২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ভোটার তালিকা হালনাগাদের বিল পাস

সংসদে আইনমন্ত্রী ও বিএনপির দুই এমপির বাহাস

সংসদে আইন মন্ত্রী ও বিএনপির দুই এমপির বাহাস - ছবি : সংগৃহীত

ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার সময় সীমা ৩০ দিন থেকে বাড়িয়ে ৬০ দিন নির্ধারণ করে ‘ভোটার তালিকা (সংশোধন) আইন-২০২০’ নামে একটি বিল রোববার সংসদে পাস করা হয়েছে। পরিবর্তিত সময় অনুযায়ী প্রতিবছর ‘২ জানুয়ারি হতে ২ মার্চ’ পর্যন্ত এই হালনাগাদ কাজ চলবে। আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।

তবে বিলটি পাসের আগে বিএনপির দুই সংসদ সদস্য ও আইনমন্ত্রীর মধ্যে বাহাস হয়েছে। বিলটির ওপর জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির হারুরুর রশীদ ও রুমিন ফারহানা তালিকা হালনাগাদের প্রয়োজনীয়তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেন। তারা বলেন,যে দেশে দিনের ভোট রাতে হয়,সেই দেশে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কী প্রয়োজন। আইন মন্ত্রী আনিসুল বিএনপির আমলের সমালোচনা করে বলেন, উনারদেরতো ভোট করারই অভ্যাস নেই। জবাবে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ওনাদের তো ভোট করার অভ্যাস নাই, অভ্যাস নাই। ওনারা ভোটারবিহীন নির্বাচন করেন। ১ কোটি ২৩ লাখ ভোয়া ভোটার করে তারা আবার ভোটের কথা বলেন।

প্রথম রুমিন ফারহানা বলেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদের প্রয়োজন হয় যখন মানুষ ভোট দিতে পারে। যে দেশে দিনের ভোট রাতে হয়, ভোটে পুলিশ প্রশাসন ক্যাডার বাহিনী, যে দেশের মৃত মানুষরা কবর থেকে উঠে এসে ভোট দেয়। যে দেশে খুশিতে ঠেলায় ভোট দিতে ভোটাররা লাইনে দাঁড়ায়, সেই দেশে ভোটার তালিকা থাকা বা না থাকাতে কী আসে যায়? ক্ষমতাসীন আস্থাভাজন ছাড়া যেহেতু প্রায় কেউই ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে পারে না। সেহেতু ভোটার তালিকায় তাদের নাম নির্ভুলভাবে আসলেই চলে।

তিনি বলেন, জনগণের করের টাকা বাঁচাতে মানুষ যাতে ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে অলীক স্বপ্নে আশাহত না হয় এ প্রেক্ষাপটে হালনাগাদ দূরে থাকুক, তালিকা আদৌ প্রয়োজন আছে কি না-সেটার জনমত যাচাই করা হোক।

হারুনুর রশীদ বলেন, ভোটার তালিকার প্রয়োজনটা কী? আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব এর জন্যই তো ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা হয়। হালনাগাদ করে আমাদের কী হবে? যদি নির্বাচনে ভোটাররা ভোট দিতে না পারে, ভোটাররা যদি ভোট দিতে যেতে না পারে তাহলে ভোটার তালিকা করে কী হবে?

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন যে সমস্ত আইন করছে বিধিবিধান করছে, এগুলো কি মানছি? সরকারি দলের সদস্যরা যেভাবে চাচ্ছেন সেভাবেই নির্বাচন করা হবে, সেভাবেই নির্বাচনী কার্যক্রম চলবে, সেভাবে নির্বাচনী উৎসব চলবে। ঢাকা সিটি করপোরেশনে দুই প্রার্থীর মধ্যে রীতিমত যুদ্ধ হচ্ছে।আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নীরব, প্রশাসন নীরব, কেউ কোনো কাজ করছে না। আইন প্রণয়ন বাদ দেন, দেশ যেভাবে ফ্রি স্টাইলে চলছে এভাবে একদলীয়ভাবে দেশ চালান। কোনো আইন প্রণয়নের কোন প্রয়োজন নেই।

জবাবের ফ্লোর পেয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বিরোধী দলীয় সদস্যরা যা বলেছেন আমি কিন্তু আশ্চর্য হইনি। ওনারা করলেন ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার। ওনারা তো এই কথা বলবেন। ওনারা ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটার ছাড়া নির্বাচন করলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সংসদে পাশে বসালেন। এই হচ্ছে ওনাদের নিয়ম-কানুন।

তিনি বলেন, আমরা জনগণের কথা বলি। জনস্বার্থ দেখি। আইনটা ১৯৮২ সাল থেকে শুরু হয়েছে, এই আইনটা ২০০০ সালে অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে আসছে। আমরা আইন প্রণয়ন করছি। ওনারা তো দেখেন না, সারা বছরই ভোটার তালিকা কার্যক্রম হচ্ছে। ভাঙা রেকডের মতো পুরনো কথা বলেন। ওনারা তো অ্যানালগ, ডিজিটাল না। আমরা জনস্বার্থ রক্ষায় আইন করছি।

আইনমন্ত্রী জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান ও বিএনপির দুই সদস্যের জনমত যাচাইয়েল প্রস্তাব নাকচ করে দেন। বিলটির ওপর আনিত কয়েকটি সংশোধনী প্রস্তাবও কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায় । এ এসময় স্পিকার ড. শিরীণ শারমিন চৌধুরী বৈঠকে সভাপতিত্ব করছিরেন।

পাস হওয়া বিলে ভোটার তালিকা আইনের ১১ ধারার ১ উপধারা সংশোধন করে জাতীয় ভোটার দিবসে’র সাথে মিল রেখে কম্পিটার ডাটাবেজে সংরক্ষিত বিদ্যমান ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার সময়সীমা প্রতি বৎসর ২ জানুয়ারি হতে ৩১ জানুয়ারি’র পরিবর্তে ‘২ জানুয়ারি হতে ২ মার্চ’ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। বিলটি আইনে পরিণত হলে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার সময়সীমা৬০দিন হবে।

গত ২০ জানুয়ারি বিলটি সংসদে উত্থাপনের পর তা অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। কমিটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বিলটি পাসের সুপারিশ করে গত ২৩ জানুয়ারি সংসদে প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল।


আরো সংবাদ



premium cement