২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সরকারের পর্যবেক্ষণে জোট গঠন তৎপরতা

সরকারের পর্যবেক্ষণে জোট গঠন তৎপরতা - ছবি : সংগৃহীত

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জোট গঠন তৎপরতা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে সরকার। নির্বাচনী বছরে দলগুলোর এমন উদ্যোগকে খুব স্বাভাবিক হিসেবেই দেখছেন সরকারের নীতিনির্ধারকেরা। একই সাথে অতীতের অভিজ্ঞতায় নানা কৌশলে এসব জোটকে মোকাবেলা করার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন তারা। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
সূত্রগুলো জানায়, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে রাজনীতিতে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোটের বিকল্প একটি কার্যকর জোট চায় সরকার। বিশেষ করে বিএনপি জোটের বাইরে থাকা সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে টার্গেট করে নানা তৎপরতাও চলছিল বেশ কিছু দিন ধরে। এমন প্রেক্ষাপটে গত বুধবার সিপিবি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি ও বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনসহ আটটি দল মিলে নতুন একটি বাম রাজনৈতিক জোট গঠন করা হয়।

একই দিন ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের বাইরে থাকা গণতান্ত্রিক আন্দোলন, ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক এলায়েন্স, সম্মিলিত ইসলামিক জোট, কৃষক শ্রমিক পার্টি, একামত আন্দোলন, জাগো দল, ইসলামিক ফ্রন্ট ও গণতান্ত্রিক জোটসহ ৯টি দলের নেতাদের সাথে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। 

এ ছাড়া বৃহস্পতিবার রাতে জরুরি বৈঠকে বসেন বিকল্পধারা বাংলাদেশ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, কৃষক শ্রমিক জনতা পার্টি ও নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ে গঠতি যুক্তফ্রন্ট নেতারা। 
দেশের ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর এ জোট গঠন এবং নতুন তৎপরতাকে নিজেদের জন্য ক্ষতিকর না ভেবে বরং ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নেতাদের মতে, ছোট দলগুলোর জোট গঠনের তৎপরতা নতুন কিছু নয়। ২০১২ সাল থেকেই দলগুলোর এমন তৎপরতা চলছিল। কখনো তাতে গতি আসে; কখনো থমকে পড়ে। তবে নির্বাচনের এই বছর জোট গঠন প্রক্রিয়াটি ভীষণ গতি পেয়েছে। রমজান মাসে ইফতার অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই তৎপরতা সবার নজরে আসে। এ ছাড়া ছোট দলের নেতারা তাদের বাসায়ও নিজেরা প্রায়ই বসছেন। অবশেষে বিভিন্ন জোট গঠন করা হচ্ছে। আ’লীগ এসব জোটের গতিবিধি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে চায়। জোট গঠন এবং তাদের কর্মকাণ্ড বা কৌশল কী তা তারা দেখবেন। 

ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকেরা আরো জানান, নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই জোট গঠনের তোড়জোড় শুরু হয়। এতে কিছু নেতা আছেন, যারা জনগণের কাছে নিজেদের মূল্য যাচাই করে নেন। আবার অনেক রাজনীতিক আছেন, এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়ে নিজেরা আর্থিকভাবে লাভবান হন। অনেকেই অনেক এজেন্ডা নিয়েও নামেন। এবারো তেমন কিছু যে নেই সেটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। তবে সত্যিকার অর্থে ছোট দলগুলো মিলে একটা কিছু করলে তা মন্দ হিসেবে নেবে না আওয়ামী লীগ।

আ’লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, আগামী নির্বাচন খুবই জটিল, কঠিন ও তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে পারে। কারণ ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করলেও এবারের নির্বাচনে বিএনপি জোট আসবে বলে তাদের বিশ্বাস। এ ছাড়া বিএনপির মতো একটি বড় রাজনৈতিক দল স্বেচ্ছায় ভোট বর্জন না করলে তাদের ভোট থেকে বিরত রাখা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। আর বিএনপি নির্বাচনে এলে নির্বাচনের আগে এবং পরের হিসাবনিকাশও পাল্টে যেতে পারে। দীর্ঘ দুই মেয়াদে ক্ষমতার বাইরে থাকা এবং সরকারের জেল-জুলুম ও রোষানলের শিকার বিএনপির বিজয়কে কোনোভাবেই সরকার নিরাপদ মনে করছে না। সে জন্য রাজনীতির মাঠে বিএনপি জোটের বিকল্প একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক প্লাটফর্মের প্রয়োজন বেশ অনুভব করছে সরকার। এ ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি ছাড়াও অন্য কোনো জোট সেই দায়িত্ব পালন করতে পারে। 

এ বছরের শেষের দিকে হবে জাতীয় নির্বাচন। আর কারাগারে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ছাড়া বিএনপি আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নিলে আবারো নির্বাচন বিতর্কিত হতে পারে। সে জন্য আ’লীগ চায় নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ যত বাড়ানো যায়। বিভিন্ন দল জোট করে জোটগতভাবে বা আলাদাভাবে নির্বাচনে অংশ নিলে এটি নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক করবে, যা দেশ-বিদেশে তুলে ধরবে সরকার।

আ’লীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিন কেন্দ্রীয় নেতা আলাপকালে জানান, আগামী নির্বাচনে আ’লীগের বিজয় ছাড়া বিকল্প কিছু দেখছেন না তারা। নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রায় বাস্তবায়ন এবং আন্দোলনের মাঠে বিএনপির নিষ্ক্রিয়তায় দেশের জনগণ আবারো আ’লীগকেই বেছে নেবে বলে তাদের বিশ্বাস। তবে কোনো কারণে নির্বাচনে এর উল্টো কিছু ঘটলে তা আ’লীগের জন্য বেশ বড় ধরনের বিপদের কারণ হতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। তাই নির্বাচনের ফলে অনাকাক্সিক্ষত কিছু এড়াতে বিকল্প কিছু নিয়েও চিন্তা করছেন সরকারের নীতিনির্ধারকেরা। এ ক্ষেত্রে বিএনপি জোটের বিকল্প শক্তিশালী ও কার্যকর কোনো তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তিকেই পছন্দ তাদের। আর শক্তিশালী তৃতীয় এই জোট গঠনের প্রক্রিয়াকে পূর্ণতা দিতে চান সরকারের নীতিনির্ধারকেরা। তারই অংশ হিসেবে সম্ভাব্য সেই জোটে নতুন করে মহাজোট ও সরকারের প্রধান শরিক জাতীয় পার্টিকে ঠেলে দেয়া হতে পারে। প্রয়োজনে জাসদের একটি অংশ এবং আরো কয়েকটি দলকেও সেই জোটে অন্তর্ভুক্ত করে দেয়া হতে পারে। আর সব ঠিক থাকলে সরকারের পরামর্শে জাতীয় পার্টি সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করে সরকারবিরোধী ভূমিকায় মাঠে নামতে পারে। এর মধ্য দিয়ে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে বিএনপির বিকল্প একটি বড় রাজনৈতিক জোট গঠন সম্ভব হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে আ’লীগ আবারো ক্ষমতায় এলে সেখানে বিরোধী দল হিসেবে থাকবে জাতীয় পার্টি নেতৃত্বাধীন জোটই। আর এবার বিরোধী দলেও জায়গা না হলে একপর্যায়ে বিএনপি আরো দুর্বল হয়ে নিঃশেষ হয়ে যাবে বলে তারা মনে করছেন।

এ বিষয়ে আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, গণতন্ত্রের শত ফুল ফুটছে, ভালো তো। এটাই গণতন্ত্রের বিউটি। জোট হবে, গ্রুপ হবে। নির্বাচন সামনে রেখে যা হচ্ছে তা ভালো দিক। তবে শেষ পর্যন্ত এ মেরুকরণ কোথায় গিয়ে দঁাঁড়ায়, তা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, নির্বাচনে আদর্শগত বিষয়টা মুখ্য নয়। নির্বাচন হলো কৌশলগত ব্যাপার। এখানে আদর্শগতভাবে জোট না হয়ে কৌশলগত, সময়ের প্রয়োজনে নির্বাচনে জেতার জন্য জোট হয়।
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, সব সময়ই নির্বাচনকে ঘিরে নানা ধরনের রাজনৈতিক মেরুকরণ ও বলয় তৈরি হয়। এবারো কোনো জোট গঠন সেই বলয়েরই অংশ হয়ে থাকতে পারে। তবে আমরা চাই প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল ও জোটের আদর্শ এবং কর্মকাণ্ড হোক দেশ ও জনগণের স্বার্থকে ঘিরেই। রাজনৈতিক দল ও জোটের আড়ালে দেশবিরোধী কোনো ষড়যন্ত্র হলে জনগণ বরদাশত করে না, অতীতে তা বারবার প্রমাণ হয়েছে। তাই দেশের স্বার্থে, দেশের জনগণের কল্যাণে কোনো জোট বা দল আত্মপ্রকাশ করলে আমরা তাদের সর্বাত্মক সমর্থন ও সহায়তা করব। এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।


আরো সংবাদ



premium cement