১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

একাদশ জাতীয় সংসদের যাত্রা শুরু আজ

একাদশ জাতীয় সংসদের যাত্রা শুরু আজ
একাদশ জাতীয় সংসদের যাত্রা শুরু আজ - ফাইল ছবি

আলোচিত একাদশ জাতীয় সংসদের যাত্রা শুরু হচ্ছে আজ বুধবার। ভোটের ফল প্রত্যাখ্যানকারী বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিজয়ী সংসদ সদস্যরা শপথ না নেয়ায় তাদের ছাড়াই বসতে যাচ্ছে প্রথম এই অধিবেশন। সংসদ অধিবেশন শুরুর দিন সকালে ঢাকায় প্রতিবাদী মানববন্ধনের কর্মসূচিও দিয়েছে তারা।

নিয়ম অনুযায়ী, প্রথম অধিবেশনের শুরুর দিন ভাষণ দেবেন রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ। পরে অধিবেশনজুড়ে ওই ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নেবেন সংসদ সদস্যরা। এর আগে গত ৯ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ এই অধিবেশন আহ্বান করেন।

আইনি বিতর্কের মধ্য দিয়ে গত ২৮ জানুয়ারি বহুল আলোচিত দশম জাতীয় সংসদের সমাপ্তি হয়েছে। সংসদীয় কমিটিসহ দশম সংসদের অন্যান্য কার্যক্রম ওই দিন থেকে সমাপ্তির আদেশ জারি করা হয়েছে। আর আজ নতুন স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দশম সংসদের পুরোপুরি সমাপ্তি ঘটবে।

সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, আজ বেলা ৩টায় ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো: ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে অধিবেশন বসবে। শুরুতে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরপর শোক প্রস্তাব উত্থাপন ও আলোচনা হবে। অধিবেশন সামনে রেখে সংসদ ভবন এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। সংসদ ভবন এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অধিবেশনকে কেন্দ্র করে সংসদ ভবনজুড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে সংসদ সচিবালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

এ দিকে গত ২৮ জানুয়ারি শেষ হয়েছে দশম জাতীয় সংসদের মেয়াদ। অতীতের ধারাবাহিকতায় এই সংসদ আরো বেশি কার্যকর হবে বলে আশা করছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এই সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া আওয়ামী লীগ সরকারি দল ও মাত্র ২২টি আসন নিয়ে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করবে জাতীয় পার্টি।

তবে গত সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের চেয়ারে বসছেন দলটির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। বিরোধী দলীয় উপনেতার দায়িত্বে থাকবেন এরশাদের ভাই জি এম কাদের। আর বিরোধীদলীয় চীফ হুইপের দায়িত্ব যাচ্ছে মসিউর রহমান রাঙ্গার কাছে। গতবার বিরোধী দলের পাশাপাশি সরকারের মন্ত্রিসভায়ও ছিল জাতীয় পার্টি। তবে এবার জাতীয় পার্টি বা আওয়ামী জোটের অন্য শরিকদের কেউই এখন পর্যন্ত সরকারে নেই। জাতীয় পার্টির সদস্যরা সংসদে কার্যকর বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করবে বলে জানিয়েছেন মসিউর রহমান রাঙ্গা।

নিয়ম অনুযায়ী, স্পিকার নির্বাচনের সময় ডেপুটি স্পিকারের সভাপতিত্বে সংসদ শুরু হবে। অধিবেশন শুরুর পর প্রথমেই হবে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন। যদিও স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী আবারো এই পদে থাকছেন এটা প্রায় নিশ্চিত। তবে ডেপুটি স্পিকার কে হবেন, সে বিষয়ে ক্ষমতাসীনদের কাছ থেকে কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।

এ দিকে বর্তমান ডেপুটি স্পিকার যদি পরবর্তী মেয়াদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তবে স্পিকার নির্বাচনের পর সাময়িক বিরতি দেয়া হবে। এ সময় সংসদ ভবনে অবস্থানরত রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নিয়ে স্পিকার অধিবেশনে বসবেন।

পরে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচনের জন্য সংসদ পরিচালনা করবেন স্পিকার। নির্বাচনের পর নতুন ডেপুটি স্পিকার রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়ে শপথ নেবেন। বর্তমান ডেপুটি স্পিকার পরবর্তী মেয়াদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলে স্পিকার-ডেপুটি স্পিকার নির্বাচনের পর বর্তমান ডেপুটি স্পিকার বিদায়ী ভাষণ দেবেন। স্পিকার-ডেপুটি স্পিকার নির্বাচনের পর অধিবেশন কিছু সময় মুলতবি রাখা হবে।

নির্বাচনের পর অধিবেশনের জন্য সভাপতিমণ্ডলীর মনোনয়ন দেবেন নতুন স্পিকার। স্পিকার-ডেপুটি-স্পিকারের অনুপস্থিতিতে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে অগ্রবর্তীজন সংসদ পরিচালনা করবেন।

তবে এর আগে নতুন স্পিকার সংসদে স্বাগত ভাষণ দেবেন। পরে নতুন স্পিকার-ডেপুটি স্পিকারকে স্বাগত জানিয়ে সংসদ সদস্যরা বক্তব্য রাখবেন। এরপর স্পিকার শোকপ্রস্তাব উত্থাপন করবেন। সেই প্রস্তাবের ওপর আলোচনা ও মুনাজাত হবে। পরে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অধিবেশন মুলতবি করা হবে।

সংসদের রেওয়াজ অনুযায়ী বর্তমান সংসদের কোনো সদস্য মারা গেলে শোক প্রস্তাবের আলোচনা শেষে অধিবেশন মুলতবি হয়। সৈয়দ আশরাফ একাদশ সংসদে নির্বাচিত হলেও তিনি এই সংসদের আইনপ্রণেতা হিসেবে শপথ নেননি। তার মৃত্যুতে এই রেওয়াজের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও বিশেষ বিবেচনায় তার জন্য অধিবেশন মুলতবি করা হবে।

রাষ্ট্রপতির ভাষণের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে কিছু সময়ের জন্য অধিবেশন মুলতবি রাখা হবে। এরপর আবার সংসদের বৈঠক শুরু হলে স্পিকার রাষ্ট্রপতিকে ভাষণ দেয়ার জন্য আহ্বান জানাবেন। রাষ্ট্রপতির ভাষণের পর অধিবেশন রেওয়াজ অনুযায়ী মুলতবি করা হবে। এরপর গত সংসদের সর্বশেষ অধিবেশনের পর রাষ্ট্রপতির জারি করা অধ্যাদেশগুলো সংসদে উত্থাপন করা হবে।

সংসদ সচিবালয়ের আইন শাখার দেয়া তথ্যানুযায়ী, এ পর্যন্ত পাঁচটি অধ্যাদেশ সংসদে উত্থাপনের জন্য ওই দফতরে জমা পড়েছে। অধ্যাদেশগুলো হলো ‘রিপ্রেজেনটেশন অফ দ্য পিপল (অ্যামেন্ডমেন্ট) অডিন্যান্স-২০১৮’, ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০১৮’, ‘চিটাগাং হিল ট্রাকস (ল্যা- ইকুইজেশন) (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০১৮’, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন এ-অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ-২০১৮’ এবং ইপিজেড শ্রম অধ্যাদেশ-২০১৯।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী জানান, ৩০ জানুয়ারি থেকে একাদশ সংসদের মেয়াদ শুরু হচ্ছে। ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারি এই সংসদের মেয়াদ শেষ হবে। সরকার ও বিরোধী দলের সব সদস্যকে অধিবেশনে উপস্থিত থাকতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দশম সংসদের মতো এই সংসদেও সরকার ও বিরোধী দল দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখবেন এবং সংসদ প্রাণবন্ত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সংসদকক্ষে সদস্যদের আসনবিন্যাসে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে না। তবে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীরা সবাই একদিকে বসবেন। আসনবিন্যাস সম্পর্কে স্পিকার শিরীন শারমিন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পেছনে তার মন্ত্রীদের দিলে তার জন্য সুবিধা হয়। তিনি নির্দেশনা দিতে পারেন। আমরা এবার চেষ্টা করেছি প্রধানমন্ত্রীর পেছনে মন্ত্রীদের দিতে তার উপরে প্রতিমন্ত্রীদের দিতে। তাহলে একদিক গোছানো হয়ে গেল।

প্রথম সারিতে যারা সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ছিলেন, যারা মন্ত্রী হননি তারা ওভাবেই থাকবেন। সেখানে পরিবর্তন হচ্ছে না। দশম সংসদে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আগে স্পিকারের আসনের সামনের দিকে বসলেও এবার তার আসন পরিবর্তন হচ্ছে। তাকে প্রধানমন্ত্রীর ডান দিকে আনা হচ্ছে। প্রথম সারিতে সৈয়দ আশরাফের আসনে এবার বসছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। আগের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের আসনে আসছেন নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রধানমন্ত্রীর ঠিক পেছনের আসনে বসবেন নতুন চিফ হুইপ। তার পাশে আইনমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, রেলমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী।

আওয়ামী জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন এবং জাসদের হাসানুল হক ইনু আগের আসনেই থাকবেন। তারা দুইজন স্পিকারের বাম দিকে বিরোধী দলের আসনের পাশে প্রথম সারিতে বসবেন। এ ছাড়া কে, কতবার নির্বাচিত হয়েছে, দলীয় পদ, সাবেক মন্ত্রী, জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এসব বিবেচনা করে আসনবিন্যাস করা হচ্ছে। তবে বয়সে তরুণ এবং প্রথমবার নির্বাচিত সদস্যদের সবার উপরে আসন দেয়া হচ্ছে। প্রথমবার নির্বাচিতদের মধ্যে যারা বয়সে প্রবীণ, তাদের নিচের দিকে আসন দেয়া হচ্ছে।

সূত্র জানায়, অধিবেশনের প্রথম দিনে প্রধান বিচারপতি, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, দেশ-বিদেশী কূটনীতি, রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মকর্তা এবং ভিআইপিদের আত্মীয়-স্বজনসহ পাঁচ শতাধিক অতিথি উপস্থিত থাকবেন। ইতোমধ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে সংগৃহীত তালিকা চূড়ান্ত করে আমন্ত্রণপত্র বিতরণ করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement
ট্রাকচাপায় নিহত ১৪ : তদন্ত কমিটি গঠন, চালক-হেলপার গ্রেফতার নেতানিয়াহুর একগুঁয়েমির কারণে মধ্যস্তকারীর ভূমিকা থেকে সরে যাবে কাতার! আফ্রিদির সাথে বিবাদের বিষয়ে কথা বললেন বাবর বাংলাদেশে গ্রিসের দূতাবাস হচ্ছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাকিস্তানের সাথে টেস্ট খেলতে চান রোহিত অধ্যাপক মাযহারুল ইসলামের বাসভবনে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ইউক্রেনের ২০টি ড্রোন, ২টি ক্ষেপণাস্ত্র নিষ্কিৃয় করল রাশিয়া তালেবানকে আফগান মাটি অন্যদের ব্যবহারের সুযোগ না দেয়ার আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের। গত দুই দিনের রেকর্ডের পর চুয়াডাঙ্গায় আজও বইছে তীব্র তাপদাহ বগুড়ায় শিশুকে গলা কেটে হত্যা, নানা আটক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের সম্ভাব্য একাদশ

সকল