১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শফিউল আলম প্রধান

-

সুশীল ফোরামের উদ্যোগে জাতীয় নেতাদের নিয়ে সভা-সেমিনার করে থাকি। এসব সভা-সেমিনারে মরহুম শফিউল আলম প্রধান বিশেষ অতিথির আসনে বক্তব্য রাখতেন। এর মাধ্যমে তার সাথে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রায় সময় কথা হতো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। অনেক কাছ থেকে তাকে দেখেছি। জীবনে অনেক মানুষের সাথে রাজনীতি, সামাজিক কাজ, চাকরি ও পড়ালেখার সুবাদে পরিচয় হয়েছে। কিন্তু মরহুম শফিউল আলম প্রধান আমার হৃদয়কে তার আকর্ষণীয় কথা ও ভাষা দিয়ে স্পর্শ করেছেন।

২০১৭ সালের ২১ মে সকাল ১০টায় পল্লবী থানার বিএনপির নেতা আলতাফ মোল্লার মাধ্যমে জানতে পারলাম শফিউল আলম প্রধান মৃত্যুবরণ করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ব্রেকিং নিউজ দেখে নিশ্চিত হলাম তিনি ইন্তেকাল করেছেন। শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। তারপর তার আসাদ গেটের বাসায় গিয়ে লাশ দেখতে পেলাম। সেখানে ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা ছাড়াও আরো অনেক জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছুটে আসেন তাকে একনজর দেখতে। তিনি ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। ঢাকার শেখ বোরহান উদ্দীন কলেজের নির্বাচিত জিএস ছিলেন। পরে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

দীর্ঘ দিন ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। সর্বশেষ, ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছিলেন সে কমিটির দফতর সম্পাদক এবং মরহুম সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ছিলেন সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। দুঃখজনক হলেও সত্য, আশরাফ ও কাদেরসহ ওই কমিটির অনেকে মন্ত্রী-এমপি হয়েছেন। বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের কারণে প্রধান এমপি হতে পারেননি। কিন্তু তিনি জাতীয় নেতা ও রাজনীতিবিদ হয়েছেন। বাংলাদেশে অনেকেই মন্ত্রী-এমপি হলেও জাতীয় নেতা ও রাজনীতিবিদ হতে পারেননি। মরহুম প্রধানের লক্ষ্য ছিল দেশের মানুষের খেদমত করা ও দেশপ্রেমিক কর্মী তৈরি করা। ১৯৭৪ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে তৎকালীন সরকারের মন্ত্রীদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেন এবং দুর্নীতিবাজদের তালিকা তৈরি করেছিলেন।

নিজ দলের মন্ত্রীদের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলার মতো দুঃসাহস তিনি দেখিয়েছিলেন। মূলত আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলায় তাকে দীর্ঘ সময় কারাবরণ করতে হয়েছে। মুক্তি পাওয়ার পর তিনি ১৯৮০ সালের ৬ এপ্রিল জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) নামে নতুন দল গঠন করেন। প্রধান ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। ’৭১ সালের ২৩ মার্চ তিনিই দিনাজপুর শহরে প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেন। এই দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতি যখনই আঘাত এসেছে তিনি তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন। বাংলাদেশের সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী যখন বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা করছে, তিনি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেন।

ফেলানী হত্যা, পিলখানা হত্যাকাণ্ডসহ অনেক অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি গর্জে উঠেছেন। তিনি বুঝানোর চেষ্টা করতেন এ দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি প্রতিবেশী বড় রাষ্ট্রটি। প্রতিবেশী রাষ্ট্র আমাদের স্বাধীনতাকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন তুলে আমাদের মানচিত্রকে ছোট করার চেষ্টা করত। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অসম বাণিজ্য, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তিসহ ভারত ও বাংলাদেশের অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে তিনি সব সময় সোচ্চার থাকতেন। সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে তার ভূমিকা ছিল। তার কয়েকটি কথা আমার এখনো মনে পড়ে। তিনি আমাকে বলেছেন, ‘রাজনীতি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এর সাথে লেগে থাকতে হয়। রাজনীতি একটি শিল্প। স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা ও তার লক্ষ্যে পৌঁছা অনেক কঠিন।’ এ ধরনের অনেক কথা আমার মনে পড়ে। তার চলাফেরা ও কথা বলার মধ্যে আলাদা একটা আকর্ষণ ছিল। ফলে তিনি মানুষকে আকৃষ্ট ও আপন করে নিতে পারতেন।

তিনি অনেক গুছিয়ে ভরাকণ্ঠে উচ্চৈঃস্বরে, সুন্দর করে মঞ্চে বক্তব্য দিতেন, যা ছিল অন্য দশজন বক্তার চেয়ে আলাদা। মরহুম প্রধান যখন মঞ্চে বক্তব্য রাখতেন তখন মঞ্চ ও জনসভাস্থলে যেন একটা তরঙ্গ তৈরি হতো। তার বক্তব্য শ্রোতাদের খুবই আকৃষ্ট করত। ইসলামী চেতনা ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের একজন পুরোধা হিসেবে সারা দেশ চষে বেড়াতেন। মাঝে মধ্যে তাকে অবমূল্যায়নও করা হয়েছে, এই নিয়ে কিছুটা তার মধ্যে নীরব অভিমান ছিল। তিনি অনেক কষ্ট চেপে রেখেছিলেন, যা কাউকে সহজে বুঝতে দিতেন না। কিন্তু দায়িত্ব পালন থেকে পিছপা হননি। জাতির দুঃসময়ে তিনি রাজপথে নেমে এসেছেন। বর্তমান জাতীয় রাজনীতিতে অনিশ্চয়তার চরম মুহূর্তে তার মতো নেতার খুবই প্রয়োজন। তার বাবা ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক আইন পরিষদের স্পিকার মরহুম গমীর উদ্দিন প্রধান। তার বাবার কবরের পাশে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে। তারা চার ভাই, দুই বোন। তিনি ছিলেন বাবার দ্বিতীয় সন্তান। তার এক ছেলে এক মেয়ে। তার মৃত্যুর প্রায় এক বছর পরে স্ত্রী রেহানা প্রধান মৃত্যুবরণ করেন।

লেখক : সভাপতি, সুশীল ফোরাম


আরো সংবাদ



premium cement
তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া হিটস্ট্রোক মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস : প্রধানমন্ত্রী মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে হুলস্থূল মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বুঝতে পারেনি ইসরাইল রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত বিএনপির কৌশল বুঝতে চায় ব্রিটেন ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট আজ নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ততায় ঝুঁকি রয়েছে : সেনাপ্রধান নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে বিএনপি : কাদের রৌমারীতে বড়াইবাড়ী সীমান্তযুদ্ধ দিবস পালিত

সকল