিনি বলেন, বিএনপি নাকি জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলবে। তাদের নিজের ঘরেই তো ঐক্য নেই। তারা নিজেদের অফিসেই একে অন্যকে সরকারের এজেন্ট বলে। তারা কিভাবে জাতীয় ঐক্য গড়বে! তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে বড় দল। আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে এ দেশে জাতীয় ঐক্য কিভাবে হয়! আর আওয়ামী লীগ না থাকলে অন্য অনেক দলও তাদের সঙ্গে যাবে না।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের অন্যতম মুখপাত্র ড. হাছান মাহমুদ নয়া দিগন্তকে বলেন, ড. কামাল হোসেনদের ভোটের মাঠে কোনো প্রভাব নেই। নিজস্ব কোনো ভোট ব্যাংকও নেই। নিজস্ব কোনো আসনও নেই। তিনি বলেন, বিএনপি এখন মুমূর্ষু অবস্থায় আছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য বিভিন্ন দল, জোটসহ দেশ-বিদেশের বিভিন্নজনের কাছে গিয়ে ধর্না দিচ্ছেন, তাদের কাছে গিয়ে শরণাপন্ন হচ্ছেন। তার পরও এসব জোটের মাধ্যমে বিএনপি পার পেয়ে যেতে পারবে না। কারণ যাদের কাছে শরণাপন্ন হচ্ছেন তাদের নিজদেরই তো অস্তিত্ব নেই। ভোটের মাঠে তাদের অবস্থান একেবারে শূন্য।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন নয়া দিগন্তকে বলেন, এমন বহু জোট, বহু ঐক্য হয়েছে, চোখের সামনে হতে দেখেছি। তাদের ধ্বংস হতেও দেখেছি। নির্বাচন এলেই কিছু মানুষ বা কিছু দল জোট বা ঐক্য গঠনের দিকে নজর দেয়, তাদের গুরুত্ব বাড়ানোর জন্য। তিনি বলেন, এসব দল ব্যক্তির ভোটের মাঠে নিজস্ব কোনো অবস্থান নেই। তাই নির্বাচন সামনে রেখে তারা কিছু সুবিধা নিতে চাই। কেউ পায়, আবার কেউ পায় না। জাতীয় ঐক্য গঠনও তার ব্যতিক্রম কিছু দেখছি না। সফলতা ও ব্যর্থতা প্রসঙ্গে অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, জাতীয় ঐক্য গঠন যারা করছেন তাদের নিজস্ব কোনো জনশক্তি নেই। যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের সততা নিয়েও বিভিন্ন মহলে নানা প্রশ্ন রয়েছে। ফলে তারা কতটুকু সফল হবেন তা নিয়ে সন্দেহ আছে।

কারাগারে যাওয়ার আগেই জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে গেছেন খালেদা জিয়া : ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮
বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার আগেই জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে গেছেন- জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাইরের কোনো শক্তি আমাদের ক্ষমতায় নিয়ে যেতে পারবে না। এ জন্য ২০ দলসহ সব দল-মতের রাজনৈতিক শক্তি নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে বলেছেন খালেদা জিয়া। বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে সরকার নেতাকর্মীদের নামে গায়েবি মামলা দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

গতকাল জাতীয় প্রেস কাবে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ আয়োজিত ‘আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা নূর হোছাইন কাসেমীর সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তৃতা করেন- জাতীয় পার্টির (জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা: মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মাওলানা আবদুর রকিব, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুক ও মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, মুসলিম লীগের মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের, জাগপার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, ডেমোক্র্যাটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, জাতীয় পার্টির (জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবীব লিংকন প্রমুখ। জমিয়তের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন সংগঠনের সহসভাপতি মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী।

মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে মানুষের নির্বিঘ্নে ভোট দেয়ার কোনো পরিবেশ নেই। যে নির্বাচন কমিশন পুলিশকে ভয় পায়, তাদের দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায় না। সরকার ক্ষমতা দখল করে রাখতে গায়েবি মামলা দিচ্ছে। গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে এ পর্যন্ত সাড়ে চার হাজার মামলা দিয়েছে, যাতে আসামি করা হয়েছে দুই লাখ ৩৩ হাজার নেতাকর্মীকে। যার মধ্যে দলের স্থায়ী কমিটি থেকে ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরাও রয়েছেন।

তিনি বলেন, এভাবে মামলা দিয়ে সরকার বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায়। কিন্তু অতীতের কোনো স্বৈরাচার এভাবে মামলা দিয়ে টিকে থাকতে পারেনি। বর্তমান সরকারও পারবে না। জনগণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেই।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ওই হামলার পর বিএনপি সরকার নিন্দা জানিয়েছিল। সাথে সাথে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এফবিআই এবং ইন্টারপোলকে তদন্তের জন্য আনা হয়; কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সে সময় তদন্ত কমিটিকে কোনো সহযোগিতা করেননি। এমনকি যে গাড়িতে গুলি লেগেছিল, সেটিও তদন্ত কমিটিকে দেখতে দেননি। মামলার ২ নম্বর সাক্ষী কখনো আদালতে সাক্ষ্য দিতে যাননি। মির্জা ফখরুল বলেন, ঘটনার পর মামলায় তারেক রহমানের নাম ছিল না। মইন-ফখরুদ্দীনের দুই বছরের শাসনের সময়ও তার নাম আসেনি। অথচ আওয়ামী লীগ সরকার একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা, যিনি আওয়ামী লীগের এমপি মনোনয়ন চেয়েছিলেন, সেই আবদুল কাহার আকন্দকে এনে তারেক রহমানের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছে। মুফতি হান্নানকে ২৪৩ দিন রিমান্ডে নিয়ে তার নামে স্বীকারোক্তি নেয়া হয়েছে। যে স্বীকারোক্তি মুফতি হান্নান পরে নিজেই মিথ্যা বলে জানিয়েছিলেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, মিথ্যাচার ও অন্যায় আল্লাহও সহ্য করেন না। পৃথিবীর আদালত তারা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে, কিন্তু আল্লাহ এর সঠিক বিচার করবেন। খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, অবিলম্বে সংসদ ভেঙে পদত্যাগ করুন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করার ব্যবস্থা করুন। ইসি পুনর্গঠন করুন এবং ইভিএম কেনার চিন্তা বাদ দিন।

নূর হোছাইন কাসেমী বলেন, জাতি জেগে উঠেছে। জালেম সরকারের পতন হবেই। তিনি সরকারকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধান না হলে জনগণ আন্দোলন করতে বাধ্য হবে। তিনি অবিলম্বে সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নির্বাচনের আগে ও পরে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন, ইভিএম বাতিল এবং খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়ার দাবি জানান।


আরো সংবাদ



premium cement