২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ভোলার ঘটনা ভুলে যাওয়ার নয়

-

ফেসবুকে শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ সা:-কে নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে ভোলার বোরহানউদ্দিনে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ পুলিশের গুলিতে চারজন নিহত এবং কয়েক শ’ লোক আহত হওয়ার ঘটনা বড়ই বেদনাদায়ক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, আত্মরক্ষার্থে তারা গুলি চালিয়েছে। কিন্তু স্থানীয়দের অনেকে মনে করেন, পুলিশ পরিস্থিতির গভীরতা বিবেচনায় নিয়ে আরো সতর্কতা ও বিচক্ষণতার সাথে এগোলে এত বড় অঘটন এড়ানো অসম্ভব হতো।

ফেসবুকে কটূক্তি করে স্ট্যাটাস দেয়ায় মাঝে মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা প্রায়ই দেখা যাচ্ছে। সোস্যাল মিডিয়া এখন গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগমাধ্যম। সম্প্রতি ফেসবুক স্ট্যাটাসের কারণে খুন হন বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। ভোলার বোরহানউদ্দিনের ঘটনা দেশের সচেতন মহলকে উদ্বিগ্ন করেছে। অতীতেও ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার কথা বলে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়েছে। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজারের রামুতে হামলা চালিয়ে লুটপাটসহ ১২টি বৌদ্ধ মন্দির ও ৩০টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে একই ধরনের অভিযোগে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা চালানো হয়। অথচ এ ভূখণ্ডে হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য রয়েছে। এখানে সব ধর্মের মানুষ দীর্ঘকাল ধরে একসাথে বসবাস করে আসছেন। বিভিন্ন সময়ে স্বার্থান্বেষী নানা মহল ধর্মকে পুঁজি করে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালিয়েছে।

ভোলার বোরহানউদ্দিনে সম্প্রতি যে দুর্ঘটনা ঘটে গেল, তা ভুলে যাওয়ার নয়। পুলিশের ভূমিকা ও আচরণ এবং তাদের ব্যর্থতা কোথায় তা তদন্তের দাবি রাখে। সেই সাথে পুলিশের ওপর হামলা ও পরিস্থিতি নাজুক করে তোলার ক্ষেত্রে কোনো চক্র জড়িত কি না তাও তদন্ত করে দেশের স্বার্থে সত্য উদঘাটন জরুরি হয়ে পড়েছে। এদিকে ভোলার ঘটনায় কোনো কোনো মিডিয়া যথাযোগ্য ভূমিকা পালন করতে পারেনি বলে প্রতীয়মান হয়েছে। ‘তৌহিদি জনতা’ নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হওয়ার কিছু নেই। তৌহিদি জনতা কোনো দল নয়। এর মানে ধর্মপ্রাণ মানুষের সমষ্টি। বোরহানউদ্দিনে যা হয়েছে, তা তারা ঈমানি চেতনায় করেছেন। এর আগেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আল্লাহ ও রাসূল সা: সম্পর্কে একই ধরনের কুৎসা ও কটূবাক্য করা হয়েছে। এর স্বাভাবিক ও সঙ্গত প্রতিবাদ তারা করতে চেয়েছেন।

দেশে বিভিন্ন সময়ে ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে যেসব হামলা-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে তা দুঃখজনক। বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিচ্ছে এক শ্রেণীর দুষ্কৃতকারীÑ যা মেনে নেয়া যায় না। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে কিছু স্পর্শকাতর আবেগ বা বিশ্বাস থাকে, এতে আঘাত এলে তা অস্তিত্বের ওপর হামলা বলে বিবেচিত হয়। সে ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহমর্মিতা এবং সহিষ্ণুতা অত্যন্ত জরুরি। আর ধর্মীয় আবেগ শেষাবধি একটি যৌথ আবেগ, এখানে আঘাত এলে তা আর ব্যক্তিগত থাকে না, সম্প্রদায়ের ওপর আঘাত হিসেবে গণ্য হয়। সুযোগসন্ধানীরা তাই বিভেদ সৃষ্টিতে এ ভাবাবেগকে অপব্যবহারে লিপ্ত থাকে। সম্মিলিতভাবে তাদের প্রতিহত করতে হবে। পাশাপাশি এটাও বাস্তবতা, আমাদের দেশে ইন্টারনেটের বিস্তার ঘটলেও অনলাইন শিষ্টাচার সম্পর্কে অনেকে অনবহিত। এ ক্ষেত্রে অনলাইন নৈতিকতা সম্পর্কে সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে।

ফেসবুক পোস্ট নিয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি ও পুলিশ প্রশাসনের তরফে উদ্যোগের পরও কেন ভোলার পরিস্থিতি সামাল দেয়া গেল না, তা খুঁজে বের করা জরুরি। কোনো পক্ষের ইন্ধনে এ কাজ হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা দরকার। তাদের চিহ্নিত করে বিচারের মুখোমুখি করতে পারলে তা সবার জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। সেই সাথে সময়ে সময়ে এমন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা সামনে আসায় সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। পাশাপাশি তদন্তের মাধ্যমে এটি নিশ্চিত করা জরুরি, এর পেছনে দেশবিরোধী কোনো স্বার্থ জড়িত কি না।

লেখক : সাংবাদিক
ই-মেইল : likhonalife@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement