২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে চমক!

- ফাইল ছবি

শ্রীলঙ্কায় চলতি বছর দুটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন হওয়ার কথা। একটি হলো প্রেসিডেন্ট, অপরটি পার্লামেন্ট নির্বাচন। এই দুই নির্বাচনের মাধ্যমে বড় ধরনের পরিবর্তন হতে পারে দেশটিতে। তবে নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, নিত্যনতুন চমক দেখা যাচ্ছে দেশটিতে। এই কয়েক মাস আগে প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন প্রেসিডেন্ট মৈত্রিপালা সিরিসেনা। তিনি সেটা টিকিয়ে রাখতে পারেননি। রনিল বিক্রমাসিঙ্গে ফের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। এখন জানা যাচ্ছে, দেশটিতে আগাম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দেয়া হবে। সেটি যদি হয়, তবে তা অনেক সমীকরণ পাল্টে দিতে পারে।

চলতি বছরের শেষ দিকে শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিঙ্গে চাচ্ছেন, নির্বাচন এগিয়ে এনে বিরোধী দলকে অপ্রস্তুত করে ফেলে জয়ী হতে।

ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিঙ্গের ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি) নানা কারণে ২০১৫ সলের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারেনি। তার ওপর এখনকার প্রচণ্ড খরা এবং সেইসাথে লোডশেডিং পরিস্থিতিকে ভয়াবহ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। গত বছর অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভরাডুবি ছিল এর একটি প্রমাণ। জনপ্রিয়তা আরো হ্রাস পাওয়ার আগেই এবং গোতাবায়া রাজাপাকসে যাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতেই আগাম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন বিক্রমাসিঙ্গে।

সাবেক প্রেসিডেন্ট মহিন্দা রাজাপাকসের ভাই ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী গোতাবায়া হতে পারেন শ্রীলঙ্কার বিরোধী দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। তিনি তুমুল জনপ্রিয়। বিশেষ করে বৌদ্ধদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা ব্যাপক। তামিলদের বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধে জয়ী হতে তিনি বিপুল ভূমিকা রেখেছিলেন। অন্য দিকে সাংবিধানিক জটিলতার কারণে মহিন্দা রাজাপাকসে প্রার্থী হতে পারছেন না। তবে গোতাবায়ার একটি সমস্যা হচ্ছে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। এই পরিস্থিতি নিয়ে তিনি প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করতে পারেন না। তিনি অবশ্য ওই নাগরিকত্ব বাতিল করার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে তার কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু জুনের দিকে নির্বাচন করা হলে তার পক্ষে আইনগত বাধার কারণে তাতে অংশ নেয়া সম্ভব হবে না। বিক্রমাসিঙ্গে ওই সুযোগটিই নিতে চাচ্ছেন।

আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইউএনপির প্রার্থী কে হবেন তা নিয়েও চলছে জোর গুঞ্জন। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন ইউএনপি সস্য ও পার্লামেন্টের বর্তমান স্পিকার কারা জয়াসুরিয়া। এছাড়া অধিকতর সিনিয়র সদস্য সাজিত প্রেমাদাসার নামও ব্যাপকভাবে উচ্চারিত হচ্ছে।
গত অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিঙ্গেকে বরখাস্ত করার প্রেসিডেন্ট মৈত্রিপালা সিরিসেনার অসাংবিধানিক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন জয়াসুরিয়া। চলতি মাসের প্রথম দিকে তাকে মহানায়কেসহ মহাসঙ্ঘ সম্মানসূচক পুরস্কার প্রদান করে। এটাকে শ্রীলঙ্কার গুরুত্বপূর্ণ পুরোহিতদের ‘আশীর্বাদ’ প্রাপ্তি বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। তা থেকে অনেকেই ধরে নিচ্ছেন যে, তিনিই হতে যাচ্ছেন ইউএনপির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী।

অন্য দিকে, সাজিত প্রেমাদাসা হলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট রনসিঙ্গে প্রেমাদাসার ছেলে। তিনিও শক্তিশালী প্রার্থী। বৌদ্ধদের কাছ থেকে তিনি বিপুল শ্রদ্ধা পেয়ে থাকেন। তা ছাড়া গ্রাম পর্যায়েও তার বিপুল জনপ্রিয়তা রয়েছে। তিনি বর্তমানে গৃহায়ন মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।
আরেকটি সমস্যা আছে বর্তমান প্রেসিডেন্ট মৈত্রিপালা সিরিসেনাকে নিয়ে। তিনি ডিসেম্বরের আগে পদ ছাড়তে নারাজ বলে ধারণা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করার দায়িত্ব খোদ প্রেসিডেন্টেরই। আর তা করতে হয় ছয় মাস আগে। তিনি ওই পথে সম্ভবত হাঁটবেন না।

সিরিসেনা ও তার এসএলএফপি বর্তমানে বিরোধী দলের সাথে রয়েছেন। গত অক্টোবরেই তারা ইউএনপির সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করেন। ফলে আগাম নির্বাচন নিয়ে সিরিসেনা সহযোগিতা করবেন, এমনটা মনে হয় না। অবশ্য গুঞ্জন রয়েছে, সিরিসেনা এখন ইউএনপির সাথে তার বিরোধ মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করছেন। কারণ তিনি দেখতে পাচ্ছেন যে, এসএলপিপির কাছ থেকে তার প্রার্থিতার কোনো নিশ্চয়তা পাচ্ছেন না। গুজব রয়েছে, তিনি বিক্রতমাসিঙ্গের সাথে বিরোধ মিটিয়ে আবার প্রার্থী হতে পারেন। তবে তিনি যত ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাতে করে তার পক্ষে ওই সমর্থন পাওয়া প্রায় অসম্ভব বলেই মনে হচ্ছে।

তবে শ্রীলঙ্কার রাজনীতি সবসময়ই চমকে ভরা থাকে। যেকোনো সময় যেকোনো কিছুই ঘটে যেতে পারে শ্রীলঙ্কায়। আর তা চলতি বছরের পুরো সময়ই থাকবে বলে অনেকে মনে করছেন।


আরো সংবাদ



premium cement