২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সন্তানের শিক্ষায় মায়ের সিদ্ধান্ত

- প্রতীকী ছবি

আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমন কিছু নাগরিক সৃষ্টি করছে যারা নিজেদের কর্মক্ষেত্রে প্রশংসনীয় অবদান রাখতে পারছে না। ‘শিক্ষিত’ নাগরিকরা যখন তাদের সার্টিফিকেটের মর্যাদাই রক্ষা করতে পারেছ না, তখন তারা জাতির খেদমত কী করে করবে?

নারীদের ক্ষেত্রে একথাটি আরো বেশি সত্য। জাতি গঠনের মূল কারিগর মায়েরা। আমাদের জন্য বিষয়টি তাই দুর্ভাগ্যের। এদেশের অন্যতম একটি উচ্চ শিক্ষপ্রতিষ্ঠানে একজন ভদ্র, মেধাবী ছাত্রকে তারই সহপাঠীরা নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করতে পারে কিসের অভাবে? নিশ্চয় সুশিক্ষার অভাবে। অথচ তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র। প্রকৃতপক্ষে দেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই আসল শিক্ষা দেয়া হচ্ছে না, যে শিক্ষা মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব সৃষ্টি করতে পারে। মানুষের আকৃতি থাকলেই তাকে মানুষ বলা যায় না। মানুষ ও পশু উভয়েই প্রাণী। পশু থেকে মানুষ আলাদা করে চেনার উপায় হচ্ছে মনুষ্যত্ব। পাশবিক আচরণ মানুষকে পশুর শামিল করে দেয়। আর নৈতিক জ্ঞানই মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব তৈরি করতে পারে যা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে রাসূল সা:-এর মাধ্যমে ওহি হিসেবে আমাদের কাছে এসেছে। সেই ওহির জ্ঞানই মানুষকে মানুষ বানাতে পারে। তাই আলাহ তায়ালা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর ওপর ওহির জ্ঞানার্জন ফরজ করে দিয়েছেন।

আমার প্রতিবেশী একজন মহিলা যার শিক্ষাজীবন সমাপ্ত হয়েছে প্রাইমারিতে। প্রতিবেশীদের কাছে তিনি রহিমের (ছদ্মনাম) আম্মু হিসেবে পরিচিত। একদিন তিনি আমাকে বলছিলেন যে, তার ছেলে রহিমকে এমন এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাবেন যেখানে সে একজন বড় আলেম হবে। আমি বললাম, আপনার ছেলে ওই প্রতিষ্ঠানে পড়ে কত বড় আলেম হতে পারবে আমি বুঝতে পারছি না, কারণ ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আমি যতটুকু জেনেছি তাতে এতটুকু বুঝতে পেরেছি যে সেখানে ইসলাম সম্পর্কে পূর্ণরূপে জানার বা মানার সুযোগ নেই। তিনি আমার কথা বুঝলেন না। বললেন, কেন সেখানে তো কুরআন-হাদিসই পড়াচ্ছে। আমি তাকে সংক্ষেপে বুঝাতে চেষ্টা করলাম যে, তারা যে কুরআন পড়াচ্ছে সেই কুরআনে অসংখ্য আয়াতে যেমন নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ফরজ হওয়ার কথা আল্লাহ বলেছেন, তেমনি আরো অসংখ্য আয়াতে অসত্যের বিরুদ্ধে লড়াই করা মুসলমানদের ওপর ফরজ হওয়ার কথাও তিনি বলেছেন।

ওই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মূলনীতি হচ্ছে তারা ছাত্রদের অসত্যের বিরুদ্ধে লড়াই তথা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে উদ্বুদ্ধ করেন না। কারণ তাদের পেছনে এমন একটি ধারণা কাজ করছে যে, যদি মুসলমানরা অসত্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামে তাহলে তাদের নিজেদেরই ক্ষতি হয়ে যাবে বেশি। আর আল্লাহর ঘোষণা হলো- ‘তোমরা পরিপূর্ণরূপে ইসলামে প্রবেশ করো।’ বাকারা ২০৮। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেছেনÑ ‘তোমরা কি কুরআনের এক অংশ মেনে নেবে আর অন্য অংশ অমান্য করবে; যারাই এ কাজ করবে তারাই ফাসিক (সত্য অমান্যকারী)।’ বাকারা ৮৫।

অর্থাৎ গোটা কুরআনেরই আনুগত্য করতে হবে। নিজের সুবিধা মতো কিছু অংশ ছাঁটাই করার কোনো অধিকার নেই। আমার কথায় রহিমের আম্মু পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পেরেছেন বলে মনে হলো না। তিনি যা বললেন তার সারমর্ম হচ্ছে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই শুধু কুরআন-হাদিস পড়ানো হয় তাই ছাত্রদের মনোযোগ শুধু এতেই নিবদ্ধ থাকবে পক্ষান্তরে অন্য মাদরাসাগুলোতে জেনারেল বিষয়ের আধিক্যের কারণে ছাত্রদের মনোযোগ অন্য দিকে চলে যায়।

এ রকম রহিমের মার আমাদের দেশে অভাব নেই। যারা না জানার কারণে নিজের সন্তানদের সঠিক পথ দেখাতে পারছেন না। এমন মুহূর্তে এসব নারীর এমন কিছু বন্ধুর প্রয়োজন ছিল যারা তাদেরকে সৎ পরামর্শ দেবে এবং তা মানার ক্ষেত্রে তারা কোনো সন্দেহ-সংশয়ে পড়বে না। এখানে আমি পরিচিতজন বা প্রতিবেশীর ঊর্ধ্বে বন্ধুত্বের কথা বলেছি এ জন্য যে, প্রকৃত বন্ধুই তার বন্ধুর ভালো চায়। আর প্রকৃত মুমিনের বৈশিষ্ট্যও এটাই যে, সে নিজের জন্য যা কামনা করে অন্যের জন্যও তাই কামনা করে। সুতরাং যার একাধিক জ্ঞানী মুমিন বন্ধু থাকবে তার জন্য ইসলাম জানা এবং মানা উভয়টাই সহজ হয়ে যাবে। আল্লাহ বলেছেনÑ ‘আসলে তোমাদের চেষ্টা নানা রকমের তবে যে (আল্লাহর পথে) দান করেছে ও আল্লাহর নাফরমানি থেকে দূরে থেকেছে এবং যা ভালো তাকে সঠিক বলে মেনে নিয়েছে তার জন্য আমি সহজ পথে চলার সুযোগ করে দেব।’ সূরা লাইল (৪-৭)


আরো সংবাদ



premium cement