১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষি বিপ্লব

গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষি বিপ্লব - ছবি : সংগ্রহ

যেকোনো দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য গ্রামীণ উন্নয়ন অপরিহার্য। গ্রামীণ অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। প্রতিটি রাষ্ট্রই কৃষি উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকে। কৃষি উন্নয়ন প্রকারান্তরে কৃষকের উন্নয়নের পথ সুগম করে। কৃষিভূমির প্রতিটি ইঞ্চি জায়গায় উন্নত বীজ ও সার ব্যবহারের মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে যে নিবিড় চাষাবাদ করা হয়, তাকে ‘কৃষি বিপ্লব’ বলা হয়। গ্রামাঞ্চলের অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা শহরাঞ্চল থেকে ভিন্ন হলেও গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়াসহ প্রতিটি বাড়ির সাথে সড়ক যোগাযোগের ব্যবস্থা করা গেলে তা উন্নত ও সমৃদ্ধ জীবনযাপনের সহায়ক। এর সাথে সাথে প্রয়োজন স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা।

বাংলাদেশের সংবিধানে গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষি বিপ্লব রাষ্ট্র পরিচালনার একটি মূলনীতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত। এ বিষয়ে সংবিধানে উল্লেখ করা হয়েছে, নগর ও গ্রামাঞ্চলের জীবনযাত্রার মানের বৈষম্য ক্রমাগত দূর করার উদ্দেশ্যে কৃষি বিপ্লবের বিকাশ, গ্রামাঞ্চল বৈদ্যুতিককরণের ব্যবস্থা, কুটির শিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের আমূল পরিবর্তন সাধনের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যার শতকরা ৭০ ভাগ গ্রামে ও ৩০ ভাগ শহরে বসবাস করে। প্রায় আড়াই যুগ আগে এ হারটি ছিল যথাক্রমে ৮০ ভাগ ও ২০ ভাগ। ১৯৪৭ সাথে যখন ভারত ও পাকিস্তান নামক দু’টি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়, তখন আমাদের বর্তমান বাংলাদেশ পূর্ব পাকিস্তান নামে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হলো। সে সময় পূর্ব পাকিস্তানে শিল্পকারখানা বলতে কিছুই ছিল না। গ্রামাঞ্চল দূরের কথা, শহরাঞ্চলেও বিদ্যুতের ব্যবস্থা ছিল না। শহরের প্রধান সড়ক ছাড়া অপরাপর সড়ক ছিল ইট বিছানো অথবা কাঁচা। শহরে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানার সংখ্যা ছিল নগণ্য।

পাকিস্তানি শাসনামলের ২৩ বছরে সব শহরে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা গেলেও গ্রামীণ জনপদের প্রায় শতভাগই ছিল বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে। স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা দুই-চার-দশ গ্রামে একটি খুঁজে পাওয়াও দুরূহ ছিল। এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে এবং গ্রাম থেকে শহরে আসার রাস্তাও তেমন ছিল না। ‘স্কুল’ বলতে দুই-চার-পাঁচ গ্রামের মধ্যে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল।

বাংলাদেশের অভ্যুদয়-পরবর্তী সময়ে দ্রুত অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে। এখন গ্রামের পথঘাট অনেক উন্নত। এমন অনেক গ্রাম রয়েছে, যেগুলো পাকা রাস্তার মাধ্যমে শহরের সাথে সংযুক্ত। গ্রামের প্রায় শতভাগ বাড়িতে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানার ব্যবস্থা আছে। বিদ্যুৎ সংযোগের ক্ষেত্রেও যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। প্রত্যন্ত যেসব গ্রামে বিদ্যুৎ সুবিধা দেয়া যায়নি, সেসব গ্রামের অধিবাসী সৌরবিদ্যুতের বদৌলতে বৈদ্যুতিক বাতি, বৈদ্যুতিক পাখা, টিভি, ফ্রিজ প্রভৃতি ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন।

গ্রামাঞ্চলে বায়োগ্যাসের মাধ্যমে রান্নার জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের গৃহভিত্তিক প্রকল্প তিন দশকের অধিক সময় আগে যাত্রা শুরু করলেও আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি। অথচ সমীক্ষায় দেখা গেছে, ছয়-আট সদস্যবিশিষ্ট একটি পরিবারের প্রতিদিন যে গৃহস্থালি বর্জ্য ফেলে দেয়া হয় তা একটি গরু ও বাছুরের গোবরের সাথে মিশিয়ে বায়োগ্যাস প্লান্টে প্রক্রিয়াজাত করলে যে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ পাওয়া যায়, এর মাধ্যমে এ ধরনের একটি পরিবারের জ্বালানি ও বিদ্যুতের ন্যূনতম চাহিদা মেটানো সম্ভব। এ ধরনের প্লান্ট স্থাপনে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এবং বিভিন্ন এনজিও এগিয়ে এলেও এ বিষয়ে গ্রামের মানুষের আগ্রহ আশাপ্রদ নয়। এমনকি এ জন্য ভর্তুকি দেয়ার কথা বলা হলেও দেখা গেছে, তা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও লাল ফিতার দৌরাত্ম্যে গ্রামের মানুষের মধ্যে তেমন উৎসাহ সৃষ্টি করতে পারেনি।

এ কথা অনস্বীকার্য, যদিও আমরা গরুর গোবরকে সার ও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করি, কিন্তু গৃহস্থালি আবর্জনা স্রেফ বর্জ্য বিধায় এর অর্থনৈতিক মূল্য নিয়ে শহরাঞ্চলের মানুষও খুব একটা চিন্তাভাবনা করে না। বায়োগ্যাস প্লান্টের মাধ্যমে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে গৃহস্থালি বর্জ্য ও গোবর উৎকৃষ্ট উপকরণ। উন্নত দেশগুলোতে এ বর্জ্যরে মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন-পরবর্তী যা অবশিষ্ট থাকে তা কৃষিজমিতে জৈবসার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আমাদের দেশে শহর ও গ্রামাঞ্চলে যে গৃহস্থালি বর্জ্য ফেলে দেয়া হয় তা দিয়ে বায়োগ্যাস ও অবশিষ্ট যদি আমরা জৈবসার হিসেবে ব্যবহার করি, তাতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার ব্যাপক হ্রাস পাবে। উল্লেখ্য, রাসায়নিক সারের মধ্যে ইউরিয়া এ দেশে উৎপন্ন হলেও তা দিয়ে আমাদের বাৎসরিক চাহিদা মেটে না। বাংলাদেশে টিএসপি সারের একটি কারখানা থাকলেও এর কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এখনো আমাদের দেশে পটাশ সার উৎপাদনের কোনো কারখানা গড়ে ওঠেনি। এ সারটির জন্য আমরা সম্পূর্ণ আমদানি-নির্ভর।

বায়োগ্যাস ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত গৃহস্থালি বর্জ্য কৃষিজমিতে ব্যবহার করা গেলে আমাদের দেশে জৈবসারের ব্যবহার বৃদ্ধি পাবে। অধুনা বিশ্বে জৈবসারের মাধ্যমে যে ফসল উৎপন্ন হয়, এর মূল্য রাসায়নিক সারের মাধ্যমে উৎপন্ন ফসলের দু-তিন গুণ। আর তাই অতি সহজেই অনুমান করা যায়, জৈবসারকে সহজলভ্য করে এর ব্যবহারের বিষয়ে কৃষকদের উৎসাহিত করা গেলে তাদের ভাগ্যের ব্যাপক উন্নয়ন হবে।

প্রায় প্রতিটি গ্রামেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং প্রতিটি গ্রামের সন্নিকটে হাইস্কুল ও কলেজ রয়েছে। নগরায়নের পরিধি প্রতি বছর বিস্তৃত হওয়ার কারণে এবং শহর ও গ্রামভেদে সর্বত্র কলকারখানা স্থাপিত হওয়াসহ আবাসন প্রকল্প গড়ে ওঠায় কৃষিজমি ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে।

স্বাধীনতার অব্যবহিত পর বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল সাড়ে সাত কোটি। তখন দেশে খাদ্য চাহিদা ছিল এক কোটি ২০ থেকে ৪০ লাখ টন। এর বিপরীতে, খাদ্য উৎপাদন হতো এক কোটি টন। সে সময় যে পরিমাণ ভূমি খাদ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত হতো, বর্তমানে এর পরিমাণ প্রায় ২০ ভাগ হ্রাস ঘটলেও খাদ্য উৎপাদন বেড়ে সাড়ে তিন কোটি টনের কাছাকাছি পৌঁছেছে। বাংলাদেশ এখন যেকোনো বছর বন্যা বা খরার মুখাপেক্ষী না হলে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমাদের মূল খাদ্য ধানের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি গম, ভুট্টা এবং বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি উৎপাদনেও ব্যাপক বৃদ্ধি ঘটেছে। মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধিও উল্লেখ করার মতো। চার যুগ আগে দুই বেলা ভাত জুটত না, এমন লোকের সংখ্যা দেশে বিশেষত গ্রামাঞ্চলে প্রচুর ছিল। তখন গ্রামে পর্যাপ্ত খাদ্যের ব্যবস্থা না থাকায় অনেকে শহরমুখী হয়েছিল। সে ধারা অব্যাহত থাকলেও গ্রামাঞ্চলে আগের সে খাদ্যাভাব আর নেই।

বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা কারো মতে ১৬ কোটির কাছাকাছি, আবার কারো মতে ১৬ কোটির অধিক। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র একটি দেশ। দেশটি পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ঘনবসতিপূর্ণ। জনসংখ্যার তুলনায় এ দেশের কৃষিভূমির পরিমাণ খুবই কম; কিন্তু উন্নত বীজ ও সার এবং বিজ্ঞানসম্মত আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের কারণে প্রতিটি কৃষিজ পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশের কৃষকেরা এক বছর যে ফসল উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন, পরবর্তী বছর একই ফসল উৎপাদনে উদ্যোগী হন। এভাবে একজনকে লাভবান হতে দেখে অনেক কৃষক একই ফসল উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এতে দেখা যায়, ফসলের বাড়তি উৎপাদনের কারণে মূল্য পড়ে গিয়ে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। যেকোনো ফসলের উৎপাদন, বিপণন ও চাহিদার বিষয়ে কৃষকের পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকলে তাদের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে ক্ষীণ। এমন অনেক মসলাজাতীয় ফসল রয়েছে, যেগুলোর উৎপাদন আমাদের দেশে কম অথবা এ দেশে একেবারেই উৎপন্ন হয় না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় এলাচ, দারুচিনি, গোলমরিচ, জিরা, জাফরান, জায়ফল, জয়ত্রী, পোস্তদানা প্রভৃতির কথা। এসব মসলাজাতীয় ফসল ভারত ও শ্রীলঙ্কায় প্রচুর উৎপন্ন হয়। বর্তমানে মাটির পরিচর্যার মাধ্যমে পৃথিবীর এক অঞ্চলের ফসল অন্য অঞ্চলে উৎপন্ন হচ্ছে। ওসব ফসল অর্থকরী ফসল বিধায় আমাদের কৃষকেরা এগুলোর গাছ নিজ বাড়ির আঙিনায় লাগালে এর মাধ্যমে তাদের যে আয় হবে, তা সচ্ছল জীবনযাপনের সহায়ক। সুতরাং আমাদের সরকারের উচিত কৃষকদের সে লক্ষ্যে উৎসাহী করে তোলা।

আমাদের দেশে যেসব অঞ্চলে আম, লিচু, কমলা, মাল্টা, বাউকুল, আপেলকুল, আমড়া, বেল, কতবেল, কাজী পেয়ারা, আঙুর প্রভৃতি উৎপন্ন হয়; সেসব অঞ্চলের কৃষকেরা আঙিনা, পুকুর ও রাস্তার ধারে কিংবা কৃষিজমিতে এসব গাছ লাগিয়ে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন। এটা তাদের বাড়তি আয়ের পথ করে দিয়েছে।

আমাদের দেশে এখনো নগর ও গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্য বিদ্যমান। যদিও আমাদের সংবিধানে এ বৈষম্য দূর করার জন্য কৃষি বিপ্লবের বিকাশ, গ্রামাঞ্চল বৈদ্যুতিককরণের ব্যবস্থা, কুটির শিল্প ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ এবং শিক্ষা, যোগাযোগব্যবস্থা ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নের ওপর সমধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে; কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যায় এসব লক্ষ্য বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হলেও সংশ্লিষ্ট কাজের সাথে সরকারি বেতনভুক যেসব ব্যক্তি জড়িত, তাদের কর্মের প্রতি অনীহা, কর্মস্থলে অনুপস্থিতি, দুর্নীতি, অদক্ষতা এবং আন্তরিকতা, একাগ্রতা ও বিশ্বস্ততার অভাব প্রভৃতি কারণে এ-সংক্রান্ত প্রতিটি কার্যক্রমকেই বাধাগ্রস্ত করে চলেছে।

এ কথা সত্য, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ এবং উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সহায়ক উপকরণ যেমন উচ্চ ফলনশীল বীজ ও বিভিন্ন সারের সুষ্ঠু ব্যবহারের কারণে আমাদের দেশে উৎপন্ন হয়, এমন সব সফলের উৎপাদন কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন অনেক ফসল আছে, যেগুলো মওসুমি; কিন্তু বৈজ্ঞানিক পন্থায় চাষের কারণে সেগুলো এখন সারা বছর উৎপাদন করা সম্ভব। তা ছাড়া, অতীতে যে ভূমিতে বার্ষিক একটি ফসল হতো, এখন সেখানে বার্ষিক দু’টি বা ক্ষেত্রবিশেষে তিনটি ফসলের চাষ করা হচ্ছে। আবার একই জমিতে একটি ফসলের ফাঁকে ফাঁকে আরেকটি ফসলের চাষ হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, ধান ও মাছের চাষ একসাথে করা হচ্ছে। এটা ফসল ও মাছ উৎপাদনে বৃদ্ধি ঘটালেও কৃষকপর্যায়ে পাইকারি বিক্রয়মূল্য এবং ভোক্তাপর্যায়ে খুচরা বিক্রয়মূল্যের মধ্যে ব্যাপক ফারাক থাকায় বাড়তি উৎপাদন ও বাড়তি মূল্য কৃষকের ভাগ্যোন্নয়নে বড় ধরনের অবদান রাখতে পারছে না। বর্তমানে আমাদের বেশ কিছু কৃষিপণ্য বিদেশে রফতানি হচ্ছে। এসব পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে অপ্রচলিত পণ্য বিধায় সরকারের পক্ষ থেকে রফতানিকারকদের প্রণোদনা দেয়া হয়। এ প্রণোদনার একটি অংশ কৃষকের পাওয়ার কথা, কিন্তু আজ আমাদের দেশের কৃষক তা থেকেও বঞ্চিত।

গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষি বিপ্লব বিষয়ে সংবিধানের নির্দেশনার আলোকে প্রতিটি সরকারই সে লক্ষ্যে বার্ষিক রাজস্ব ও উন্নয়ন বাজেট প্রণয়নকালে যথাযথ বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে সচেষ্ট থেকেছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, বরাদ্দকৃত অর্থের একটি বিরাট অংশ জনপ্রতিনিধি আর সরকারি ব্যক্তিদের দ্বারা লুণ্ঠিত হওয়ায় তা কৃষকের ভাগ্যোন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখতে পারেনি। এ কারণেই আমাদের গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষি বিপ্লব দীর্ঘ দিন ধরে একটি আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে।

গ্রামাঞ্চলে কৃষির পাশাপাশি কুটির শিল্প স্থাপন ও অন্যান্য শিল্পের বিকাশ সাধন করা গেলে গ্রামের মানুষ জীবিকা ও বাড়তি আয়ের অন্বেষণে শহরমুখী হবে না। এ পথে আমাদের অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক নয়। দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানে গ্রামীণ উন্নয়ন ও কৃষি বিপ্লবকে যে অর্থে ‘রাষ্ট্রীয় মূলনীতি’ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে, আমরা প্রকৃত অর্থেই এর চেতনা দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে এ মৌলনীতির সার্থক বাস্তবায়ন করতে পারলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নসহ কৃষকের জীবনযাত্রার মানে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটবে।
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
E-mail: iktederahmed@yahoo.com


আরো সংবাদ



premium cement