২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিএনপির বৃহত্তর জোটের মোকাবিলায় ১৪ দলীয় জোট কতটুকু সমর্থ?

রাজনীতি
জাতীয় নির্বাচনের আগে চারটি ছোট দলের নেতাদের ঘনঘন দেখা যাচ্ছে এক মঞ্চে। - ছবি : বিবিসি

জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের কর্মসূচি। জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম জানিয়েছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত তারা এই কর্মসূচি চালিয়ে যাবে।

আওয়ামী লীগের জন্য এই জোট কতোটা গুরুত্বপূর্ণ?
এ বিষয়ে ১৪ দলের শরীক বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের একাংশের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগের জন্য অন্যান্য শরীক দলগুলো গুরুত্বপূর্ণ বলেই প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার বলেছেন যে ১৪ দল নিয়েই তিনি নির্বাচন যাবেন। কেননা জোটের প্রতিটি দল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রশ্নে স্বাভাবিকভাবে এসব দল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’

মুক্তিযুদ্ধের এই চেতনা এবং দেশের সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখার জন্য ১৪ দলীয় জোটকে খুবই প্রাসঙ্গিক এবং প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন শরীফ নুরুল।

১৪ দলীয় জোটের সামর্থ্য
বিএনপি নতুন করে যে বৃহত্তর জোট তৈরির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে দলটির পক্ষ থেকে যদি কোন কর্মসূচি দেয়া হয়, সেটা মোকাবিলা করার মতো সামর্থ্য ১৪ দলের কতোটা আছে?

এমন প্রশ্নের জবাবে জাসদ নেতা শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, ‘বিএনপি বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলন করলেও তারা কোনটাতেই তেমন সফল হতে পারেনি। কেননা ১৪দলকে আলাদাভাবে রাজপথে মোকাবিলা করার মতো পরিস্থিতি বিএনপির নেই।’

তার মতে, নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের যথেষ্ট জনপ্রিয়তা আছে এবং সে জনপ্রিয়তা নিয়ে তারা বিএনপিকে নির্বাচনে মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে।

এছাড়া সরকার আইনের শাসন রক্ষা করতে গিয়ে যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে সেগুলো মোকাবিলা করতে গিয়ে বিএনপি দাঁড়াতে পারছে না বলেও তিনি মনে করেন।

বিএনপি ইতোমধ্যেই ২০ দলীয় যে জোট গঠন করেছে সেটার ভেতরে জামায়াতে ইসলামীকে রাখাও বিএনপির পতনের অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেন শরীফ নুরুল।

জোটের প্রভাব
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ১৪ দলীয় জোটের আদতে প্রভাব কতোটা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে রাজনৈতিক ইস্যু মোকাবিলায় ১৪ দলের যথেষ্ট সামর্থ্য রয়েছে।’

এজন্য জোটের তিনটি মূলভিত্তির কথা তুলে ধরেন তিনি। সেগুলো হল-

প্রথমত, উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে অবস্থান।

দ্বিতীয়ত, উন্নয়নমূলক কাজের ভিশন।

তৃতীয়ত, সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থান।

এই বিষয়গুলো সামনের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করবে বলে তিনি মনে করেন।

তবে ১৪ দলীয় জোটের সবগুলো দল সক্রিয় না থাকায় তাদের নিয়ে প্রধান সমালোচনার জায়গাটি হল, দলগুলোর এক ধরণের আওয়ামী লীগ নির্ভরতা রয়েছে।

সেই জায়গা থেকে এই বৈশিষ্ট্যগুলো রক্ষা করা কতোটা সম্ভব, এমন প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক।

সেক্ষেত্রে সমস্যাগুলোকে বিভিন্ন কর্মসূচি ও কর্মপন্থার মাধ্যমে অবশ্যই নিষ্পত্তি করা হবে বলে জানিয়েছেন এই জাসদ নেতা।

বিএনপি নির্বাচনে না এলে এসব বাম দলগুলোর গুরুত্ব বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

তবে সরকার প্রতিটা রাজনৈতিক ইস্যুকে যেভাবে মোকাবিলা করছে। রাজনৈতিক দলগুলো থেকে কিন্তু সেভাবে কিছু করা হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।

তবে তার আশা যে ঘাটতিগুলো আছে সেগুলো নির্বাচনের সময় পূরণ হয় যাবে।

কারণ নির্বাচন দলের পক্ষ থেকেই হবে। নির্বাচন তো আর সরকার করবে না। সেক্ষেত্রে এই ঘাটতিগুলো থাকার কোনো সুযোগ নেই।

আরো পড়ুন :
নির্বাচনের আগে ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর বড় শর্ত
বিবিসি বাংলা, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮
বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের আগে সাধারণত: ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলোকে বড় কোন দল বা জোটের সঙ্গে যুক্ত হতে দেখা যায়।

তবে এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেখা যাচ্ছে, ছোট ছোট কয়েকটি রাজনৈতিক দল নিজেরাই আলাদা একটি জোট গঠন করে সেখানে বড় দলগুলোকে যোগ দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।

জাতীয় ঐক্য নামে তাদের এই জোটে যোগ দিতে সংসদের অর্ধেক আসন ছোট দলগুলোকে ছেড়ে দেয়ার কথাও বলা হচ্ছে নতুন ঐ জোট থেকে।

কিন্তু ছোট দলগুলো থেকে কেন এরকম উদ্যোগ নেয়া হলো? আর রাজনীতিতে এসব দলের গুরুত্বই বা কতটা?

বিকল্প ধারা, নাগরিক ঐক্য, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) এবং গণফোরাম -সম্প্রতি ছোট ছোট এই ৪টি দলের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐক্য নামে আলাদা একটি রাজনৈতিক জোট গঠনের ঘোষণা নিয়ে এখন চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে তুমুল আলোচনা।

জোটের নেতারা বেশ কয়েকটি শর্ত দিয়ে এই জোটে যুক্ত হতে বড় দলগুলোকেও আহ্বান জানাচ্ছেন।

এই ঐক্য প্রক্রিয়ার মূল উদ্যোক্তা বিকল্প ধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলছেন, তাদের এই ঐক্য প্রক্রিয়া নির্দিষ্ট কোন দলের জন্য নয়।

আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি যে কোন দলই এতে অংশ নিতে পারবে। তবে তার আগে তাদের কিছু শর্ত মানতে হবে।

বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলছিলেন, ‘আমরা রাজনীতিতে ও দেশ শাসনে একটা গুণগত পরিবর্তন আনতে চাই। আমরা চাই, আগামী নির্বাচনের পর কোন একক দলের কাছে যেন ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত না হয়। নির্বাচনের আগেই যদি আমরা সে বিষয়ে ঐকমত্যে পৌছাতে না পারি তাহলে তো বড় কোন দলের সঙ্গে জোট করে কোন লাভ নেই। নির্বাচনের পর সেই বড় দল জয়ী হলে তারা স্বেচ্ছাচারিভাবেই দেশ পরিচালনা করবে।’

তিনি জানান, তাদের এই জোট এখনো বড় কোন দলের সঙ্গে যুক্ত হয়নি। তাদের দেয়া শর্তগুলো মানলেই কেবল সেটা সম্ভব হবে, কিন্তু সেসব শর্ত কী?

‘প্রথমত: আওয়ামী লীগ বা বিএনপি যে দলের সঙ্গেই জোট হোক, তাদেরকে সংসদের অর্ধেক আসন ছেড়ে দিতে হবে ছোট দলগুলোর জন্য। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য আনতে হবে। মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতেও শরীকদের সুযোগ দিতে হবে। দুর্নীতি বন্ধের অঙ্গিকার করতে হবে। এসব কথা আমরা এখন সবখানেই বলে আসছি।'’

কিন্তু এসব শর্ত, বিশেষ করে সিট বন্টনের মতো কঠিন শর্ত বড় দলগুলোর কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে?

রাজনৈতিক বিশ্লেষক দিলারা চৌধুরী বলছিলেন, ‘সিট বন্টনের মতো শর্ত বড় কোন দলই মানবে না। বিএনপি এ জোটের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। কিন্তু অর্ধেক আসন শরীক ছোট দলগুলোকে ছেড়ে দেয়ার শর্ত মেনে সেটা সম্ভব বলে মনে হয় না।’

অবশ্য বদরুদ্দোজা চৌধুরী জানিয়েছেন, তারা বিএনপি'র কাছে ইতোমধ্যে প্রস্তাবগুলো তুলে ধরেছেন।

কিন্তু বিএনপি থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।

এদিকে ঐক্য প্রক্রিয়ায় থাকা আরেক দল গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন জানিয়েছেন, বিএনপি-আওয়ামী লীগের বাইরে তৃতীয় একটি জোট হিসেবেও নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি আছে তাদের।

তিনি বলছিলেন, ‘আমরা কখনোই এমন কোন দলের সঙ্গে জোট করবো না, যারা মনে করে যে আমরা নিজেদের মতো করে দেশ চালাবো, আমরা দুর্নীতি করলে তোমরা নিরব থাকবে। সেরকমটা হলে তারা আমাদেরকে সঙ্গে পাবে না।’

মি. কামাল জানিয়েছেন, সংসদ, রাজনীতি এবং দেশের শাসন পদ্ধতি নিয়ে তাদের যে বক্তব্য সেগুলো তারা সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরছেন।

কিন্তু সাধারণ মানুষ এসব নিয়ে কতটা কী ভাবছেন?

রাজধানীর শাহবাগে কথা হচ্ছিলো আব্দুল আলিম নামে একজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে।

তিনি বলছিলেন, ‘ছোট দলগুলো যেসব কথা বলছে, এগুলো সবই ভালো কথা। কিন্তু এগুলো বাস্তবায়নের জন্য তো তাদের ক্ষমতায় আসতে হবে? তাদের কী সেরকম জনপ্রিয়তা আছে?’

মৌসুমী নামে আরেকজন কর্মজীবী নারী বলছিলেন, ‘ছোট দলগুলো চাচ্ছে নতুন কিছু করতে। এজন্য তাদের সবার আগে জনগণের কাছে আসা উচিত। তাদের ইশতেহার বা পরিকল্পনা আমাদের কাছে তুলে ধরতে হবে। সেটা তো হচ্ছে না।’

ছোট দলগুলো বলছে, তাদের প্রস্তাবনা চূড়ান্ত করে শিগগিরই তারা রাজনীতির মাঠে নামবেন। আলোচনা চলবে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও।

কিন্তু ভোটের রাজনীতিতে ছোট দলগুলোর এই জোট আসলে কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে?

রাজনৈতিক বিশ্লেষক দিলারা চৌধুরী বলছেন, ‘এই ছোট দলগুলোর বড় কোন ভোট ব্যাংক নেই এটা সত্য। কিন্তু দলগুলোর যে মূল নেতারা আছেন, তাদের সম্পর্কে মানুষের একটা ভালো ধারণা আছে। এখন তারা যদি বড় কোন দলের সঙ্গে জোট করতে পারেন, তাহলে নিঃসন্দেহে তারা বাড়তি কিছু ভোট টানতে পারবেন।’


আরো সংবাদ



premium cement
জিম্বাবুয়ে সিরিজের জন্য ক্যাম্পে ডাক পেলেন ১৭ ক্রিকেটার, নেই সাকিব-মোস্তাফিজ উত্তর গাজায় আবারো ইসরাইলের গোলাবর্ষণ ধামরাইয়ে তাপদাহে জনজীবন কাহিল, ডায়রিয়াসহ জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ মিয়ানমার থেকে দেশে ফিরছেন ১৭৩ বাংলাদেশী কেএনএফ সন্দেহে ছাত্রলীগ নেতাসহ কারাগারে ৭ স্থিতিশীল সরকার থাকায় দেশে উন্নয়ন হয়েছে : ওবায়দুল কাদের ক্যাসিনো সম্রাট সেলিম প্রধানের মনোনয়নপত্র বাতিল রাজশাহীর পদ্মায় গোসলে নেমে ৩ শিশুর মৃত্যু দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা : ৫ ঘণ্টা অবরুদ্ধ ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়ক দুমকিতে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে সভাপতির নির্দেশে ক্লাস চালু সিদ্ধিরগঞ্জে দেশীয় অস্ত্রসহ ৩ ডাকাত গ্রেফতার

সকল