২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মিন্দানাওয়ে নতুন সূর্য

মিন্দানাওয়ে নতুন সূর্য - ছবি : সংগ্রহ

এশিয়ার দ্বীপ দেশ ফিলিপাইন। সাত হাজার ১০৭টি দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত দেশটির আয়তন প্রায় তিন লাখ বর্গ কিলোমিটার। রাজধানী ম্যানিলা। জনসংখ্যা ১০ কোটি ৯৮ লাখ। জনসংখ্যার প্রায় ৮১ শতাংশ রোমান ক্যাথলিক। মুসলিম জনসংখ্যা মাত্র ১১ শতাংশ হলেও ইসলাম দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। ফিলিপাইনের সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠীর নাম ‘মরো’। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের মিন্দানাও দ্বীপপুঞ্জে এদের বসবাস। ‘মরো’ শব্দটি স্পেনীয়দের উদ্ভাবন। অতীতে স্পেন ও পর্তুগালের মুসলিমদের ‘মুর’ বলা হতো।

পরে মিন্দানাওয়ের মুসলিমরা ‘মরো’ নামে সারা বিশ্বে পরিচিতি লাভ করে। মিন্দানাও ফিলিপাইনের দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপপুঞ্জ। এর আয়তন ৯৭ হাজার ৫০০ বর্গ কিলোমিটার। এর রাজধানীর নাম সুলু। জনসংখ্যা দুই কোটি ৫৫ লাখ ৩৭ হাজার। এই জনসংখ্যার ৯৮ শতাংশই মুসলমান।

ফিলিপাইনে ইসলাম ধর্মের ইতিহাস অনেক প্রাচীন। ইসলাম ফিলিপাইনের সবচেয়ে প্রাচীন একেশ্বরবাদী ধর্ম। পারস্য উপসাগর, দক্ষিণ ভারত এবং অন্যান্য মুসলিম সালতানাত থেকে আগত মুসলিম বণিকদের মাধ্যমে ১৪ শ’ শতকে ফিলিপাইনে ইসলাম ধর্মের আগমন ঘটে।
১৩৮০ সালে করিম উল মখদুম নামক আরব বণিক সর্বপ্রথম ফিলিপাইনের সুলু এবং জুলু দ্বীপপুঞ্জে আগমন করেন। সেখানে বাণিজ্যের সাথে সব দ্বীপে ইসলামকে ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে ফিলিপাইনে প্রথম ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৩৯০ সালে মিনাঙ্গকাবাউ রাজবংশের প্রিন্স রাজা ব্যাগুইনদা ও তার অনুসারীরা ইসলাম গ্রহণ করেন এবং দ্বীপপুঞ্জে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। ‘শেখ করিম আল-মাখদুম’ মসজিদটি ফিলিপাইনের প্রথম মসজিদ যা মিন্দানাওয়ের সিমুনুল প্রদেশে ১৪ শ’ শতকে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে মালেশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ায় আগমনকারী আরব ধর্ম প্রচারকদের মাধ্যমে ফিলিপাইনে ইসলাম আরো শক্তিশালী হয়।
১৬ শ’ শতকে স্পেনীয়দের আগমনের পর এই অঞ্চলে খ্রিষ্টান ধর্মের প্রাধান্য শুরু হয়। খ্রিষ্টান মিশনারিদের ক্রমাগত প্রচারের ফলে দ্রুতই এ অঞ্চলে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়েতে থাকে। ফিলিপাইন যখন স্বাধীনতা লাভ করে, ততদিনে দেশটির প্রধান ধর্ম খ্রিষ্টান।

দেশটির স্বাধীনতার পরপরই মুসলিমরা সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে। মুসলিম অধ্যুষিত মরো এলাকায় দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে মুসলিম স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র লড়াই চালিয়ে আসছিল এ অঞ্চলের মুসলিমরা। মুসলিম স্বাধীনতাকামী সংগঠন মরো ইসলামিক লিবারেশন ফ্রন্ট ও সরকারের দীর্ঘ দিনের আলোচনার পর ২০১৪ সালে অঞ্চলটির স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে সমঝোতা হয়। গত বছর ফিলিপাইনের কংগ্রেস এ বিষয়ে অনুমোদন দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি মরো মুসলমানদের আইনগত ও ভৌগোলিক স্বায়ত্তশাসন দিয়ে আইন পাস করেছেন ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে। ইতোমধ্যে ‘বাংসোমোরো অর্গানিক আইন’ অনুমোদনের যাবতীয় কাজও সম্পন্ন করা হয়েছে।

ফিলিপাইনের দক্ষিণের মুসলমান অধ্যুষিত মিন্দানাওয়ে নতুন একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের পক্ষে ২১ জানুয়ারি গণভোটের আয়োজন করা হয়। স্বায়ত্তশাসন প্রশ্নে এই গণভোটে প্রায় ৮৫ শতাংশ ভোটার ‘হ্যাঁ’-এর পক্ষে মত দিয়েছেন। ভোটারদের রায় স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে হওয়ায় আগামী তিন বছরের মধ্যে ক্ষমতা হস্তান্তরপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। স্বায়ত্তশাসন চালু হলে ওই অঞ্চলের নাম হবে ‘বাংসামোরো’।

পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী ২০২২ সাল নাগাদ ‘বাংসামোরো’তে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে, যার মাধ্যমে ওই অঞ্চলের লোকজন নিজস্ব পার্লামেন্ট ও মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত করবে। তখন কেন্দ্র সরকার থেকে বেশ কিছু ক্ষমতা স্থানীয় সরকারের কাছে যাবে। এ ছাড়া ওই অঞ্চলের প্রায় ৫০ লাখ মানুষের জন্য তহবিলের জোগান বাড়াবে এবং সেখানকার প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর স্থানীয় সরকারের অধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে। এর ফলে প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে চলমান সহিংসতার অবসান ঘটতে পারে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। স্বায়ত্তশাসন আইনের অনুমোদনের ফলে নতুন সরকার গড়ে তোলা ও শান্তির পক্ষে অগ্রযাত্রার প্রথম পদক্ষেপ।

চুক্তি অনুসারে, মুসলিম বিদ্রোহীরা স্বাধীন দেশের জন্য সংগ্রামের ইতি টানবে। তাদের অঞ্চলটিতে স্বায়ত্তশাসনের পরিধি আরো বাড়বে। যদিও বিদ্রোহীরা আরো ক্ষমতাসহ ফেডারেল ব্যবস্থা চেয়েছিল। এ ছাড়া তাদের ৩০ থেকে ৪০ হাজার যোদ্ধাকেও অস্ত্র ত্যাগ করতে হবে। আঞ্চলিক পার্লামেন্ট অঞ্চলটির শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করবে। ফিলিপাইনের দক্ষিণাঞ্চলের মিন্দানাও, লানাও দেল সুর, বাসিলান দ্বীপপুঞ্জ, কোটাবাটো ও ইসাবেলার শহর তাওটি-তাওটি ও সুলুতে এ গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম পাঁচটি অঞ্চল ‘স্বায়ত্তশাসিত’ মুসলিম মিন্দানাও প্রদেশে অবস্থিত। শেষের শহর দু’টি মিন্দানাওয়ের বাইরে অবস্থিত।

গণভোটে ভোটারদের কাছে জানতে চেয়েছে যে, তারা মিন্দানাওকে সম্প্রসারিত মুসলিম বাংসামোরো স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সাথে একীভূত হতে চায় কি না? গণভোটের ফলে মিন্দানাও মুসলিম স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলকে সম্প্রসারিত বাংসামারো মুসলিম অঞ্চলের সাথে একীভূত করে নতুন আইন পাস করবে দেশটির সরকার।

দক্ষিণ কোরিয়ার সমান আয়তন বিশিষ্ট মিন্দানাও ফিলিপাইনের সবচেয়ে অনুন্নত এলাকা। কিন্তু সেখানে নিকেলের খনি পাওয়া গেছে এবং বড় বড় ফলের বাগান রয়েছে। এ ছাড়া সরকার সেখানে পাম অয়েলের ফার্ম করতে চাইছে। যুগের পর যুগ ধরে চলা যুদ্ধ, আইন শূন্যতা ও সঙ্ঘাতের কারণে বিনিয়োগকারীরা সেখানে যেতে আগ্রহী ছিল না।

উল্লিখিত বিল পাস হওয়ায় স্থানীয় শাসকেরা, আইন ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা পাবে। তবে প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, বৈদেশিক নীতি ও অর্থ সংক্রান্ত নীতি কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে।

মিন্দানাওয়ের স্বায়ত্তশাসন আইন নিঃসন্দেহে ফিলিপাইন সরকার ও মিন্দানাওয়ের জনগণের জন্য সুফল বয়ে আনবে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মিন্দানাওয়ে ফিরে আসবে শান্তি। ৫০ বছর ধরে এই এলাকার মানুষের জীবনে যে দুর্বিষহ অনাচার ও রক্তপাতের দুঃসহ যন্ত্রণা চলছিল তার অবসান হবে। ফলে মিন্দানাওয়ের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে ফিরে আসবে প্রাণচাঞ্চল্য।


আরো সংবাদ



premium cement
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি : মিশা সভাপতি, ডিপজল সম্পাদক ফিলিপাইনে ব্রহ্মস পাঠাল ভারত, ৩৭৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি চীনের মোকাবেলায় নতুন ডিভিশন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে! আবারো চেন্নাইয়ের হার, ম্লান মোস্তাফিজ 'কেএনএফ' সন্ত্রাস : সার্বভৌম নিরাপত্তা সতর্কতা অর্থনীতিতে চুরি : ব্যাংকে ডাকাতি পাকিস্তানে আফগান তালেবান আলেম নিহত যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য না করলে এ বছরই রাশিয়ার কাছে হারতে পারে ইউক্রেন : সিআইএ প্রধান রাশিয়ার সামরিক শিল্পক্ষেত্রে প্রধান যোগানদার চীন : ব্লিংকন ইরাকে সামরিক ঘাঁটিতে 'বিকট বিস্ফোরণ' শেখ হাসিনা সব প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সকল