২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রেল বিভাগের অনিয়ম

-

গত ১০ মার্চ একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত একটি খবরের শিরোনাম হলো, ‘ফেঞ্চুগঞ্জে অল্পের জন্য রক্ষা পেল জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস’। কর্তব্য পালনে মারাত্মক অবহেলা ও রেল বিভাগের চরম দুরবস্থার চিত্র খবরে ফুটে উঠেছে। এ ধরনের খবর পত্রিকায় প্রায়ই প্রকাশিত হতে দেখা যায়। খবরে প্রকাশ, কুশিয়ারা রেল ব্রিজের দক্ষিণে এক ফুট রেললাইন ভেঙে যায়। সিলেটের ছালিক মিয়া নামের এক ব্যবসায়ী তা দেখে সাথে সাথে মাইজগাঁও স্টেশনে জানালে ফোন করে দুই পাশের ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। কারো চোখে তা ধরা না পড়লে কয়েক মিনিট পরেই আসার কথা যে পাহাড়ি এক্সপ্রেস, এ ট্রেনের দুর্ঘটনা যে কত ভয়ানক হতো তা চিন্তাও করা যায় না। খবরে আরো জানা যায়, এর আগের দিন ব্রিজ দিয়ে একটি ট্রেন যাওয়ার সময় চাকার একটি নাট খুলে পড়ে যায়, সে বিষয়টিও স্টেশন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

একটি ট্রেন চলে যাওয়ার পর রেললাইনের ক্ষতি হলো কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা কর্তৃপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। কিন্তু এই অতি জরুরি কর্তব্য এখন আর পালন করা হয় না। রেললাইনের ওপর দিয়ে হাঁটলে দেখা যায়, লাইনে পর্যাপ্ত পাথর নেই, সিøপার নড়বড়ে, নাট-বল্টু ঢিলা, লাইনের ওপর ঘাস উঠে ভরে গেছে, লাইনের অতি নিকটবর্তী জায়গাও ঝোপঝাড়ে আচ্ছাদিত। তাই কোনো ইঞ্জিনিয়ারিং জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না এবং একজন সাধারণ মানুষের পক্ষেও বুঝতে অসুবিধা হবে না যে, রেললাইনের অবস্থা কত বেশি বিপজ্জনক। কর্তব্যকাজে অবহেলা, দুর্নীতি, জবাবদিহিতার অভাব ইত্যাদি কারণে রেলের আজ দুরবস্থা।

মনে রাখা দরকার, যেকোনো মূল্যে সর্বাগ্রে যাত্রীদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। উল্লেখ্য, বছরখানেক আগে রেলের ছোট একটি ব্রিজ মেরামতের কাজে বাঁশ ব্যবহারের খবর ফটোসহ পত্রিকায় প্রকাশিত হলে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে। বাঁশ দিয়ে রেলব্রিজ মেরামতের কাজ করার সাথে পাটকাঠি দিয়ে ঘরের খুঁটি দেয়ার তুলনা চলে। দেখা যায়, প্রতি সপ্তাহে গড়ে দু’টি রেল দুর্ঘটনার খবর পত্রিকায় এসেছে। তা ছাড়া, ‘অল্পের জন্য অমুক ট্রেন ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পায়’ এমন খবর প্রায়ই পত্রপত্রিকায় আসে। কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া বা জবাবদিহিতা নেই কর্তৃপক্ষের। প্রসঙ্গক্রমে নয়া দিগন্তের ২০১৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত একটি খবরের শিরোনাম ছিল- ‘তিন বছরে ৩ শতাধিক ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত’। এই খবর পড়ে যে কেউ বুঝে নিতে পারবেন বাংলাদেশ রেল বিভাগের শোচনীয় অবস্থার কথা। এক-একটি দুর্ঘটনায় যে শুধু মহামূল্যবান প্রাণহানি ঘটে তা নয়, কোটি কোটি টাকার জাতীয় সম্পদও ধ্বংস হয়েছে এবং যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ ও নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হতে হয়।

২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭-এর সংবাদে আরো জানা যায়, ‘তিন বছরে ৩ শতাধিক ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হওয়া এবং তা থেকে উত্তরণের কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা জানতে সেই প্রতিবেদক বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো: আমজাদ হোসেনের দফতরে গেলে তার পিএস সদরুল তাকে জানান- ‘স্যার এখন ব্যস্ত, দুই দিন পরে আসেন।’ পরে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলামের সাথে দেখা করে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি পরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলামের সাথে দেখা করতে বলেন।’ অতএব, বুঝা যায় জবাবদিহিতার কোনো বালাই আছে কি না। তাতে আরো মনে করা যায়, রেল বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনেকের দৃষ্টিভঙ্গি হলো মানুষ মরে মরুক, দেশের সম্পদ ধ্বংস হয় হোক, আমার বেতন-ভাতা, বোনাস ও সুযোগ সুবিধা ইত্যাদি ঠিক থাকলেই হলো। রেলের সেবার নিম্নমানের এবং ব্যবস্থাপনার ত্রুটি ও অনিয়মের কথা উঠলেই গৎবাঁধা উত্তর আসে, জনবলের অভাবের কারণে তা হচ্ছে, যে দেশে লাখ লাখ বেকার যুবক চাকরির জন্য বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে শত শত টেকনিশিয়ান ও ইঞ্জিনিয়ার বেকার পড়ে আছেন; সেখানে ‘জনবলের অভাব’ কেন হবে আজও?

