২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আন্দোলন দমাতে ধরপাকড়!

ধরপাকড় - ছবি : সংগৃহীত

আবার সারা দেশে শুরু হচ্ছে ধরপাকড়। এবার রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা এর শিকার হবেন। সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে দেশজুড়ে তালিকা ধরে পুলিশ এই অভিযান শুরু করবে। বিশেষ করে যাদের বিরুদ্ধে মামলা অথবা গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে তাদেরকেই খুঁজবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০-দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা যাতে রাস্তায় নামতে না পারেন সেজন্য আগেভাগেই এই পদক্ষেপ বলে অনেকে মনে করছেন।
আগামী ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বড় ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। দলের বাইরে ২০-দলীয় জোটের নেতাকর্মীরাও ওই কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। ইতোমধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে সমাবেশ করার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। একাধিক গোয়েন্দা সূত্র বলেছে, তাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে তাতে ওই কর্মসূচির পরই ব্যাপক আন্দোলনে যেতে পারে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট। ইতোমধ্যে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাঠপর্যায়ের সদস্যদের তথ্য সংগ্রহের জন্য বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী কাজও শুরু করেছেন গোয়েন্দারা।
পুলিশের শীর্ষপর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, তারা মাঠপর্যায়ের প্রতিবেদনের অপেক্ষা করছেন। বিএনপি কোন ধরনের কর্মসূচি নিতে যাচ্ছে তার ওপর নির্ভর করবে অনেক কিছু। মাঠপর্যায়ের প্রতিবেদন থেকে যদি মনে হয়, বিএনপিসহ ২০-দলীয় জোট আন্দোলনের নামে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায় তাহলে তা নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এই নেতাকর্মীদের ব্যাপারে আগের যে তালিকা রয়েছে সে তালিকায় আরো অনেকের নাম অন্তর্ভুক্ত হবে। যাদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে তাদেরকে গ্রেফতার করা হবে। 
একাধিক সূত্র বলেছে, সেপ্টেম্বরের শুরু থেকেই ২০-দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযানের সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। এই অভিযান ১ সেপ্টেম্বরের আগেও শুরু হতে পারে। তালিকা ধরে ধরে এই গ্রেফতার অভিযান চলবে। অনেকের ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া শুরু করেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। পিরোজপুরের এক যুবদল নেতা জানান, তিনি পাঁচ বছর ধরেই ঢাকায় অবস্থান করছেন। তার বিরুদ্ধে মোট ১৪টি মামলা রয়েছে। কয়েকবার গ্রেফতারও হয়েছেন। এখন গ্রেফতার এড়ানোর জন্যই ঢাকায় অবস্থান করছেন। দেখা যায় গ্রেফতার হলেই একের পর এক পেন্ডিং মামলার আসামি হতে হয়। ওই নেতা জানান, সম্প্রতি পুলিশ আবার তার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নেয়া শুরু করেছে। এমনকি, ঢাকার ঠিকানা খুঁজে বের করারও চেষ্টা চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। যে কারণে আজ এখানে কাল ওখানে অবস্থান করতে হচ্ছে। ওই যুবদল নেতা বলেন, খুবই মানবেতর জীবন যাপন করছেন তিনি। একের পর এক মামলায় তার পরিবারও এখন দিশেহারা। 
ঢাকার কামরাঙ্গিরচরের এক বিএনপি নেতা বলেন, গত কয়েক মাস তিনি একটু ঝামেলামুক্ত ছিলেন। পুলিশ তেমন খোঁজাখুঁজি করেনি। এখন আবার খোঁজাখুঁজি শুরু করেছে। বাড়ির সামনে সাদা পোশাকের লোকজনের ঘোরাঘুরি বেড়েছে। আশপাশের মানুষের কাছে তার সম্পর্কে জানতে চাইছে। ওই নেতা বলেন, হয়তো আবারো গ্রেফতারের প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ।
এ দিকে, রাজনৈতিক মামলাগুলোর পাশাপাশি নতুন করে অনেককে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে উসকানি প্রদানের মামলায় জড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে ২০-দলীয় জোটের অন্তর্ভুক্ত দলগুলোর ছাত্রসংগঠনগুলোর অনেক নেতাকর্মী উসকানি প্রদানের মামলায় আসামি হয়েছেন। এলাকায় নেই এমন অনেকেই মামলার আসামি হয়েছেন। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের এক নেতা দেড় বছর ধরে গুলশানের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। ওই নেতাকে উসকানি প্রদানের মামলার আসামি করা হয়েছে। যে কারণে কোরবানির ঈদে তিনি বাড়িতেও যেতে পারেননি। ওই নেতার ভাই জানিয়েছেন, পুলিশ তাদের বাড়িতে গিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে। 
বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন, দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা গ্রেফতার হচ্ছেন। তাদের বিরুদ্ধে নতুন মামলা হচ্ছে। অনেকে বছরের পর বছর এলাকায় যেতে পারছেন না। বাড়িঘরে অবস্থান করতে পারছেন না। রাজনৈতিক কোনো ঘটনা ঘটলেই তারা এলাকায় না থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। এভাবে অনেকের বিরুদ্ধে ডজনে ডজনে মামলা রয়েছে। এর মধ্যেও জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা নিজ নিজ এলাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ সময় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতার অভিযান চলবে এটাই স্বাভাবিক। 
নেতারা বলেছেন, কর্মসূচি শুরু হলে গ্রেফতার অভিযানও শুরু হবে। অতীতেও তারা দেখেছেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট যখনই কোনো কর্মসূচি দিয়েছে; তখনই গ্রেফতার অভিযান শুরু হয়েছে। সদ্যসমাপ্ত কয়েকটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময়ও বিএনপি প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের ব্যাপকহারে গ্রেফতার করা হয়েছে। দেখা গেছে, এক এলাকায় গ্রেফতার হয়েছে, কিন্তু গ্রেফতার দেখানো হয়েছে অন্য কোনো এলাকায়। কয়েকজন নেতা বলেছেন, গ্রেফতারে তাদের কোনো ভয় নেই। ভয় হলো গুম-খুনের। কারণ অনেক নেতাকর্মীরই বছরের পর বছর কোনো হদিস নেই।


আরো সংবাদ



premium cement