২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নির্বাচনকালীন সরকার পরিচালনায় ব্যর্থতা

-

জনগণ মনে করে, আগামী নির্বাচন ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি এবং অন্তত ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের মতো অনেকটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে হলে ১৯৮৪, ১৯৯৪, ২০০৬ ও ২০১৩ সালের সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছতে ব্যর্থতার অভিজ্ঞতায় রাজনীতিবিদদের ঐকমত্যে পৌঁছার বিকল্প নেই। এখানে সংবিধানের দোহাই দিয়ে ‘বাঙালিকে হাইকোর্ট দেখানো’র সুযোগ ক্ষমতাসীনদের নেই। এরশাদের সরকার ক্ষমতায় থেকে ১৯৮৬ সালের ৭ মে তৃতীয় সংসদ নির্বাচন, ১৯ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি নির্বাচন এবং ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ চতুর্থ সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণ করেছিল, তারা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার পরিচালনায় ব্যর্থ।

ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করার কারণে ১৯৮৬ সালের ৭ মের নির্বাচনে দুই বছর বয়সী জাপার কাছে ৩৮ বছর বয়সী আওয়ামী লীগকে পরাজয় বরণ করতে হয়েছিল। একই বছর সেপ্টেম্বর মাসে জনগণের সরাসরি ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এরশাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বহুলালোচিত কর্নেল ফারুক। তদানীন্তন সংসদের প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ ছিল এ ব্যাপারে নিশ্চুপ। ১০ বছর পরে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ছিল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো। ওই নির্বাচনে ফারুকের ভায়রা কর্নেল রশিদকে এমপি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দানের জন্য বিএনপিকে আজো অভিযুক্ত করা হয়ে থাকে। ১৯৮৪ সালে সংলাপে ব্যর্থতার পরিণামে এরশাদ সরকারের শাসন ১৯৯০ সাল পর্যন্ত প্রলম্বিত হয়। ১৯৯০ সালে জনগণের আন্দোলনে স্বৈরশাসকের পতন হলেও আওয়ামী লীগের সহায়তায় ১৯৯৬ সালে এরশাদ ক্ষমতার ভাগীদার হয়ে অদ্যাবধি বহাল তবিয়তেই আছেন।

এরশাদের পতনের পর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে বর্তমানের মতো ‘ভাঙাচোরা’ বিএনপির কাছে ক্ষমতাপ্রত্যাশী আওয়ামী লীগ ও জাপা উভয় দল ধরাশায়ী হলে সরকারের বাইরে থেকে জামায়াতের দেয়া সমর্থনে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ১৯৯১ সালের ১৯ মার্চ বিএনপি সরকার গঠন করেছিল; কিন্তু ১৯৯৪ সালে মাগুরার উপনির্বাচনে বিএনপি ‘কারচুপি’ করে জয়ী হয়, যা ছিল আওয়ামী লীগ শাসনামলের ১৯৯৯ সালের ১৫ নভেম্বর টাঙ্গাইলের উপনির্বাচনে কারচুপির পূর্বদৃষ্টান্ত। তখন প্রতিবাদে সংসদের বিরোধী দল আওয়ামী লীগ, জাপা, জামায়াত ও ওয়ার্কার্স পার্টি নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৯৯৪ সালের মার্চ থেকে সংসদ বর্জন করে লাগাতার হরতাল পালন শুরু করে। এই রাজনৈতিক বিরোধে সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছতে কমনওয়েলথের মহাসচিবের দূত হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক গভর্নর জেনারেল স্যার নিনিয়ান স্টিফেন ১৯৯৪ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় আসেন। তার মধ্যস্থতায় সরকারি ও বিরোধী দলের সাথে মাসব্যাপী সংলাপ করেও উভয়পক্ষকে সমঝোতায় রাজি করাতে ব্যর্থ হয়ে নিজে উভয় দলের পাঁচজন করে ১০ সদস্যের মন্ত্রিসভা এবং নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের প্রস্তাব দিলে বিরোধী দল তা প্রত্যাখ্যান করে তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আনে। ওই প্রস্তাব যাতে ভবিষ্যতে কার্যকর হতে না পারে, সে জন্য বিরোধী দলগুলোর ১৪৭ জন এমপি সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। ‘অসাংবিধানিক’ দাবিতে তাদের এ গণপদত্যাগপত্র স্পিকার গ্রহণ না করায় তারা হাইকোর্টে রিট করেছিলেন।

এমপিদের পদত্যাগ সংবিধানপ্রদত্ত মৌলিক অধিকারÑ এই যুক্তিতে রায় তাদের অনুকূলে হলে সংসদের মেয়াদপূর্তির ১৫ মাস আগেই যবনিকাপাত ঘটে জনগণের ভোটে নির্বাচিত ১৪৭ জন এমপির পদত্যাগে। সংলাপ ব্যর্থ হওয়ায় ১৯৯৪ থেকে ’৯৬ সালে ১৭৩ দিন হরতাল পালন ছাড়াও ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর বিরোধী দলের সর্বাত্মক আন্দোলন ও রাষ্ট্রপতি আবদুর রহমান বিশ্বাসের সাথে বিরোধ দলের সংলাপের কথা নিশ্চয়ই অনেকের মনে আছে। এই সংলাপ ব্যর্থ হওয়ার ফলাফল হলো সচিব মহীউদ্দীন খান আলমগীরের নেতৃত্বে সরকারি কর্মচারীদের ‘বিদ্রোহ’ তাদের কথিত জনতার মঞ্চে আরোহণের কারণে প্রশাসন অচল হয়ে পড়ায় তৎকালীন বিএনপি সরকার ২৫-৩-১৯৯৬ তারিখে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে ৩০-৩-১৯৯৬ পদত্যাগ করে এবং প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়।

ওই সরকারের অধীনে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৪৬, বিএনপি ১১৬, জাপা ৩২, জামায়াত ২, জাসদ রব ১ ও স্বতন্ত্র সদস্যরা তিনটি আসনে জয়ী হন। আওয়ামী লীগ জাপা ও জাসদ রবের সাথে কোয়ালিশন করে দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতার স্বাদ পেল। বিএনপির ৩০ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও প্রভাবশালী এমপি ১০০ থেকে ১০০০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন। এই নির্বাচনী ফলাফলই বলে দেয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত না হলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হতে পারত না। প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি হাবিবুর রহমান ও ১০ জন অরাজনৈতিক উপদেষ্টা ক্ষমতা গ্রহণের ১২ দিনের মধ্যে সাবেক সচিব মোহাম্মদ আবু হেনাকে প্রধান করে যে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছিলেন, তারা মাত্র ৬০ দিনের মধ্যে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন মোটামুটি যে সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে সক্ষম হয়েছিলেন, তা সম্ভব হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কারণেই। বর্তমান নির্বাচন কমিশন তা ১৮ মাসেও করতে পারবে কি ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের প্রভাবের কারণে?

ত্রয়োদশ সংশোধনী অনুযায়ী ২০০১ সালে অষ্টম সংসদ নির্বাচনের আড়াই মাস আগে ১৫ জুলাই ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের কার্যকালের শেষ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করার লক্ষ্যে বিচারপতি লতিফুর রহমানকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়েছিল, যাতে অবসরে যাওয়ার পর তিনি প্রধান উপদেষ্টা হতে পারেন। ২০০০ সালের এপ্রিলে গোপালগঞ্জ নিবাসী সাবেক সিএসপি মোহাম্মদ আবু সাইদকে প্রধান করে নির্বাচন কমিশনও গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। রাষ্ট্রপতি ছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। ওই সরকারের অধীনে ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হয়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে ‘স্থূল’ কারচুপির জন্য প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে দায়ী করে নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করার জন্য রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ জানায়। তিনি তাতে অসম্মতি জ্ঞাপনের কারণে তাকে ‘বেঈমান’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারকেই কারচুপিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য অভিযুক্ত করার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ কার্যত নিজেদের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি, নিয়োগকৃত প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারকেই অসম্মানিত করছিল।

২০০৭ সালের সংসদ নির্বাচনকালীন প্রস্তাবিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হিসেবে বিচারপতি কে এম হাসানকে এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি এম এ আজিজকে মানতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বিকল্প কাউকে প্রধান উপদেষ্টা এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসব্যাপী বিএনপির মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলের মধ্যে ‘ম্যারাথন সংলাপ’ হয়েছিল। বিএনপি যেকোনো একজনকে পরিবর্তনে রাজি হলেও আওয়ামী লীগের অনমনীয়তার কারণে সংলাপ ব্যর্থ হয়ে যায়। এর ফল হলো, ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠায় ১০ জন বঙ্গসন্তানকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা। রাষ্ট্রপতি প্রফেসর ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের প্রধান উপদেষ্টার পদ গ্রহণ ও প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে তাকে এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে অপসারণের আন্দোলনের ফসল ছিল ১/১১-এর ফখরুদ্দীন-মইন উদ্দিনের অবৈধ সরকারের দুই বছরের কঠোর শাসন।

১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এক দশকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত তিনটি নির্বাচনের দু’টিতেই আওয়ামী লীগ + জাপা জোটের পরাজয় ঘটেছিল। কাকতালীয়ভাবে দু’টি নির্বাচনকালীন রাষ্ট্রপতি ছিলেন বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন নির্বাচনকালীন রাষ্ট্রপতি ছিলেন আবদুর রহমান বিশ্বাস। ১০ বছরের মধ্যে দু’টি নির্বাচনে পরাজয়ের ঘটনায় আওয়ামী লীগের আন্দোলনের ফসল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে তাদের ‘মোহভঙ্গ’ ঘটে। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের জন্য প্রয়োজনীয় ২০০ আসনে জয় নিশ্চিত না থাকায় ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন দুই বছর পেছানোর জন্য আন্দোলন করে ‘১/১১’-এর আবির্ভাব নিশ্চিত করা হয়েছিল। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার বাতিলের জন্য করা রিটের আপিলের রায় পক্ষে গেছে আওয়ামী লীগ দলীয় বিবেচনায় নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারপতিদের মধ্য থেকে চারজনকে ২০০৯-১০ সালে পদোন্নতি দিয়ে সাত সদস্যের আপিল বিভাগে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন নিশ্চিত করা হয়। দু’জন সিনিয়র বিচারপতিকে ডিঙিয়ে প্রধান বিচারপতি পদে নিয়োগ দেয়া হয় ওই চারজনের মধ্য থেকে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে।

তিনি ১০ মাসের কার্যকালে শেষ মাসে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের জন্য রিটের আপিল শুনানি করেছিলেন। সব সিনিয়র আইনজীবী এবং তার নিয়োগকৃত ১০ জন অ্যামিকাস কিউরির ৯ জনের পরামর্শ উপেক্ষা করে গত ১১-৫-২০১১ তারিখে অবসরে যাওয়ার ১৭ মাস পরে এজলাসে প্রদত্ত রায় পরিবর্তন করে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে আরো বিতর্কিত হলেন তিনি। তার রায়ে দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার পদে বিচার বিভাগবহির্ভূত কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে নিয়োগের ভার সংসদের ওপর অর্পণের কথা উল্লেখ করেছিলেন। তবে তা না মেনে ’৯৪ সালে সংসদ থেকে পদত্যাগকারী ও ১৭৩ দিন হরতাল পালনকারীরা ৩০-৬-২০১১ তারিখে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলপূর্বক আওয়ামী লীগের আজীবন সভাপতির নেতৃত্বে গঠিত সরকার এবং এমপিদের স্বপদে বহাল থেকে নির্বাচন করার আইন পাস করেন। অথচ ২০০৭ সালে ‘রাষ্ট্রপতি নিরপেক্ষ নন’ এই অজুহাত খাড়া করে ১/১১-এর অঘটনকারীরা কিভাবে ৪০ জন মন্ত্রী এবং দলের বা জোটের ৩৫০ জন এমপি স্বপদে বহাল থেকে নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করতে পারেন? আর সেই নির্বাচনকালীন সরকারে পাঁচটি মন্ত্রণালয় দেয়ার টেলিফোনিক সংলাপের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করাকেই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে না যাওয়ার ‘ভুল’ হিসেবে দেখানো হলো আইনজীবী ড. শাহদীন মালিকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদের সাথে সাক্ষাৎ করে রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তাকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানিয়েও ব্যর্থ হয়েছিল। মোটকথা, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনের সংলাপের প্রস্তাব মাঠেই মারা যায়।

২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, বিরোধী দলের পক্ষ থেকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন পরিহারপূর্বক সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে ততই জোরালো আহ্বান জানানো হচ্ছে। সরকারি দল ও তাদের সমর্থকদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ১৯৯৬ সালের ৭ মের মতো নির্বাচন, অর্থাৎ নিছক বিরোধী দল পরিবর্তনে কথিত অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। গত ৩৬ বছরে শাসক দলের নির্বাচনকেন্দ্রিক সব সংলাপ ব্যর্থ হওয়ার খেসারত জনগণকেই দিতে হয়েছে। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগ ও এরশাদ পুনরায় ক্ষমতাসীন হয়েছেন। ২০০৬ সালের সংলাপ ব্যর্থ হওয়ার ফলে দেশবাসীকে ফখরুদ্দীন-মইন উদ্দিনের অবৈধ সরকারের দুই বছরের কঠোর শাসনে থাকতে হয়েছিল এবং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোটাধিকার হারাতে হয়। ক্ষমতায় থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে ব্যর্থতার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় পরীক্ষায় বারবার অকৃতকার্য ছেলে পিতার কাছে লেখা পত্রের সেই বিশেষ বাক্যটি মনে পড়ছে। ছেলেটি বেশ কয়েকবার পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর পিতাকে লিখেছে ‘ফাদার ফেইলুর ইজ দ্য পিলার অব সাকসেস।’ পিতা উত্তরে লিখেছিলেন, ‘তোমার সাকসেসের পিলারের সংখ্যা আর না বাড়িয়ে বাড়ি চলে আসো।’ কাজেই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যে দলের এমপিরা ১৯৯৪ সালে সংসদ থেকে পদত্যাগ করে ১৭৩ দিন হরতাল করতে পারেন এবং ২০০৭ সালে সেনাবাহিনীকে ডেকে আনতে পারেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে তাদের পদত্যাগে সংবিধান কোনো বাধা নয়, ক্ষমতাসীনদের সদিচ্ছাই বড় বাধা বলে জনগণ মনে করছে।


আরো সংবাদ



premium cement