২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে চায় বিএনপি

খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে চায় বিএনপি - ছবি : সংগৃহীত

দলের চেয়ারপারসন কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে অবিলম্বে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করার দাবি জানিয়েছে দলটি। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন পক্ষে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা দেশনেত্রীর উপযুক্ত চিকিৎসা চাই। প্রয়োজনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সমুদয় ব্যয় আমাদের দল বহন করবে। কাজেই কাল বিলম্ব না করে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হোক। তিনি বলেন, দেশনেত্রীর চিকিৎসার বিষয়টি মানবিক। কিন্তু বর্তমানে ক্ষমতাসীন বিনা ভোটের সরকার বিষয়টিকে রাজনৈতিক বিষয়ে পরিণত করেছে। ক্ষমতাসীন সরকার তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীকে অকালে বিনা চিকিৎসায় জীবনে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

মঙ্গলবার দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও অন্যায়ভাবে এবং তার দেয়া জবানবন্দী বিকৃত করে একটি আদালত তাকে পাঁচ বছরের জেল দিয়ে সরকারের ইচ্ছা পূরণ করেছে। বর্তমানে তাকে একটি পরিত্যক্ত ঘোষিত নির্জন কারাগারের একমাত্র বন্দী হিসেবে রাখা হয়েছে। ৭৩ বছর বয়স্কা এই সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে যে পরিবেশে রাখা হয়েছে তা যেকোনো সুস্থ মানুষকে অসুস্থ করে ফেলার মতো। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘ দিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। তার দুই হাঁটু এবং দুই চোখেই অপারেশন করতে হয়েছে। ফলে তাকে সবসময়ই যোগ্য চিকিৎসকের নিয়মিত পর্যবেক্ষণে থাকতে হয়। অথচ নির্জন এই কারাগারে তাকে দেখার জন্য জুনিয়র ডাক্তার ও ডিপ্লোমা নার্স নিয়োগ করে সরকার দাবি করছে যে, বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৩ বারের নির্বাচিত এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীর স্বাস্থ্যের যে অবস্থা তাতে তাকে সর্বক্ষণ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে এবং জরুরি পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা রাখা একান্তই জরুরি বলে মতামত দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সার্জনগণ।

তিনি বলেন, আমাদের দলের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে দুইবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করে এসব বিষয় উল্লেখ করে তাকে অনতিবিলম্বে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা এবং এমআরআইসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর দাবি করা হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেও বাস্তবে কিছুই করা হয়নি।

ইতোমধ্যে দেশনেত্রীর অসুস্থতা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর্থ্রাইটিসের ব্যথা বৃদ্ধির ফলে তিনি চলৎশক্তিহীন হয়ে পড়ছেন এবং পাশাপাশি তার অপারেশন করা চোখ লাল হয়ে আছে। এই পরিস্থিতিতে দ্রুত তার উপযুক্ত চিকিৎসা না হলে তার শারীরিক অবস্থার গুরুতর অবনতি হতে পারে। আমরা এটাও সরকারকে জানিয়েছি, কিন্তু তার সুচিকিৎসার কোন ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। এই পরিস্থিতিতে গত ৫ জুন তিনি হঠাৎ করে অচেতন হয়ে পড়েন। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি জেল কর্তৃপক্ষ তার পরিবারের কোনো সদস্যকেও জানায়নি এবং কেনো তিনি অচেতন হয়ে পড়লেন তা পরীক্ষার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, গত ৮ জুন তার পরিবারের সদস্যগণ নিয়মিত সাক্ষাতে গিয়ে এই বিষয়টি জানতে পারেন। ৫ দফা আবেদনের পর গত ৯ জুন কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে দেশনেত্রীর চিকিৎসা করতেন এমন ৪ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও ঢাকা সিভিল সার্জনের উপস্থিতিতে তাকে দেখতে গিয়ে এই ঘটনার কথা জানতে পারেন। ৫ জুন দুপুর ১টার দিকে দেশনেত্রীর ৫/৭ মিনিট আনকনশাস থাকা এবং সেসময়ের কোনো কিছু মনে করতে না পারার বিষয়টিকে চিকিৎসকগণ মারাত্মক বলে মনে করেন। তাদের মতে এটা ছিল ট্রানজিয়েন্ট ইসকেমিক এ্যাটাক-টিআইএ। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন যে, ‘যেটা সবচেয়ে বিপজ্জনক সেটা হচ্ছে টিআইএ যদি কারো হয়-তাহলে সেটা ইন্ডিকেট করে যে সামনে তার একটা বড় ধরণের স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি’। এই ৪ জন তাদের পর্যবেক্ষণ ও মতামত লিখিত ভাবে কারা কর্তৃপক্ষকে দিয়েছেন। তারা বিশেষ কিছু পরীক্ষা এবং যোগ্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেয়ার জন্য দেশনেত্রীকে অবিলম্বে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তির সুপারিশ করেছেন।

