১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ইসরাইল কেন মাদুরোকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায়?

নিকোলাস মাদুরো - ছবি : সংগ্রহ

ভেনিজুয়েলা সঙ্কটের পেছনে বিভিন্ন কারণ রয়েছে। লাতিন আমেরিকার দেশটিতে এসব সমস্যার পেছনে ইসরাইলের সম্পৃক্ততার বিষয়টি খুব কমই উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও এই সঙ্কটের পেছনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সরাসরি হাত রয়েছে।

ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজের মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারী নিকোলাস মাদুরো শাসন পরিচালনার শুরুতেই বিভিন্ন অর্থনৈতিক সঙ্কট, মুদ্রাস্ফীতিসহ ওষুধ এবং খাদ্যের ঘাটতি দেখা দেয়। মজুদ থাকা জ্বালানি তেলের মূল্য কমে যাওয়ায় দেশটিতে সমস্যা আরো বাড়ে।
ভেনিজুয়েলার আর্থ-সামাজিক অবস্থা খারাপের দিকে যাওয়া ফলে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। এতে দেশটিতে রাজনৈতিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি ও বিরোধী শিবিরের বাইরে তৃতীয় কোনো পক্ষ নেই, যারা দেশটিকে সঙ্কট থেকে বের করে সমাধানের পথে নিয়ে যেতে পারে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও ইসরাইলসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থিত ভেনিজুয়েলার স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট জুয়ান গুয়াইদোর নেতৃত্বকে জাতিসঙ্ঘ, দেশটির শীর্ষ আদালতসহ সামরিক বাহিনী প্রত্যাখ্যান করেছে। এ ছাড়া মাদুরো পুনরায় নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন। এমন সময়ে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে- তাহলে কার স্বার্থে গুয়াইদো ক্ষমতা দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন?

ভেনিজুয়েলার রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার পেছনে দেশটির অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সমস্যাকে দায়ী করা হয়। কিন্তু মাদুরোকে উৎখাত করার জন্য মার্কিন-ইসরাইলি গ্রুপ বড় ধরনের ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। মূলত দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে ফিলিস্তিনিবিরোধী ক্যাম্পেইন তৈরির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে এই গ্রুপটি।

যদিও লাতিন আমেরিকার বেশির ভাগ দেশ ১৯৪৭ সালে জাতিসঙ্ঘের পার্টিশন প্যাটার্নকে সমর্থন করে, যা আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরাইল রাষ্ট্র এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে মেনে নেয়। এ ছাড়াও এ অঞ্চলটির সাথে ফিলিস্তিনের আলাদা সুসম্পর্ক রয়েছে। আরব বিশ্বের বাইরে সর্বাধিক ফিলিস্তিনিদের উপস্থিতি এ অঞ্চলেই।

শ্যাভেজ যুগ থেকে এখনো পর্যন্ত ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে ভেনিজুয়েলা একাত্মতা প্রকাশ করেছে। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ইসরাইলের সমালোচনা করে আসছে দেশটি। ভেনিজুয়েলা ২০০৯ সালে গাজায় সামরিক অভিযান পরিচালনার কারণে ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। সাম্প্রতিক জাতিসঙ্ঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য আয়োজিত ভোটে ভেনিজুয়েলাসহ লাতিন আমেরিকার দেশগুলো এর পক্ষে শক্তিশালী সমর্থন দেয়।

অন্য দিকে, ট্রাম প্রশাসনের নেতৃত্বে ধীরগতিতে ফিলিস্তিন বিরোধী প্রচারণা শুরু হয়েছে। শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউ এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে মার্কিন সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’ নামের চুক্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। যদিও এই চুক্তি ফিলিস্তিনিদের জন্য আত্মঘাতী হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

ট্রাম প্রশাসন লাতিন আমেরিকাজুড়ে নব্য-রক্ষণশীল খ্রিষ্টান ও ইহুদিবাদী মতাদর্শ ছড়িয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছে। আর তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ট্রাম প্রশাসন ভেনিজুয়েলাতে নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে ইলিয়ট আব্রামকে নির্বাচিত করেছে। তাকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব দেয়ার ফলে মোটামুটিভাবে ধারণা করা যায় যে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল এই পরিস্থিতিটিকে কাজে লাগিয়ে মাদুরোকে উৎখাত করার মাধ্যমে দেশটিতে ইসরাইলপন্থী শাসন প্রতিষ্ঠার একটি নিখুঁত সুযোগ হিসেবে দেখেছে।

এর আগে ইলিয়ট আব্রামকে ইরান-কন্ট্রা কেলেঙ্কারিতে তার ভূমিকার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। এ ছাড়াও এল সালভেদর ও গুয়েতেমালায় যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত শাসন চলাকালে সেখানে ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে আব্রামকেও জড়িত করা হয়েছিল। যার ফলে সেখানে হাজার হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল।

কিন্তু পরবর্তীতে তাকে ক্ষমা করে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদে নিয়োগ করা হয়। এ সময় ভেনিজুয়েলার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট শ্যাভেজের বিরুদ্ধে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পেছনে তার ভূমিকা ছিল বলে উল্লেখ করা হয়।

ইলিয়ট আব্রাম ইসরাইলপন্থী হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। ফিলিস্তিনে বসতি স্থাপনের বিষয়টি অবৈধ বলে বিবেচিত হওয়ার পর তিনি ওবামা প্রশাসনের ব্যাপক সমালোচনা করেন। এতে খুশি হয়ে ট্রাম্প প্রশাসন তাকে ল্যাটিন আমেরিকায় ফিলিস্তিনবিরোধী কর্মসূচির জন্য বাছাই করে।

ভেনিজুয়েলা যে অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তাতে আশাবাদী হওয়ার মতো কিছু দেখা যাচ্ছে না। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে পরে এ অঞ্চলে ফিলিস্তিনবিরোধী রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুরু করবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল। ধীরে ধীরে লাতিন আমেরিকা থেকে ফিলিস্তিনের নাম নিশান মুছে ফেলা হবে।

এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ভেনিজুয়েলার জনগণ, নাগরিক সমাজ এবং লাতিন আমেরিকার সাধারণ মানুষদের আশা মিথ্যায় পরিণত হবে। এ মহাদেশ থেকে ফিলিস্তিনিদের প্রতি অব্যাহত সমর্থন ঠেকানোর জন্য ইসরাইলি সমর্থিত পরিকল্পনাটিকে থামানো যাবে কি না তা কেবল সময়ই বলতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement
ফরিদপুরে মাইক্রোবাস-মাহেন্দ্র মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৫ ভেটো ছাড়াই ফিলিস্তিনের জাতিসঙ্ঘ সদস্যপদ ঠেকানোর চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র সখীপুরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে গৃহবধূর আত্মহত্যা ভারী বৃষ্টিতে দুবাই বিমানবন্দরে চরম বিশৃঙ্খলা, দুর্বিসহ অবস্থা বেসিক ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়া বন্ধের দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন ভরিতে ২০৬৫ টাকা বেড়ে স্বর্ণের দামে নতুন রেকর্ড ইরানি জবাব নিয়ে ভুল হিসাব করেছিল ইসরাইল! কূটনীতিতে বাইডেনবিরোধী হতে চান ট্রাম্প পেনাল্টিতে সাফল্য রিয়ালের জয়ের মানসিকতার প্রমাণ কিমিচের একমাত্র গোলে আর্সেনালকে পরাজিত করে সেমিফাইনালে বায়ার্ন বিরোধী দলকে ভাঙতে ষড়যন্ত্র করছে সরকার : ড. মঈন খান

সকল