১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সরকারের বিদায়ের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে : রিজভী

বিএনপি
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন রুহুল কবির রিজভী। - ছবি : নয়া দিগন্ত

আগামী জাতীয় নির্বাচন থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে দূরে রাখতেই প্রহসনের আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সাজা দিয়ে তাকে কারাবন্দী করে রাখা বর্তমান সরকারের মাস্টারপ্ল্যানেরই অংশ মন্তব্য করে বিএনপি বলেছে, শেখ হাসিনার নির্দেশেই বেগম জিয়াকে কষ্ট দিয়ে নির্যাতন করছে। কারণটি জনগণের বুঝতে বাকি নেই। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাপক জনপ্রিয়তায় এটা করা হয়েছে। কিন্তু আমি সরকারের উদ্দেশ্যে বলতে চাই- বর্তমান সরকারের বিদায়ের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে। যতো কূটকৌশলই অবলম্বন করুন না কেনো বেগম জিয়াকে মুক্তি দিতেই হবে এবং সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত করতে আপনাদেরকে বাধ্য করবে জনগণ। আমি দলের পক্ষ থেকে অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও সুচিকিৎসার জোর দাবি জানাচ্ছি।

আজ শুক্রবার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদর সম্মেলনে রিজভী বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ থাকায় গতকালও তাকে আদালতে হাজির করা হয়নি। বেগম জিয়ার গুরুতর অসুস্থতার কারণে কারা চিকিৎসকরা তাকে আদালতে হাজির না করার পরামর্শ দেয়, সেজন্য পুলিশ তাকে হাজির করেনি-যা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সুতরাং দেশনেত্রী বেগম জিয়া যে প্রচণ্ড অসুস্থ, এটি সুষ্পষ্ট। এরপরও এখন তাকে চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি সরকার। বারবার দেশনেত্রীকে তার উপযুক্ত চিকিৎসা হয় এমন হাসপাতাল অর্থাৎ ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার জোর দাবি জানানো হলেও এখনো পর্যন্ত সরকার ও কারা কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা দেশনেত্রীর সঙ্গে দেখা করে এবং স্বাস্থ্যগত অবস্থা দেখে যেসব সুপারিশ করেছেন সেসব বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষ কারাবিধির ঠুনকো অজুহাত দেখিয়ে আইনমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা দেশনেত্রীকে সুচিকিৎসা নিতে বাধার সৃষ্টি করছে। অথচ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতারা কারাগারে থাকাকালীন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বারবার।

গাজীপুর সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, দেশের নির্বাচনের প্রচলিত সংস্কৃতিকে কলুষিত করে শেখ হাসিনার গণতন্ত্রবিনাশী ভোটা ডাকাতির লেটেষ্ট মডেলের নির্বাচন গাজীপুরে অনুষ্ঠিত হলো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সরাসরি সহায়তায় আওয়ামী লীগ গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আরেকটি প্রতারণার নির্বাচন উপহার দিলো। এই নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও আওয়ামী লীগ তৃপ্তির ঢেকুর তুললেও দেশে-বিদেশে এটি কলঙ্কিত নির্বাচনের আরেকটি ইতিহাস হয়ে রয়ে গেল।

তিনি বলেন, ভোট কেন্দ্র দখল করে সিল মারার দৃশ্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসিসহ দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শত শত কেন্দ্রের ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেছে। অথচ নির্বাচন কমিশন এঈঈ নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু হওয়ার ‘সার্টিফিকেট’ দিয়ে ভোট ডাকাতিকেই প্রশ্রয় দিলো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে গাজীপুর ও খুলনাতে যে নাটক মঞ্চস্থ করলো তাতে ভবিষ্যতে ভোটাররা আগামী যেকোনো নির্বাচনের ভোটের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। ইতোমধ্যে গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনে ভোট ডাকাতির আনন্দ-উল্লাসে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে উন্নয়ন সহযোগী দেশসহ দাতা সংস্থা ও দেশী-বিদেশী গণমাধ্যম। যদিও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমকে সরকারের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে তথাপিও দেশের অন্যান্য গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেন্দ্র দখল করে সিল মারার যেসব দৃশ্য প্রদর্শিত হয়েছে, ন্যূনতম লজ্জাবোধ থাকলে বর্তমান নির্বাচন কমিশন পদত্যাগ করতো।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ তো আন্তর্জাতিকভাবে স্বৈরাচারের স্বীকৃতি আগেই পেয়েছে। তাই ভোট ডাকাতির নির্বাচন নিয়ে ওবায়দুল কাদের সাহেবদের গলাবাজি থামবে না এটাই স্বাভাবিক। এমনকি সমস্ত লজ্জার ভূষণ তারা খুলে ফেলেছে। সুতরাং নিজেদের নির্লজ্জ অপকর্ম নিয়ে মাথাব্যথা নেই। ওবায়দুল কাদের নির্বাচনের পরপরই চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছেন- ‘গাজীপুরে ৯টির বেশি কেন্দ্রে অনিয়ম কেউ দেখাতে পারবে না’।

রিজভী ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে বলেন, গতকাল ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ সংবাদ সম্মেলন করে বলেছে-গাজীপুরে ৪৬ দশমিক ৫ শতাংশ কেন্দ্রে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। আর আমরা বলতে চাই-আমাদের কাছে তথ্য প্রমাণ আছে, গাজীপুরে প্রায় সকল কেন্দ্র দখল করে জালভোটের মহৌৎসব চলেছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে গাজীপুরে ভোটের দিনেও বিএনপি নেতাকর্মীদের ও ভোটার সমর্থকদের গণগ্রেফতার চলেছে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে বিএনপির এজেন্টদের যেতে বাধা দেয়া হয়েছে, তাদেরকে মারধর করে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যারা তারপরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করেছে সেসব এজেন্টদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে। যাদের অনেককে ভোট শেষ হওয়ার পর দূরে কোথাও অথবা আশপাশের জেলায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে, অনেকের হদিস মিলছে কারাগারে, আবার বেশ কিছু বিএনপি নেতাকর্মীর এখনো কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।

তিনি গণমাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন জুড়ে সকল কেন্দ্রে হাজার হাজার বহিরাগত আওয়ামী ক্যাডার অবস্থান নিয়ে এবং কেন্দ্রে প্রবেশ করে লাইন ধরে নৌকা প্রতীকে সিল মারে। মহিলা কেন্দ্রেও পুরুষ ঢুকে নৌকায় সিল মারার হিড়িক দেখা যায়, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেসব ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেছে। বহু ভোট কেন্দ্র থেকে ভোটারদের পিটিয়ে বের করে দিয়ে কেন্দ্র খালি করে আওয়ামী ক্যাডারদের ঢুকিয়ে নৌকায় দেদারসে সিল মারার সুযোগ করে দিয়েছে নির্বাচনে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

রিজভী বলেন, ভোটকেন্দ্র দখল, জালভোট প্রদান, কেন্দ্র থেকে বিএনপি এজেন্টদের তুলে নেয়া, মারধর করে বের করে দেয়া, এজেন্ট ঢুকতে না দেয়া, এজেন্টদের গ্রেফতার করা, নির্বাচনের আগের রাত থেকে বিএনপি নেতাদের বাড়ি বাড়ি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঢুকে হানা দেয়া, গ্রেফতার করা, এলাকাছাড়া করা, কেন্দ্রে গেলে তাদের ওপর হামলা ও গ্রেফতার করাসহ এমন কোনো পদ্ধতি নেই যা গাজীপুর ইলেকশনে প্রয়োগ করা হয়নি। ধানের শীষের ১০ জনের বাড়িতে গিয়েও যদি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হানা দেয় তাহলেও সেটি দাবানলের মতো সারা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়বে। আর গাজীপুর নির্বাচনে ৮দিন আগে থেকেই ধানের শীষের কেন্দ্রের সমন্বয়কারীদের গ্রেফতার করলে ভোটাররা কি ভোটের দিন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে আস্থা পাবে? এছাড়াও সাংবাদিকদেরকে আটক করে থানায় নেয়ার হুমকি, ধানের শীষের এজেন্টদের আইডেন্টিটি কার্ড ছিনতাই এবং পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আধা ঘন্টার মধ্যে ধানের শীষের এজেন্ট এবং ভোটারদেরকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার দৃশ্য তো ছিলই।

গাজীপুর সিটিতে ভোটগ্রহণে অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে রিজভী বলেন, এভাবেই জনগণ দেখলো শেখ হাসিনার শক্তিশালী গণতন্ত্রের নমূনা। জিসিসি নির্বাচনে ভোটারদের ভোটাধিকার কেড়ে নিতে কয়েকটি কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিল (ক) ম্যানিপুলেশন, (খ) আতঙ্ক সৃষ্টি করা, গ) পুলিশের এসপির ভোট ডাকাতিতে সরাসরি অংশগ্রহণ, (ঘ) ভোটারদের মনে ভয় সৃষ্টিতে পোশাকধারি ও সাদা পোশাকধারিদের বেপরোয়া কার্যকলাপ, (ঙ) ভয় দেখিয়ে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ। জিসিসি নির্বাচনে ভোটারদের ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা ছিল না, স্বাধীনতা ছিল শুধু সরকারি যন্ত্রের, যারা ভোটারদের মনে ভয় সৃষ্টি করেছে। আমি ওবায়দুল কাদেরকে বলবো- আপনারা বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে জনগণের সঙ্গে যে উপহাস ও তামাশা করছেন তার জবাব জনগণের নিকট দিতেই হবে। আপনাদের বিচার আর বেশিদিন বিলম্ব হবে না। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে নির্বাচন ও ভোটকে জাদুঘরে পাঠানোর সকল বন্দোবস্ত করে জনগণের সঙ্গে প্রতারণার চরম মূল্য দিতে হবে সিইসিকে।

এছাড়া বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারের বাসভবনে হামলা চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাসার সকল সিসি ক্যামেরা খুলে ফেলে তারা। বাসার ভাড়াটিয়াদের অবিলম্বে বাসা ছেড়ে দেয়ার হুমকিসহ বাসার লোকজনদের সাথে অশালীন আচরণ করেছে। আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল