২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

বড়র পিরিতি

-

১৯৮০-এর দশক। তখন টাঙ্গাইল করটিয়া সা’দৎ কলেজে শিক্ষকতা করি। বাংলা বিভাগের এক জ্যেষ্ঠ অমুসলিম সহকর্মী তার উপজেলা গোপালপুরের গ্রামের একটি ঘটনা বর্ণনা করেছিলেন। এক অমুসলিম গৃহকর্তা অলস দুপুরে ঘরের দাওয়ায় বসে ফারসি হুঁকায় তামাক সেবন করছেন। বাড়ির উঠোনে এক অমুসলিম বাঁশের কারিগর তার আঙিনার বাগানের বেড়া তৈরি করছেন। এমন সময় লুঙ্গি পরিহিত, উদোম গায়ের এক মুসলিম ভিখারি এসে গৃহকর্তার কাছে ভিক্ষা চাইল। কর্তা জানতে পারলেন, ভিখারি সকাল থেকে কিছুই খায়নি। তিনি যতœ করে তাকে দাওয়ায় বসিয়ে খাওয়ালেন এবং যাওয়ার বেলায় ভিক্ষা দিলেন।

একটু পরে ধুতি পরিহিত, খালি গায়ে এক অমুসলিম ভিখারি এসে ভিক্ষা চাইল। গৃহকর্তা এবার ক্ষেপে তাকে তাড়িয়ে বাড়ির বাহির করে দিলেন। বাঁশের কারিগর বলল, ‘কর্তা, বিজাতীয় ফকিররে যতœআত্তি কইরা খাওয়াইয়া ভিক্ষা দিলেন। স্বজাতির ফকিররে লাঠি লইয়া দৌড়াইয়া খেদাইয়া দিলেন!’ গৃহকর্তা আক্ষেপ করে বললেন, ‘হিডা যদি তুই বুঝতি, তাইলে তুই আমার চেয়ারে বইয়া তামাক খাইতি আর আমি তর জাগায় বইয়া বেড়া বানাইতাম।’ কারিগর বলল, ‘বুঝলাম না কর্তা’। কর্তা বললেন, ‘হোন্। এই যে বিজাতীয়রে আদরযতœ কইরা খাওয়াইয়া ভিক্ষা দিলাম, হেতে সারা জীবন ভিক্ষাই করব। আর এই যে স্বজাতীয়রে তাড়াইয়া দিলাম, হেতে আর কোনো দিন ভিক্ষা করতে আইব না। কাম কইরা ইজ্জত লইয়া খাইব।’ অপর দিকে, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে সাধারণত সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের প্রতিই এ দেশে অঙ্গুলি নির্দেশ করা হয়েছে।

ভিক্ষাবৃত্তি ইসলাম ধর্মের শিক্ষা নয় মোটেও; বরং আল কুরআনে দরিদ্রদের প্রতি কঠোর পরিশ্রম করার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা কাজ করো, অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা, তাঁর রাসূল ও মুমিনরা তোমাদের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করবেন।’ (সূরা তাওবা, আয়াত ১০৫)। তিনি আরো বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা কখনো কোনো জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে।’ (সূরা রা’দ, আয়াত ১১)। কাজ করে ইসলামের বিধিবিধান অনুসরণ করে চলার মাধ্যমেই নিজের অবস্থার পরিবর্তন করা যায়। রাসূল সা:-এর শিক্ষাও হলো ভিক্ষাবৃত্তি সর্বদা পরিহার করে চলা। আমরা প্রায় সবাই সে কাহিনী জানি যে, তিনি এক ভিখারিকে বলেছিলেন, ‘তোমার ঘরে কি কিছুই নাই’? ভিখারি বলল, ‘একটি কম্বল আছে’। নবীজী বললেন, ‘এটি বিক্রি করে বাজার থেকে কুঠার ও কিছু খাদ্য কিনে আনো।’ ভিখারি এটাই করল। নবী সা: বললেন, ‘এই কুঠার দিয়ে বন থেকে কাঠ কেটে এনে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করো। ভিক্ষা করো না।’ ইসলাম কর্মবিমুখ, অর্থাৎ ভিক্ষুককে সমর্থন করে না। রাসূল সা: বলেন, ‘পুনরুত্থান দিবসে ভিক্ষুকের মুখমণ্ডলে কোনো মাংস থাকবে না।’ (বুখারি ও মুসলিম)। সব সক্ষম ব্যক্তির কর্মসংস্থান ও অক্ষমদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব; কিন্তু এ যুগে পাশ্চাত্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন মডেলের অনুসারী বাংলাদেশে তা হচ্ছে না। তাই ব্যক্তিপর্যায়ে ও রাষ্ট্রীয়পর্যায়ে ভিক্ষাবৃত্তির অবসানও ঘটছে না।

