২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সরকার আমাদের কথায় কোনো কর্ণপাত করেনি : আবুল মকসুদ

-

পরিবেশবাদী সংগঠন বাপা’র সহ-সভাপতি, বিশিষ্ট লেখক-গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেছেন, বর্তমানে খাদ্যে ভেজাল এমন একটা পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যা সরাসরি বিষ প্রয়োগের সামিল। বাপা’র পক্ষ থেকে আমরা দীর্ঘদিন ধরে নিরাপদ খাদ্যের ব্যাপারে সরকারকে বলে আসছি। কিন্তু সরকার আমাদের কথায় কোনো কর্ণপাত করেনি। যার ফলে এ অবস্থার সৃষ্টি। তখন থেকে যদি কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হতো তা হলে আজ এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না। তিনি খাদ্যে ভেজালকারী প্রতিষ্ঠান এবং বিএসটিআইসহ সংশ্লিষ্ট দায়ী কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী আইনে বিচার করে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান।

বাপা ও গ্রীন ভয়েসের উদ্যোগে আজ বুধবার ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের সামনে এক নাগরিক সমাবেশে তিনি একথা বলেন।

‘ইফতারসহ সকল খাদ্য বিষ ও ভেজালমুক্ত এবং নিরাপদকরণের’ দাবিতে এ নাগরিক সমাবেশে সৈয়দ আবুল মকসুদ আরো বলেন, বাংলাদেশ আজ নানা রকম বিপদের মধ্যে রয়েছে। আর এ বিপদ সৃষ্টির মূলে রয়েছে একশ্রেণীর অতিমুনাফালোভী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।

তিনি খাদ্যে ভেজালকারীদেরকে হত্যাকারী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, একটা মানুষ খুন করলে ৩০২ ধারায় হত্যাকারীর বিরুদ্ধে হত্য মামলা হয়। এখানেতো লাখ লাখ মানুষকে তিলে-তিলে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে হত্যা করা হচ্ছে।

বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক ও গ্রীন ভয়েসের প্রতিষ্ঠাতা আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ^াস। তিনি বলেন, আমাদের দেশের মতো পৃথিবীর কোথায়ও মানুষ নিরাপদ খাবার নিয়ে এত ভীত নয়। ভেজাল খাদ্যের কারণে শিশুসহ সকলে আজ স্বাস্থ্য হুমকীর মুখে।

তিনি বলেন, পবিত্র রমজান মাসে সারাদিন রোজা থেকে দিন শেষে বাজারে তৈরী মুখরোচক খাবার দিয়ে মানুষ যা দিয়ে ইফতার করে তা একদিকে যেমন অস্বাস্থ্যকর, অন্যদিকে তা কতটুকু হালাল তাও প্রশ্ন সাপেক্ষ। তাই রোজা শেষে নিরাপদ ও হালাল ইফতার নিশ্চিত করা খুবই জরুরী। বাজারে বিক্রিত মুড়ি, জিলাপী, গুড়সহ বিভিন্ন খাদ্যে হাউড্রোজ, পোড়া মবিল মেশানো হয়, হাইড্রোজ যা পাথর পর্যন্ত ভেঙ্গে ফেলে যেটা মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর পদার্থ।

তিনি আরো বলেন, বাজারে যে ৫২টি কোম্পানির পণ্যে ভেজালের কথা আজ প্রচারিত হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে অনেক কোম্পানির পণ্য মানুষ কোনো কিছু না দেখেই শুধু কোম্পানির নাম দেখে নিশ্চিন্তে ব্যবহার করে। সেই কোম্পানিগুলো আজ মানুষের সরলতার সুযোগ নিয়ে খাদ্যের নামে মানুষকে বিষ খাওয়াচ্ছে যা হত্যার সামিল। তিনি এর সাথে জড়িত সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিসহ প্রয়োজনে আইন সংশোধন করারও আহ্বান জানান।

আলমগীর কবির বলেন, মানবিক মূল্যবোধের অভাবে সামান্য লাভের জন্য একশ্রেণীর মুনাফালোভীরা একটি জাতিকে বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তিনি বলেন, নিরাপদ খাবার নিশ্চিত না করতে পারলে একটি সুস্থ জাতি গঠনের স্বপ্ন কখনোই বাস্তবায়ন করা যাবে না। ৫২টি পণ্যে ভেজালের কথা আমরা দেশবাসী জানতে পেরেছি কিন্তু বাস্তবে এর পরিমাণ আরো বেশি যা সাধারণের দৃষ্টির অগোচরেই রয়ে গেছে। এজন্য তিনি সরকারসহ ভেজাল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়ী করেন। তিনি নিজ নিজ অবস্থান থেকে জনগণ ও মিডয়াকে আরো সচেতন ও দায়িত্ববান হওয়ার আহবান জানান।

সমাবেশে থেকে কয়েকটি দাবি তুলে ধরা হয়। তারা মানুষের সাথে সম্পর্কিত সকল পশুপাখী ও মাছের নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের দাবি জানান। মুরগীর খাদ্যে ট্যানারিবর্জ্য ব্যবহার বন্ধ করা, এ বিষয়ে হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়নের পাশাপাশি মৃত বা অসুস্থ পশু কিংবা পাখির গোশত যেন বিক্রি করা না হয় তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।

নাগরিক সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন গ্রীন ভয়েসের ঢাকা মহানগর শাখার সমন্বয়ক আব্দুস সাত্তার, ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ শাখার সমন্বয়ক ফাহমিদা নাজনীন তিতলী, আরিফুল ইসলাম আরিফ প্রমুখ। এছাড়াও অনুষ্ঠানে ভোক্তা অধিকার কর্মী, পুষ্টিবিদ, গবেষক, পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন কলেজ-বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement