২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রাজনীতিতে আছে সুদিন, আছে দুর্দিন

-

শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছেন। দেশের প্রতিটি নির্বাচনই হয় কোনো-না-কোনো দিক থেকে ব্যতিক্রমী। এবারের নির্বাচনটি ওই দিক থেকে অধিকতর ব্যতিক্রমধর্মী। নির্বাচনটি ছিল অংশগ্রহণমূলক। কিন্তু মুক্ত ও অবাধ ছিল না। এবারো সংসদে কার্যকরী বিরোধী দল থাকছে না।

সংসদীয় গণতন্ত্রে সরকারি দলের সাথে একটা শক্তিশালী বিরোধী দল থাকে, তা এবারো দেশবাসী পাচ্ছেন না। গণতান্ত্রিক শাসন পদ্ধতিতে শক্তিশালী বিরোধী দল অপরিহার্য। বিরোধী দল ছাড়া গণতন্ত্রের কার্যকারিতা ব্যাহত হয়। সরকার উন্নয়ন কর্মসূচি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, কিন্তু গণতন্ত্র না। একটি দলের টিকে থাকার মানদণ্ড জনভিত্তি। যেনতেনভাবে নির্বাচন বা ক্ষমতায় থাকা বড় কথা নয়। এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি একাদশ সংসদেও বিরোধী দল । হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বিরোধীদলীয় নেতা। আর তার সহোদর জি এম কাদের বিরোধীদলীয় উপনেতা হয়েছেন।

দেশে বিচিত্র রাজনীতির কুটিল ও সুবিধাবাদী দলের মহাসমারোহ আমরা নির্বাচনের আগেই দেখেছি। সাবেক স্বৈরাচার হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ দাবি করতে পারেন- তার আমলে এখনকার চেয়ে কম গণতন্ত্র ছিল না! এ কথাও ঠিক, বর্তমান সংসদ থেকে ‘মাইনাস’ বিএনপির করুণ পরিণতিই জাতীয় পার্টির জন্য পোয়াবারো হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সাথে আসন ভাগাভাগি করে জাতীয় পার্টি বিরোধী দলে! অনেকে একে ‘সরকারি বিরোধী দল’ বলছেন।

বিশেষ পরিস্থিতি ও বিয়োগান্ত ইতিহাস ধারণ করে, নেতৃত্বের সঙ্কট ও দেশের রাজনীতিতে কয়েক দশক ধরে চলা আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি এ দুই দলের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে দেশে নির্মিত হয়েছে বিভেদের এক অলঙ্ঘনীয় প্রাচীর। যার দৃষ্টান্ত, নির্বাচনোত্তর নোয়াখালীর সুবর্ণচরে চার সন্তানের জননীকে ধানের শীষে ভোট দেয়ার কারণে গণধর্ষণ করার মতো হৃদয়বিদারক ঘটনা। স্বামী-সন্তানকে ঘরে বেঁধে রেখে ওই গৃহবধূকে বাইরে নিয়ে ১০-১২ জন দুর্বৃত্ত গণধর্ষণ করে। ঘটনাটি অবলীলায় লেখা যায়; কিন্তু এর ভয়াবহতা অকল্পনীয়, এটি কত বর্বরোচিত ও ভয়ঙ্কর? যা দেশের সাধারণ মানুষকে ক্ষুব্ধ করেছে।

অনেকে বলে থাকেন, দেশের রাজনীতিতে বিএনপি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে। এমন হওয়ার আশঙ্কা খুব একটা আছে কী? কারণ, ক্ষমতাসীনদের অনেক কর্মকাণ্ডে বিএনপি লাইফ সাপোর্ট থেকে ফের প্রবল রাজনৈতিক শক্তি হবে না, সে কথা বলার সময় এখনো আসেনি।

ক্ষমতা অর্জন এবং তাতে টিকে থাকা অবশ্যই একটি নিরন্তর লড়াই, তবে মনে রাখতে হবে- তা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ নয়। কৌশলের যুদ্ধ, কূটকৌশলের নয়। যেনতেনভাবে ক্ষমতায় থেকে চাটুকারদের বাহবা পেলেও মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যায় না। দেশব্যাপী আওয়ামী লীগ যে উন্নয়ন করেছে, বর্তমানে যে ধারা চলমান, এসব জনবান্ধব কর্মকাণ্ডকে সামনে তুলে ধরে, রাজনৈতিক কলাকৌশল অবলম্বন করে, গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মেনে, জনগণের ভোটাধিকার এবং বাক-স্বাধীনতা ঠিক রেখে যদি বিএনপিকে কোণঠাসা করা যেতÑ তাহলে তা হতো ক্ষমতাসীনদের সক্ষমতার প্রমাণ।
রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু না থাকলেও দুর্দিন বলে যে কিছু আছে, তা সব দলকেই মনে রাখতে হবে।

আওয়ামী লীগ সরকার যদি এখন কাজ করতে চায়, তাহলে অনেক কাজ করতে পারে। তাদের ইশতেহারে অনেক ভালো লক্ষ্যের কথা বলা আছে। এখন সেগুলো বাস্তবায়নের দিকে নজর দিতে পারে। যদি সেটা তারা করে, তো খুবই ভালো কথা। ক্ষমতাসীনরা যেন নির্বাচনী ইশতেহারটা ভুলে না যায়। ইশতেহারে আছে, ‘গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও চেতনাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরা হবে এবং সংবিধান হবে রাষ্ট্র পরিচালনার সর্বোচ্চ দলিল। আইনের শাসনের মূল বক্তব্যই হচ্ছে- আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান; কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংরক্ষণ ও মর্যাদা সমুন্নত রাখা হবে। সর্বজনীন মানবাধিকার সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের যেকোনো প্রচেষ্টা প্রতিহত করার ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা হবে, ইত্যাদি।

একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আকাক্সক্ষা থেকেই নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি তোলা হয়েছিল একসময়। ওই দাবি নিয়ে আন্দোলনে সামনের কাতারে ছিল আওয়ামী লীগ। আবার আওয়ামী লীগের হাত দিয়েই বাতিল হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা। প্রশাসনের ওপর ভর করে দমন-নিপীড়ন মামলা-হামলা দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক দেশ কখনোই সঠিক পথে এগোতে পারে না, তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ উত্তর কোরিয়া, সিরিয়া, ইরাক ও লিবিয়া।

পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। দলটির নেতৃত্বের রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, সাহস, বুদ্ধিমত্তা ও কৌশল- এসব কিছু কাজে লাগিয়ে ধীরে ধীরে আওয়ামী লীগ আজকের এ অবস্থানে এসেছে। একটা ব্যাপার আমাদের সবারই মনে রাখা উচিত- স্বাধীনতা আমরা এমনিতেই পাইনি, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে তা অর্জিত হয়েছে।

রাজনীতি প্রজ্ঞা ও বুদ্ধির খেলা। রাজনীতির মাঠে বিএনপিও একটি শক্তিশালী দল ছিল। ক্ষমতায় থাকাকালীন যতদূর না দেশবাসীর সেবা করেছে, তার চেয়ে নিজেদের শক্তি অপচয় করেছে বিরোধী দলকে ঘায়েল করতে। তখন হয়তো বিএনপির নেতৃত্ব ভাবতেও পারেননি বর্তমানের মতো সময় তাদের জন্য অপেক্ষা করছে। বাস্তবতা হলো, বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে এখন খাদের কিনারে।
abunoman1972@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ১২ উপজেলায় মানববন্ধন রোববারই খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শনিবার ক্লাসসহ ৪ নির্দেশনা ময়মনসিংহ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের ঈদ পুনর্মিলনী বাস্তবায়নের আহ্বান ৩ গণকবরে ৩৯২ লাশ, ২০ ফিলিস্তিনিকে জীবন্ত কবর দিয়েছে ইসরাইল! মৌলভীবাজারে বিএনপি ও যুবদল নেতাসহ ১৪ জন কারাগারে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট কারীদের চিহ্নিতকরণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি ১২ দলীয় জোটের কলিং ভিসায় প্রতারণার শিকার হয়ে দেশে ফেরার সময় মারা গেল মালয়েশিয়া প্রবাসী নারায়ণগঞ্জ যুবদলের সদস্য সচিবকে আটকের অভিযোগ হাতিয়া-সন্দ্বীপ চ্যানেলে কার্গো জাহাজডুবি : একজন নিখোঁজ, ১১ জন উদ্ধার হঠাৎ অবসরের ঘোষণা পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়কের বগুড়ায় গ্যাসের চুলার আগুনে বৃদ্ধা নিহত

সকল