তা ছাড়া বাংলাদেশ রেলওয়ে অব্যাহতভাবে লোকসান দিয়ে আসছে। যেখানে ট্রেনের সিট খালি পড়ে থাকা তো দূরের কথা, টিকিট জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হয়, আগেই সব টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। তাহলে সেখানে লোকসান হয় কিভাবে? এর সঠিক কোনো উত্তর পাওয়া যায় না। দুই বছরের মধ্যে তিন শতাধিক দুর্ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট যথাযথভাবে দেয়া সম্ভব হয়নি। এদিকে একটার পর একটা দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে। সর্বশেষ, গত ১৫ মার্চের সিলেটের ডাক পত্রিকায় প্রকাশিত খবর মোতাবেক, ফেঞ্চুগঞ্জের কুশিয়ারা রেল ব্রিজের দক্ষিণাংশের রেললাইন ভেঙে যাওয়া, সত্ত্বেও রেল বিভাগের কোনো লোকের চোখে ধরা পড়েনি এবং আগের দিন ওই ব্রিজ পাড় হওয়ার সময় একটি ট্রেনের ইঞ্জিনের নাট খুলে পড়ে যাওয়া- এসব খবর রেলওয়ের কর্তব্যকাজে চরম অবহেলা ও অব্যাহত অব্যবস্থাপনাই প্রমাণ করে।

যাত্রীদের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে এসব অনিয়ম, অবহেলা, অব্যবস্থাপনা ক্ষমার অযোগ্য। মাত্র এক-দেড় দশক আগেও সেখানে রেল ভ্রমণ ছিল নিরাপদ ও আরামদায়ক, এখন তা হয়ে পড়েছে কষ্টকর ও ঝুঁকিপূর্ণ। বাংলাদেশ রেলওয়েতে বিগত পাঁচ বছরে কত দুর্ঘটনা ঘটেছে, তাতে জানমালের কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, দুর্ঘটনাগুলোর তদন্ত রিপোর্ট কী ছিল এবং ঘন ঘন এই দুর্ঘটনা নিরসনে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, তা পত্রপত্রিকায় প্রকাশের মাধ্যমে জনসমক্ষে তুলে ধরার জন্য রেলওয়ের মহাপরিচালকের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
সরকার রেলের জন্য ৫০০ নতুন কোচ ও ১০০ নতুন ইঞ্জিন আমদানির ব্যবস্থা করছে। একই সাথে, রেল লাইনকেও মজবুত ও উন্নত করা অত্যন্ত জরুরি, নতুবা ঘন ঘন লাইনচ্যুতির কারণে মূল্যবান বগি ও ইঞ্জিন কিছু দিনের মধ্যেই ধ্বংস অথবা নষ্ট হয়ে যাবে।

তদুপরি চলন্ত ট্রেনে পাথর ছুড়ে মারার ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। বিভিন্ন রুটে যাত্রীরা প্রায়ই এতে মারাত্মক আহত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু তা বন্ধ করার ফলপ্রসূ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। যেকোনো উপায়ে এই দুর্বৃত্তদের ধরে দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তি প্রদান করা হলে তা বন্ধ হবে। এ জন্য রেল পুলিশের পক্ষ থেকে পাথর ছোড়ার ঘটনার স্থান চিহ্নিত করে সাথে সাথে সাঁড়াশি অভিযানের মাধ্যমে এসব দুষ্কৃতকারীকে ধরতে হবে। জরুরিভাবে এ ধরনের বিপজ্জনক আক্রমণ থেকে যাত্রীদেরসহ সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়ন করা হলে হামাস অস্ত্র ছাড়তে রাজি শনিবার থেকে শুরু গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা, প্রস্তত জবি ক্যাম্পাসগুলোতে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সমর্থন করেন বাইডেন: মুখপাত্র নোয়াখালীতে ইসতিসকার নামাজ আদায় জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব থাকবে বান্দরবানে বৃষ্টির চেয়ে চোখের পানি ফেলে বিশেষ নামাজ চকরিয়ায় যুবককে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা, গ্রেফতার ৭ উপজেলা নির্বাচনে ব্যর্থ হলে গণতন্ত্র ক্ষুণ্ন হবে: সিইসি বাগাতিপাড়ায় ইসতিসকার নামাজ পরিবর্তনশীল জলবায়ুর জন্য কাসাভা উপযুক্ত, হেক্টরপ্রতি ফলন ৩৫-৫০ টন : বাকৃবি অধ্যাপক বৃষ্টির জন্য হাকাকার, সাভারে ইসতিসকার নামাজ আদায়

সকল