২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

৩০ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদের যাত্রা শুরু

- ফাইল ছবি

নতুন বছরে একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন আগামী ৩০ জানুয়ারি বুধবার বসবে। ওইদিন বিকেল ৩টায় যাত্রা শুরু করবে নতুন এই সংসদ। আগামী ২৮ জানুয়ারি শেষ হচ্ছে দশম জাতীয় সংসদের মেয়াদ।

সংবিধান অনুযায়ী সংসদের প্রথম ও বছরের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি ভাষণ দিয়ে থাকেন। পরে অধিবেশনজুড়ে রাষ্ট্রপতির ওই ভাষণের ওপর দীর্ঘ সাধারণ আলোচনায় অংশ নেবেন সংসদ সদস্যরা। ফলে এ অধিবেশনও দীর্ঘ হবে।

তবে সংসদের শীতকালীন এ অধিবেশন কতদিন চলবে তা কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে। অধিবেশন শুরুর একঘণ্টা আগে সংসদ ভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বুধবার রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদশেরে সংবধিানের ৭২ অনুচ্ছদেরে (১)দফায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ অধবিশেন আহবান করছেনে।

এরআগে গত সোমবার ক্ষমতাসীন দলের সংসদ নেতা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শপথ নিয়েছেন নতুন সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা। যদিও জালিয়াতির অভিযোগ তুলে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করা বিএনপি জোটের নেতারা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ না নেবেন না বলে জানানো হয়েছে।

মুলতবি না রাষ্ট্রপতির ভাষণ?
অধিবেশন শুরুর দিন প্রথমেই হবে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে আবারও একই পদে রাখার বিষয়ে রংপুরে নির্বাচনী জনসভায় ইঙ্গিত দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে তিনিই হচ্ছেন একাদশ জাতীয় সংসদের স্পীকার-এটা নিশ্চিত। তবে ডেপুটি স্পিকার কে হবেন, সে বিষয়ে এখনও ক্ষমতাসীনদের কাছ থেকে কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।

সংবিধান অনুযায়ী বছরের প্রথম অধিবেশন শুরুর দিন রাষ্ট্রপতি সংসদে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। পরে রাষ্ট্রপতির ওই ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাব জানাতে সাধারণ আলোচনা হয়। আবার চলতি সংসদের কোনো এমপি মারা গেলে অধিবেশন শুরুর পর মুলতবি কর হয়। তাই অধিবেশন শুরুর পর প্রয়াত এমপিকে নিয়ে আলোচনার পর সংসদের বৈঠকের কিছুক্ষণ মুলতবি দেয়া হবে। এরপর রাষ্ট্রপতি ভাষণ দেবেন।

স্পিকার ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন
সংসদের প্রথম অধিবেশনে সংবিধানের অনুচ্ছেদ-৭৪ অনুযায়ী নতুন সংসদের প্রথম বৈঠকে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করতে হয়। এ জন্য কমপক্ষে এক ঘণ্টা পূর্বে নোটিশ দিতে হয়। একজন প্রস্তাবক, একজন সমর্থক ও প্রার্থীর সম্মতি লাগে। স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন ছাড়াও প্রথম অধিবেশনে সভাপতিমন্ডলি মনোনয়ন, শোক প্রস্তাব; অধ্যাদেশ উত্থাপন (যদি থাকে), সংসদীয় কমিটি গঠন (যদি থাকে), সংবিধান বা আইন অনুযায়ী কোনো রিপোর্ট উপস্থাপন (যদি থাকে) ও রাষ্ট্রপতির ভাষণ থাকে। তবে রেওয়াজ অনুযায়ী প্রশ্নকাল থাকে না।

সংসদ সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, স্পিকার-ডেপুটি স্পিকার নির্বাচনের পর অধিবেশন কিছু সময় মুলতবি রাখা হবে। এই সময় সংসদে অবস্থানরত রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে নতুন স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার শপথ নেবেন। পরে নবনির্বাচিত স্পিকারের সভাপতিত্বে শুরু হবে সংসদের বৈঠক। বৈঠক শুরুর পর নতুন স্পিকার সংসদে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করবেন। তবে তার অধ্যাদেশ সংসদে তুলবেন আইনমন্ত্রী।

