২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বদলে যাচ্ছে মধ্য এশিয়ার চালচিত্র

বদলে যাচ্ছে মধ্য এশিয়ার চালচিত্র - ছবি : সংগৃহীত

এশিয়ার স্থলবেষ্টিত খনিজ সম্পদসমৃদ্ধ মধ্য এশিয়ার পাঁচটি রাষ্ট্র হলো কাজাখস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, কিরঘিজস্তান ও তুর্কমেনিস্তান। এদের একত্রে সেন্ট্রাল এশিয়া রিপাবলিকস (সিআরএস) নামে ডাকা হয়। মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সাথে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সম্পর্ক শতাব্দী প্রাচীন। উভয় অঞ্চলের সাথেই পরস্পরের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। ধর্মীয়, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও জাতিগত বন্ধনের সাথে দুই অঞ্চলের রয়েছে শক্তিশালী বাণিজ্যিক সম্পর্ক। সিল্ক রুটের উত্থানের সাথে এই দুই অঞ্চলের বিশেষ বাণিজ্যিক সম্পর্ক বহু প্রাচীন।

সিল্ক রুট দুই অঞ্চলের মধ্যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বৃদ্ধি করেছিল। বাণিজ্যিক কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যবসায়ীরা মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন অংশে তাদের বাণিজ্যিক কেন্দ্র স্থাপন করেছিল। এ ছাড়া, উভয় অঞ্চলের জনগণ দ্বিপক্ষীয় ব্যবসায় পরিচালনায় সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল। এই দুই অঞ্চলের ব্যবসায়িক সংযোগের কেন্দ্রবিন্দু ছিল আফগানিস্তান। সেই সময়ে পাকিস্তানের পেশোয়ার মূল বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল। পেশোয়ারের হিন্দেকা ভাষার মাধ্যমে মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্যিক চুক্তিগুলো সম্পন্ন করা হতো। সমরকন্দ থেকে লাহোর হয়ে মুলতান পর্যন্ত প্রসিদ্ধ বাণিজ্যিক রুট ছিল।

আর একটু পেছনে গেলে দেখা যায়- আব্বাসীয় আমলে মধ্য এশিয়া ইসলামি সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। এর পর থেকে কয়েক শতাব্দী ধরে মধ্য এশিয়া ইসলামি সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৮৬০-৭০ সালের মধ্যে রাশিয়ার প্রাচীন জার সাম্রাজ্যের অংশ হয়ে যায় মধ্য এশিয়া। পরবর্তীতে রাশিয়ায় সমাজতন্ত্র কায়েম হওয়ার পর থেকেই এ অঞ্চলের সাথে দক্ষিণ এশিয়ার যোগাযোগ ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকে।
রাশিয়া থেকে মধ্য এশিয়ার দেশগুলো আলাদা হওয়ার পর থেকে এ চিত্র পাল্টাতে থাকে।
আফগানিস্তানের তালেবান যুগের সময় থেকেই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো বিশেষ করে পাকিস্তান এই অঞ্চলের সাথে বিশেষ সম্পর্ক স্থাপনে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে শুরু করে। নতুন করে মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সাথে এ অঞ্চলের দেশগুলোর সম্পর্ক সৃষ্টির পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ হলো- মধ্য এশিয়াকে খনিজশক্তির গুদাম বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। আবার এ অঞ্চল ভৌগোলিকভাবে স্থলবেষ্টিত। তবে খনিজশক্তির কারণেই নতুন করে মধ্য এশিয়ার দিকে ঝুঁকছে দেশগুলো।

তেল ও গ্যাসের মজুদের দিকে থেকে এ অঞ্চলকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম হিসেবে অনুমান করা হয়। প্রচুর পরিমাণে খনিজ সম্পদ এবং সমৃদ্ধ কৃষি ব্যবস্থাপনা এই অঞ্চলকে বিশ্বের সবচেয়ে গতিশীল অঞ্চলগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচিত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।

মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর এত রিসোর্স থাকার পরেও শুধু স্থলবেষ্টিত হওয়ার কারণে দেশগুলো পিছিয়ে আছে। এখন মধ্য এশিয়ার দেশগুলো পাকিস্তানের গোয়াদর ও করাচি সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চাইছে। অন্য দিকে, পাকিস্তানেও খনিজ সম্পদের ঘাটতি রয়েছে। এ দিক থেকে সৌভাগ্যবশত পাকিস্তান কৌশলগত দিক থেকে বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। এ ধরনের জটিল পরিস্থিতির ফলে অঞ্চলগুলো একে অন্যের পরিপূরক হতে পারে।

তবে পাকিস্তানের গোয়াদর ও করাচি বন্দর ব্যবহার করে তেল ও গ্যাস সম্পদ রফতানির ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সাথে পাকিস্তানের সরাসরি কোনো সীমান্ত যোগাযোগ নেই। মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সাথে এই ভৌগোলিক অসুবিধা আফগানিস্তানকে আলোচনায় নিয়ে এসেছে। কারণ দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির সাথে তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান এবং তাজিকিস্তানের সাথে সীমান্ত রয়েছে। পাকিস্তান ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের জন্য আফগানিস্তানের ওপর দিয়ে রাস্তা ও রেলপথ ব্যবস্থাসহ গ্যাস, তেলের পাইপলাইন এবং বিদ্যুৎ ট্রান্সমিশন লাইন তৈরি করতে হবে।

এ ছাড়া, দীর্ঘকাল ধরে আফগানিস্তান অস্থিতিশীল থাকায় দেশটির অবস্থা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত টেকসই সম্পর্ক স্থাপন মোটামুটি অসম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। পাকিস্তান চীনের সহযোগিতায় গোয়াদর গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ শুরু করার পর থেকেই এই দেশটির বেলুচিস্তান প্রদেশের গুরুত্ব বহুগুণে বেড়ে গেছে। বিশেষ করে আরব ও মধ্য এশীয় দেশগুলো এই সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে নিজেদের পণ্য আনানেয়ার কাজটি করতে চাইছে।

মধ্য এশিয়ার মুসলিম দেশগুলো ধীরে ধীরে নিজের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে। তারা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মাধ্যমেই সমগ্র বিশ্বের সাথে সমুদ্র পথে যোগাযোগ স্থাপনে আগ্রহী হয়ে উঠছে। পাকিস্তানের বন্দর ব্যবহার করে এক দিকে যেমন চীন নিজের দেশে পণ্য পরিবহন করবে, আবার মধ্য এশিয়ার দেশগুলো এই সুযোগটা গ্রহণ করতে ইচ্ছুক হওয়ায় দক্ষিণ এশিয়া বিশেষ করে পাকিস্তান এ অঞ্চলগুলোর কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে যাচ্ছে।
farhanjnu12@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement