১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা - ফাইল ছবি

আগামী অক্টোবরের শেষে অথবা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে। সে অনুযায়ী ডিসেম্বরের শেষ দিকে নির্বাচন অনুুষ্ঠিত হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বিএনপি আসুক আর না আসুক বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় দিবে না সরকার। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

সূত্রগুলো জানায়, বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তবে নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভা অনেক ছোট করা হবে; যার প্রধান থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যেকোনো রাজনৈতিক দলকে এ বিষয়টি মেনে নিয়েই নির্বাচনে আসতে হবে। আর শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে কোনো দল না এলে সেখানেও কিছুই করার থাকবে না।

এ দিকে বিএনপি চেয়ারপারসন কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বাইরে রেখেই নির্বাচন করতে চায় সরকার। সেই লক্ষ্যে নানা ধরনের ছকও তৈরি করা হচ্ছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়া বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। অন্যদিকে তারেক রহমানকে মানিলন্ডারিংয়ের মামলায় সাত বছরের জেল দেয়া হয়েছে। তিনি বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন।

আগামী নির্বাচনের আগেই তাদের বিরুদ্ধে চলমান আরো একাধিক মামলার রায় হতে পারে। ইতোমধ্যেই সাজা হওয়ায় আইন অনুযায়ী মা ও ছেলে উভয়েই নির্বাচনে অযোগ্য হতে পারেন। ফলে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বাইরে রেখেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা হতে পারে।

সূত্র জানায়, কারাগারে অন্তরীণ সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া খুব অসুস্থ। সে জন্য বেশ কিছুদিন ধরে বেসরকারি হাসপাতালে তার সুচিকিৎসা দাবি করে আসছে বিএনপি। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়াকে জামিন অথবা প্যারোলের মাধ্যমে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরেও পাঠানো হতে পারে।

নির্বাচনকালীন সময়ের মধ্যে সুস্থ না হলে বিদেশেই থাকতে হতে পারে তাকে। অন্য দিকে তারেক রহমান দণ্ড নিয়ে বিদেশে রয়েছেন। ইতোমধ্যেই তিনি ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন। সে জন্য বাংলাদেশী পাসপোর্টও জমা দিয়েছেন। বিষয়টি রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়েছে। তার নাগরিত্ব নিয়ে বিতর্ক করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এ অবস্থায় তিনি আপাতত দেশে ফিরছেন না বলেই ধরে নেয়া হচ্ছে। ফলে আগামী নির্বাচনে তাদের দুই জনের অংশগ্রহণের তেমন কোনো সুযোগ নেই বলে আওয়ামী লীগ ও সরকারের একাধিক সূত্র আভাস দিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, সংবিধান অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন নিয়ে প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে এনেছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে বিজয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে ইতোমধ্যে নানা কৌশল নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা। ওই কৌশলে প্রথমেই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বিজয়ের পথে বড় ধরনের বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। সে জন্য শুরুতেই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে নির্বাচন থেকে বাইরে রাখার বিষয়টি বেশ সক্রিয়ভাবে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছিল। আর, আদালতে তাদের দুইজনের সাজা হওয়ায় সরকারের জন্য তা আরো সহজ হয়ে গেল।

সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে নির্বাচনের বাইরে রাখা গেলে বিএনপি দুর্বল হয়ে পড়বে। শুধু তাই নয়, সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা দেয়া হলেও দলের দুই শীর্ষ নেতাকে বাদ দিয়ে বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে না-ও যেতে পারে। এতে আওয়ামী লীগ আগের মতো ‘একতরফা’ নির্বাচনে কোনো রকম বাধা ছাড়াই আবারো ক্ষমতায় চলে আসতে পারবে। অন্য দিকে বিএনপি যদি তাদের এ দুই শীর্ষ নেতাকে বাদ দিয়েই নির্বাচনে আসতে রাজি হয় তা হলেও ওই নির্বাচনে নেতাকর্মীদের আর তেমন কোনো আগ্রহ থাকবে না। ফলে আওয়ামী লীগ সহজেই বিজয়ী হয়ে আবারো সরকার গঠন করতে পারবে। সে জন্য নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করতে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বাইরে রাখার বিষয়টি বেশ জোরেশোরে ভাবা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, আদালত তারেক রহমানকে সাত বছরের সাজা দেয়ার পর বিএনপির মাঠ যাচাই করছিল সরকার। তারেক রহমানকে নিয়ে দলের নীতিনির্ধারকরা কী ভাবছেন, নেতাকর্মীরা শক্ত কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেন কি না এবং দেশ-বিদেশে কী ধরনের প্রতিক্রিয়া হয় তা পর্যবেক্ষণ করছিলেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা। বিষয়টি সামাল দেয়ার পর খালেদা জিয়ার বিষয়টিও খুব চ্যালেঞ্জিংভাবে সামনে চলে আসে। কিন্তু খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সাজার পর বিএনপি বড় ধরনের কোনো আন্দোলন না করায় সরকার খানিকটা অবাক হয়।

ফলে এ সাজা নিয়ে সরকারের কৌশল কিছুটা ভেস্তেও যায়। তবে সহজে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে নির্বাচনকালীন সময় কারাগারেই দেখতে চান সরকারের কর্তারা। বর্তমানে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরো ২৮টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা, গ্যাটকো, নাইকো ও বড় পুকুরিয়া মামলা অন্যতম। নির্বাচনের আগেই এসব মামলার মধ্যে আরো কয়েকটির রায় হয়ে যেতে পারে। ফলে আইনি প্রক্রিয়ায় কারাগার থেকে তার বের হওয়ার সুযোগ অনকেটাই ক্ষীণ।

সরকারের বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনে কোনোভাবেই হারতে রাজি নয় আওয়ামী লীগ। কট্টরপন্থী নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ আগামীতেও বিএনপিকে সংসদের বিরোধী দল হিসেবে দেখতে চান না। তারা এবারের মতোই কৌশলে বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রেখে জাতীয় পার্টিকে আবারো বিরোধী দল হিসেবে দেখতে চান। আর এর মাধ্যমে বিএনপি একসময় রাজনীতি থেকেই হারিয়ে যাবে বলে মনে করছেন তারা। ফলে বিএনপির দুর্বল অবস্থান আর জাতীয় পার্টির উত্থানে আওয়ামী লীগও রাজনীতিতে নিষ্কণ্টক থাকবে। এবং টানা আরো কয়েক মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে পারবে। সে জন্য খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বাইরে রেখে নির্বাচনের আয়োজন করতে চান তারা। এ অবস্থায় বিএনপি নির্বাচনে না এলে তাদের সেই উদ্দেশ্যও সফল হবে।

তবে অপেক্ষাকৃত মধ্যমপন্থী নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ নির্বাচনে সরকারের বিজয় নিশ্চিত করতে চাইলেও বিএনপিকে বাইরে রাখতে চান না। তারা বিএনপিকে সংসদে বিরোধী দল হিসেবে দেখতে চান। তাদের মতে, গতবারের নির্বাচনের প্রেক্ষাপট একেবারেই ভিন্ন ছিল। সরকারের রাজনৈতিক কৌশলের কারণে বিএনপি নির্বাচনে আসতে পারেনি, যা দেশ-বিদেশে এখনো ব্যাপক সমালোচিত। তাই বিএনপিকে এবারো নির্বাচনের বাইরে রাখা হলে দেশ-বিদেশে আরো কঠোর সমালোচনার মুখে পড়বে সরকার। এ ছাড়া বিএনপির মতো একটি বড় দলকে বাইরে রেখে জাতীয় পার্টিকে আবারো বিরোধী দলের আসনে নেয়া দেশের সাধারণ মানুষ ভালোভাবে নেবে না। এতে দেশে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। তাই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান বাইরে থাকলেও বিএনপিকে সংসদে দেখতে চান তারা। সে জন্য বিএনপির সিনিয়র নেতাদের ম্যানেজ করে হলেও নির্বাচনে আনার পক্ষে তারা। তবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে চায় শাসক দলের এই দুটি পক্ষই।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘খালেদা জিয়া এতিমের টাকা মেরে কারাগারে রয়েছেন। আদালত তাকে সাজা দিয়েছে। তিনি সাজা ভোগ করছেন। আর তারেক রহমানও দুর্নীতি করেছেন বলে আদালত তথ্য-প্রমাণ সাপেক্ষে তাকে দণ্ড দিয়েছেন। এতে আমাদের কোনো হাত নেই। আর তাদের দণ্ডের কারণে আইন অনুযায়ী তারা নির্বাচনে অযোগ্য হলে সেখানে আমাদের কিছুই করার নেই। কারণ, আইন সবার জন্য সমান। আর আদালতও সম্পূর্ণ স্বাধীন।’

দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আওয়ামী লীগ সাজা দেয়নি। সাজা দিয়েছে আদালত। তাই তিনি কবে মুক্তি পাবেন এবং আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কীনা সেটা আদালতই সিদ্ধান্ত দিবে।’

দলের অন্যতম প্রেসিডিয়াম সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে কোন দল আসলো আর কোন দল আসলো না সেটা নিয়ে ভাবার সুযোগ নেই। আর, নির্বাচন ঠেকাতে পারে পৃথিবীতে এমন কোনো শক্তি নেই।


আরো সংবাদ



premium cement
গাজা মানবিক নরকে পরিণত হয়েছে : জাতিসঙ্ঘ প্রধান রাফা হামলার পরিকল্পনা ইসরাইলের ত্যাগ করা উচিত : চীন গাজা যুদ্ধে নতুন যে কৌশল অবলম্বন করল ইসরাইল হাসপাতালের শৌচাগারে মিলল নবজাতক শিশু ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রার ঢাকা সফর স্থগিত জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিসিডিপি গঠন করা হবে : পরিবেশমন্ত্রী অননুমোদিত জমি ভরাট কার্যক্রমের সন্ধান পেলে দ্রুত ব্যবস্থার নির্দেশ ভূমিমন্ত্রীর ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক ব্যক্তিকে গলা কেটে হত্যা ইসরাইলকে পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাতের ব্যাপারে সতর্ক করলো আইআরজিসি সাংবাদিকতার পথিকৃৎ কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারের ১২৮তম প্রয়াণ দিবসে স্মরণ সভা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের শূন্য পদ দ্রুত পূরণের নির্দেশ

সকল