২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুুবই খারাপ

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুুবই খারাপ - খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুুবই খারাপ

বিএনপির চেয়ারপারসন কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুুবই খারাপ। তিনি অসুস্থ থাকায় দোতলা থেকে নিচে নেমে আসতে পারেননি। কারাগারে তার সাথে দেখা শেষে পরিবারের স্বজন ও দু’জন আইনজীবী এ কথা জানিয়েছেন। গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করেন বেগম জিয়ার পরিবারের পাঁচজন সদস্য। এর আগে বেলা ৩টার দিকে দেখা করেছেন বেগম জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ও সানাউল্লাহ মিয়া। খালেদা জিয়ার সাথে যেসব স্বজন দেখা করেছেন, তারা হলেন- তার বড় বোন সেলিমা ইসলাম, তার স্বামী রফিকুল ইসলাম ও তাদের পুত্রবধূ, খালেদা জিয়ার ভাগ্নে মো: মামুন ও মোহাম্মদ মাসুদ। সাক্ষাৎ শেষে খালেদা জিয়ার পরিবারের একজন সদস্য জানান, খালেদা জিয়ার শরীর ভালো নেই। তার হাঁটাচলা করতে কষ্ট হয়। এর বাইরে তারা আর কিছু না বলেই গাড়িতে চড়ে চলে যান।

অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, তারা দুইজন আইনজীবী মামলা সংক্রান্ত ব্যাপারে খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করেছেন। বেগম জিয়া খুবই অসুস্থ। তিনি নিচতলায় নামতে পারেননি। ফলে তারা দোতলায় গিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের সাথে দেখা করে ঘণ্টাখানেক কথা বলেন।

এর আগে ১৪ জুলাই সেলিমা ইসলামসহ পরিবারের পাঁচ সদস্য কারাগারে গিয়ে খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করতে পারেননি। ওই দিন সেলিমা ইসলাম জানিয়েছিলেন, খালেদা জিয়া অসুস্থ থাকায় নিচে নামতে পারেননি। আমাদেরও ওপরে যেতে না দেয়ায় তার সাথে সাক্ষাৎ হয়নি। আমরা তার স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন। 

গত কয়েক দিন ধরে বিএনপির নেতারা অভিযোগ করছেন, কারাবন্দী খালেদা জিয়ার শারীরিক সমস্যা আরো বেড়েছে। কারাগারে তাকে অবর্ণনীয় কষ্টে রাখা হয়েছে। তিনি চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছে দলটি। এ দাবিতে গত শুক্রবার রাজধানীসহ সারা দেশে সমাবেশ করেছে বিএনপি।
উল্লেখ্য, গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। রায় ঘোষণার পরপরই তাকে নাজিম উদ্দিন রোডের সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী রয়েছেন।

আরো পড়ুন :

খালেদা জিয়ার জামিন ২৬ জুলাই পর্যন্ত বৃদ্ধি

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের মেয়াদ আগামী ২৬ জুলাই পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছেন হাইকোর্ট। গতকাল বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো: মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধির এ আদেশ দেন। একই সাথে এ মামলায় খালাস চেয়ে খালেদা জিয়ার আপিলের শুনানি আগামী রোববার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। 
এ মামলায় খালেদার জামিনের মেয়াদ ১২ জুলাই শেষ হচ্ছে উল্লেখ করে মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছিলেন তার আইনজীবীরা। সে আবেদনের পর আদালত ১৯ জুলাই পর্যন্ত জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি করেন। গতকাল জামিনের এই মেয়াদও শেষ হওয়ায় ২৬ জুলাই পর্যন্ত জামিন দেন আদালত। 

অন্য দিকে, গতকাল বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো: মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে খালেদা জিয়ার আপিলের বিষয়ে পঞ্চম দিনের মতো শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এ দিন মামলার ২, ৩, ৪, ৯, ১২ ও ১৩ নম্বর সাক্ষীর সাক্ষ্য আদালতে উপস্থান করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী আবদুর রেজাক খান ও এ জে মোহাম্মদ আলী। তাদের সহায়তা করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার নওশাদ জমির। দুপুর সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত শুনানি হয়। এরপর আগামী রোববার বেলা ২টা পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করা হয়। 

গতকাল শুনানিতে আবদুর রেজাক খান বলেন, এ মামলায় যে সব ডকুমেন্ট আদালতে দাখিল করা হয়েছে তা সন্দেহজনক ডকুমেন্ট, সৃজিত ডকুমেন্ট, কারচুপি করা ডকুমেন্ট, ফুইড লাগানো ডকুমেন্ট। এগুলোর ওপর ভিত্তি করে কোনো মামলা প্রমাণ করা যায় না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দফতরের এতিম তহবিলে রক্ষিত ডকুমেন্ট সম্পর্কে মামলার নবম সাক্ষী প্রধানমন্ত্রীর অফিসের তৎকালীন ক্যাশ অফিসারের মাধ্যমে যেসব রেকর্ড উপস্থাপন করা হয়েছে, সাক্ষ্য আইনের নিরিখে তার গ্রহণযোগ্যতা নেই। 
আবদুর রেজাক খান বলেন, এই মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো তথ্য প্রমাণ নেই। সোনালী ব্যাংক ও প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে যেসব ডকুমেন্ট দাখিল করা হয়েছে সেখানে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কিছু নেই। এখানে খালেদা জিয়া কোনোভাবে জড়িত নন। এই ডকুমেন্টর ওপর ভিত্তি করে বেগম খালেদা জিয়াকে কেন সাজা দেয়া হবে। 

আপিল শুনানির নির্ধারিত দিন অনুসারে গতকাল আদালতে উপস্থিত হন উভয়পরে আইনজীবীরা। খালেদা জিয়ার পে আদালতে আইনজীবী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মওদুদ আহমদ, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, জয়নুল আবেদীন, আমিনুল ইসলাম, বদরুদ্দোজা বাদল, কায়সার কামাল, রাগীব রউফ চৌধুরী, ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, আনিছুর রহমান খান, আইয়ুব আলী আশ্রাফী, মির্জা আল মাহমুদ, সালমা সুলতানা সোমা। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। দুদকের পে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ গত ৮ ফেব্রুয়ারি রায় দেন। রায়ে খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে গত ২০ ফেব্রুয়ারি আপিল আবেদন দাখিল করেন খালেদা জিয়া। এ আপিল গত ২২ ফেব্রুয়ারি গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। নি¤œ আদালতের দেয়া জরিমানার রায় স্থগিত করেন। পরবর্তীতে গত ১২ মার্চ খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেন হাইকোর্ট। এ জামিনের বিরুদ্ধে আপিল করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপ। এ আবেদনে গত ১৬ মে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগ দুদক ও রাষ্ট্রপরে আবেদন খারিজ করে দেন। তবে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে হাইকোর্টে খালেদা জিয়ার আপিল নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর গত ১২ জুলাই থেকে খালেদা জিয়ার আপিলের শুনানি শুরু হয়। 

এ মামলার আসামি কাজী সলিমুল হক কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমদের করা আপিলের ওপরেও একই সাথে শুনানির আদেশ দেন আদালত। নি¤œ আদালত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় কাজী সলিমুল হক কামাল ও শরফুদ্দিন আহমদকে ১০ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেন।


আরো সংবাদ



premium cement