২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

চ্যালেঞ্জে বিএনপি

চ্যালেঞ্জে বিএনপি - ছবি : সংগৃহীত



বিএনপিকে বাদ দিয়ে সরকারের একতরফা নির্র্বাচনের প্রস্তুতিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে বিরোধী দলগুলো। খুব শিগগিরই আন্দোলনের চূড়ান্ত কৌশল নির্ধারণ করে মাঠে নামবে তারা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের বাইরে থাকা দলগুলো সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে ইতোমধ্যে একাট্টা হয়েছে। তারা সরকারের একতরফা নির্বাচনের কৌশলকে ভবিষ্যতের জন্য খুবই ভয়ঙ্কর হিসেবে মনে করছে। একটানা ১০ বছর ক্ষমতায় থাকার পর তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তা কারো জন্যই মঙ্গলজনক হবে না বলে তাদের ধারণা। বিরোধী দলগুলো মনে করছে, জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামলে সরকারের কোনো পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। 
এ দিকে বিএনপিকে কোনো রকম ‘পাত্তা’ না দিয়ে নতুন নতুন রাজনৈতিক কৌশল প্রয়োগ করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার অঙ্ক কষছে ক্ষমতাসীন দল। আন্দোলনের সম্ভাবনার বিষয়টি আমলে নিয়ে দেশজুড়ে এখন ‘মামলার বন্যা’ বইছে। মামলার জালে বিএনপির ইউনিয়ন কমিটির নেতা থেকে শীর্ষপর্যায়ের সবাই। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেয়ার আগাম কৌশল হিসেবে এ ‘মামলা নীতি’ গ্রহণ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন।

একুশে আগস্টের হামলার মামলার রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ১০ অক্টোবর। বিএনপির তরফ থেকে এ মামলা সাজোনো বলা হলেও আওয়ামী লীগের নেতারা স্পষ্ট করেই বলেছেন, ‘মামলার রায়ের পর সঙ্কটে পড়ে যাবে বিএনপি।’ ও-দিকে নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়ার মুক্তির সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা বলছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি, না নির্বাচনÑ এ নিয়ে ভাবতে ভাবতেই বিএনপির আন্দোলনের সময় পার হয়ে যাবে। পরিস্থিতি বুঝে তারা নিজ গরজেই নির্বাচনে অংশ নেবে। অন্যথায় তারা আবারো ট্রেন মিস করবেন। 

বিএনপিকে কোনো রকম ছাড় না দিয়ে এককভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট যে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, সরকার সে জন্য তাদের কোনো স্পেস দিতে রাজি নয়। বিএনপির আন্দোলনের প্রস্তুতির মুখেই নতুন করে মামলা দেয়া হচ্ছে। যেসব নেতার নামে একাধিক মামলা আছে তাদেরকেই আসামি করে নতুন মামলা দায়ের শুরু হয়েছে। পুলিশ বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের তালিকা ধরে এই মামলা করছে। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, এসব রাজনৈতিক মামলায় এখনই গ্রেফতার না করে ধীরে চলে পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। 

সরকারি ও বিরোধী দলের একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, অক্টোবরে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার কাছাকাছি সময়ে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের একটি বড় ধরনের আন্দোলনের প্রস্তুতির কথা সরকারের জানা আছে। এই আন্দোলনের জন্য বিএনপি বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেই এগোচ্ছে। তারা আন্দোলনের মাঠ প্রস্তুতের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তৎপরতা জোরদার করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি যে নির্বাচন বিরোধী দলের বয়কটের মুখেও করা গিয়েছিল এবারের নির্বাচন অতটা সহজ হবে না। এ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে। আগামীতে তা আরো বাড়বে। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তার ফল সরকারি দলের পক্ষে হবে না বলেই প্রায় সব গোপনীয় জরিপে বলা হয়েছে। সরকার এখন চাইছে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে তাদের কোনো দায় নেই। আর নিজেদের নিবন্ধন রক্ষায় বিএনপির সামনেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো উপায় নেই। তাই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ উপেক্ষা করেই তারা নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারবেন। তাদের ধারণা, প্রশাসন এখনো তাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং নির্বাচনে সেখান থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা তারা পাবেন।

সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি কোন ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলবে এবং তার প্রকৃতি কী হবে সে সম্পর্কে বিশেষ কোনো ধারণা সরকারের নেই। এখন সরকার বিএনপির আন্দোলনের গতি-প্রকৃতি জানার চেষ্টা করছে। তা ছাড়া তাদের আন্দোলনে গণসম্পৃক্ততা নিয়েও সরকারের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে। বিএনপি যদি ব্যাপক গণসম্পৃক্ত আন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম হয় সে ক্ষেত্রে প্রশাসনের লোকজন রাতারাতি উল্টে যেতে পারে বলেও তারা মনে করছে। আর সব কিছু অনুকূলে থাকলে হামলা-মামলায় পর্যুদস্ত বিএনপি নেতাকর্মীরা নতুন মামলায় কাহিল হয়ে পড়বেন। সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের আগে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ‘মামলায় হয়রানি’ যথেষ্ট কাজ দিয়েছিল। তখন পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল ‘তারা বিএনপি নেতাকর্মীদের নয়Ñ মামলার আসামিদের গ্রেফতার করছে।’ 

জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অন্তত ৩০ হাজার নতুন মামলা দেয়া হয়েছে, যার বেশির ভাগই ভাঙচুর, নাশকতা, সরকারকে অস্থিতিশীল করার অভিযোগে দায়ের করা। এসব মামলায় বিএনপি-জামায়াতের কয়েক লাখ নেতাকর্মী-সমর্থককে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় পুলিশ তাৎক্ষণিক অ্যাকশান দেখাচ্ছে না। সরকারের গ্রিন সিগন্যাল পেলেই নতুন করে গ্রেফতার অভিযান শুরু হবে। এমনও দেখা গেছে, এক সপ্তাহে একই থানায় একজন নেতাকর্মী কিংবা সমর্থকের বিরুদ্ধে ৮-১০টি মামলা পর্যন্ত দেয়া হয়েছে। অভিযুক্ত অনেকে জানেনও না তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। 
এ দিকে বিএনপি বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট গঠনের যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা-ও যাতে সফলতার মুখ না দেখে সে জন্য পর্দার আড়ালে নানা কাজ চলছে। যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্যের নেতৃত্বের মধ্যে একধরনের বিভাজন তৈরির চেষ্টা চলছে। যেটি ইতোমধ্যে একটি গুঞ্জন সৃষ্টি করেছে। 

সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, বিএনপির নেতাকর্মীরা ইতোমধ্যে নির্বাচনমুখী হয়েছেন। তফসিল ঘোষণা হলে দলটির একটি বড় অংশকে আন্দোলনের মাঠে পাওয়া যাবে না। নির্বাচন নিয়ে তারা ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। সে ক্ষেত্রে যে ধরনের দাবিদাওয়া নিয়ে তারা আন্দোলন করতে চাইছে, তা মাঠে মারা যাবে। 

তবে সরকারের এ ধরনের কৌশল আমলে নিয়েই বিএনপি তাদের পরিকল্পনা সাজাচ্ছে। আলাপ-আলোচনার পথ খোলা রেখে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি আদায় করতে চায় তারা। নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের দিনগুলোতে কর্মসূচিমুখর থাকতে পারে রাজনৈতিক অঙ্গন।

 


আরো সংবাদ



premium cement