২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

কেমন জনপ্রতিনিধি চাই

-

দেশব্যাপী নির্বাচনের হাওয়া। একটি বিষয় প্রায়ই দেখা যায়, কালো টাকার মালিক বা দুর্নীতিবাজেরা নির্বাচিত হয়ে আসছে। ভোটারদের অর্থনৈতিক অবস্থা, শিক্ষা, নাগরিক অধিকার ও দায়িত্ববোধ সম্পর্কে অসচেতনতার কারণেই এমনটি ঘটছে। বর্তমানে কলুষিত পরিবেশে ভালো মানুষেরা রাজনীতির মাঠে থাকতে চান না। ফলে রাজনীতি দুর্নীতিবাজ, খুনি, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের দখলে চলে যাচ্ছে। ভালো প্রার্থী পাওয়া দুষ্কর। অথচ জনগণ চায় সৎ, শিক্ষিত, চরিত্রবান, আদর্শিক ও সমাজসেবার মানসিকতাসম্পন্ন যোগ্য মানুষ জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হোক। যারা সুখে-দুঃখে জনগণের পাশে থাকবেÑ কেবল তারাই জনপ্রতিনিধি হওয়ার অধিকারী।

আমাদের দেশে বিভিন্ন নির্বাচনে পেশিশক্তি, অর্থের প্রভাবের কারণে অশিক্ষিত জনপ্রতিনিধিরা একেকটি নির্বাচনী এলাকার দায়িত্ব নেন। তারা অনেকেই অজ্ঞতার কারণে কোথায় প্রকল্প বা কোথা থেকে উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ আনতে হয় সে বিষয় জানে না। সুতরাং ওই এলাকা উন্নয়নবঞ্চিত হয়ে যায়।

অপর দিকে জনপ্রতিনিধি সেবার পরিবর্তে ব্যবসায়ের জন্য রাজনীতি ও নির্বাচন করে। নির্বাচিত হয়ে সে জনসেবার কথা ভাবেনই না। আমরা জনপ্রতিনিধিদের সংসদে পাঠাই দেশ ও জনগণের পক্ষে এবং জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলার জন্য। অথচ দেখি, তারা জনগণের পক্ষে যতটা না কথা বলেন, তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক বক্তব্য দেন। সংসদে উত্তেজনা, ফাইল ছোড়াছুড়ি শুরু হয়।

বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। উন্নয়নশীল দেশের জনপ্রতিনিধিদের শিক্ষিত হওয়া আবশ্যক। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশের জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্য ইসির অনেক শর্ত থাকলেও প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে কোনো শর্ত আছে কি না, তা আমার জানা নেই।

আগে জনসেবার লক্ষ্য নিয়ে সম্ভ্রান্ত, শিক্ষিত ও সৎ মানুষ জনপ্রতিনিধি হতেন। সাধ্যমতো তারা মানুষকে সেবা দেয়ার চেষ্টা করতেন। এখন অবৈধ অর্থের মালিক, সন্ত্রাসী বা পেশিশক্তিতে বলীয়ান চরিত্রহীন ব্যক্তিরাই বেশি করে জনপ্রতিনিধি বনে যাচ্ছেন। মান-সম্মানের ভয় আছে এমন কোনো ব্যক্তি এসব প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা করারই সাহস পান না। জনপ্রতিনিধি সম্পর্কে মানুষের ধারণাই বদলে যাচ্ছে। ফল যা হওয়ার তা-ই হচ্ছে। ফলে চাঁদাবাজি, প্রকল্পের টাকা লুটপাট, নানা রকম দখলবাজি, দরিদ্রদের জন্য বরাদ্দ অর্থ বা চাল-গম লুটপাটসহ বহু ধরনের অন্যায়ের অভিযোগ উঠছে তাদের বিরুদ্ধে। মাদক কারবারের অভিযোগও আছে অনেকের বিরুদ্ধে। অনেকের প্রতাপ-প্রতিপত্তি এত বেশি যে, কেউ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করারই সাহস পান না।

এসব অপকর্মের দায় রাজনৈতিক দলগুলোকে নিতেই হবে। তা না হলে তৃণমূলে দলের ভাবমর্যাদার যে ক্ষতি হবে, তা কাটিয়ে ওঠা দলের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে। ভবিষ্যতে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দলগুলোকে আরো সচেতনতার পরিচয় দিতে হবে। তার পরও কোনো প্রার্থী যদি অনৈতিক কর্মকাণ্ড বা অপরাধে জড়িয়ে যায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা চাই, জনপ্রতিনিধিরা জনসেবায়ই নিয়োজিত থাকুক।

সব দলের উচিত, নির্বাচনের প্রার্থী বাছাইকালে তাদের সততা, দক্ষতা ও জনগণকে মূল্যায়নের সক্ষমতা বিবেচনায় আনা। জনগণ বিরূপ নেতা নন; সৎ ও আদর্শবান রাজনৈতিক নেতাকে প্রার্থী করা হলে জনগণের আসল ক্ষমতায়ন হবে। যার দরজা শুধু দলীয় নেতাকর্মীদের জন্য নয়, সাধারণ মানুষের জন্যও খোলা থাকবে। যিনি রাজনৈতিক সহাবস্থানে বিশ্বাসী হবেন। যিনি সবার কথা ভাববেন। যিনি প্রকৃত সৎ, যোগ্য, দেশপ্রেমিক, নিবেদিতপ্রাণ, জনকল্যাণমুখী, প্রকৃতি ও পরিবেশবান্ধব হবেন। সমাজের অনাচার-অবিচার, সন্ত্রাস দূর করে মানুষের বন্ধু হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত করবেন। নির্বাচিত প্রার্থী সদয়, দূরদর্শিতা, মানবিকতা ইত্যাদি গুণ দিয়ে এলাকার মানুষের পাশে থাকবেন।

লেখক : অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট


আরো সংবাদ



premium cement