বিএনপির এই নীতি নির্ধারক বলেন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের প্রেস ব্রিফিংয়ের পর এ বিষয়ে সরকারের আইনমন্ত্রী, সেতুমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এখন বলছেন যে, ৫ জুন রোজা রাখার কারণে বেগম খালেদা জিয়ার সুগার কমে যাওয়ায় তার মাথা ঘুরে গিয়েছিল মাত্র এবং একটা চকলেট খেয়ে তিনি ভালো হয়ে যান। আইজি প্রিজনও একই কথা বললেও স্বীকার করেছেন যে দেশনেত্রীর আর্থ্রাইটিস সমস্যা বেড়েছে।

তিনি বলেন, গতকাল থেকে দেশনেত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বিএসএমএমইউ-তে নেয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু দেশনেত্রীকে এরআগে সেখানে নেয়া হলে সেখানকার ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ এবং চিকিৎসা সেবার বিষয়ে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। আইজি প্রিজন গণমাধ্যমে বলেছেন যে, কারাবিধি অনুযায়ী প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। এমন কোন সিদ্ধান্ত না থাকায় দেশনেত্রীকে ওই হাসপাতালেই নিতে হবে। তার এই বক্তব্য থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতামত এবং আমাদের বারংবার অনুরোধ সত্বেও ইউনাইটেড হাসপাতালে দেশনেত্রীকে ভর্তির ব্যাপারে সরকারের অনীহার কারণ বোঝা গেল।

ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, তথাকথিত ১/১১ এর সরকারের সময়েও ১ বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়েছিল। আর ৩ বারের নির্বাচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী, দেশের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি এবং সাবেক সেনাবাহিনী প্রধানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যাপারে সরকারী অনুমোদন ও অর্থ সংস্থানের বিষয়ে এতদিনেও সিদ্ধান্ত না হওয়া রহস্যজনক এবং নিন্দনীয়।
তিনি বলেন, গত ৫ জুন সংঘটিত এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সম্পর্কে সরকারের মন্ত্রীবর্গ, এটর্নি জেনারেল ও আইজি প্রিজন প্রায় ১ সপ্তাহ পরে ১১ জুন তারিখে মুখ খুললেন কেনো? কেনো এতদিন ঘটনাটি চেপে যাওয়ার চেষ্টা করা হলো? কেনো ইতোমধ্যে তার হঠাৎ এত বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণ অনুসন্ধানের জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়নি?

এটর্নি জেনারেল বলেছেন যে, ৯ জুন ডাক্তারগণ বেগম খালেদা জিয়ার অজ্ঞান হওয়ার কথা বলে নাকি আদালতের সহানুভূতি লাভের চেষ্টা করেছেন। অথচ তিনি অবশ্যই জানেন যে, ডাক্তারদের সাক্ষাতের দিনক্ষণ স্থির করে সরকার। তারা ৯ তারিখে সাক্ষাতের দিন স্থির করেছে বলেই ওই দিন ডাক্তারগণ প্রেস ব্রিফিং করেছেন। মামলার দিন তারিখ সরকার ও কারা কর্তৃপক্ষের জানার কথা-ডাক্তারদের নয়। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে মরিয়া এই দলবাজ এটর্নি জেনারেল একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অসুস্থতা নিয়েও অশোভন ও অযৌক্তিক মন্তব্য করার আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরেই নানা অসুস্থতায় ভূগছেন। এটা জানার পরও তাকে আরো অসুস্থ করে ফেলার জন্য পরিত্যক্ত জেলখানার একমাত্র বন্দী হিসেবে নির্জনে রাখা হয়েছে। তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে না। তার স্বাস্থ্যের অবনতির কথাও গোপন রাখার অপচেষ্টা করা হয়েছে। এসব ঘটনায় স্পষ্টত:ই বোঝা যায় যে, ক্ষমতাসীন সরকার তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীকে অকালে বিনা চিকিৎসায় জীবনে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। আমরা স্পষ্ট ভাষায় জানাতে চাই যে, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার বিষয়ে রাজনৈতিক কারণে অবহেলা কিংবা বিলম্ব করা হলে তার পরিণাম সরকারের জন্য শুভ হবে না। দেশবাসী বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা সরকারের অমানবিক আচরণে ক্ষুদ্ধ।

ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা দাবি করছি যে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণের পরামর্শ অনুযায়ী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হোক। একই সাথে আমরা দাবি করছি যে, মূল মামলায় দেশের সর্বোচ্চ আদালতে জামিন পাওয়ার পরেও সরকার নানা অপকৌশলে দেশনেত্রীর মুক্তির পথে যেসব বাধার সৃষ্টি করছে তা বন্ধ করা হোক, যাতে জামিনে মুক্ত হয়ে দেশনেত্রী তার পছন্দের হাসপাতালে নির্ভরযোগ্য ডাক্তারদের চিকিৎসা সেবা নিতে পারেন।

এছাড়া মানবিক কারণে ঈদের আগেই দেশনেত্রীর মুক্তির দাবিতে দেশের বিশিষ্টজনদের সংগঠন শত নাগরিক কমিটি শহীদ মিনারে মৌন অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়ার নিন্দা জানান ড. মোশাররফ হোসেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement