১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

স্পেনে কট্টরপন্থীদের উত্থান

-

প্রধানমন্ত্রী পেড্রো সানজেসের সমাজবাদীরা স্পেনের জাতীয় নির্বাচনে জয় পেয়েছে ঠিকই। কিন্তু সে জয়ের চেয়েও আলোচনায় উঠে এসেছে কট্টরপন্থীদের উত্থান। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পঞ্চম বৃহত্তম দেশটিতে কট্টরপন্থী ভক্স পার্টি যেভাবে চোখে পড়ার মতো উপস্থিতি তৈরি করেছে, তা থেকে অনেকেই মনে করছেন, স্পেনের রাজনৈতিক অচলাবস্থা আরো বাড়বে।

৩৫০ আসনের পার্লামেন্টে বামপন্থী সমাজবাদীরা জিতেছে ১২০টি আসন। মাত্র সাত মাসে আগের হওয়া ভোটের চেয়ে এ বার তিনটি আসন কমে গেছে তাদের। আর একা সরকার গড়ার মতো অবস্থানও নেই। সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গড়তে হলে ১৭৬ আসনে জয় পেতে হতো তাদের। ৪৩ বছর বয়সী সান্তিয়াগো আবাস্কালের নেতৃত্বে ২৪টি থেকে এক লাফে ৫২টি আসনে পৌঁছে গেছে অতি-দক্ষিণপন্থীরা। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, সরকার গঠনে তাদের গুরুত্ব বাড়বে সন্দেহ নেই। ক্যাটালন বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং শরণার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে ভক্স পার্টি। আবাস্কালের মতে, তার দলের জয় স্পেনের বড় রাজনৈতিক সাফল্যের উদাহরণ হয়ে রইল।

তিনি বলেছেন, ‘মাত্র ১১ মাস আগে আমরা স্পেনের আঞ্চলিক আইনসভায়ও ছিলাম না। এখন আমরা স্পেনের তৃতীয় বৃহত্তম দল। ভোট এবং আসন দু’টিই বেড়েছে দলের।’ ইউরোপজুড়ে শরণার্থীবিরোধী দক্ষিণপন্থী নেতারা আবাস্কালের জয়ে স্বাগত জানিয়েছেন। ফ্রান্সের মারিন ল্য পেন, ইটালির মাত্তেয়ো সালভিনির মতো অনেকেই আছেন সে তালিকায়।

দেশে সাত মাসের মধ্যে ফের ভোট হওয়ায় ক্ষুব্ধ পেশায় ওয়েব ডিজাইনার জুলিয়া জিয়োবেলিনা। তবু ভক্স পার্টির উত্থান রুখতে ভোট দিয়েছিলেন। এখন বলছেন, ‘ওরা নয়া ফ্যাসিবাদের মুখ। স্বাস্থ্য ও অন্যান্য সরকারি পরিষেবা বেসরকারি হাতে চলে যাওয়া রুখতে হবে আমাদের মতো নাগরিকদেরই।’

অল্প সময়ে এত নির্বাচন কেন?
তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে স্পেনের বেশির ভাগ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ ছিল সোস্যালিস্ট ও কনজারভেটিভদের মধ্যে। কিন্তু ২০১৫ সালে তাদের প্রভাবে ভাগ বসায় নতুন দু’টি দল বামপন্থী পোদেমস ও ডানপন্থী সিউদাদানোস। এ ছাড়া জনপ্রিয়তা পেয়েছে উগ্র ডানপন্থী ভক্স পার্টিও। ফলে দেশটির মধ্যে এখন প্রধান দলের সংখ্যা পাঁচটি। ভোটও ভাগ হচ্ছে পাঁচ দিকে। এতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছে না কোনো পক্ষই। আর নিজেদের মধ্যে মতভেদ থাকার কারণে জোট সরকার গঠনও সম্ভব হচ্ছে না। দেশটিতে সর্বশেষ ২০১১ সালে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল কনজারভেটিভ পপুলার পার্টি (পিপি)।

কাতালোনিয়া ইস্যু
নির্বাচনটি এমন সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে যখন কাতালোনিয়া স্বাধীনতার দাবিতে উত্তাল। স্পেনের সুপ্রিম কোর্ট অঞ্চলটির স্বাধীনতাপন্থী নেতাদের স্বাধীনতা গণভোট আয়োজনের দায়ে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় কারাদণ্ড দিয়েছে। এতে অঞ্চলটিজুড়ে তীব্র সহিংসতা বিরাজ করছে। টানা বিক্ষোভ করছে তাদের সমর্থকরা। নির্বাচনের আগে ডানপন্থী দলগুলো জানিয়েছিল, জয়ী হলে কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার দাবি কঠোর হস্তে দমন করা হবে। বর্তমানে অঞ্চলটির নিরাপত্তাবাহিনী যে স্বায়ত্তশাসন উপভোগ করে তা কেড়ে নেয়া হবে। জারি করা হবে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ। এমনকি জরুরি অবস্থাও জারি করা হতে পারে।

কাতালান স্বাধীনতার দাবি ‘অনেক কম সময়ে বহুদূরে’ পৌঁছেছে বলে মন্তব্য করেছেন অঞ্চলটির সাবেক প্রেসিডেন্ট আরতুর মাস। স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলনের কারণে দুই বছর আগে তাকে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। ২০১৪ সালে তিনি গণভোটের আয়োজন করেন। অবজারভার পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে আরতুর বলেন, ‘সঙ্কট সমাধানে আরেকটি গণভোট আয়োজন সময়ের দাবি।’ বিক্ষোভকারীদের ওপর স্পেন সরকারের সহিংস আচরণের সমালোচনা করে তিনি আরো বলেন, ‘কাতালানের ভাগ্য নিয়ে স্পেনের আদালতও রাজনীতি করছে।’

অক্টোবরে এক বিবৃতিতে কাতালান প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকারকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রধান নেতা কুইম তোরি। ২০১৭ সালে কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা লাভের আন্দোলন ও গণভোট পুরো স্পেনকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। গত সোমবার দেশটির সুপ্রিম কোর্ট ওই আন্দোলন, গণভোট এবং তার পরবর্তী স্বাধীনতা ঘোষণাসংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে জড়িত ৯ রাজনীতিবিদ ও নেতাকে সর্বোচ্চ ১৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেন। অক্টোবরে আদালতের রায়ের পরই রাস্তায় নেমে আসে কাতালানবাসী। বিক্ষোভে পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ অংশ নেয়।

আঞ্চলিক সরকারের নেতা কুইম তোরার পূর্বসূরি চার্লস পুজদেমন ২০১৭ সালে স্বাধীনতার দাবিতে গণভোট আয়োজন করেন। স্পেনের শীর্ষ আদালতে নিষিদ্ধ ঘোষিত ওই গণভোট আয়োজনের পর থেকে ইউরোপীয় দেশগুলোসহ অন্যরা সেখানকার আন্দোলন পর্যবেক্ষণ করছে। এরই মধ্যে চার হাজারেরও বেশি কোম্পানি কাতালোনিয়ার বাইরে তাদের সদর দফতর সরিয়ে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- কাতালান ব্যাংক, কাইক্সা ব্যাংক ও ব্যাংকো সাবাডেল। দেশটির ভারপ্রাপ্ত অর্থনীতিমন্ত্রী নাদিয়া কালভিনো বলেন, ‘কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা দাবির প্রভাব না থাকলে দেশের অর্থনীতির গতি আরো দ্রুত হতে পারত।’


আরো সংবাদ



premium cement