১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বার্বি ডলের আদ্যোপান্ত

বার্বি ডল - ছবি : সংগ্রহ

১৯৫৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাটটেল ইন্স (Mattel Inc) নামে একটি কোম্পানি বার্বি ডল বাজারজাত শুরু করে। এর উদ্ভাবক রুথ হ্যান্ডলার নামে এক নারী। তিনি মেয়ে ‘বারবারা’র নামে ওই পুতুলের নামকরণ করেন বার্বি! বার্বি ডল লম্বা-পাতলা, ফর্সা ও বাচ্চা চেহেরার এক জড় মানবী! মোটা স্থূল বার্বিও বাজারে আছে। উচ্চতা আর আকৃতিতে এসব ডল যদি বাস্তবে মেয়ে হতো; তাদের ওজন কত হতো-এর উত্তর : ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি লম্বা এসব ডলের ওজন হবে ৩৫ কেজি!

একজন তরুণীর যে বয়সে সবচেয়ে পুষ্টিকর খাবার দরকার ওই বয়সে সে শুরু করে ‘ডায়েট কন্ট্রোল’। উদ্দেশ্য লিকলিকে লম্বা, ফর্সা, পাতলা ঠোঁট ও বাচ্চা চেহারার বার্বি ডল হওয়া। আসলেই কি কোনো তরুণী বার্বির মতো হতে পারে? শিল্পী নিকোলাই ল্যাম প্রমাণ করেছেন, বার্বির মতো হওয়া অসম্ভব। বার্বির সাথে তুলনা করতে নিকোলাই বেছে নেন ১৯ বছর বয়সী তরুণীর দেহাবয়ব। দুই মাসের গবেষণা শেষে এ শিল্পী দেখান, বার্বি যদি সত্যি হতো, তাহলে তার উচ্চতা এত লম্বা হতো না। এ ছাড়া বার্বির যা ওজন হতো, তাতে চিকিৎসকেরা অপুষ্টিজনিত রোগীর ব্যবস্থাপত্র ধরিয়ে দিতেন। বার্বির মাথার আকারও বেশ বড়, যা স্বাভাবিক একজন মানুষের হলে হাঁটা-চলায় ভারসাম্য রক্ষা হতো না। দুই পা এগোলেই উল্টে পড়তে হতো ধপাস করে! নিকোলাই বলেন, ‘আমি দেখাতে চাই, তরুণীরা এমনিতেই অনেক সুন্দর। বার্বি অবাস্তব।’ (প্রথম আলো, ১৭ জুন ২০১৩)।

শুরুতে বার্বি ডলের দাম ছিল তিন ডলার। এখন দাম গেছে বহুগুণে বেড়ে। বাংলাদেশী মুদ্রায় হাজার টাকা থেকে শুরু! তথ্যমতে, উন্নত ও মধ্য আয়ের দেশে ৩-১০ বছর বয়সী ৯০ শতাংশ মেয়েদের অন্তত একটি বার্বি ডল আছে। শুরুতে এ পুতুল তৈরি হতো শ্বেতাঙ্গদের গায়ের রঙে। এখন পর্যন্ত ৪০ ক্যাটাগরিতে এ পুতুল তৈরি করা হয়েছে। এতেই বোঝা যায় এর বাজার কত বিশাল। পুঁজির মালিকদের দরকার লাভ, তা যেকোনো বাণিজ্যই হোক না কেন। এখানে নীতি-নৈতিকতার বালাই নেই। পুঁজির স্ফীতিই তাদের আরাধনা। ধূমপানে ক্যানসারের সমূহ আশঙ্কার পরও এ পণ্যের উৎপাদন, বিপণন ও বাজারজাতকরণ থেমে নেই। কারণ, পুঁজি মালিকদের লোভের লালসা।
কিছু দিন আগে এ বার্বি ডলকে হিজাব পরিয়ে অনলাইনে কী কাণ্ডই না ঘটল। কে না কে শখের পুতুলকে ওড়না পরিয়ে সামাজিকমাধ্যমে আপলোড করলেন, তা হয়ে যায় ‘হিজার্বি’!

শিশুর আদলে তৈরি হয় বার্বি। শারীরিক গঠনও একই রকম। এর পেছনের মনস্তাত্ত্বিক কারণ খেয়াল করলে বোঝা যায়, অধিকাংশ বার্বির মুখে এক ধরনের উৎকণ্ঠা, ভয় আর আবেগীয় অনুভূতির ছাপ স্পষ্ট। এসব বার্বি হাসে না। অথচ শিশুদের মুখে ভয় থাকার কথা নয়। শিশুরা হাসবে এটাই স্বাভাবিক। সূক্ষ্মভাবে মনোবল ভেঙে দেয়া হচ্ছে বিনোদনের নামে তা সহজেই অনুমেয়। এ ভাবুক, লাজুক আর অস্পষ্ট উৎকণ্ঠার বার্বি ডল এখন শিশুকে যৌন নির্যাতনের মনস্তাত্ত্বিক কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক ধরনের মানুষ আছে; যারা অপ্রাপ্ত বয়স্ক বিশেষ করে ১১-১৪ বছরের শিশু-কিশোরের সাথে জৈবিক চাহিদায় অভ্যস্ত। যাদের পেডোফিলিয়া (Pedophilia) নামে অভিহিত করা হয়।

তাদের বিকৃত মানসিকতাকে পুঁজি করে বার্বি ডলের দৈহিক গঠন দেয়া হয়েছে- যৌন আবেদনময়ী। সাথে শিশুর প্রতিচ্ছবি! অধিকাংশ বার্বি অর্ধনগ্ন কাপড়ে থাকে। চুল সোনালি। এর মাধ্যমে এ বার্তায় একজন মেয়ে শিশুকে দেয়া হয়, যৌন আবেদনময়ী আর নিখুঁত দেহাবয়বই নারীর আদর্শ মাপকাঠি। বার্বি জানান দেয়, বার্বির মতো যৌন আবেদনময়ী হতে। অথচ নারী কখনোই যৌন সর্বস্ব নন। তার একটি মূল্যবোধ আছে। একজন নারী যখন সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় ও সামাজিক ঐতিহ্য থেকে বিপথগামী হয়ে যান, তখন একটি প্রজন্মও ভ্রষ্ট হয়ে পড়ে। একজন পুরুষের নিখুঁত চরিত্র আর মানসিকতা হয়তো সভ্যতাকে সৃজনশীল করে। কিন্তু নারীর উন্নত মনন-চরিত্র সভ্যতার পতন রোধে ভূমিকা রাখে।

সামাজিক মূল্যবোধ ধ্বংসে বার্বি ডল সম্পর্কে রাহিমা নামে এক ইরানি নারী বলেন : I think every Barbie doll is more harmful than an American missile. (BBC, March-2002)

বার্বি যেমন নৈতিকতা ধ্বংস করছে; তেমনি আমাদের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তাও হরণ করতে পারে। বিভিন্ন ব্যক্তি বা সংস্থা বার্বির দেহ অভ্যন্তরে সিসি ক্যামরা, সাউন্ড রেকর্ডার স্থাপনের মাধ্যমে যে কারো প্রতিষ্ঠানের তথ্যচিত্র, অবস্থান, গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে পারে।
saidulkarim13@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement