২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আয় খুকু আয়...

অবশেষে বাবার সাথে দেখা হলো মিশেলের... - ডেইলি মেইল

''আয়রে আমার পাশে আয় মামনি
এ হাতটা ভালো করে ধর এখনি...
আয় খুকু আয়
আয় খুকু আয়...''

হেমন্ত মুখোপাধ্যায় আর শ্রাবন্তী মজুমদারের গাওয়া এ গানটি সব খুকুদের চোখেই জল এনে দেয়, প্রিয় বাবার মুখটি ভাসিয়ে দেয় মনের আয়নায়। মনে করিয়ে দেয় কপালে বাবার চুমু আর আদরে বুকে জড়িয়ে নেয়া। কিন্তু এই প্রিয় মুখটি যখন কারো অজানা, তখন কেমন লাগে? শত চেষ্টায়ও যখন বাবার মুখটি মনের আয়না ভেসে উঠে না। কারণ সেই মুখটি যে তার কখনো দেখাই হয়নি। এমন কষ্টের অনুভূতি নিয়েই বছরের পর বছর পার করেছেন মিশেল কেন। খুঁজে বেরিয়েছেন প্রিয় বাবাকে। ছোট্ট খুকির মতো ঝাঁপিয়ে পড়তে চেয়েছেন বাবার বুকে। কিন্তু পারেননি। অবশেষে এক যুগ পর সেই মধুরক্ষণটি এসেছে। ৩১ বছরের তরুণীটি ছুটে গেছেন বাবার বুকে। ডুকরে ডুকরে কেঁদেছেন। আর বাবা আদরে ভরিয়ে দিয়েছেন খুকুকে।

ঘটনা ১৯৮৬ সালের। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে জন্ম হয় মিশেলের। ঘণ্টাখানেক পরই তাকে দত্তক নিয়ে নেয় জোয়ান কেন (৬৮) ও জোয়েল কেন দম্পতি (৭১)।

এই দম্পতির কাছে রাজকীয় হালেই ছিলেন মিশেল। ক্যালিফোর্নিয়ার অকল্যান্ডে বেড়ে উঠেন তিনি। কোনো কিছুরই কমতি ছিল না তার। কিন্তু বড় হওয়ার পর থেকেই আসল মা-বাবাকে খুঁজতে থাকেন মিশেল।

অবশেষে ২০০৯ সালে দত্তক মা জোয়ানের সাহায্যে খুঁজে পান জন্মদাত্রী মা ডায়ানাকে (৫৪)। ভেবেছিলেন, মায়ের সাথে বাবাকে পাবেন তিনি। কিন্তু ভাগ্য সহায় হলো না। জানতে পারলেন, বাবার সাথে মায়ের কোনো যোগাযোগ নেই। তিনি মিশেলের জন্মদাতার কোনো খোঁজ জানেন না। তাই ২৩ বছর বয়সে মা হওয়া ডায়ানা মিশেলকে জন্মের পর পরই দত্তক দিয়ে দেন। কারণ ওই বয়সে তার পক্ষে সন্তানের দায়িত্ব নেয়া সম্ভব ছিল না।

এ ঘটনায় হতাশ হননি মিশেল। বাবাকে খুঁজতে উঠে-পড়ে লাগেন। সব ধরণের চেষ্টা করে যান তিনি।

এর মাঝেই ২০১৫ সালে ৩১ বছর বয়সী ডেন মিলারকে বিয়ে করেন মিশেল। জীবনের সুন্দর এই মুহূর্তে বাবাকে পাশে না পেলেও মা ছিলেন তার সাথে।

এক পর্যায়ে অনলাইনে বাবাকে খোঁজা শুরু করেন মিশেল। একটি ওয়েবসাইটে ডিএনএ জমা দেন। সেই সূত্র ধরেই এগিয়ে যান তিনি। এক সময় বাবার এক আত্মীয়ের সন্ধান পান তিনি। জানতে পারেন তার বাবার নাম গ্রেগ হিকস। পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী। তারপর তার ডিএনএ'র সাথে নিজের ডিএনএ টেস্ট করেই নিশ্চিত হন।

অবশেষে সেই মধুর মুহূর্তটি আসে। বাবার সাথে দেখা করতে যান মিশেল। আসলে বাবাই আসেন মিশেলের সাথে দেখা করতে। তিনি এতোটাই উচ্ছ্বসিত ছিলেন যে, ক্যালিফোর্নিয়া বিমানবন্দরে মেয়েকে দেখেই দৌড়ে এসে মেয়েকে জড়িয়ে ধরেন।

ওই সময়ে অনভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে মিশেল বলেন, 'আমাকে দেখে বাবা এতোই খুশি হয়ে ছিলেন বিমানবন্দরের উঁচু সোফা লাফিয়ে পেরিয়ে আমাকে বুকে জড়িয়ে নেন।'

আর বাবা গ্রেগের কী অনুভূতি?

'মিশেল আমার জীবনটাকে নতুন করে সাজিয়েছে।'


আরো সংবাদ



premium cement