১৭৫৭ সালে ভারতবর্ষের শাসনভার হস্তগত করার পর ব্রিটিশরা ভারতবাসীকে ‘সুশিক্ষিত’ করার লক্ষ্যে একপর্যায়ে ইংরেজি মাধ্যমে লেখাপড়া চালু করেছিল। এই শিক্ষার উদ্দেশ্য লর্ড টমাস বেরিংটন মেকলের মতে : ‘আমাদের এখন চেষ্টা করতে হবে এমন এক শ্রেণী সৃষ্টি করতে যারা হবে আমাদের এবং আমরা যে লাখ লাখ লোককে শাসন করছি, সেই শাসিতের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদানকারী। এই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিরা হবে রক্তে ও রঙে ভারতীয়, আর রুচিতে, মতে, নীতিতে ও বুদ্ধিতে ইংরেজ।’ (কাজী আবদুল মান্নান, আধুনিক বাংলা সাহিত্যে মুসলিম সাধনা, পৃষ্ঠা ২৪)। মেকলে সাহেবের ‘চেষ্টায় মধ্যশ্রেণীর সমাজ নায়কগণের অনেকে ইংরেজি শিক্ষার প্রসারের ভার গ্রহণ করিয়াছিলেন। কিন্তু কেবল ইংরেজিশিক্ষিত কেরানি সৃষ্টিই মেকলে সাহেবের উদ্দেশ্য ছিল না, তাহার লক্ষ্য ছিল গভীরতর ও সুদূরপ্রসারী। তাহার লক্ষ্য ছিল, এ দেশে এরূপ একটি ইংরেজি শিক্ষিত শ্রেণী সৃষ্টি করা যে শ্রেণীটি উহার উন্নত ইংরেজি শিক্ষার গুণে ভারতবর্ষকে নহে, ইংলন্ডকে ‘স্বদেশ’ ও ইংরেজদের পরমাত্মীয় বলিয়া মনে করিবে এবং কোনো কালেই ইংরেজ-শাসনের বিরোধী হইবে না।

মেকলের এই উদ্দেশ্য যে দীর্ঘকাল পর্যন্ত সর্বাংশে সাফল্যমণ্ডিত হইয়াছিল, তাহার প্রমাণ পাওয়া যায় প্রত্যেকটি কৃষক বিদ্রোহ, বিশেষত সাঁওতাল-বিদ্রোহ, মহাবিদ্রোহ ও নীল বিদ্রোহের সময় কৃষকদের সংগ্রামের প্রতি মধ্যশ্রেণীর প্রবল বিরোধিতা এবং ইংরেজ শাসনের প্রতি অবিচল সমর্থন হইতে। পরবর্তীকালে অর্থনৈতিক সঙ্কটের চাপে মধ্যশ্রেণীর ইংরেজভক্তি যথেষ্ট পরিমাণে হ্রাস পাইলেও, এমনকি বর্তমান কালেও অতি উচ্চ শিক্ষিতদের একটি দল অন্তত ভারতবর্ষের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে মেকলের লক্ষ্য প্রকারান্তরে সিদ্ধ করিয়া চলিয়াছেন।’ (সুপ্রকাশ রায়, ভারতের কৃষক-বিদ্রোহ ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম, কলিকাতা, ১৯৮০, পৃষ্ঠা ১৯)। কেবল ভারতবর্ষের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রেই নয়, পাক-ভারত-বাংলাদেশের পাশ্চাত্য ধারার সমাজ পুনর্গঠনের ক্ষেত্রেও মেকলে সাহেবের শিক্ষানীতি আজো ব্যাপক অবদান রেখে চলেছে। পঞ্চাশের দশকে আমার সুশিক্ষিত বড় চাচা বলতেন, ‘আমাদের দেশের ডাক্তাররা বিলেতি ওষুধের ক্যানভাসার।’ আজো যারা বিদেশে শিক্ষা লাভের জন্য যান, তারা সেসব দেশের ভাবশিষ্য হয়ে দেশে ফেরেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সাথে জন্মলগ্ন থেকেই পাকিস্তানের সম্পর্ক হৃদ্যতাপূর্ণ। তদানীন্তন পাকিস্তান নিজের নিরাপত্তা ও অস্তিত্ব রক্ষার্থে সামরিক জোট সিয়াটো ও সেন্টোর সদস্য হয়েছিল। বিগত শতাব্দীর পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে বিশেষত তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের সামাজিক জীবনে এ জোটের প্রভাব পড়েছিল প্রবলভাবে। পাকিস্তান যদিও একটি ‘ইসলামিক রিপাবলিক’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল, কিন্তু পশ্চিমাদের প্রভাবে পাকিস্তানি সমাজে প্রকৃতার্থে ইসলামী রীতিনীতি খুব কমই অনুসৃত হতো। ১৯৬৮-১৯৭০ সালে পাকিস্তানে করাচির পিআইডিইতে স্টাফ ইকোনমিস্ট হিসেবে পৌনে তিন বছর অবস্থানের আমার সুযোগ হয়েছিল। সে সময়ে ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তানের করাচি শহরে প্রায় ডজনখানেক নাইট ক্লাব জমজমাট ব্যবসা করত। অ্যালকোহলের দোকান ও ব্যবসা ছিল উন্মুক্ত। এক সন্ধ্যায় করাচির সদর এলাকায় ওষুধের দোকান ভেবে একটা অ্যালকোহলের দোকানে ঢুকে পড়ি। প্রায়ান্ধকার প্রকাণ্ড দোকানটিতে ঢুকে ভেতরের মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত উঁচু, চার দিকের তাকে সারি সারি বড় বড় চটকদার লেবেলের বোতল সাজানো দেখেই আমার সন্দেহ হয়েছিল- আসলেই এটি ওষুধের দোকান কি না। সযতেœ লালিত, দু’ধারে লম্বা সুচালো গোঁফধারী মধ্যবয়সী মোটাসোটা কালো দোকানির হাতে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনটি তুলে দেয়ার পর তিনি সেটিতে নজর বুলিয়ে বললেন, ‘ইয়ে ওয়াইন শপ হ্যায়’। এতএব, ‘স্যরি’ বলে প্রেসক্রিপশনটি নিয়ে বেরিয়ে এলাম।

আমার কর্মস্থলের অনেকেই ওয়াইন বা মদ পান করতেন। এমনকি, বাঙালি-অবাঙালিদের কেউ কেউ পিআইডিই-এর পশ্চিমা অ্যাডভাইজরদের সান্ধ্য গার্ডেন পার্টিতে ওয়াইন পান করতেন। এদের অনেকেই ইউরোপ আমেরিকা থেকে পিএইচডি নিয়ে এসেছিলেন। যারা বিদেশে যাননি তাদেরও অনেকে ওয়াইন পান করতেন। সফট ড্রিংক যেমন সেভেনআপ, ফান্টা, স্প্রাইট ইত্যাদির ব্যবস্থাও সেখানে থাকত। আমরা নবাগতরা- বাঙালি-অবাঙালি নির্বিশেষে সবাই সফট ড্রিংকই নিতাম। একবার কৌতূহলবশত করাচির এক ‘সম্ভ্রান্ত’ নাইট ক্লাবে তিনজন মিলে গিয়েছিলাম। সেখানে যা দেখলাম তা একটি ইসলামিক রিপাবলিক রাষ্ট্রের আদর্শের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় কিছুতেই। নাইট ক্লাবে তা হওয়ার কথাও নয়। এর সবই পাশ্চাত্যের সাথে পাকিস্তানের দহরম-মহরমের প্রভাবে ঘটেছে। সেখানে সফট ও হার্ড উভয় ড্রিংকেরই ব্যবস্থা ছিল। আমরা সফট ড্রিংক সেভেনআপ নিলাম। সে সময় ঢাকার রেসকোর্সে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) ঘোড়দৌড়ের জুয়া খেলা হতো এবং ঢাকা জিমখানা ক্লাবেও এমন সব কর্মকাণ্ড হতো, যা একটি ইসলামিক রিপাবলিক দেশের আদর্শের সাথে মানায় না।
ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তান ইসলামকে ডাইলিউট বা ‘তরল’ করে পশ্চিমাদের এত সব কনসেশন বা ছাড় দিয়েও শেষ রক্ষা পায়নি। ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে পাশ্চাত্য জগৎ পাকিস্তানের ‘নিরাপত্তা ও অখণ্ডতা’ রক্ষার্থে এগিয়ে আসেনি।

যুক্তরাষ্ট্র সপ্তম নৌবহর মুভ করেছিল, কিন্তু সেটা তেমন কোনো অর্থবহ বা সিরিয়াস পদক্ষেপ ছিল না। রাশিয়া যেখানে জড়িত সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নিক্সন তার সাথে কনফ্রন্টেশনে যেতে চাননি। স্মর্তব্য, ১৯৬২ সালে কিউবা সঙ্কটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কেনেডি এমনই অনমনীয় ছিলেন যে, রাশিয়ার সাথে পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কায় দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের আকুল আবেদনও তিনি বারবার উপেক্ষা করেছিলেন। শেষ রক্ষা হয়েছিল রাসেলের আবেদনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ক্রুশ্চেভের সাড়া দেয়ার কারণে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাসেল ‘Unarmed Victory’ নামে একটি বইও লিখেছেন। এ দু’টি ঘটনা থেকে এটাই প্রমাণ হয়, বড়রা নিজেদের স্বার্থের বিষয়ে যতটা মরিয়া তাদের ছোট ‘বন্ধু’দের বেলায় ততটা আগ্রহী নয়। যেমন- রোহিঙ্গা সঙ্কটে পশ্চিমারা ‘ভিক্ষা’ দেয়া ছাড়া তাদের জন্য কিছুই করছে না।

১৯৭১-এর ৯ মাসের যুদ্ধের ফলস্বরূপ সে সময়ের পাকিস্তানের পূর্বাংশ ভারতের সশস্ত্র সহযোগিতায় বাংলাদেশ নামে স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরই দেখেছিলাম ‘বন্ধুরাষ্ট্র’ ভারতের শিখ ড্রাইভাররা বড় বড় ট্রাক বোঝাই করে বহু দিন ধরে যুদ্ধের গনিমত নিয়ে গেল। আমাদের শিল্পকারখানা যেগুলো ৯ মাসের যুদ্ধকালে পর্যন্ত সচল ছিল তা সব হয়ে গেল অচল। যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্বাসনকালে যেসব ত্রাণসামগ্রী বাংলাদেশে আসত তা কৈ মাছের মতো হেঁটে গিয়ে কলকাতার ফুটপাথে বিক্রি হতো। বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত অভিন্ন নদীগুলোর পানি ভারত একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে নিলো। এককালের প্রমত্তা পদ্মার বুক গরুর গাড়ি ও মোটরবাইক চলার উপযোগী হয়ে গেল। অন্যান্য নাব্য খরস্রোতা নদী মরা খালে পরিণত হয়ে কচুরিপানায় ঠেসে যায়। দেশের উত্তরাঞ্চল মরুভূমি হওয়ার উপক্রম হলো। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ট্রানজিট আদায় করে নেয়া হলো। ভারতীয় পণ্যে বাংলাদেশের বাজার হলো সয়লাব। তাই দেশীয় শিল্প ও পণ্য মার খেল। বাংলাদেশের ঘরে ঘরে ভারতীয় টিভি চ্যানেল এমনভাবে বিস্তার লাভ করেছে, যে দেশের জনগণ এককালে উর্দুকে প্রত্যাখ্যান করেছিল তারা হিন্দিকে গ্রহণ করতে দ্বিধা করছে না।

মিয়ানমার থেকে পাশবিক নির্যাতন সহ্য করে রোহিঙ্গারা যখন পথের অমানবিক কষ্ট ভোগ করে দলে দলে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে, সেই মুহূর্তে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মিয়ানমার গিয়ে তাদের সাথে সংহতি ঘোষণা করলেন নির্দ্বিধায়। ভারতে আশ্রয় নেয়া ৪০ হাজার রোহিঙ্গা ও আসামের ৪০ হাজার মুসলমানকে ‘অনাগরিক’ বানিয়ে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার পাঁয়তারা চলছে। এ ফিরিস্তি অনেক দীর্ঘ। এসব কিছুর বিনিময়ে বাংলাদেশকে ভারত প্রায় কিছুই দেয়নি। এত কিছুর পরও বাংলাদেশ সরকার বলে চলেছে- ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক অতীব উষ্ণ এবং হৃদ্যতাপূর্ণ। সরকারপ্রধান বলেছেন, ‘বিশ্বের দরবারে আমরা মাথা উঁচু করে হাঁটব।’ অনেকে এটাকে অবাস্তব ও হাস্যকর মনে করেন।

বাংলাদেশে নিযুক্ত পশ্চিমা মহিলা কূটনীতিকেরা কখনো কখনো শাড়ি পরে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেন। প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেন। পাশ্চাত্যের নারীদের দেহের গড়নই এমন যে, শাড়িতে তাদের অনেক ক্ষেত্রেই বেঢপ লাগে। এটা দেখে সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের-এর ‘পালামৌ’ ভ্রমণকাহিনীর সে উক্তি, ‘বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে’ মনে পড়ে যায়। আমাদের হাই সোসাইটি পশ্চিমাদের অনুকরণে নাইট ক্লাব আর ওয়াইনে অভ্যস্ত। পাকিস্তানে জুলফিকার আলী ভুট্টো এসব বন্ধ করে দিয়েছিলেন। বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোড়দৌড়ের জুয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। আজকের বাংলাদেশের হাইফাই সোসাইটির ইয়াবা সেবনসহ বিজাতীয় জীবনধারা অনুকরণের সর্বগ্রাসী প্রবণতা কে রোধ করবে? কে শেখাবে, ‘বড়র পিরিতি বালুর বাঁধ’।

লেখক : অর্থনীতির অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার


আরো সংবাদ



premium cement