একাদশ সংসদের নির্বাচিত সদস্য আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ অন্যদের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাব তোলা হবে। বর্তমান সংসদের কোনো সদস্য মারা গেলে শোক প্রস্তাবের আলোচনা শেষে অধিবেশন মুলতুবির রেওয়াজ আছে। তবে রাষ্ট্রপতির ভাষণের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে কিছু সময়ের জন্য অধিবেশন মুলতবি রাখা হবে। এরপর আবার সংসদের বৈঠক শুরু হলে স্পিকার রাষ্ট্রপতিকে ভাষণ দেয়ার জন্য আহ্বান জানাবেন। রেওয়াজ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির ভাষণের পর অধিবেশন মুলতুবি করা হবে।

গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় পায় আওয়ামী লীগ। ভোট হওয়া ২৯৮ আসনের মধ্যে ২৫৭টিতে জয় পেয়েছে দলটি, জোটগতভাবে তারা পেয়েছে ২৮৮ আসন। অপরদিকে তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি ও তাদের জোটসঙ্গীরা সব মিলিয়ে মাত্র ৮টি আসন পেয়েছে।

আওয়ামী লীগ ও তাদের জোটের শরীকদের নির্বাচিতরা গত ৩ জানুয়ারি সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন। নিয়ম অনুযায়ী সংসদ সদস্যরা শপথ নেওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে প্রথম অধিবেশন বসার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের সংসদ নেতা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত সোমবার শপথ নিয়েছেন নতুন সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা।
অন্যদিকে ভোটে কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করা বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংসদ সদস্যরা শপথ নেবেন না বলে জানানো হয়েছে।

এদিকে দশম জাতীয় সংসদের মতো এবারও সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসতে যাচ্ছে জাতীয় পার্টি। তবে এবার একটু ভিন্ন ফরম্যাটে। আগেরবার অর্থাৎ দশম জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের পাশাপাশি সরকারের মন্ত্রিসভায়ও ছিল জাতীয় পার্টি। তবে এবার জাতীয় পার্টি বা আওয়ামী লীগের অন্য শরিকদের কেউই এখন পর্যন্ত সরকারে নেই। এবারের নির্বাচনে ২২টি আসনে জয়ী হয়েছে দলটি।

তবে গত সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদের চেয়ারে বসবেন দলটির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। বিরোধী দলীয় উপ-নেতার দায়িত্বে থাকবেন তার ছোট ভাই জাতীয় পার্টির কো চেয়ারম্যান জিএম কাদের। আর বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপের দায়িত্ব পালন করবেন দলটির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা।

কতদিন চলবে অধিবেশন
সংসদের শীতকালীন এ অধিবেশন কতদিন চলবে তা কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে। অধিবেশন শুরুর একঘণ্টা আগে সংসদ ভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। কার্য উপদেষ্টা কমিটির ওই বৈঠকে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্ব করবেন। এতে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেতা উপস্থিত থাকবেন। তবে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর দীর্ঘ আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে বলে এ অধিবেশন দীর্ঘ হবে।

এর আগে গত ৩ জানয়ারি সংসদ ভবনের শপথ কক্ষে চার ধাপে ২৮৯ জন শপথ নেন। প্রথমে স্পিকার ড.শিরীন শারমিন চৌধুরী সংবিধান ও কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী প্রথমে নিজে শপথ গ্রহণ করেন এবং শপথ বইয়ে স্বাক্ষর করেন। পরে অন্যদের শপথ বাক্য পাঠান করান। সেদিন অসুস্থ্যতার কারণে আওয়ামী লীগের সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম শপথ নিতে পারেননি। পরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এছাড়া বিএনপির ৫ জন ও ঐক্যফ্রন্টের ২ জন শপথ নেননি।

এর আগে ৩০ ডিসেম্বর ২৯৯ সংসদীয় আসনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এক প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে গাইবান্ধা-৩ আসনের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছিল। আর নির্বাচনের দিন ব্রাক্ষণবাড়িয়া-২ আসনের তিনটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত হওয়ায় ওই আসনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি। যদিও ওই আসনে ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ায় বিএনপির প্রার্থী উকিল আবদুস সাত্তারকে বেসরকারীভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হযেছে।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২৫৭টি আসন। জাতীয় পার্টি পেয়েছে ২২টি আসন। বিএনপি পেয়েছে ৬টি আসন। ওয়ার্কার্স পাটি পেয়েছে ৩টি আসন, গণফোরাম ২টি (এর মধ্যে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর এবং গণফোরাম নিজস্ব প্রতীক উদীয়মান সূর্য নিয়ে মোকাব্বির খান নির্বাচিত হয়েছেন), বিকল্প ধারা বাংলাদেশ ২টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ২টি, তরিকত ফেডারেশন ১টি, জাতীয় পার্টি (জেপি) ১টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৩টি আসনে জয়ী হন।


আরো সংবাদ



premium cement