২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নতুন আইন শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণা : ফখরুল

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর - সংগৃহীত

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নতুন প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইন শিক্ষার্থীদের সাথে আরেকটি প্রতারণা। মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে ২০ দলের বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময়ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, কোটা থাকবে না। কিন্তু পরে তিনি আদালতের দোহাই দিয়ে তার সে ঘোষণা থেকে ফিরে আসেন।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইনে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতিফলন ঘটেনি। এতেও কোটা আন্দোলনের মতো একটি প্রতারণা করল সরকার। শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে কাউকে চাপা দিয়ে হত্যা করলে ফাঁসির  শাস্তি। কিন্তু নতুন আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি রাখা হয়েছে মাত্র পাঁচ বছর।

মির্জা ফখরুল বলেন, নতুন প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইন আমরা অসঙ্গতিপূর্ণ বলছি। কারণ এ আইনে পরিবহন মালিকদের শাস্তির বিষয়ে কোনো কিছু বলা নেই। যদিও এ আইন এখনো পাস হয়নি। আমরা আশা করব, আইনটি পাস হওয়ার আগে সরকার শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো আইনে সংযুক্ত করবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতি ২০ দলের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। ২০ দল আশা করেছিল, সরকার আন্দোলনকারীদের নয় দফা দাবি মেনে নেওয়ার যে ঘোষণা দিয়েছিল সেটি বাস্তবায়ন করবে। কিন্তু সরকার তা না করে পুলিশ ও দলীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, পুলিশ ও সরকারি দলের অঙ্গ  সংগঠনগুলো যে হামলা চালিয়েছে আমরা ২০ দলের পক্ষ থেকে তার তীব্র নিন্দা জানাই। একই সঙ্গে সাংবাদিকদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে বিশিষ্ট আলোকচিত্র শিল্পী শহিদুল আলম ও আন্দোলনকে  কেন্দ্র করে সারা দেশে যাদের আটক করা হয়েছে তাঁদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করেছে ২০ দল। এ ছাড়া ২০ দলের সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক যে মামলা করা হয়েছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ।

বহুল আলোচিত সড়ক পরিবহন আইনের খসড়া গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন দেওয়া হয়। বেপরোয়া গাড়ি চালানোর ফলে দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণহানির জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের সাজা, পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড রেখে সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর অনুমোদন দেওয়া হয়।

তবে যদি হত্যার উদ্দেশ্যে কেউ গাড়ি চালায় এবং সেটা প্রমাণিত হয়, তাহলে তা ফৌজদারি আইনের দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা অনুসারে বিচার হবে। সে ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। তদন্ত কর্মকর্তার প্রতিবেদনের সাপেক্ষে নির্ধারণ করা হবে দুর্ঘটনার প্রকৃতি কী ছিল। সোমবার সকালে সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে এই আইনটির অনুমোদন দেওয়া হয়।

আরো পড়ুন : কি হচ্ছে, সব জানেন ওবায়দুল কাদের

ওয়ান-ইলেভেনের মতো বাংলাদেশকে আবার অগণতান্ত্রিক পথে নেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে বলে দাবি করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আর সরকার সে বিষয়ে সজাগ রয়েছে বলেও ষড়যন্ত্রকারীদের সতর্ক করেছেন তিনি।

মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কাদের বলেন, ‘দেশে যখন শান্তিময় পরিবেশ বিরাজ করেছিল, ঠিক সেসময়ে ১/১১ কুশীলবরা আবার রাজনৈতিক অঙ্গনে নেমে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অশুভ খেলায় মেতে উঠেছে।’


আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সরাসরি না বললেও সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের বাড়িতে সাম্প্রতিক নৈশভোজের দিকে যে ইঙ্গিত করেছেন, তা স্পষ্ট।

ওই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটও ছিলেন। বৈঠক থেকে বের হওয়ার সময় তার গাড়িতে হামলা চালায় এক দল ব্যক্তি, হামলা হয় বদিউল আলমের বাড়িতেও।

কাদের বলেন, ‘কোথায় কী হচ্ছে, সেটা আমরা জানি। দেশে হচ্ছে, বিদেশে হচ্ছে। প্রথম প্রহরে, মধ্য প্রহরে, শেষ প্রহরেও হচ্ছে রাতের অন্ধকারে। সরকার কিছু জানে না, সেটা ভাবলে বোকার স্বর্গে বাস করছেন। সব কিছুই আমরা জানি। সব কিছুই আমাদের নলেজে আছে।’

‘কত ষড়যন্ত্র হয়েছে, শত বৈঠক হয়েছে। ব্যবস্থা নিলে কারও জেলের বাহিরে থাকার কথা ছিল না, কিন্তু আমরা ধৈর্য্য ধরছি,’ বলেন তিনি।

কাদের আবারও বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ভর করে দেশকে অশান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছিল।

‘সারাদেশ থেকে তাদের ক্যাডারদেরকে এনে ঢাকা অচল কর্মসূচি বাস্তবায়নের চেষ্টা করে যাচ্ছে সুপরিকল্পিতভাবে। ঢাকা অচল করে বাংলাদেশ অচল করার পরিকল্পনা তাদের ছিল এবং আছে।’

শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রসঙ্গ ধরে গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন দেশে ‘গুণ্ডাতন্ত্র’ রয়েছে বলে যে মন্তব্য করেন, তারও জবাব দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।

তিনি বলেন, ‘গুণ্ডাতন্ত্র কাকে বলে- তা সবিনয়ে কামাল হোসেনকে জিজ্ঞেস করতে চাই? চোখ উপড়ে ফেলল আমাদের স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী আরাফাত বাপ্পীর, আমাদের সেই রাজনৈতিক কর্মীর একটি চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। তাকে এখন চেন্নাই পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী আজ তাকে দেখতে যাবেন এবং তার সুচিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছেন।

‘আমাদের আহত কর্মীকে হাইজ্যাক করা হয়েছে। তা কোনো কোনো গণমাধ্যমেও দেখলাম, এ সংবাদ শুধু দেশে নয়, কিছু কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও করছে।’

অভিযোগের মুখে থাকা ছাত্রলীগের পক্ষে দাঁড়িয়ে কাদের বলেন, ‘সব দোষ আওয়ামী লীগের? ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হয়েছে। এখনও তারা ভালো করে গুছিয়ে উঠতে পারেনি। এ এলাকায় ছাত্রলীগের (ধানমন্ডি) কোনো কমিটি ছিল না। যারা আহত হয়েছে, তাদের বেশিরভাগই সাবেক ছাত্রনেতা, বিভিন্ন উপ-কমিটির সদস্যরা। তাদের মধ্যে ৪৬ জন আহত হয়েছে।

‘আক্রান্ত হলাম আমরা কিন্তু এখন দেশে-বিদেশে সুপরিকল্পিতভাবে অপবাদ ছড়ানো হচ্ছে। আমাদেরকে আক্রমণকারী চিহিৃত করে দলের এবং ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে।’

উন্নয়ন দিয়েই অপবাদের জবাব দেওয়ার কথা বলেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী কাদের।

অস্থিরতা সৃষ্টি করতে উদ্দেশ্যমূলকভাবেই সাংবাদিকদের উপর হামলা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

‘সাংবাদিকদের টার্গেট করে ফায়দা তোলার চেষ্টা এ দেশে অনেকবার হয়েছে। গতকাল আমি সাংবাদিকদের বলেছি, ছাত্রলীগের উপর অপবাদ আসছে, আপনারা আমাকে তালিকা দিন। কারা কারা এতে জড়িত আছে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।’

শিক্ষার্থীদের উপর নির্যাতন করা হচ্ছে জাতিসংঘ মিশনের বিবৃতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা বলেন, ‘আমরা জাতিসংঘে জানিয়েছি, এগুলো অপপ্রচার।’

সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজীম আহমেদ সোহেল তাজের ফেইসবুক স্ট্যাটাস সম্পর্কে জানতে চাইলে কাদের বলেন, ‘তিনি দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের রাজনীতির বাহিরে আছেন। এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়।’

রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজ সংলগ্ন রাস্তায় আন্ডারপাস নির্মাণকাজ রোববার প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন বলে জানান তিনি।

কাদের বলেন, সংসদ ভবন থেকে ন্যাম ভবন পর্যন্ত, বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত দুটি আন্ডারপাস নির্মাণের নির্দেশও প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন।

কয়েকদিন পর দেশে ‘স্বস্তিদায়ক পরিবেশ’ ফিরে আসায় তা ধরে রাখতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সাংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এনামুল হক শামীম, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন, গোলাম রাব্বানী চিনু, মারুফা আক্তার পপি উপস্থিত ছিলেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement