২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

গ্যাসের দাম আরো বাড়ানো প্রয়োজন ছিল, মানুষের কথা চিন্তা করে বাড়াইনি : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা - ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গ্যাসের দাম যেটা বৃদ্ধি করার প্রয়োজন ছিল সেটা করা হয়নি।৭৫ শতাংশ দাম বৃদ্ধির দরকার ছিল সেখানে মাত্র ৩২.৮ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিরাট অংকের ভর্তুকি দিয়ে আমরা গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরববরাহ করছি। যারা এখন গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন তারা প্রকৃত অবস্থা চিন্তা করছেন না। তিনি বলেন, আমাদের নিজস্ব প্রাকৃতিক গ্যাসের পাশাপাশি আমাদের এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে। ফলে এখন মিশ্রিত গ্যাসের জন্য যে খরচ পড়ছে তার পুরোটা জনগণের কাছ থেকে নেয়া উচিত সেটাতো আমরা নিচ্ছি না। তিনি গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবহারে সচেতন হওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা প্রি-পেইড মিটারের চিন্তা করছি, যাতে অপচয় রোধ করা যায়।

জাতীয় সংসদের তৃতীয় (বাজেট) অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে বৃহস্পতিবার তিনি এসব কথা বলেন। বক্তব্যে তিনি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বৈঠকে সভাপতিত্ব করছিলেন।

গত ১১ জুন শুরু হওয়া অধিবেশনটি ২১ কার্যদিবসে বৃহস্পতিবার শেষ হয়। এতে ২০১৯-২০ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেট পেশ ও পাস হয়। এছাড়াও ৭টি বিল পাস হয়্ বাজেটের ওপর ২৬৯ জন সদসপ্রায় ৫৫ ঘন্টা ৩৬ মিনিট বক্তব্য রাখেন।

প্রধানমন্ত্রী তার সমাপনী বক্তব্যে বাজেট আলোচনায় অংশ নেয়ার জন্য বিরোধী দলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তারা আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদকে প্রাণবন্ত করেছেন। প্রধান মন্ত্রী বঙ্গবন্ধু হত্যার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে রুদ্ধ করা হয়েছিল উল্লেখ করে বলেন, পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশকে খাদ্যে স্বয়ং সম্পুণতা অর্জনসহ নানা ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করে।এরপর আবার কলো অধ্যায়ের সূচনা হয় এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গত এক দশকে বাংলাদেশ উন্নয়নের মহীসোপানে যাত্রা শুরু করেছে। এখন বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোলমডেলে পরিণত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট দেয়ার কথা উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, আমরা এখন ৯৯ ভাগ আমাদের নিজেদের অর্থায়নে করতে পারি। এবার আমর ৯৪ ভাগ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। আমরা নিজেদের স্বাবলম্বী করতে চাই, কারো কাছে হাত পেতে নয়। সেটা আমরা আমাদের কাজের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছি। তিনি দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে বলেন, আগামী এক বছরের মধ্যে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ডলারে উন্নীত করতে পারবো। তিনি দেশের মানুষের গড় আয়ু পুরুষের ৭২.৮বছর এবং নারীর ৭৩ বছর বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে বলেন, খাদ্যে ভেজালের কথাও শুনতে হচ্ছে। তারপরও গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে সরকারের সার্বিক উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে বলেন, আর্থসামাজিকভাবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্যাসের দাম নিয়ে আন্দোলন হচ্ছে। ভারতে গ্যাসের দাম নাকি কমানো হয়েছে। দাম বাড়ানোর প্রয়োজন কেনো হলো তা ব্যখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, গ্যাসের চাহিদার কারণে আমাদের প্রাকৃতি গ্যাসের পাশাপাশি এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে। এ কারণে যেখানে ৭৫ শতাংশ দাম বৃদ্ধির দরকার ছিল সেখানে মাত্র ৩২.৮ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ঘনলিটার গ্যাসের দাম নেয়া হচ্ছে ৯.৮০ টাকা। অথচ এই গ্যাস খাতে প্রতিবছর সরকারকে ৩০ হাজার কোটি টাকা দেয়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। সেই হিসেবে দাম যেটা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন ছিল সেটা করা হয়নি। আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি। প্রতি ঘনলিটার গ্যাসের দাম যেখানে পড়ে ৬১.১২ টাকা সেখানে নেয়া হচ্ছে ৯.৮১ টাকা অথ্যাৎ ৫১.৩২ টাকা সরকার আর্থিক সহায়তা করছে। এই হিসেবে এখনো বছরে ১৯ হাজার ১০ কোটি টাকা ভর্তূকি দিতে হচ্ছে। তিনি বলেন পেট্রোবাংলা ১০২ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছিল। দামতো আরো বাড়ানো যেতো, কিন্তু আমরা বাড়াইনি মানুষের কথা চিন্তা করে। তিনি বলেন, আমাদের প্রাকৃতি গ্যাস অপ্রতুল । ফলে এলএনজির সংমিশ্রন করে গ্যাস দিতে হয়। এতে খরচের ব্যাপার আছে।

