আন্তর্জাতিক চাপ নিয়ে কৌতূহল
- হারুন জামিল
- ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৪:৩৭, আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৪:৩৯
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ কতটুকু এবং সে চাপ তারা কিভাবে সামাল দিচ্ছে তা নিয়ে জনমনে কৌতূহল বাড়ছে। নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক করতে উন্নয়ন সহযোগীরা সরকার ও বিরোধী উভয়পক্ষের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশের চলমান রাজনীতি এবং নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতা ও বিভিন্ন বক্তব্য তারা সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করছে। আমেরিকা, ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিয়ে সরব। তারা ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। প্রতিবেশী ভারতও জানিয়েছে, বাংলাদেশের নির্বাচন একান্ত সে দেশের নিজস্ব ব্যাপার। ভারত এ নির্বাচনে কোনো হস্তক্ষেপে বিশ্বাস করে না।
বাইরের দেশগুলোর বাংলাদেশের নির্বাচন সম্পর্কে যখন এই মনোভাব তখন দেশের অনেকেই বিশ্বাস করেন, নির্বাচনের আগে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে একটি সমঝোতা হতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারের কঠোর মনোভাব তাদের অনেকেরই আশাভঙ্গের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই সাথে আরো একটি একতরফা নির্বাচনের আশঙ্কাও ক্রমে ঘনীভূত হচ্ছে।
সরকার ও বিরোধী দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, উভয়পক্ষই নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সরকারি দল আওয়ামী লীগ তাদের প্রার্থিতা বিষয়ে ইতোমধ্যে প্রাথমিক জরিপ সম্পন্ন করেছে। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে ধরে নিয়েই তারা বিতর্কিত ও অজনপ্রিয় প্রার্থীদের তালিকা থেকে বাদ রাখছে। বিএনপি এবং তার জোট শরিকরাও বিজয়ের সম্ভাবনা আছে এমন প্রার্থীদের নিয়েই তালিকা তৈরি করছে। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হলে যারা বিজয়ী হতে পারবেন তাদেরই তালিকায় রাখা হচ্ছে। বিএনপি মনে করছে নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে সরকার দাবি মানতে বাধ্য হবে। আওয়ামী লীগের মনোভাব ঠিক উল্টো। বিএনপি আগামী নির্বাচনে তাদের প্রয়োজনেই অংশ নেবে বলে তারা বিশ্বাস করে। সে ক্ষেত্রে বিএনপির দাবিগুলোকে আমল দেয়ার পরিবর্তে তারা তাদের চাপে ফেলার কৌশল নিয়েই এগোচ্ছে। তবে নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি একাধিক বিকল্প নিয়েই অগ্রসর হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর দিলারা চৌধুরীর কাছে বর্তমান পরিস্থিতি জানতে চাইলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, আমার কাছে পরিবেশ বেশ ঘোলাটে মনে হয়। নির্বাচন প্রায় এসে গেছে। কিন্তু সরকারকে দেখা যাচ্ছে হার্ডলাইনে। নির্বাচনের আগে তারা বিরোধী দলকে কোনো ছাড় দেবে বলে মনে হয় না। নির্বাচনে বিএনপির অবস্থান কী তাও খুব বেশি পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে না। তবে তারা যে নির্বাচনে যেতে চায় এটা স্পষ্ট। কিন্তু সরকার কোনো ছাড় না দিলে কী হবে? তারা কী করবে? সেটাই প্রশ্ন। নির্বাচনে বিএনপির একটি অংশ যেতে চায় বলে মনে হয়। কিন্তু এ নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হলে বিভক্তির আশঙ্কা রয়েছে। এ থেকে বেরিয়ে আসার পথ বেশ কঠিন।
দিলারা চৌধুরী আরো বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার চাইবে একটি নির্বাচন করতে এবং সেটা তাদের মতো করে। তবে তারা এ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে কতটা সক্ষম হবে সে ক্ষেত্রে সন্দেহ পোষণ করে তিনি বলেন, ২০১৪ সালে ভারত যেভাবে আওয়ামী লীগের পাশে দাঁড়িয়েছিল এবার তা করবে কি না এখনো স্পষ্ট নয়। নির্বাচনে ভারতের ভূমিকাকে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে খ্যাতিমান এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জানান, ভারত যদি তাদের পাশে অতীতের মতো থাকে তবে আওয়ামী লীগ একটি নির্বাচন করে ফেলবে। এটা খুবই দুঃখজনক যে দেশের রাজনীতি এখন আর আমাদের হাতের নাগালে নেই। একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলকে কোণঠাসা করে তারা যেভাবে পরিস্থিতি সামলে নিচ্ছে তা বিস্ময়কর। তিনি বলেন, সরকারের প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে বিএনপিকে ক্ষমতার বাইরে রাখা। বাংলাদেশে অতীতে আমেরিকার যে ভূমিকা ছিল এখন তা দৃশ্যমান নয়। আমেরিকা ও ভারতের ভূমিকার মধ্যেও দৃশ্যত কোনো তফাৎ দেখেন না তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রফেসর ও গবেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলছিলেন, আমাদের দেশে যে নির্বাচনগুলো অনুষ্ঠিত হয় তা এখানকার স্টেকহোল্ডাররাই মূলত নির্ধারণ করেন। তবে অন্যান্য দেশ কিংবা প্রতিবেশী যেই হোক তাদেরও আগ্রহ থাকে। বিশ্বায়নের এই যুগে সেটাই স্বাভাবিক। আমরাও অন্য দেশের নির্বাচনে আগ্রহী থাকি। পরিস্থিতি তখনই অস্বাভাবিক হয় যখন আমরা দেখি কেউ হস্তক্ষেপের সুযোগ নেয়। এবার যেমন আমেরিকার নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু তথ্য প্রমাণ ছাড়া তো এ কথা বলা মুশকিল। প্রফেসর ইমতিয়াজ মনে করেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিএনপি উভয়ই অংশ নেবে। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, নির্বাচন গ্রহণ বর্জন নিয়ে উভয় দলেরই অভিজ্ঞতা প্রচুর। কোন দেশ কি বলল আর কি বলল না সে দিকে শেষ পর্যন্ত খেয়াল নাও থাকতে পারে। নিজেদের নির্বাচন নিয়ে বিশেষ কোনো দেশকে গুরুত্ব দেয়ার কিছু নেই। সব কিছু ঠিক করতে হবে আমাদেরই। এ দেশের রাজনীতিবিদরা নিজস্ব সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম বলেই মনে করেন তিনি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা