২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কে হবেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী?

কে হচ্ছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী - ছবি : সংগ্রহ

যে বেক্সিটের কল্যাণে বিশ্ববাসীর সামনে ব্রিটেনের ৭৬তম প্রধানমন্ত্রী হয়ে আলোচনায় এসেছিলেন থেরেসা মে সেই ব্রেক্সিটের জন্যই আবার তাকে প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করতে হচ্ছে। ৪০ বছরের বেশি সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে থাকার পর ২০১৬ সালের ২৩ জুন যুক্তরাজ্যে একটি গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। গণভোটে নাগরিকদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ব্রিটেনের ইইউতে থাকা উচিত, কী উচিত নয়? ইইউ ছাড়ার পক্ষে ভোট পড়েছিল ৫২ শতাংশ এবং বিপক্ষে ছিল ৪৮ শতাংশ ভোট।
এরপরই তখনকার প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন পদত্যাগ করলে থেরেসা মে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। তার দায়িত্ব গ্রহণের শুরু থেকেই ব্রেক্সিট চুক্তি এবং ব্রেক্সিট কিভাবে কার্যকর হবে- তা নিয়ে যুক্তরাজ্যে পক্ষ-বিপক্ষ ও নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অবশেষে ব্যাপক আলোচনা আর সমালোচনার পর পদত্যাগে বাধ্য হলেন ব্রিটেনের দ্বিতীয় এই নারী প্রধানমন্ত্রী।

৭ জুন শুক্রবার দলীয় প্রধানের পদ ছাড়েন তিনি। আবেগধর্মী এক বক্তৃতায় কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়ার ঘোষণা দেন মে। বক্তৃতায় ব্রেক্সিট সফল করতে না পারায় ‘গভীর অনুতাপ’ প্রকাশ করেন মে। তিনি জানান, আমাদের দেশের অসীম পরিবর্তনের আহ্বান ছিল ব্রেক্সিট নিয়ে গণভোটের মধ্যে। আমি মানুষের ইচ্ছা বাস্তবায়নের জন্য নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়েছিলাম। আমি দেশের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী, কিন্তু শেষ নই। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন, নিজের প্রিয় দেশের জন্য কাজ করতে পারা।
সংসদে ব্রেক্সিট চুক্তি অনুমোদন নিয়ে তৃতীয়বারের চেষ্টাও ব্যর্থ হওয়ার প্রেক্ষাপটে পদত্যাগের জন্য চাপের মুখে ছিলেন থেরেসা মে। পরবর্তী উত্তরাধিকার আসার আগপর্যন্ত কাজ চালিয়ে যেতে হবে তাকে। থেরেসা মে’র পদত্যাগের প্রতিক্রিয়ায় বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন বলেছেন, পদত্যাগ করে সঠিক কাজটি করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এতদিন পর তিনি এমন একটা বিষয় গ্রহণ করলেন, যা পুরো দেশ কয়েক মাস ধরে জানত। তিনি আর দেশ শাসন করতে পারেন না এবং দেশ শাসন করতে পারে না তার বহুধাবিভক্ত দলও।

কট্টরপন্থী নেতা বরিস জনসন বলেছেন, কনজারভেটিভ দলের নতুন নেতার দায়িত্ব হবে দলকে ঐক্যবদ্ধ করা এবং সঠিক নেতৃত্ব ও নির্দেশনা দেয়া। তার দায়িত্ব হবে ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার উৎকৃষ্ট পন্থা বের করা। এখন আমাদের ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন এবং দলে ও দেশের বিভক্তি দূর করা প্রয়োজন।

এর আগে থেরেসা মে কর্তৃক উত্থাপিত ব্রেক্সিট চুক্তি এর আগে দুই বার পার্লামেন্টে বিপুল ভোটে হেরে গেছে এবং তৃতীয়বারের মতো তিনি এটাকে পার্লামেন্টে পাস করানোর চেষ্টা করবেন, এই জল্পনা-কল্পনার মধ্যে কনজারভেটিভ পার্টিতে অসন্তোষ আরো তীব্র হয়। জানা গেছে, থেরেসা মে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিলেই ব্রেক্সিট চুক্তি পাসে প্রয়োজনীয় সমর্থন পেতে পারেন বলে জানিয়েছেন ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন রক্ষণশীল দলের সিনিয়র সদস্যরা।

নতুন প্রধানমন্ত্রী কে হবেন
ব্রিটেনের টোরি দলের শীর্ষ নেতা তথা দেশের আগামী প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য মনোনয়ন জমা দিয়েছেন প্রার্থীরা। নতুন শীর্ষ নেতাকে ব্রেক্সিট কার্যকর করার কঠিন চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি শুরু করছেন। মনোনয়নের জন্য প্রত্যেক প্রার্থীকে আটজন সংসদ সদস্যের সমর্থনের প্রমাণ দিতে হবে। মে পদত্যাগ করার পর দলের একাধিক নেতা সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে এগিয়ে এসেছেন। এই লক্ষ্যে যিনি সফল হবেন, তিনিই ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন।

আপাতত ১১ জন সংসদ সদস্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। ২০ জুলাইয়ের মধ্যে বাকিদের সরিয়ে সেরা দুই প্রার্থীর নাম স্থির হয়ে যাওয়ার কথা। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, জুলাই মাসের শেষেই তা স্থির হয়ে যাবে বলে ধরে নেয়া হচ্ছে। ব্রেক্সিট প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে ক্ষমতার এই লড়াইয়ে যারই জয় হোক না কেন, ব্রেক্সিট কার্যকর করার কঠিন দায়িত্ব তাকে নিতে হবে।
সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন এখনো জনপ্রিয়তার দৌড়ে বাকিদের তুলনায় এগিয়ে রয়েছেন। তার প্রধান প্রতিপক্ষ হতে পারেন পরিবেশমন্ত্রী মাইকেল গোভ ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট। এ দুজন সোমবারই নিজেদের প্রচার অভিযান শুরু করেছেন। ব্রেক্সিট কার্যকর করার প্রশ্নে তিন প্রার্থীই নিজেদের যোগ্য হিসেবে তুলে ধরছেন। তিনজনেই মনে করেন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে দরকষাকষি করে ব্রিটেনের জন্য আরো সুবিধাজনক শর্তে চুক্তি আদায় করতে পারবেন। ইইউ অবশ্য এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে।

একাধিক ইইউ নেতা জানিয়েছেন ৩১ অক্টোবরের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে ব্রিটেনের সংসদ বর্তমান ব্রেক্সিট চুক্তি অনুমোদন না করলে ব্রিটেনকে চুক্তি ছাড়াই ইইউ ত্যাগ করতে হবে। এই মেয়াদ আরো বাড়ানোর তীব্র বিরোধিতা করছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোসহ একাধিক নেতা।
এই বাস্তবতা উপেক্ষা করে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীরা ইইউ’র বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিচ্ছেন। বরিস জনসন তুরুপের তাস হিসেবে ইইউর কাছে সদস্য হিসেবে বকেয়া অর্থ আটকে রাখার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, ব্রেক্সিট প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ব্রিটেনকে প্রায় তিন হাজার ৯০০ কোটি পাউন্ড দিতে হবে। বলাবাহুল্য, ইইউ এমন হুমকিকে ভালো চোখে দেখছে না।


আরো সংবাদ



premium cement