১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`

‘ইন্নালিল্লাহ’র ব্যাখ্যা দিলেন বিএনপির এমপি হারুন

‘ইন্নাল্লিাহ’র ব্যাখ্যা দিলেন বিএনপির এমপি হারুন - ছবি : সংগৃহীত

সংসদে বাজেট বক্তব্যের শুরুতে ‘ইন্নাল্লিাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’উচ্চারণের ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ। তিনি জানান, এটি একটি কোরআনের আয়াত। এটি শুধু মৃত্যু সংবাদ নয়, বিপদ আপদের সময় পড়ার কথা বলা হয়েছে কোরআনে। এখনো দেশ জাতি এমনকি সারাবিশ্ব বিপদগ্রন্ত। তাই তিনি এই আয়াত পড়েছেন। তিনি প্রতিদিন সংসদে প্রবেশের সময়ও আয়াতটি পড়েন বলে জানান। তিনি তার এর বিস্তরিত লিখিত ব্যাখ্যা স্পিকারের কাছে পাঠান।

সংসদের বাজেট অধিবেশনের শেষ দিনে পয়েন্ট অব অর্ডাওে ফ্লোর নিয়ে এই ব্যাখ্যা দেন। গত ২৩ জুন সংসদে বাজেট আলোচনার জন্য দাড়িয়ে বিএনপির যুগ্মমহাসিচব হারুনুর রশীদ ইন্নাল্লিাহ বলে বক্তব্য শুরু করলে তাৎক্ষনিকভাবে বৈঠকে সভাপতিত্বকারি ডেপুটি স্পিকার এডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া তার কারণ চানতে চান।

ডেপুটি স্পিকার জানান, তিনি এতো বছর সংসদে কিন্তু কাউকে এভাবে ইন্নাল্লিাহ পড়ে বক্তব্য শুরু করতে দেখেননি। ওইদিন হারুনুর রশীদ তার পরে জবাব দেবেন জানালে ডেপুটি স্পিকার তাকে বলেন, আপনাকে অবশ্যই এর ব্যাখ্যা দিতে হবে। ১২ মিনিটের বাজেট বক্তব্যে হারুনুর রশীদ দলের প্রধান বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের নাম নেয়ায় ডেপুটি স্পিকার ও সরকারি দলের সদস্যরা আপত্তি জানায়। পরে তিনি বৈঠক থেকে ওইদিন ওয়াকআউট করেছিলেন।

বৃহস্পতিবার স্পিকার ড. শিরীণ শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠক চলাকালে হারুনুর রশীদ সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করেই ব্যাখ্যা দেয়া শুরু করেন। তবে ওইদিনের বাজেট আলোচনায় বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও তার ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানে নাম এনে বক্তব্য দেয়ায় ডেপুটি স্পিকারসহ সরকারি দলের সদস্যদেও আপত্তির ব্যাপারে কথা বলতে গেলে স্পিকার সেই অভিযোগ এখানে করার সুযোগ নেই জানিয়ে হারুনুর রশীদকে থামিয়ে দেন। অবশ্য তার আগেই হারুনুর রশীদ আন্দোলন সংগ্রামের বিভিন্ন পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে একবার আদালত কর্তৃক কারাদণ্ডের রায় ও পরে আপিলে খালাস পাওয়া এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় প্রধান আসামী হওয়া প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বক্তব্যের অবতারণা করেছিলেন। এ পর্যায়ে স্পিকার থামিয়ে দিলে তিনি শুধু ইন্নাল্লিাহর ব্যাখা দিয়েই বক্তব্য শেষ করেন। হারুনুর রশীদের অনির্ধারিত বক্তব্যে কিছু সময়ের জন্য উত্তেজনাও দেখা দেয়।সরকার দলীয় সদস্য হৈই করেন।

এ সময় স্পিকার হারুনকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, মাননীয় স্পিকার এই চেয়ারে বসে কী বলেছেন, সেটার ব্যাপারে হাউজে দাঁড়িয়ে কোনো ধরনের উক্তি এখানে করা যাবে না। তিনি বলেন, কার্যপ্রণালী বিধিতে সংসদ সদস্য ও স্পিকারের দায়িত্ব-কর্তব্য নিয়ে বিস্তারিত বলা রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, আপনার (স্পিকারের) সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। এখানে আপনার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করার এখতিয়ার কোনো সদস্যের নেই। আপনি ফ্লোর নিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, আপনার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিতে তা আপনি দিতে পারেন। আমি আপনাকে সেটার ভেতরে সীমাবদ্ধ থাকার অনুরোধ জানাবো।

এরআগে বিএনপি এমপি বলেন, এই সংসদে বিব্রত করার জন্য নয়; বিষয়টির ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য দাঁড়িয়েছি। তিনি বলেন, বিগত সংসদগুলোতে শক্তিশালী বিরোধী দল থাকলেও দশম ও একাদশ সংসদের বিরোধী দলের চরিত্র নিয়ে বিস্তারিত বলতে চাই না। তিনি আরো বলেন, গত ২৩ জুন বাজেটের ওপর আলোচনায় আমি ইন্নালিল্লাহ বলে শুরু করেছিলাম। তখন আমাকে বাধা দেয়া হয়েছিল। পরবর্তী পর্যায়ে বলেছিলাম, এর ব্যাখ্যা আমি পরে দেবো।

অতীতের হুমায়ূন রশিদ চৌধুরী, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ও বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদসহ সাবেক কয়েকজন স্পিকারের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনি আমাদের অভিভাবক। অতীতে অনেকে স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেছেন। আপনিও এখন চালাচ্ছেন। আমি এ ধরনের নজির দেখিনি, ওই খান থেকে (স্পিকারের চেয়ার) কখনও কোনো স্পিকার বলেছেন ‘আমি উনার জবাব দেয়ার জন্য একাই যথেষ্ট।’

তিনি আরো বলেন, আমরা সংসদে মাননীয় স্পিকারের মাধ্যম দিয়েই কথা বলি। আমি বক্তব্যের উত্তর মাননীয় সংসদ নেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। কিন্তু ওই জায়গা থেকে যে উক্তি করা হয়েছে, তা আমার সংসদের অভিজ্ঞতায় শুনিনি। কার্যপ্রণালী বিধির কোথাও এটা খুঁজে পাইনি।

হারুনুর রশীদ বলেন, আমি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে নিয়ে বক্তব্য দিলে উনি ওইখান থেকে কথা বললেন, ‘এটি বলা যাবে না। এটি বলতে পারবেন না।’ এটা গ্রহণযোগ্য নয়, বলে তিনি দাবি করেন। এ সময় তাকে থামিয়ে দেন স্পিকার।


আরো সংবাদ



premium cement