২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সুদানে অনিশ্চয়তার কালো মেঘ

- ছবি : সংগৃহীত

সুদানের ৩০ বছরের স্বৈরশাসক ওমর আল বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করার এক সপ্তাহ পরও দেশটি রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। অন্তর্বর্তী সামরিক সরকারের প্রধান জেনারেল আহমদ আওয়াদ ইবনে আউফ জনগণের চাপের মুখে পদত্যাগ করে আরো গ্রহণযোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল বুরহানের নাম ঘোষণা করেছেন। জেনারেল ইবনে আউফ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন। যা হোক না কেন, এমনকি জেনারেল বুরহান জনতার দাবির মুখে এক মাসব্যাপী কার্ফু বলবৎ করাসহ সামরিক কাউন্সিলের কয়েকটি প্রাথমিক ঘোষণাকে শিথিল করা সত্ত্বেও প্রতিবাদকারীরা যত দ্রুত সম্ভব বেসামরিক সরকার গঠনের দাবি অব্যাহত রেখেছেন।

সামরিক কাউন্সিল আল বশিরের ঘনিষ্ঠ অনেক অফিসারকে চাকরি থেকে অবসর দিয়েছে অথবা তাদের অনেককে গ্রেফতার করেছে। এরপরও তারা এখন পর্যন্ত জনগণের অনেক দাবির ব্যাপারে তাদের অবস্থা স্পষ্ট করতে পারেননি। রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আন্দোলনের পুরো ভাগে থাকা, পেশাজীবী ইউনিয়নগুলো তাদের অবস্থান স্পষ্ট করার জন্য সামরিক বাহিনীর অধীনে দুই বছরের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা অবিলম্বে একটি বেসামরিক অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তর, বেআইনি ডিক্রি বাতিল এবং পুরনো সরকারের প্রধান প্রধান ব্যক্তিদের বিচারের আগে গ্রেফতার করার দাবি জানালেন।

এখনো সেখানে অচলাবস্থা চলছে। সামরিক কাউন্সিল একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করতে পারে, এমন বেসামরিক ব্যক্তিদের নামের একটি তালিকা দেয়ার জন্য পেশাজীবী ইউনিয়ন ও পার্টিগুলোর প্রধানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু সেনাবাহিনী নতি স্বীকার করে একটি বেসামরিক কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে বলে এখন পর্যন্ত মনে হয় না। বশিরের কর্তৃত্বপরায়ণ শাসন ব্যাপকভাবে সামরিক বাহিনীর ওপর নির্ভরশীল ছিল এবং বহু জেনারেল দুর্নীতিবাজ সরকারের কাছ থেকে সুবিধা পেত।

এই সরকার দেশের সম্পদের অপব্যবহার ও অপব্যয়ের মাধ্যমে জনগণকে দুঃখ ও হতাশার মধ্যে ফেলে দেয়। এসব কারণে বশিরের বিচার করা হলে একইভাবে তারাও গ্রেফতার হয়ে ফেঁসে যেতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন। অপর দিকে, প্রতিবাদকারীরা বেপরোয়া মনোভাব পোষণ করছে। এতে তারা আলজেরিয়ার ব্যাপক গণবিক্ষোভ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সে দেশে প্রতিবাদ বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে আবদেল আজিজ সুতেফ্লিকার কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান ঘটেছে। এই গণবিক্ষোভে ক্ষমতাসীন দলেরও হয়তো পতন হতে পারে।

সুদানের ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টির ভাগ্য এবং যে চক্রটি বশিরকে ঘিরে রেখেছে- সেটাই এখন প্রধান ইস্যু। এটিই দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। একটি বেসামরিক প্রতিনিধিদল বা সংস্থার কাছে ক্ষমতা দিয়ে সামরিক বাহিনী চলে যেতে যত সময় লাগবে, সেটা হলো একটি খোলামেলা ব্যাপার। আর সামরিক শাসনের অবসানের লক্ষ্যে বিক্ষোভকারীরা কত দিন ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারবে, সেটাও একটা প্রশ্ন। কত তাড়াতাড়ি সামরিক শাসনের অবসান ঘটবে, সেটাও একটা প্রশ্ন।

স্মরণ রাখতে হবে, চার মাস আগে অর্থনৈতিক ব্যর্থতার দরুন সুদানে প্রতিবাদ বিক্ষোভ শুরু হয়। অর্থনৈতিক দুঃখ-দুর্দশাই দেশের সঙ্কটের প্রধান কারণ এবং তা অব্যাহত থাকবে। এ ব্যাপারে সামরিক বাহিনীর তেমন কিছু করার নেই। প্রকৃতপক্ষে সামরিক কাউন্সিল সরকার বাতিল এবং প্রদেশগুলোর সব স্থানীয় সরকারকে ভেঙে দেয়ার পর থেকে পরিস্থিতি খুবই খারাপ হয়ে যেতে পারে। এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ এবং উভয় পক্ষ যখন খাদের কিনারে অবস্থান করে, তখন অবশ্যই ভবিষ্যতে অনেকগুলো দৃশ্যপট উন্মোচিত হবে বলে এক পক্ষকে আশা করতে হবে।

ধীরে ধীরে গণতান্ত্রিক জীবনে ফিরে যাওয়াকে অনুমোদনের জন্য সামরিক বাহিনীকে জনগণের প্রতিনিধিদের সাথে একটি ফলপ্রসূ সংলাপের উদ্যোগ নিতে হবে। একটি বেসামরিক পরিষদ বা প্রতিনিধি দলের দায়িত্ব গ্রহণের পথ সুগম করার জন্য জনপ্রতিনিধিদের একটি রোডম্যাপের ব্যাপারে সম্মত হতে হবে। কিন্তু পুরনো সরকারের ভাগ্য এবং তাদের প্রতীকগুলো একটি বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে সামনে আসবে। বশিরকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে হস্তান্তরের জন্য সামরিক কাউন্সিলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়বে। সেনাবাহিনী এ পর্যন্ত এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে এসেছে।

অপর একটি ঘটনা ঘটতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেটা হলো- সামরিক বাহিনীর মধ্যে মতপার্থক্য সৃষ্টি হতে পারে এবং ফলে দ্বিতীয়বার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে কট্টরপন্থীরা ক্ষমতা দখল করতে পারে। এটা উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, কুখ্যাত র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের প্রধান মুহাম্মদ হামদান দাগলো ইবনে আউফের প্রাথমিক ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে প্রতিবাদকারীদের পক্ষ নেয়ার কথা ভেবেছিলেন। সামরিক কাউন্সিলের জন্য তার সমর্থন অত্যাবশ্যক; যদিও তার নিজেরও অ্যাজেন্ডা থাকতে পারে।

মনে হয়, সামরিক বাহিনীর মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিরোধ আছে কিন্তু এর ফলাফল কী হতে পারে তা অস্পষ্ট। উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর সাথে দাগলোর সম্পর্ক আছে। তাই হয়তো তাকে আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে। তিনি আর্থিক সমর্থনের নিশ্চয়তা পেলে এগিয়ে আসতে পারেন। প্রতিবাদ-বিক্ষোভ যত দীর্ঘ হবে, সঙ্কটও তত গভীর হবে। সামরিক বাহিনী একটি বেসামরিক কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করলে তারপর এ অঞ্চল এবং এর বাইরের প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলো এই কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করার জন্য অবশ্যই পদক্ষেপ নেবে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নও এ ক্ষেত্রে অবশ্যই এগিয়ে আসবে।

কয়েক দশক ধরে গোলযোগ ও নৈরাজ্যে এবং দেশটির সম্পদ লুণ্ঠন ও শোষণের পর সুদানকে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পথে নিয়ে আসতে দীর্ঘ সময় লাগবে এবং এ প্রয়াস হবে কষ্টকর। কিন্তু, কয়েকটি পর্যায়ে অবশ্যই সুদানকে বশিরের অধীনে- বিশেষভাবে ১৫ বছর আগে দারফুরে যে ঘটনা ঘটেছিল এবং স্বৈরাচারী সরকারের মাধ্যমে যেসব ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল- সেগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে। জাতীয় সমঝোতা বা পুনর্গঠন ব্যতীত এই দেশটি খুব খারাপ অবস্থায় গিয়ে পড়বে। কারণ দেশটির পেছনের ইতিহাস বর্বর ও রক্তাক্ত সামরিক শাসনের অন্ধকারে নিমজ্জিত। 

লেখক : আম্মান ভিত্তিক সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

আরব নিউজ থেকে ভাষান্তর: মুহাম্মদ খায়রুল বাশার


আরো সংবাদ



premium cement
কক্সবাজারে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, স্বজনদের হাসপাতাল ঘেরাও বঙ্গোপসাগরে ১২ নাবিকসহ কার্গো জাহাজডুবি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশকে ‘নেট সিকিউরিটি প্রোভাইডার’ হিসেবে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র রাজশাহীতে তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি রাজশাহীতে টানা তাপদাহ থেকে বাঁচতে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা শরীয়তপুরে তৃষ্ণার্ত মানুষের মাঝে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ জামায়াতের এক শ্রেণিতে ৫৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী নয় : শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নজিরবিহীন দুর্নীতির মহারাজার আত্মকথা ফতুল্লায় ১০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে নির্মাণকাজ বন্ধ, মারধরে আহত ২, মামলা পার্বত্যাঞ্চলে সেনাবাহিনী: সাম্প্রতিক ভাবনা গফরগাঁওয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে টিকটক করতে গিয়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যু

সকল