২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

থেরেসা মের গলার কাঁটা ব্রেক্সিট

থেরেসা মের গলার কাঁটা ব্রেক্সিট - ছবি : সংগৃহীত

ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে এখন চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। মন্ত্রিসভায় ভাঙন ও পার্লামেন্টে এমপিদের তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও খসড়া ব্রেক্সিট চুক্তির পক্ষে অবিচল ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছেদ তথা ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে বিরোধের জের ধরে মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্যের নাটকীয় পদত্যাগকে তাৎপর্যপূর্ণ ক্ষতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মেকে ক্ষমতাচ্যুত করার ক্ষণ গণনা এখনই শুরু করা ঠিক হবে না। কয়েক সপ্তাহ ধরে তিনি ব্যাপক অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের নাম প্রত্যাহারের (ব্রেক্সিট) সময়সীমা আগামী বছরের মার্চের শেষ পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে ব্রিটেনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে পৌঁছে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। গত ১৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে হাসিমুখে জানান, ব্রেক্সিট চুক্তি সম্পাদনে মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু দেখা গেল পরদিন সব কিছু উল্টে গেল। ১৫ নভেম্বর খোদ ব্রেক্সিটবিষয়কমন্ত্রী ডোমিনিক রাব পদত্যাগ করেন। এর ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পদত্যাগ করেন কর্ম ও পেনশনবিষয়কমন্ত্রী এসথার ম্যাকভি। পদত্যাগ করেছেন আরো তিন প্রতিমন্ত্রী- নর্দান আয়ারল্যান্ডবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী শিলেশভারা, ব্রেক্সিটবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সুলা ব্রাভারম্যান এবং পার্লামেন্টারি প্রাইভেট সেক্রেটারি অ্যানমারি। অর্থাৎ থেরেসা মের মন্ত্রিসভা এখন বিপর্যস্ত।

দীর্ঘ প্রায় দুই বছর দরকষাকষির পর ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়া প্রশ্নে উভয় পক্ষ একটি খসড়া সমঝোতায় পৌঁছে। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর এই চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার কথা। কিন্তু মন্ত্রিসভায় দীর্ঘ বৈঠকের পর কয়েকজন মন্ত্রী চুক্তি নিয়ে আপত্তি তোলেন এবং পরে উল্লিখিত এই পদত্যাগের ঘটনা ঘটে। পদত্যাগী মন্ত্রীরা ব্রেক্সিট চুক্তির এই খসড়াকে ব্রিটেনের স্বার্থবিরোধী এবং জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতির লঙ্ঘন বলে আখ্যায়িত করেন। কিন্তু বিপর্যয়ের মধ্যেও থেরেসা মে চুক্তির পক্ষে অবিচল। তিনি চুক্তির পক্ষে সমর্থন আদায়ে মরিয়া হয়ে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।

ব্রেক্সিট প্রশ্নে খসড়া চুক্তির বিরোধিতা করে পাঁচ মন্ত্রীর পদত্যাগের পরও ১৫ নভেম্বর আরো দুইজন পদত্যাগ করেন। মন্ত্রিসভা থেকে সাতজনের পদত্যাগের পরও থেরেসা মে অনড় রয়েছেন এবং মন্ত্রিসভা পুনর্গঠন করেছেন। মন্ত্রিসভা পুনর্গঠন করা হলেও ব্রেক্সিট প্রশ্নে অস্থিরতা শেষ হয়ে যায়নি।

অবশেষে খসড়া চুক্তিটি ২৫ নভেম্বর ইইউর বিশেষ সম্মেলনে পাস হয়েছে। এখন ব্রিটিশ পার্লামেন্ট এবং ইইউর বাকি ২৭টি সদস্য দেশের পার্লামেন্টে অনুমোদন সাপেক্ষে চুক্তিটি কার্যকর হওয়ার কথা। প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ডিসেম্বরের শুরুতে চুক্তিটি অনুমোদনের জন্য পার্লামেন্টে তুলতে চান। কিন্তু বিরোধী দল লেবার পার্টি, স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি ও সরকারের অংশীদার ডিইউপি এই চুক্তি সমর্থন করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। তা ছাড়া, ক্ষমতাসীন দলের ব্রেক্সিটপন্থী কমপক্ষে ৮০ জন এমপি এই চুক্তির বিপক্ষে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনাস্থা ভোট চাওয়া হলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তাও দেখার বিষয়। বর্তমানে পরিস্থিতি যে পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে তা ব্যতিক্রমধর্মী এবং রাজনৈতিকভাবে কঠিন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সম্প্রতি প্রকাশিত এক ইয়োগোভ সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৪২ শতাংশ ব্রিটিশ নাগরিক খসড়া চুক্তির বিরোধী, মাত্র ১৯ শতাংশ চুক্তির পক্ষে এবং ৩৯ শতাংশ কোন দিকে সমর্থন দেবে- তা এখনো নিশ্চিত নয়। ব্রেক্সিট চুক্তি ইউরোপের সব রাজনীতিকেরা মেনে নিতে পারছেন না। লেবার পার্টি জানিয়েছে, তারা এর বিরুদ্ধে ভোট দেবে। শুধু লেবার পার্টি নয় প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের দলের প্রায় ৮০ জন এমপি ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, তারা এই চুক্তির বিপক্ষে ভোট দেবেন। তারা এই চুক্তিকে যুক্তরাজ্যের স্বার্থবিরোধী বলে মনে করেন। এ ছাড়া, আরো আশঙ্কাজনক বিষয় হলো- যে দলের সমর্থনে বর্তমান সরকার টিকে আছে, সেই ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি (ডিইউপি) এই চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে। এই বিরোধীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ যতক্ষণ তাদের মানসিকতার পরিবর্তন করবে না ততক্ষণ পর্যন্ত এই চুক্তি অনুমোদনের কোনো আশা নেই। পার্লামেন্টে চুক্তি অনুমোদন না পেলে কী ঘটবে?

পর্যবেক্ষকদের অভিমত, পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট চুক্তি অনুমোদন না পেলে ব্রিটিশ জনগণকেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে। এ জন্য ইতোমধ্যে দ্বিতীয় গণভোটেরও জোর দাবি উঠেছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এটা চান না। তাহলে কি ব্রিটেনে আবার সাধারণ নির্বাচন হবে? পরিস্থিতি কোন দিকে পৌঁছে, তা এখনো সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। তবে যা-ই হোক, যুক্তরাজ্যকে আগামী বছরের মার্চের আগেই একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ঢাবির কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটে প্রথম হয়েছেন যারা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের নিজ দেশে ৫ বছর পর ফিরল দিপক চট্টগ্রামে ৬ কিশোর গ্যাংয়ের ৩৩ সদস্য আটক শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগঠন মজবুত করতে হবে : শামসুল ইসলাম ইউরো ২০২৪’কে সামনে রেখে দল নির্বাচনে বিপাকে সাউথগেট ভারতীয় পণ্য বর্জনকে যে কারণে ন্যায়সঙ্গত বললেন রিজভী মাকে ভরণ-পোষণ না দেয়ায় শিক্ষক ছেলে গ্রেফতার প্রথম বাংলাদেশী আম্পায়ার হিসেবে আইসিসির এলিট প্যানেলে সৈকত ঢাবির সব ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ নিরাপত্তা-বিষয়ক আলোচনা করতে উত্তর কোরিয়ায় রুশ গোয়েন্দা প্রধান

সকল