২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন রণহুঙ্কার

ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন রণহুঙ্কার - ছবি : সংগ্রহ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে রণসজ্জা শুরু করেছেন। তিনি ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হুমকি দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দফতর পেন্টাগন কয়েক দিন আগে পারস্য উপসাগরে একটি বিমানবাহী রণতরী পাঠিয়েছে। এর লক্ষ্য হলো- ইরানকে হুঁশিয়ার করে দেয়া। এ দিকে ইরানকে হুঁশিয়ার করতে পাঠানো মার্কিন এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার আব্রাহাম লিংকন মিসরের সুয়েজ খাল অতিক্রম করেছে। এটি মিসরের মধ্য দিয়ে ইরানের উদ্দেশে চলে গেছে বলে জানিয়েছে সুয়েজখাল কর্তৃপক্ষ। এর আগে আমেরিকার নিরাপত্তা উপদেষ্টা জনবোল্টন জানিয়েছেন, এই এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার ইরানের উদ্দেশে যুক্তরাষ্ট্রের হুঁশিয়ারি বার্তা হিসেবে পাঠানো হচ্ছে। তেহরানকে হুমকি দিতে পরমাণু বিমান মধ্যপ্রাচ্যের ঘাঁটিতে পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এরই মধ্যে কাতারের আল উদেইদ মার্কিন ঘাঁটিতে বেশ কয়েকটি বি-৫২ বোমারু বিমান পৌঁছেছে। চারদিক থেকে ইরানকে ঘিরে ফেলা হচ্ছে। অপর দিকে, ইরান সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, মাত্র একটি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি নৌফ্লিটকে ধ্বংস করে দেয়া যাবে। ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। তাহলে কি শিগগির যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠবে?

ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতে থাকেন। উল্লেখ্য, প্রায় দুই বছর ধরে আলোচনার পর ২০১৫ সালের ১৪ জুলাই অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় ইরান ও আমেরিকাসহ পাঁচ বিশ্ব পরা শক্তির মধ্যে পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যরাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স ও জার্মানির সাথে ইরান এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। শর্ত অনুযায়ী ইউরেনিয়াম মজুদ দুই-তৃতীয়াংশ কমানোর বাধ্যবাধকতা ছিল ইরানের। ছয় বিশ্বশক্তির সাথে ইরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের প্রত্যাহার করে নিলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। চুক্তি থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়ার পাশাপাশি ওয়াশিংটন তেহরানের ওপর আগের সব নিষেধাজ্ঞাও পুনর্বহাল করেছে। ইরানের তেল রফতানি বন্ধের জন্য ক্রেতাদের ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আমেরিকা। ইরান বলেছে, তাদের তেল রফতানিতে যুক্তরাষ্ট্র বাধা হয়ে দাঁড়ালে তারাও কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেবে। হরমুজ প্রণালী দিয়েই মধ্যপ্রাচ্যের বেশির ভাগ তেলবাহী জাহাজ ইউরোপ ও আমেরিকায় যায়। ট্রাম্প প্রশাসন প্রথমে দাবি করেছিল, মার্কিন বাহিনীর ওপর ইরানের পক্ষ থেকে হামলার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে। তাই হুমকি মোকাবেলায় এবং ইরানকে কড়া বার্তা দেয়ার জন্য মধ্যপ্রাচ্যে রণতরী মোতায়েন করছে আমেরিকা। এখন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী বলছে, তারা মধ্যপ্রাচ্যে বি-৫২ যুদ্ধবিমান পাঠানো শুরু করেছে, সেখানে অতিরিক্ত শক্তি মোতায়েনের অংশ হিসেবেই তারা এটা করছে। রয়টার্সকে মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে ইরাকে অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের ওপর আক্রমণ করার পরিকল্পনা করছে ইরান। কিন্তু ইরানকে হুমকি উল্লেখ করে মার্কিন গোয়েন্দা তথ্যকে ভুয়া বলে উড়িয়ে দিয়েছে ইরান।

আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যে রণতরী মোতায়েন ও ইরানকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলার যে উদ্যোগ নিয়েছে এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতেই ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি গত ৮ মে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে পরমাণু চুক্তি থেকে আংশিক বেরিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইরান এই চুক্তি থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে না গেলেও চুক্তির কিছু শর্থ আর এখন থেকে মানবে না। আমরা জানি আমেরিকাকে গত বছরের ৮ মে এ চুক্তি থেকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এর ঠিক এক বছর পর ইরান চুক্তি থেকে আংশিক বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলো। ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, চুক্তি স্বাক্ষর করা দেশগুলোকে ইরানের আংশিক বেরিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আগেই অবহিত করা হয়েছে। ইরানের এই পদক্ষেপের জন্য আমেরিকাকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘কট্টর’ আমেরিকা এই চুক্তিকে অবজ্ঞা করেছে। রুহানি হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘ইরান ইউরেনিয়ামের মজুদ বাড়াবে এবং একই সাথে ইউরেনিয়াম বিক্রিও করবে। এ ছাড়া চুক্তিতে থাকা বাকি পাঁচ দেশ যদি ৬০ দিনের মধ্যে ইরানের তেল ও ব্যাংক খাত রক্ষায় ভালো কোনো প্রতিশ্রুতি না দেয়, তবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজের পরিসর আরো বাড়ানো হবে। তিনি বলেন, যদি পাঁচ দেশ আলোচনায় বসে মতৈক্যে পৌঁছায় এবং ব্যাংক ও তেল খাতে আমাদের স্বার্থ রক্ষা করে তবেই আমরা আবারো চুক্তির প্রতিশ্রুতিগুলো রক্ষা করে চলব। ইরানের এই ঘোষণার পর চুক্তি স্বাক্ষরকারী অন্যান্য দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, আমরা সব পক্ষকে সংযত থাকার আলোচনায় জোর দেয়ার এবং উত্তেজনা এড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি। ইরানের সাথে চুক্তিটি টিকিয়ে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে রাশিয়া। ফ্রান্সের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, তারা এই চুক্তিটি টিকিয়ে রাখতে চান। এদিকে, গত ৮ মে ইরান জানিয়েছে, আগামী ৬০ দিনের মধ্যে পরমাণু চুক্তিতে থাকা দেশগুলো ওয়াশিংটনের নিষেধ অগ্রাহ্য করে ইরানের সাথে তেল ব্যবসা আবার শুরু না করলে তারা আর পারমাণবিক চুক্তির অংশবিশেষ মেনে চলবে না। এই সময়সীমা শেষে অবস্থার পরিবর্তন না হলে পারমাণবিক কার্যক্রম আবারো শুরু করবে তারা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের এই সিদ্ধান্ত যুদ্ধের আশঙ্কাকে বাড়িয়ে দিয়েছে।

ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে আংশিক বেরিয়ে আসার ঘোষণা দেয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর শাখা রেভ্যুলুশনারি গার্ড বাহিনীকে (আইআরজিসি) সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। আর ইরানের তেল রফতানি বন্ধ করে দিয়ে দেশটিকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দেয়ার সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ট্রাম্পের কিছু সমালোচক বলেছেন, হোয়াইট হাউজ ইচ্ছে করে ইরানকে উত্তেজিত করছে। ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর টিম কায়ান বলেছেন, তিনি চিন্তিত যে, ট্রাম্প প্রশাসন খামাখাই যুক্তরাষ্ট্রকে একটি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হিসেবে চার বছরের মেয়াদ এখন শেষের দিকে। দেশে বিদেশে বিতর্কিত ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদেও প্রেসিডেন্ট হতে চান। এ জন্যই কি তিনি ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জিগির তুলেছেন? কংগ্রেসের নি¤œকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি সম্প্রতি ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বিচার প্রক্রিয়ায় বাঁধাদান থেকে শুরু করে কংগ্রেসের কাছে নথিপত্র তুলে দিতে অস্বীকার করে ট্রাম্প প্রতিদিনই অভিশংসনের পক্ষে নিজেকে যুক্তিযুক্ত করছেন। তিনি বলেন, আসলে ট্রাম্প চাচ্ছেন কংগ্রেস তার বিরুদ্ধে অভিশংসনের ব্যবস্থা নিক।

এ দিকে, ট্রাম্পকে অভিশংসনের দাবি জানিয়ে সম্প্রতি একটি আবেদনে এক কোটি স্বাক্ষর সংগৃহীত হয়েছে বলে জানা গেছে। আবেদনটি মার্কিন কংগ্রেসে জমা পড়েছে। প্রগতিশীল আন্দোলন মুভ অন, নিউ টু ইম্পিচ, সিআরইডি ও বার্ষিক নারী পদযাত্রা সংগঠন উইমেন্স মার্চ এসব স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছে। ট্রাম্পের অভিশংসনের দাবিতে আমেরিকানরা যখন সোচ্চার তখন ট্রাম্প ইরানে হামলার তোড়জোড় শুরু করেছেন। এদিকে, ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় ‘প্রথম আঘাত হানতে ইরানকে উসকে দিচ্ছেন জন বোল্টন’ শিরোনামে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- হোয়াইট হাউজে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন গত বছরই ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নেয়ার উসকানি দিয়েছিলেন। এ বছর তিনি ইরানি গার্ড বাহিনীকে লক্ষ্য করে বলেছেন বেশি দিন আর আপনাদের বিপ্লববার্ষিকী পালন করতে হবে না। ট্রাম্প কি সত্যি গদি রক্ষায় এবং দ্বিতীয় মেয়াদ নিশ্চিত করার জন্য ইরানের ওপর আগ্রাসন চালাবেন?

 


আরো সংবাদ



premium cement
ড. ইউনূসের ইউনেস্কো পুরস্কার নিয়ে যা বললেন তার আইনজীবী একনেকে ৮৪২৫ কোটি টাকার ১১ প্রকল্প অনুমোদন সান্তাহারে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে যুবক নিহত জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : আব্দুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রের সেতু ভাঙ্গার প্রভাব পড়বে বিশ্বজুড়ে! নাশকতার মামলায় চুয়াডাঙ্গা বিএনপি-জামায়াতের ৪৭ নেতাকর্মী কারাগারে হারল্যানের পণ্য কিনে লাখপতি হলেন ফাহিম-উর্বানা দম্পতি যাদের ফিতরা দেয়া যায় না ১৭ দিনের ছুটি পাচ্ছে জবি শিক্ষার্থীরা বেলাবতে অটোরিকশা উল্টে কাঠমিস্ত্রি নিহত রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদন

সকল