গ্যাস উত্তোলনের উদ্যোগ না নেয়ার অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই অভিযোগ ঠিক নয়। আমরা গ্যাস অনুসন্ধ্যান অব্যাহত রেখেছি। ৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন গ্যাস রপ্তানীর প্রস্তাব দিয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, আমি তখন বলেছিলাম আমাদের ৫০ বছরের গ্যাস মজুদ রাখার পর যদি থাকে তাহলে চিন্তা করা যেতে পারে। কিন্তু তার আগে আমাকে জানতে হবে আমার কত গ্যাস আছে। এরপর তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আবারো মুচলেকা নিতে চেয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের সম্পদ অন্যের হাতে তুলে দিয়ে ক্ষমতায় আনতে হবে সেই রাজনীতি করি না। আমি মুচলেকা দেইনি, খালেদা জিয়া দিয়েছিল। সেজন্য সেবার আমরা ক্ষমতায় আসতে পারিনি।

গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে সংসদ নেতা আবারো বলেন, এখানে আমাদের আমাদে খরচটাতো বিবেচনায় নিতে হবে। আমাদের এনার্জি ছাড়াতো চলবে না। খরচের পুরোটাইতো জনগণের কাছ থেকে নেয়া উচিত, সেটাতো আমরা নিচ্ছি না। ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে গ্যাসের দামের তুলনামূলক একটি চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদেরতো ভারতের তুলনায় দাম অনেক কম। শুধুমাত্র সিএনপি আমাদের ৪৩ টাকা আর ভারতে ৪৪ রুপিজ তাহলে ভারতে দাম কমলো কিভাবে? তারাও কিন্তু গ্যাসে ভর্তুকি দিচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের গ্যাস ব্যবহারে সচেতন হতে হবে। আগে শিল্প মালিকরা বলেছেন, আমাদের আগে গ্যাস দেন, যত টাকা লাগে দেবো। এখন গ্যাস দেয়ার পর যারা আন্দোলন করছেন তারা প্রকৃত অবস্থা চিন্তা করছেন না। তিনি বলেন, বিদ্যুতেও আমাদের ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। সেটার পরিমাণ ৮ হাজার কোটি টাকা। সেটাতো আমরা মানুষের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছি না। এভাবে বিরাট অংকের ভতূর্কি দিয়ে আমরা গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করছি। ফলে গ্যাসের ব্যবহারে আমাদের সচেতন হতে হবে। আমরা প্রিপ্রেইট মিটারের চিন্তা করছি যাতে অপচয় রোধ করা যায়।

প্রধানমন্ত্রী চাকুরির বয়সসীমা ৩৫ করার দাবি প্রসঙ্গে বলেন, এখন যে শিক্ষা ব্যবস্থা তাতে ২৩ বছরে একজন শিক্ষাজীবন শেষ করে বিসিএস পরীক্ষা দিতে পারে। এরপর ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতিবার পরীক্ষা দিতে পারে। পৃথিবীর কোন দেশে এতো বার পরীক্ষা দিতে পারে না। তিনি শিক্ষাখাতে সরকারি ভতুর্কির কথা উল্লেখ করে বলেন, পৃথিবীর কোন দেশে শিক্ষাখাতে এতো ভর্তুিক দেয় না। তিনি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মাথাপিছু শিক্ষার্থীদের ভতুকি প্রদানের পরিসংখ্যানও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, শিক্ষাঙ্গনে এক সময় অস্ত্রের ঝনঝনানি ছাড়া কিছু ছিল না। এখন সেটা হয় না। আস্তে আস্তে এই পরিবেশ আমরা আরো উন্নত করতে পারবো। তিনি কোটা আন্দোলন প্রসঙ্গে বলেন, ভিসির বাসায় যে আগুন দেয়ার মতো ঘটনা এর আগে দেখিনি। যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে বিচার করা দরকার যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন ঘটনা ঘটাতে সাহস না করে। তিনি বলেন, শিক্ষাখাতে যত টাকা লাগে আমরা দিয়ে যাচ্ছি।

সামাজিক অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশুদের ওপর অত্যাচার হচ্চে। কথায় কথায় মানুষ খুন করা হচ্ছে। এগুলো মিডিয়ায় আসে। পত্রিকায় খবর আসার পর এসব অপরাধ আরো বৃদ্ধি পায়। আমি আশা করবো যারা এসব অপরাধ করে তাদের ছবি যেন দেখানো ও প্রকাশ করা হয় বার বার যাতে অন্যরাও এই ধরণের অপরাধ করতে সাহস না পায়। আর আইনটা আরো কঠোর করার দরকার। পুরুষরা এইসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। তাই এ ব্যাপারে পুরুষদেরও সোচ্চার হতে হবে।

ডেঙ্গুজ্বর প্রসঙ্গে বলেন, এসব মশা ভদ্র জায়গায় থাকে। স্বচ্ছ পানিতে এগুলো জম্মায় বাড়ির আঙ্গিনা, টব, এসির পানি সব পরিস্কার রাখতে হবে যাতে পানি না জমায়।  প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। যে অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে তা অব্যাহত থাকবে দেশকে আরো সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাবো আমরা। বাংলাদেশকে ২০৪১ সালে মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার সব থেকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করবো।


আরো সংবাদ



premium cement