২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গ্রেফতার আতঙ্কে আইনজীবীরা

গ্রেফতার আতঙ্কে আইনজীবীরা - ছবি : সংগৃহীত

রাজধানীর পল্টন, খিলগাঁও, মতিঝিল, মিরপুর মডেল থানাসহ বিভিন্ন থানায় সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সাত-আটটি মামলা করা হয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী হওয়ায় এবং বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবীসহ বহু আইনজীবীকে এসব মামলার আসামি করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় দায়ের করা চার বা পাঁচটি মামলায় তারা সোমবার উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। অন্যান্য মামলায় জামিন আবেদন দায়ের করা হয়েছে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

গত কয়েক দিনে আরো কয়েকটি মামলা করা হয়েছে। এমনকি গতকাল মঙ্গলবারও তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে বলে আইনজীবীরা অভিযোগ করেছেন। তাদের অভিযোগ, ঘটনাই ঘটেনি এমন গায়েবি-আজগুবি ঘটনা দেখিয়ে আরো মামলা করে তাদের হয়রানি করা হতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। এ ছাড়া একই অভিযোগে বারবার পুলিশের করা মামলা থেকে কিভাবে প্রতিকার পাওয়া যায় সেই রাস্তা খুঁজছেন আইনজীবীরা। এ বিষয়ে তারা সিনিয়র আইনজীবীদের সাথে পরামর্শ করছেন। 

এ বিষয়ে প্রবীণ আইনবিদ ও বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, খালেদা জিয়া আদালতে যাতে ন্যায়বিচার না পান এবং তার মুক্তি ও চিকিৎসার জন্য রাজপথে যাতে আন্দোলন না করতে পারেন সে জন্য তার শীর্ষ আইনজীবীসহ অন্যান্য আইনজীবী ও বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মামলা করে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আইনজীবীদের বিরুদ্ধে পুলিশ যে ঘটনাস্থল উল্লেখ করে যে অভিযোগে মামলা করেছে ওই স্থানে অভিযোগে উল্লিখিত ঘটনা ঘটেইনি। আজগুবি গল্প সৃষ্টি করে অহেতুক তাদের এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে। এ সব মামলা করার মাধ্যমে সরকার খালেদা জিয়ার ন্যায়বিচার না পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। আর বর্তমান আন্দোলনকে সন্ত্রাসী রূপ দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। শান্তিপূর্ণ মিছিল সমাবেশকে সন্ত্রাসী রূপ দেয়া হচ্ছে। 

খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আইনজীবীদের ধারণা ২০১৪ সালে মার্চ ফর ডেমোক্র্যাসির জন্য সারা দেশে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হয়েছিল এবং সরকারি এজেন্টরা উক্ত আন্দোলনের সময় গাড়ি ভাঙচুর ও পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে। জনগণকে সরকার বিভ্রান্ত করে বিএনপির আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য একইভাবে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সারা দেশে যে শান্তিপূর্ণ মিছিল সমাবেশ চলছে তা সন্ত্রাসী রূপ দিতে এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু সরকার ভুলে গেছে একই খেলা বারবার খেলা যায় না। জনগণ ঐক্যবদ্ধ, মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাদের বিভ্রান্ত করা যাবে না। 

এ বিষয়ে বিএনপির আইন সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, আমরা বেগম খালেদা জিয়ার মামলা করি, আমাদের হয়রানি করার জন্য এসব মামলা করা হচ্ছে। এসব গায়েবি মামলা প্রতিদিন হচ্ছে। আরো মামলা করা হতে পারে বলে জানতে পেরেছি। তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ৯টি মামলা করা হয়েছে। 

এ ব্যাপারে সানাউল্লাহ মিয়া ও আইনজীবী মাসুদ রানা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার শীর্ষ আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত সাতটি, ব্যারিস্টার আমিনুল হকের বিরুদ্ধে পাঁচটি, অ্যাডভোকেট আবদুর রেজাক খানের বিরুদ্ধে সাতটি, নিতাই রায় চৌধুরীর বিরুদ্ধে ছয়টি, সানাউল্লাহ মিয়ার বিরুদ্ধে ৯টি মামলা হয়েছে এবং তারা এসব মামলার জামিন পেয়েছেন তৈমূর আলম খন্দকার চারটি মামলায় জামিন পেয়েছেন এবং তার বিরুদ্ধে আরো মামলা করা হয়েছে। 

সোমবার বিচারপতি হাবিবুল গণি ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের অবকাশকালীন ডিভিশন বেঞ্চ বিভিন্ন থানায় করা নাশকতার মামলায় খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ব্যারিস্টার আমিনুল হক, অ্যাডভোকেট আবদুর রেজাক খান, নিতাই রায় চৌধুরী, সানাউল্লাহ মিয়া ও তৈমূর আলম খন্দকারকে পুলিশ প্রতিবেদন দেয়ার আগ পর্যন্ত আগাম জামিন দেন। 

চলতি মাসের বিভিন্ন সময়ে পল্টন, খিলগাঁও, মতিঝিল, মিরপুর মডেল থানাসহ বিভিন্ন থানায় এসব নাশকতার অভিযোগে এসব মামলা করা হয়। আইনজীবীরা জানান, গত ১১ সেপ্টেম্বর থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত পল্টন, খিলগাঁও, মতিঝিলসহ বিভিন্ন থানায় পুলিশের কাজে বাধা দেয়া, ককটেল বিস্ফারণসহ নাশকতার অভিযোগে আট থেকে ৯টি কয়েকটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় বিএনপি নেতাদের সাথে আইনজীবীদের আসামি করা হয়েছে। আইনজীবীরা জানিয়েছেন মঙ্গলবারও তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় কয়েক আইনজীবী ও বিএনপি নেতাকর্মী এবং অজ্ঞাত আসামিও রয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement