২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

একজন সাহসী মানুষ

খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন - ছবি : সংগৃহীত

২০১০ সালের ১৬ মার্চ বিকেল ৩টায় বিএনপি মহাসচিব অ্যাডভোকেট খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। দেখতে দেখতে ৯ বছর পেরিয়ে গেল।

হৃদয়ে ভেসে ওঠে একজন সাহসী মানুষের মুখ। যিনি নিজের জীবন বাজি রেখে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে দেশের জন্য কাজ করেছেন। বিএনপিকে রক্ষা করতে কাজ করেছেন। এ জন্য তাকে চরম মূল্য দেতে হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তার ছেলেকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়েছে। সেই ভিডিও চিত্র তাকে দেখিয়ে ভয় দেখানো হয়েছে। এক-এগারোর দোসরদের কথা না মানলে ছেলেকে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেয়া হয়। তার ডাক্তার মেয়েকে বারডেম হাসপাতাল থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়। তিনি নিজে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতাল থেকে চলে গিয়ে আত্মরক্ষা করেন।

তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন তাকে বারবার চাপ দেয়, তাদের লেখা বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে বলে; তখন তিনি অসুস্থতার কথা বলে হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতালেও কুচক্রী মহল হানা দিলে তিনি হাসপাতাল থেকে চলে যান; তবু মাথা নত করেননি। সেই বীর আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। তার চেয়ে কর্মদক্ষ কোনো মহাসচিব বিএনপির দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেন। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যাবে, খোন্দকার দেলোয়ারের মতো দুর্দিন মোকাবেলা করার সাহস সবার হবে কি না?

তথাকথিত এক-এগারো চলাকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার গ্রেফতার হন। মামলা পরিচালনা করতে প্রতি সপ্তাহেই আমাকে সংসদ ভবনে যেতে হয়েছে। মামলার কাজ শেষ করে প্রায় প্রতিদিনই সংসদের উল্টো দিকে ন্যাম ভবনে যেতাম খোন্দকার দেলোয়ারের বাসায় রাজনীতির নিত্যনতুন খবর পেতে। ন্যাম ভবনের বাসাটি তখন ছিল সবার জন্য উন্মুক্ত।

প্রতিদিন সাক্ষাৎ না পেলেও এক-এগারোর দুই বছরে প্রায় ২৫-৩০ দিন ব্যক্তিগতভাবে খোন্দকার দেলোয়ারের সাথে কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। তিনি তৈমূর ভাইয়ের মামলার খোঁজখবর নিতেন। নারায়ণগঞ্জ বিএনপির খোঁজখবর নিতেন। আমাদের অভয় দিতেন। একদিন তৈমূর ভাইয়ের চিঠি পৌঁছে দিয়েছিলাম তার হাতে। তিনি চিঠি পড়ে আমাকে যা যা বলেছিলেন পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে তাই হয়েছিল।

এক-এগারোর দুঃসময়ে দায়িত্ব নেয়ার পরে দলকে সংগঠিত করতেই তার সব সময় চলে যায়। ঢাকার বাইরে কোনো সাংগঠনিক সফর বা জনসভা করার সুযোগ তিনি পাননি। জীবনের একেবারে শেষ সময়ে এসে ঢাকার বাইরে মহাসচিব হিসেবে জীবনের প্রথম ও শেষ জনসভাটি করেন নারায়ণগঞ্জে। যুবদলের ঢাকা বিভাগীয় যুব মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় প্রায় দেড় মাস আগে ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১। যুব সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। যুব মহাসমাবেশে আয়োজক কমিটির সদস্যসচিব হয়ে অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব ছিল আমার। খোন্দকার দেলোয়ারের জীবনের শেষ জনসভায় আমি তার নামটি ঘোষণা করতে পেরেছিলাম।

জেলা পর্যায়ের একজন রাজনৈতিক কর্মী হয়েও ঘটনাচক্রে দলের মহাসচিবের সাথে সাক্ষাৎ করা, কথা বলা ও তার অনুষ্ঠান পরিচালনা করা আমার রাজনৈতিক জীবনের একটি বড় প্রাপ্তি। যা ভুলার নয়।

এ দেশের সব মানুষ ও জাতীয়তাবাদী শক্তির হৃদয়ে সর্বদা খোন্দকার দেলোয়ার জাগ্রত থাকবেন। গণতন্ত্র রক্ষায় তার ত্যাগ আমাদের আগামী দিনের পথচলার পাথেয় হবে। নবম মৃত্যুবার্ষিকীতে খোন্দকার দেলোয়ারের রূহের মাগফিরাত কামনা করি।

লেখক : সভাপতি, নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদল


আরো সংবাদ



premium cement