২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ আজ

জাতীয় সংসদ ভবন - সংগৃহীত

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী সংসদ সদস্যরা আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় সংসদ ভবনের নিচতলায় শপথ কক্ষে শপথ গ্রহণ করবেন। বিধি মোতাবেক দশম সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী নবনির্বাচিত এমপিদের শপথ পাঠ করাবেন।

এর আগে এমপি হিসেবে নিজে নিজে শপথ নেবেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এ জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে জাতীয় সংসদ সচিবালয়। শপথ অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে সংসদ ভবন ঘিরে কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে।

নবনির্বাচিত এমপিদের সংসদ ভবনে প্রবেশের পর শপথ কক্ষে প্রবেশের আগে প্রত্যেক এমপিকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানানো হবে। শপথ কক্ষে ঢোকার পর সবার হাতে তুলে দেয়া হবে শপথনামার ফোল্ডার। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসন গ্রহণের পর পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হবে শপথ অনুষ্ঠান। এরপর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে শপথ নেয়ার জন্য আহ্বান করা হবে। স্পিকার নিজেও একাদশ সংসদের এমপি নির্বাচিত হওয়ায় অন্যদের শপথ পড়ানোর আগে তিনি নিজে নিজের শপথ গ্রহণ করবেন। এরপর অপর এমপিদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন।

সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, একাদশ সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে স্পিকারের পর শপথ নেবেন আওয়ামী লীগের এমপিরা। এমপিদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় কয়েক ভাগে তাদেরকে শপথ পড়ানো হতে পারে। তাদের শপথ গ্রহণ শেষে দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে জাতীয় পার্টির এমপিরা ও সব শেষে অন্যান্য দল ও স্বতন্ত্র এমপিরা শপথ নেবেন। তবে বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত এমপিরা শপথ নেবেন কি না, সংসদ সচিবালয় তা নিশ্চিত করতে পারেনি। অবশ্য দল ও ফ্রন্টের পক্ষ থেকে শপথ না নেয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন সংসদ সচিবালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমদ খান।

এ দিকে একাদশ সংসদের নবনির্বাচিত এমপিদের স্বাগত জানাতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সংসদ সচিবালয়। ইতোমধ্যে শপথ কক্ষসহ সংসদ সচিবালয় ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। শপথ কক্ষ পর্যন্ত নতুন লাল কার্পেট বিছানো হয়েছে। ফুলের টব দিয়ে সাজানো হয়েছে সংসদের প্রবেশপথ ও লবি। শপথ গ্রহণের পর সদস্যদের পূরণের জন্য নির্ধারিত ফরম ও কার্যপ্রণালী বিধির কপি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয় থেকে নবনির্বাচিত এমপিদের গেজেট সংসদ সচিবালয়ে পৌঁছার পর সব সংসদ সদস্যকে শপথ গ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

শপথ অনুষ্ঠানকে ঘিরে সংসদ ভবন ও আশপাশ এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও শপথ নেবেন, ফলে বাড়তি নিরাপত্তা থাকছে। গতকাল সকাল থেকেই গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ওই এলাকায় নজরদারি বাড়িয়েছে। দর্শনার্থীদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। গণমাধ্যমকর্মীদের ক্ষেত্রে কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছে। একটি গণমাধ্যম থেকে সর্বোচ্চ দুইজন শপথ অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পাচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে অনুমোদিতদের অবশ্যই পিআইডির (অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড) পাস থাকতে হবে।

নির্বাচন কমিশন থেকে প্রকাশিত সংসদ নির্বাচনের ফলাফল গেজেট গতকাল সংসদ সচিবালয়ে পৌঁছেছে। সে অনুযায়ী সংসদ সচিবের স্বাক্ষর করা আমন্ত্রণপত্র সব নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যকে পাঠানোর পাশাপাশি টেলিফোনে তাদের সাথে যোগাযোগ করে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

গতকাল বুধবার সংসদ ভবন ঘুরে সাজ সাজ রব দেখা গেছে। শপথ অনুষ্ঠানকে ঘিরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। সংসদ ভবনের অভ্যন্তরসহ আশপাশের এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা করা হয়েছে। বাহারি রঙের ফুলের টব সারি সারি বসিয়ে সংসদ ভবনকে নতুনরূপে সাজানো হয়েছে। সংসদ সদস্যদের পরিচয়পত্র দেয়ার জন্য তিন তলায় নতুন বুথ খোলা হয়েছে। কিভাবে সংসদ সদস্যদের অভ্যর্থনা জানানো ও শপথ পড়ানো হবে, গত দু’দিনে তার মহড়াও চলেছে।

সংবিধান অনুযায়ী, গেজেট প্রকাশের তিন দিনের মধ্যে নতুন এমপিদের শপথ গ্রহণের ও এক মাসের মধ্যে সংসদ অধিবেশন আহ্বান করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সংসদ সচিবালয়ের আইন কর্মকর্তা জানান, একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশনেই প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হবেন। তবে বিরোধীদলীয় নেতা কে হবেন তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা সাংবাদিকদের জানান, সংবিধান অনুযায়ী আমরা বিরোধী দল হতে পারব, সমস্যা নেই। মহাজোটের সাথে আলোচনা করে ও দলের প্রেসিডিয়ামের সাথে বসে সিদ্ধান্ত নেব আমরা বিরোধী দলে যাবো কি না।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী এমপিরা ৯ জানুয়ারি শপথ গ্রহণ করেন। এরপর ২৯ জানুয়ারি বসে সংসদের প্রথম অধিবেশন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী সংসদ সদস্যদের গেজেট পয়লা জানুয়ারি প্রকাশ হওয়ায় ৩০ জানুয়ারির মধ্যে সংসদ অধিবেশন বসবে। আর যে দিন অধিবেশন বসবে সেই দিন থেকে একাদশ সংসদের মেয়াদ শুরু হবে। রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ পড়ানোর পর সংসদ অধিবেশন আহ্বান করবেন। আগামী ১০ জানুয়ারির মধ্যে মন্ত্রিসভা গঠিত হবে বলে সরকারি দলের একাধিত নেতা জানিয়েছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement