২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

আন্দোলনে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বিএনপির

আন্দোলনে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে বিএনপির - ছবি : সংগৃহীত

দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনে নামার আগে রাজধানীতে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বিশাল সমাবেশ বিএনপির আত্মবিশ্বাস অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে। দলটির নেতারা বলেছেন, সমাবেশ থেকে তারা দু’টি বার্তা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। এক. খালেদা জিয়া জেলে থাকা সত্ত্বেও তাকে কেন্দ্র করেই বিএনপি এখন আরো বেশি ঐক্যবদ্ধ ও সুসংগঠিত। দুই. তারা আগামী দিনে যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত। 

৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শনিবার জনসভা করেছে বিএনপি। সমাবেশে নেতাকর্মী-সমর্থক ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল উল্লেখ করার মতো। নয়াপল্টনের সামনের প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তার পুরোটাই ছিল সমাবেশে আগত মানুষে ঠাসা। নেতাকর্মীদের মধ্যেও লক্ষ করা গেছে তেজোদীপ্ত অবস্থা। সমাবেশ চলাকালে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়ে সিনিয়র নেতাদের দেয়া বক্তব্যকে তারা সমর্থন করেছেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে। 


গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে পারেনি বিএনপি। দলটির সভা-সমাবেশ ঘিরে এক ধরনের নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা আরোপ করে রেখেছিল সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রকাশ্য সমাবেশ তো দূরের কথা, ঘরোয়া বৈঠক থেকেও নেতাকর্মীদের আটকের ঘটনা ঘটেছে বহু। গত ৮ ফেব্রুয়ারি দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকে দলটির মানববন্ধন, অনশন কর্মসূচিতেও ছিল কঠিন কড়াকড়ি। এসব কর্মসূচি চলাকালে টেনে-হিঁচড়ে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করতে দেখা গেছে। দীর্ঘ আড়াই বছর পর ২৩ শর্তে গত জুলাইয়ে পল্টনে সমাবেশের অনুমতি পেয়েছিল বিএনপি। সেটি সুশৃঙ্খল ছিল। শনিবারের সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয় বিনা শর্তে। সরকারের তরফ থেকে এটাকে নমনীয়তা বলা হলেও বিএনপি বলছে, বাস্তবতা অনুধাবন করেই সভার অনুমতি দিতে সরকার বাধ্য হয়েছে। 

বিএনপি নেতারা বলেছেন, সভা-সমাবেশ ঘিরে বিধিনিষেধের প্রেক্ষাপটে নতুন করে স্পেস পেয়ে নেতাকর্মীরা বাঁধ ভাঙা জোয়ারের মতো দলে দলে মিছিলে স্লোগানে জনসভায় যোগ দিয়েছেন। এটা স্পষ্ট যে, নির্বাচন কাছাকাছি থাকায় নেতাকর্মীরা আবারো পরিবর্তনের আশায় বুক বেঁধেছেন। 

বিএনপির সমাবেশ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, প্রথমত সরকার বিএনপিকে অনেক দিন ধরেই কোনো রকম রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে অনুমতি দিচ্ছিল না। সরকার তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের এবার অনুমতি দিয়েছে এটি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। দ্বিতীয়ত বিরোধী দল ছাড়া গণতন্ত্র হয় না। আর শক্তিশালী বিরোধী দল ক্রিয়াশীল গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য।

তিনি বলেন, বিরোধী দলের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেই সরকার বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে। তারা বড় সমাবেশ করেছে, যা শান্তিপূর্ণ ছিল। কোনো বিশৃঙ্খলা হয়নি, সহিংসতা হয়নি। এটাও ইতিবাচক।

জনসভায় বিএনপি নেতারা আসন্ন সাধারণ নির্বাচন নিয়ে দলের অবস্থান পরিষ্কার করার চেষ্টা করেছেন। বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা প্রধানত তিনটি দাবি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। এক. খালেদা জিয়াকে দ্রুত মুক্তি দিতে হবে, দুই. নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করার আগে সংসদ ভেঙে দিয়ে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। সফল সমাবেশের পর আগামী দিনে এসব দাবিতে দলের আন্দোলন কমসূচি সফল হবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেছেন। 

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সারা দেশে নেতাকর্মী গ্রেফতার, বাসায় তল্লাশিসহ নানামুখী শঙ্কার মধ্যে বিএনপির সমাবেশে লাখো মানুষের উপস্থিতি বলে দেয় তারা সরকারের দুঃশাসন থেকে মুক্তি চায়। নির্দলীয়, নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং গণতন্ত্রের মা খালেদা জিয়ার মুক্তি চায়। তিনি বলেন, হাজার হাজার মামলা দিয়ে এবং কারান্তরীণ করে নেতাকর্মীদের মনোবল তারা ভাঙতে পারেনি। বরং তারা শাণিত হয়ে উঠছেন। তিনি বলেন, নেতাদের বন্দী রাখা হলেও কর্মীরাই নেতার ভূমিকা পালন করবে। বিএনপির শক্তির উৎস জনগণ। 

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, কেবল দলের নেতাকর্মী-সমর্থকরাই নয়, বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষও বিএনপির বিশাল সমাবেশ দেখে অনুপ্রাণিত। তারা দেশের বর্তমান সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে বিরোধীদলের এমন শক্তিশালী অবস্থানই দেখতে চায়। তিনি বলেন, বিএনপি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়েই ক্ষমতার পরিবর্তন চায়। ইতোমধ্যে পরিবর্তনের সেই বাতাস বইতে শুরু করেছে। 

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শিগগিরই খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার হবে বিএনপি। সপ্তাহখানেকের মধ্যেই নতুন কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে। বিএনপি এককভাবে অথবা বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের ব্যানারে ঘোষিত কর্মসূচি পালন করতে পারে।  


আরো সংবাদ



premium cement