১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চিকিৎসা দেওয়া হলে ট্রায়াল ফেস করবেন খালেদা জিয়া

বেগম খালেদা জিয়া - সংগৃহীত

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাথে কারাগারে দেখা করেছেন তার চারজন শীর্ষ আইনজীবী। শুক্রবার সন্ধ্যায় খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করে তার আইনজীবী জয়নাল আবেদীন কারাফটকের সামনে সাংবাদিকদের বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার অবস্থা খুবই খারাপ। জরুরী ভিত্তিতে তার চিকিৎসা করা দরকার। তার বামসাইড প্যারালাইসডের দিকে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ম্যাডাম বলেছেন আপনারা আইনগতভাবে মোকাবেলা করুন, আগে আমাকে বাঁচতে হবে। আমার চিকিৎসা দরকার। তিনি বলেন, সরকারকে আমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বলেন। তারপর তারা বিচার করুক।

জয়নাল আবেদীন বলেন, ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) আমাদের বলেছেন, তিনি ট্রায়াল ফেস করতে প্রস্তুত কিন্তু আগে তার চিকিৎসা দরকার। তার শরীরের অবস্থা খুবই খারাপ। কারাগারে তাকে তিলে তিলে ধ্বংস করা হচ্ছে।

শুক্রবার বিকেল ৫টায় রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়ার সাথে তারা দেখা করতে যান। বেলা পোনে ৬টায় কারাগার থেকে বেরিয়ে আইনজীবীরা জানান, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ। তার শরীরের একপাশ প্যারালাইজড হয়ে যাচ্ছে। বাম চোখ ফুলে গেছে। চোখে ঝাঁপসা দেখছেন। তিনি এতটাই শুকিয়ে গেছে যে শরীর শরীরে এক ছটাকও মাংস নেই। এই অমানবিক অবস্থায় কিভাবে তার বিচার হয়।

কারাবন্দি খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করতে যাওয়া আইনজীবীরা হলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, আব্দুর রেজ্জাক খান, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন।

জয়নুল আবেদীন বলেন, তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার আইনগত দিক দেখা যাবে, আগে তার চিকিৎসা করা দরকার। চিকিৎসার ব্যবস্থা না করা হলে তিনি পুরোপুরভাবে প্যারালাইসড হয়ে যেতে পারেন। তার বাম চোখ ফুলে গেছে, চোখে ঝাঁপসা দেখছেন। কারাকর্তৃপক্ষকে তিনি অসুস্থতার কথা জানিয়েছেন কিন্তু কারাগারে তার চিকিৎসা সম্ভব নয়। তাকে অবিলম্বে বিশেষায়িত কোনো হাসপাতাল- ইউনাইটেড বা অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করার দরকার যদি তাকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়।

কারাগারে মামলার বিচার সম্পার্কে আপনাদের কি পরামর্শ দিয়েছেন? জানতে চাইলে জয়নুল আবেদীন বলেন, মামলার বিষয়ে পরামর্শ হয়েছে। তিনি আমাদের বলেছেন, আপনারা আইনগতভাবে মোকাবেলা করুন, আগে আমাকে বাঁচতে হবে। আমার চিকিৎসা দরকার। দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, আমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বলেন। সরকারকে বলেন আগে চিকিৎসা করতে। তারপর তারা বিচার করুক।

খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করে তার আইনজীবী জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়ার বাম চোখ ফুলে গেছে। এছাড়া তার বাম হাত তিনি নাড়াচাড়া করতে পারছেন না। এমন অবস্থায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে বিশেষায়িত কোনো হাসপাতাল কিংবা ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন তিনি। তা না হলে খালেদা জিয়া প্যারালাইজড হয়ে যেতে পারেন বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।

জয়নাল আবেদীন বলেন, খালেদা জিয়ার সারা শরীরে ব্যথা। অবিলম্বের তার চিকিৎসা দরকার।
জয়নাল আবেদীন বলেন, ম্যাডাম পরিস্কারভাবে বলেছেন- এ মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে করা হয়েছে এবং বিচার করা হচ্ছে। তিনি কথা বলতে পারছেন না। চোখে দেখতে পারছেন না। তার শরীরে এক ছটাকও মাংস নেই।

তার অবস্থা খুবই অমানবিক, এ অবস্থায় কিভাবে আদালতে এনে তার বিচার করা হচ্ছে। আমরা ভাবিনাই বেগম খালেদা জিয়াকে এ অবস্থায় দেখব। প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার জমীর উদ্দিন সরকারের সাথে তিনি কথাই বলতে পারেনি। তিনি বলেছেন, ম্যাডাম এ অবস্থায় কিভাবে অপনার সঙ্গে কথা বলব। তিনি চিকিৎসা ব্যবস্থা করতে বলেছেন।

গত ৫ সেপ্টেম্বর পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের একটি কক্ষে অস্থায়ী আদালতে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানি হয়। ওই শুনানিতে হুইল চেয়ারে করে আদালতে হাজিরা দেন খালেদা জিয়া। ওইদিন তিনি আদালতে জানিয়েছিলেন, তার শারীরিক অবস্থা ভালো না। আমার পা ফুলে গেছে। ডাক্তার বলেছে, পা ঝুলিয়ে রাখা যাবে না। বাম হাত প্যারালাইজড, বাম পায়ে প্রচ- ব্যাথা, পা ফুলে গেছে। হাঁটতে পারি না।

এভাবে বসে থাকলে আমার পা ফুলে যাবে। আদালতকে তিনি বলেন, ডাক্তারের রিপোর্ট দেখলে আপনা বুঝবেন আমি কতটা অসুস্থ। ডাক্তার আমাকে পা সব সময় উঁচু করে রাখতে বলেছেন। হাতেও প্রচ- ব্যথা। আমাকে জোর করে এখানে আনা হয়েছে। আমি খুবই অসুস্থ। আমি ঘন ঘন কোনো হাজিরা দিতে পারব না। আমার হাত-পা প্যারালাইজড হয়ে যাচ্ছে। আমার সিনিয়র কোনো আইনজীবী আসেনি। এটা জানলে আমি আসতাম না। আপনাদের যা মনেচায় যতদিন ইচ্ছা সাজা দিতে পারেন, আমি অসুস্থ, এ অবস্থায় বার বার আসতে পারব না। ন্যায়বিচার এখানে হবে না। এখানে আমি ন্যায় বিচার পাব না।

 


আরো সংবাদ



premium cement