২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে যা প্রত্যাশা

-

অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ইশতেহারে ঘোষিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করে না। অথবা ঘোষিত প্রতিশ্রুতির বাইরে রাজনৈতিক স্বার্থে অনেক বিষয় বাস্তবায়ন করে। আগামী নির্বাচনে ইশতেহারে জনগণ কী কী বিষয় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেখতে চায়। এ ক্ষেত্রে কিছু কিছু বিষয় নির্বাচন বহির্ভূত হলেও ক্ষমতায় গেলে ওই দল রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তনের লক্ষ্যে এগুলো বাস্তবায়ন করবে কি না? এমন প্রতিশ্রুতি কাম্য।

সংবিধানে মহান স্রষ্টার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন দরকার। পঞ্চদশ ও ষোড়শ সংশোধনী বাতিল, মৌলিক অধিকারের ২৬-৪৭ অনুচ্ছেদের সাথে অসামঞ্জস যেকোনো আইন ও বিধান বাতিল বা অনুরূপ বিধান পরিপন্থী কোনো আইন-কানুন প্রণয়ন না করা। সংবিধানের ৪৮(২) অনুচ্ছেদ মতে, রাষ্ট্রপতি যেহেতু রাষ্ট্রের প্রধান; তাই অন্য কোনো বিধান বা অনুচ্ছেদ দিয়ে তার প্রাধান্য ক্ষুণœœ না করা বা আগে চলে আসা এমন বিধান বাতিল করা। ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুসারে রাষ্ট্রপতি কেবল নির্বাহী বিভাগের রুটিন কাজ ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নেয়া পরিহার করা। মন্ত্রিসভা ছাড়া যেকোনো সাংবিধানিক পদে নিয়োগের সময়ও এটার প্রয়োগ বারিত করা। এ ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ শুনতে বাধ্য নন এমন বিধান প্রণয়ন। আইন ও বিচার বিভাগের কোনো বিষয়ে নির্বাহী বিভাগ তাদের স্বাধীনতা ও স্বাতন্ত্রতা বজায় রাখবে। সংবিধানের কোনো অনুচ্ছেদ প্রণয়ন বা সংশোধন করতে গেলে অন্য কোনো অনুচ্ছেদের কার্যকারিতা বাতিল বা রহিতকরণ না করা, এমন অনুচ্ছেদ থাকলে তা ইতিবাচকভাবে সংশোধন করা।

রাজনৈতিক সংস্কার কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৫৫(১) ও ৫৬(১) অনুচ্ছেদে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা বা অভিপ্রায় বাদ দিয়ে জনসংখ্যা অনুপাতে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া প্রতি কোটি জনসংখ্যার জন্য অনধিক একজন করে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী নিযুক্ত করতে পারবেন রাষ্ট্রপতি, এমন বিধান সংযোজন করা। সে ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি দুই বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী হতে পারবেন না। একই সময়ে একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধান পদে থাকা বারিত করা এবং এ ক্ষেত্রে সংবিধানের ৫৬(৩) অনুচ্ছেদ সংশোধন করা। সংসদে বিরোধী দলকে মন্ত্রিসভায় নেয়া বারিত করা, যাতে বিরোধী দল সঠিক ভূমিকা রাখতে পারে। কোনো রাজনৈতিক দলের কমিটির মেয়াদ শেষ হলে পুনর্নির্বাচন না হলে আগের কমিটি মেয়াদান্তে সরকার ও রাষ্ট্রের প্রচলিত নিয়ম অনুসারে তা বাতিল নিশ্চিত করা। দলীয় প্রধান ও মহাসচিব বা সাধারণ সম্পাদক পদে পর পর দুই টার্মের বেশি থাকাকে বারিত করা এবং এসব পদ কেন্দ্রীয় কমিটির সর্বজ্যেষ্ঠ ১০ নেতার মধ্যে থাকাই বাঞ্ছনীয়। সব দলের কমিটির মেয়াদ সর্বোচ্চ তিন বছর করা।

একনায়কতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র ও ব্যক্তিতন্ত্র পরিহার করার লক্ষ্যে দলীয় প্রধান ও সাধারণ সম্পাদক অথবা মহাসচিব পদে একাধিক প্রার্থী না থাকলে নির্বাচন বাতিল বলে গণ্য করা। এ ক্ষেত্রে প্রতি পদে তিনজন প্রার্থী থাকা বাঞ্ছনীয়। প্রার্থী না থাকলে ধরে নেয়া যে, দলটির বাকি সদস্যরা নির্বাচন বর্জন করেছে অথবা সিন্ডিকেট করে কাউকে দাঁড়াতে দেয়া হয়নি।

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে কেবল ফ্লোর ক্রসিংয়ের বিষয়ে বর্তমান বিধান চালু রেখে বাকিটা সংশোধন করা। অর্থাৎ আইনসভা ৭০ অনুচ্ছেদের বিধান প্রতিপালন করতে গিয়ে মৌলিক অধিকারের বিধান ৩২ ও ৩৯ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করা যাবে না। কোনো দল তার দলের কেন্দ্রীয় সর্বজ্যেষ্ঠ ১০ জনের বাইরে কাউকে দলীয় প্রধানের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব না দেয়া। সংবিধানের ২৯(৩) অনুচ্ছেদের বিধান ব্যতিরেকে সব কোটা বাতিল করা অথবা কোটা নিয়ে ক্ষমতায় গেলে তারা কী করবে, তা ইশতেহারে উল্লেখ করা। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ ও ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল করা। বন্ধ সব গণমাধ্যম চালু করা। ফৌজদারি অপরাধে সরকারি কর্মচারীদের গ্রেফতার করতে সরকারের অনুমতি লাগবে এ সম্পর্কে রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে করণীয় উল্লেখ করা।

সাংবিধানিক পদ প্রধান বিচারপতি, আপিল বিভাগের বিচারপতি, বিভিন্ন বাহিনী, দফতর ও সংস্থাপ্রধান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, অন্যান্য সচিবসহ বিভিন্ন পদে পদায়নকালে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের কালো সংস্কৃতি রোধ। এখানে রাজনৈতিক গুরুত্ব উপেক্ষা করে মেধা, যোগ্যতা, সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও জ্যেষ্ঠতাকে প্রধান্য দেয়া। চাকরি প্রার্থীর ক্ষেত্রে মেধা উপেক্ষা করে কোটা প্রথা ও পুলিশ বেরিফিকেশনের নামে রাজনৈতিক হয়রানি বন্ধ করা। সাংবিধানিক সব পদে নিয়োগকালে রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শের ভিত্তিতে বেশির ভাগের মতামতের আলোকে সাংবিধানিক ‘নিয়োগ কমিশন’ গঠন এবং তার মাধ্যমে নিয়োগের ব্যবস্থা করা। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক খরচ নির্বাহের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরের চাহিদা ও রাষ্ট্রের সামর্থ্যরে আলোকে অর্থ নির্দিষ্ট করা। প্রতি বছর বাজেট বাড়ানোর আকার অনুপাতে বিগত বছরের ওপর বর্ধিত হারে বরাদ্দ নির্ধারণ করা। অর্থাৎ এসব প্রতিষ্ঠানকে নির্বাহী বিভাগের করুণা প্রার্থীর দায়মুক্তি দেয়া। সরকারি বিভিন্ন সংস্থাকে প্রতিপক্ষকে দমনের কাজ থেকে বিরত রাখা।

সংবিধান থেকে যেকোনো দণ্ডের বিধান তুলে দেয়া, প্রয়োজনে ফৌজদারি কার্যবিধিতে তা সংযোজন করা। সরকারি সফর বা খরচে কোথাও গিয়ে অথবা সরকারি সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ না নেয়া। বিগত নির্বাচনের ইশতেহারে অবাস্তবায়ন করা ওয়াদাগুলোর অপারগতার কারণ ব্যাখ্যা দিয়ে বাস্তবায়ন করতে না পারার জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়া। রাজনৈতিক সরকারগুলো প্রায়ই দেখা যায়, নির্বাচনের দুই-এক বছর আগে সাধারণত কোনো ধরনের বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, ফোন বিল ও বিভিন্ন কর না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেয়। নির্বাচন হয়ে গেলে তা বেমালুম ভুলে যায়। এ ধরনের প্রতারণা বন্ধ করতে ইশতেহারে স্পষ্ট ঘোষণা দিতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
তীব্র তাপদাহে খাবার স্যালাইন ও শরবত বিতরণ করল একতা বন্ধু উন্নয়ন ফাউন্ডেশন গলাচিপায় পানিতে ডুবে ২ শিশুর মৃত্যু উপজেলা নির্বাচনে অনিয়ম হলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে : ইসি শিশু সন্তান অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি, সৎ বাবাসহ গ্রেফতার ২ উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যুবককে কুপিয়ে হত্যা রা‌তে বৃ‌ষ্টি, দিনে সূর্যের চোখ রাঙানি শিশুদের হাইড্রেটেড-নিরাপদ রাখতে বাড়তি সতর্ক হওয়ার আহ্বান ইউনিসেফের অর্থ আত্মসাৎ: সাইমেক্স লেদারের এমডি ও তার স্ত্রী কারাগারে ফেসবুকে সখ্যতা গড়ে অপহরণ, কলেজছাত্রীসহ গ্রেফতার ৫ ৫ ঘণ্টা হবে এসএসসি পরীক্ষা, ৫০ শতাংশ লিখিত চকরিয়ায় নিখোঁজের ছয় ঘণ্টা পর ২ যুবকের লাশ উদ্ধার

সকল