১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নির্বাচনে অংশগ্রহণ

-

বাংলাদেশ সংবিধানের বিধান অনুসারে, দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না, যদি সাজা ভোগ শেষ হওয়ার পাঁচ বছর পার না হয়। তবে কোনো আদালত দ্বারা উক্ত সাজা স্থগিত হলে তিনি তখন নির্বাচনে অংশ নেয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। সংবিধান ও ফৌজদারি কার্যবিধির বিধান মতে এখানে হাইকোর্ট, নি¤œ আদালতের যেকোনো সাজার রায় স্থগিত করতে পারে।

সংবিধানের ১০০ ও ১০২ অনুচ্ছেদ মতে, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ অধস্তন আদালতের কোনো রায় বা আদেশের বিরুদ্ধে আপিল গ্রহণ এবং শুনানি শেষে যেকোনো আদেশ দেয়ার এখতিয়ার সম্পন্ন। কোনো কোনো মহল থেকে বলা হচ্ছে, আপিল বিভাগ থেকে রায় বা আদেশ না এলে কোনো সাজা স্থগিত বা বাতিল বলে গণ্য হবে না। কিন্তু এখানে প্রশ্ন থাকে, যদি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার, দুদক বা সংক্ষুব্ধ পক্ষ আপিল বিভাগে না যায়, তবে কি ‘সাবেরা সুলতানার ব্যক্তিরা’ নির্বাচন করতে পারবেন না। সুতরাং আপিল বিভাগ হোক বা হাইকোর্ট বিভাগ হোক যেখান থেকে সর্বশেষ আদেশ দেয়া হবে, সেটা সরকার বা নির্বাচন কমিশন মানতে বাধ্য।

গত ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টে বিচারপতি মো: নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের ডিভিশন বেঞ্চ বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান, প্রফেসর ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া ও মশিউর রহমানের বিষয়ে এক শুনানিতে তাদের সাজা স্থগিত না করায় তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন না। অন্য দিকে গত ২৯ নভেম্বর বিচারপতি মোহাম্মদ রইস উদ্দিনের একক বেঞ্চ এক রায়ে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৬(১) বিধান মতে বিএনপি নেত্রী সাবেরা সুলতানার সাজা স্থগিত করেছে। ফলে তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। একই বিষয়ে দু’টি আদালতে ভিন্ন ভিন্ন রায়। ফলে নির্বাচন কমিশন পড়েছে ঝামেলায়।

অতীতে জেনারেল এরশাদসহ অনেকে এভাবে সাজা পেয়েও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। সে অনুসারে সাজাপ্রাপ্তদের নির্বাচন করার সুযোগ ছিল। তবে আইনের বিধান অনুসারে একই বিষয়ে আদালত দুই ধরনের আদেশ দিলে আবেদনকারী পক্ষ যেটাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটা কার্যকর হবে। তাই সাজাপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নির্বাচনে যোগ্য হবেন। অন্য দিকে সরকার ও দুদক বিচারপতি মোহাম্মদ রইস উদ্দিনের বেঞ্চের আদেশে সংক্ষুব্ধ হয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে গেছে।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার জজ বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী হাইকোর্টের বিচারপতি মোহাম্মদ রইস উদ্দিনের আদেশ ১ ডিসেম্বর স্থগিত করে ২ ডিসেম্বর ফুল বেঞ্চে শুনানি হবে বলে আদেশ দিয়েছেন। কিন্তু যেহেতু মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ ছিল ২৯ নভেম্বর। সুতরাং ২৯ নভেম্বরের পর আপিল বিভাগের রায়ে সাজা স্থগিত হলেও এই নির্বাচনের জন্য তা প্রযোজ্য হওয়ার সুযোগ নেই। কেননা ১ ডিসেম্বরের আদেশটা ২৯ নভেম্বর থেকে কার্যকর হতে পারে না। অর্থাৎ ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত সাবেরা সুলতানা প্রার্থী হিসেবে হাইকোর্টের আদেশে আইনের দৃষ্টিতে যোগ্য বলে বিবেচিত ছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement