২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রাজনীতির কানাগলির ফাঁদে

-

‘ড. কামাল হোসেন’ কেবল একটি নাম নন, একটি প্রতিষ্ঠান; এটা বলা অত্যুক্তি হবে না। তাকে নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে নানা ধরনের কথা বলা হচ্ছে। মনে হয় তিনিই বর্তমানে দেশের সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত ব্যক্তি। যত দিন থেকে তাকে দেখছি, তিনি বর্ণাঢ্য এবং গর্বিত জীবনযাপন করে আসছেন। তিনি যেন হঠাৎ অবসর জীবন থেকে জেগে উঠলেন জাতির ক্রান্তিকালে একজন কাণ্ডারি হিসেবে।

রাজনীতিতে পক্ষ-বিপক্ষ থাকাই স্বাভাবিক, কিন্তু যখন একটি মহীরুহকে কেউ তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে চায় তখন সেটা কোনো মতে সম্ভব বা শোভনীয় তো মনেই হয় না, গণতন্ত্রের জন্যও গ্রহণীয় নয়। এটা এ জাতির দুর্ভাগ্য বলতে হবে। পাকিস্তান আমল থেকে তাকে দেখে আসছি, তিনি আপাদমস্তক একজন গণতন্ত্রী, চলনে বলনে নিপাট ভদ্রলোক এবং সৎ। জাতীয় থেকে আন্তর্জাতিক অঙ্গন সর্বত্রই তার সফল পদচারণা আছে- আইন, রাজনীতি, কূটনীতি তো বটেই, বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নেও তার ভূমিকা অনেক। অপ্রয়োজনীয় কিংবা কাউকে আহত করে কথা বলা বা অশালীনতা কেউ দেখেছেন বলে আমার জানা নেই। তার রাজনীতির গুরু গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। তিনি সার্বক্ষণিক ছায়ার মতো থাকতেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সাথে। আজো তিনি তার নেতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি, আজো লালন করে চলেছেন সেই আদর্শ।

সেই ড. কামাল কিভাবে এবং কী কারণে বিপরীত মেরুর রাজনীতির ধারা বহনকারী বিএনপির সাথে গাঁটছড়া বাঁধলেন এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে এর নেতৃত্ব গ্রহণ করলেন?

একবার মনে হয়েছে, গণতন্ত্রহীনতায় বীতশ্রদ্ধ হয়ে দেশকে ‘ব্ল্যাকহোল’ থেকে বের করার জন্য তিনি এই ভূমিকা রেখেছেন। তাই যদি হয়, এটা বিএনপির সাথে কেন? তার ‘জীবনকুষ্ঠি’ দেখলে এটা মেলে না। কারণ ২০ দলীয় জোট তো কেবল বিএনপি নয়, সেখানে আছে ইসলামী রাজনৈতিক সংগঠন বিশেষত (নিবন্ধন বাতিল হওয়া) জামায়াতে ইসলামী। একবার মনে হলো ইরানের ইসলামী বিপ্লবের সূচনালগ্নে বাম রাজনীতিকেরা এবং বনি সদরের মতো ‘প্রগতিশীল’ নেতারাও রেজাশাহ পাহলবিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে আয়াতুল্লাহদের সাথে একত্রে আন্দোলন করেছিলেন। আরো বড় চমক দেখি যখন ড. কামাল বলেছেন, ‘অন্যায়ভাবে খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা হয়েছে, অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করছি।’ আমি কোনো আইনবিশারদ নই। আদালতের মারপ্যাঁচও বুঝি না। এটা জানি, আদালতের সিদ্ধান্ত (ন্যায়-অন্যায় বিবেচনা ব্যতিরেকে) মানতে হবেই, উপায় নেই। মনকে আবার বুঝাতে থাকি ড. কামাল অবশ্যই এসব ভালো বোঝেন; তাই বলছেন, এটা রাজনৈতিক দাবি হতেই পারে।

তিনি নিশ্চিত কি না যে, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দেড়-দুই কোটি টাকা খালেদা জিয়া আত্মসাৎ করেননি। হঠাৎ বন্ধু ফরহাদ হোসেন আমাকে সাহায্য করলেন ০৯-১২-১৭-এ প্রকাশিত ‘যায়যায়দিন’-এ প্রকাশিত শফিক রেহমানের লেখা (তাং-০৬-১২-৯৭) ‘দিনের পর দিন’ স্তম্ভটি পড়তে দিয়ে। তাতে জানা যায় আন্তর্জাতিক গ্যাস কোম্পানি সিমিটার সিলেটের একটি গ্যাসক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি করে নিজেদের পক্ষে মামলা করে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ড. কামাল হোসেনের সাথে কথা বলেন পাল্টা মামলা করার ব্যাপরে। ড. কামাল বিনা পারিশ্রমিকে মামলা পরিচালনা করতে সম্মত হন এবং বাংলাদেশ সরকার সে মামলায় জয়ী হয়। এতে রাষ্ট্র ৫০০ কোটি টাকার লোকসান থেকে বেঁচে যায়। উল্লেখ্য, কোম্পানি প্রধানমন্ত্রী এবং আইনবিদ উভয়কে গোপনে শত শত কোটি টাকা ঘুষ দেয়ার চেষ্টা করেছিল; তখন তাতে কোনো সন্দেহ ছিল না। কিন্তু জাতির বৃহত্তর স্বার্থে উভয়ে একত্রে কাজ করেছিলেন ড. কামাল তা ভুলতে পারেননি। এটা আমাদের জাতির জন্য ছিল একটা অনন্য সম্মান।

এ জন্যই হয়তো ড. কামালের মনে দৃঢ়বিশ্বাস, যে মহিলা শত কোটি টাকা তুচ্ছ মনে করতে পারেন তিনি অবশ্যই দেড়-দুই কোটি টাকার দুর্নীতি করবেন, তা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। জাতিও এটাই মনে করে। কারণ বেগম জিয়া বা শেখ হাসিনা যেকোনো বড় ব্যবসায়ীর কাছ থেকে যদি ৫০-১০০ কোটি টাকা দাবি করেন বা চেয়ে পাঠান, সে ব্যবসায়ী তো ধন্য হয়ে যাবেন। সেখানে বেগম জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে দেড়-দুই কোটি টাকা তহবিল তছরুপ বা আত্মসাৎ করেছেন এটা ড. কামালসহ মানুষ (বর্তমানে জাতির বিবেক) বিশ্বাসই করেন না। যা হোক, অন্য মামলাগুলোর যৌক্তিকতা কেমন?
লেখক : প্রাবন্ধিক, ছোট গল্পকার, নাট্যকার
sikdar.mainuddin@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement