২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

মাওলানা সাদকে নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নিল হেফাজতে ইসলাম

মাওলানা সাদকে নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নিল হেফাজতে ইসলাম। ছবি - সংগৃহীত

তাবলীগ জামাতের কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ সাদ কান্দালভির কিছু বক্তব্য ও মতবাদকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে তাবলীগ জামাতের মধ্যে বিভক্তি এখন স্পষ্ট রূপ নিয়েছে। ঢাকায় কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের আমীর শাহ আহমদ শফী'র উপস্থিতিতে তাবলীগ জামাতের একাংশের এক সম্মেলন হয় শনিবার। এতে সাদ কান্দালভিকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করাসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

কিন্তু সাদ কান্দালভির সমর্থকরা বলছেন, তাদের নেতার বক্তব্য বা সংস্কারের প্রস্তাব মানতে না পেরেই বাংলাদেশে সংগঠনটির কর্মকান্ডকে 'রাজনৈতিক চেহারা' দেয়া হয়েছে। ঢাকার মোহাম্মদপুরে অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয় যে, দিল্লিতে তাবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা সাদ কান্দালভির বক্তব্য ও মতবাদকে অনুসরণ করা হবে না, এবং আগামী বিশ্ব ইজতেমার সময় তাকে বাংলাদেশে আসতেও দেয়া হবে না।

ভারতীয় উপমহাদেশে সুন্নি মুসলমানদের বৃহত্তম সংগঠন তাবলীগ জামাতের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব প্রথম প্রকাশ্য রূপ পায় ২০১৭ সালের নভেম্বরে, যখন বাংলাদেশে তাবলীগের মূল কেন্দ্র কাকরাইলে দুই দল কর্মীর মধ্যে হাতাহাতি হয়।

২০১৮ সালের বিশ্ব ইজতেমার সময় সাদ কান্দালভির আগমনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানো হলে তিনি ইজতেমা প্রাঙ্গণে উপস্থিত না হয়েই দিল্লি ফিরে যান। সাদ কান্দালভিকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করার কথা জানিয়ে তার বিরোধী শিবিরের নেতারা বলছেন, ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তাবলীগ জামাত যেভাবে চলেছে, ভবিষ্যতেও সেভাবেই চলবে।

দু গোষ্ঠীই এখনো তবলীগ জামাতের প্রধান দফতর কাকরাইল মসজিদেই অবস্থান করছেন, কিন্তু কার্যক্রম চালাচ্ছেন আলাদা আলাদা ভাবে।

মাওলানা সাদের সমর্থক গোষ্ঠীর একজন হলেন কামাল আহমেদ। তিনি বলেন, তাবলীগ জামাতের ৯০ শতাংশই 'নিজামুদ্দিন মারকাজ' বা সা'দ কান্দালভি’র অনুসারী হিসেবেই আছেন। কিন্তু তার কিছু কথাকে একটি গোষ্ঠী সহজভাবে নিতে পারছেন না। তার বিরোধীদের পেছনে কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের লোকেরা সক্রিয় বলে বলা হলেও হেফাজতের নেতারা এ অভিযোগ সরাসরি স্বীকার করেন না।

হেফাজতে ইসলামের একজন উর্ধতন নেতা মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ বলেন, এখানে হেফাজত বা অন্য কোন রাজনৈতিক দলের কোন সম্পৃক্ততা নেই।

তবে কামাল আহমেদের বক্তব্য, মোহাম্মদপুরের সম্মেলনে মূলত হেফাজতে ইসলামের এবং রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট লোকেরাই ছিল।

কিন্তু মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘যারা তাবলীগের সাথে সংশ্লিষ্ট তারা সবাই তাবলীগকে রক্ষা করার জন্য, বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করার জন্য, এবং মানুষের ঈমান হেফাজত করার জন্যই আজকে এ অবস্থান নিয়েছে। তারা চান যেন তাবলীগ সঠিক পথে চলে, এতে যেন নতুন আরেকটি বিভ্রান্ত মতবাদ তৈরি না হয়।’

কি নিয়ে এই বিরোধ?

তাবলীগ জামাতের দুই গোষ্ঠীর নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে মোহাম্মদ সাদ কান্দালভি এমন কিছু 'সংস্কারের' কথা বলছেন যা সংগঠনের ভেতরে মতবিরোধ তৈরি করেছে। তার কথা, ধর্মীয় শিক্ষা বা ধর্মীয় প্রচারণা অর্থের বিনিময়ে করা উচিত নয়।তার আরো একটি বক্তব্য হলো, মাদ্রাসাগুলোর যারা শিক্ষক তারা মাদ্রাসার ভেতরে নামাজ পড়েন, যা ঠিক নয়। তাদের মসজিদে এসে নামাজ পড়া উচিত, যাতে মানুষের সাথে যোগাযোগ বাড়ে।

কিন্তু তার বিরোধীরা বলছেন, সাদ কান্দালভি যা বলছেন তা তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা নেতাদের নির্দেশিত পন্থার বিরোধী, এবং আহলে সুন্নাত ওয়া'ল জামাতের বিশ্বাস ও আকিদার বাইরে।

এ গোষ্ঠীর একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতা বলেন, সাদ কান্দালভি এখনো এ মতবাদ ছাড়েন নি, তাই এটা যেন বাংলাদেশে ছড়াতে না পারে এবং মুসলিমরা যেন পথভ্রষ্ট না হয়, সে জন্যই তারা কাজ করে চলেছেন। তিনি দাবি করেন, এর মধ্যে এক কণাও রাজনীতি নেই।

ভারতীয় উপমহাদেশের সুন্নি মুসলমানদের বৃহত্তম সংগঠন এই তাবলীগ জামাত। সাদ কান্দালভির বক্তব্য নিয়ে বাংলাদেশে দুটি অংশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই দ্বন্দ্ব চলছিল।

 


আরো সংবাদ



premium cement